কিরে কবে দেখা হবে আবার,
কবে খবর পাবো, তোর ফেরার?
কবে খাব চা ভাঁড়ে পাঁচ মাথার মোড়ে,
রবিবাসরীয় বিকেলেতে বেড়াবো ভিক্টোরিয়া- ময়দান চত্বরে।
জানিস বই পাড়াটাও ভেসে গিয়েছে ঝড়ে, জানিনা কবে ফিরবে সেই ভিড়,
কফিহাউসের আড্ডাটা ও বন্ধ, সম্পর্ক গুলোয় ধরছে চিড়।
তোর মনে পড়ে সেই দরকষাকষি ধর্মতলার মোড়ে,
আর কলেজ শেষে ঘুরতে যাওয়া রবীন্দ্র সরোবরে।
তোর প্রিয় ক্যাথিড্রাল, বেলুড়মঠ, নন্দন নির্জন আজ,
সারা কলকাতা জুড়েই শুধু নীরবতার রাজ।
আজ তুই অন্য শহরে; মহানগরী থেকে অনেক দূরে,
বল আসবি কবে ফিরে?
প্রিন্সেপ ঘাট থেকে পাড়ি দেব গঙ্গাবক্ষে নৌবিহারে।।-
অনেক দিন আগের নয় কথা গুলাে
শীতের বিকেল ফেরি করা শীত
এবং পথের ধুলাে একটা ক্রন্দন
আমার হাত ছুঁলাে : আমার হাত টা পকেট ছুঁলো,
কত আধুনিক কলকাতার এই নান্দনিক বিকেল !
প্রেম - ভালােবাসা - মুক্ত মূন - সবুজ ঘাসে
ভেসে যায় আড্ডা কত হাসি - কান্না
নস্টালজিক সেই সেদিন গুলাে ।
তবু কেন কেউ হাত ছুঁলাে ?
ও আমাকে দেখালাে ,
কেমন থাকে সামনের ওভার ব্রিজের তলায় ,
এই নান্দনিক শীতে বানজারা সংসার গুলাে ।
সেদিন অনেক খোঁজার পরে পেলাম তাকে ,
কী সুন্দর অনুপম হাসি ....
ওর ছোঁয়ায় শিহরিত হলাে গােটা শরীর ....
শক্ত করে ধরে ছিলাে আঙুল গুলাে ।
মনে মনে বললাম ; - সত্যিই তাে '
তুই আর আমি নন্দনে আছি ।-
শহরটা ঠিক আগের মতন নেই
রাস্তা-ঘাটে হারিয়ে গেছে ,পরিচিত সেই ভিড় ,
অচেনা শত্রু বিঁধেছে তাকে,শক্তিশেল-এর ন্যায়
তাই মানুষের সাথেও সম্পর্কে ধরেছে চিড় ।
‘কফি হাউস’ তো আগেই হয়েছে পুরনো
‘বই পাড়া’-টাও খুবই নির্জন আজ ,
‘এসপ্ল্যানেড’-ও ভুগছে এখন, চরম একাকীত্বে
‘ময়দান’ জুড়ে-ও নীরবতা-ই,করে চলেছে রাজ ।
‘পাঁচ মাথার মোড়ে’ মূর্তিটা-ও নিশ্চুপ, নির্বাক
ঘোড়ার পিঠে বসে থেকে,ভদ্রলোক-ও দিশাহীন ,
সশরীরে ধরাধামে থাকতেন যদি তিনি
কত ধানে কত চাল,বুঝতো তখন চীন ।
‘প্রিন্সেপ ঘাট’, ‘নন্দন’ কিংবা ‘ভিক্টোরিয়া’
সেখানে-ও যে রয়েছে একই ছবি ,
‘‘মহানগরী’’-র এমন দশা,দেখলে নিজের চোখে
নির্ঘাত তখন স্তব্ধ হতেন ‘‘রবি’’।
এ শহর যে প্রাণের তথা ভালোবাসা-র শহর
সৌন্দর্যে এর তুলনা নেই ,
কলকাতা তাই ফিরুক আবার,
হারিয়ে যাওয়া,পুরোনো সেই রূপে-ই ।।-
কলকাতার সেই কল্লোলিনী তিলোত্তমা,
হারিয়ে গেছে আজ বিপর্যয়ের সাথে..
চিন্তারা লোপ পেয়েছে অজ্ঞাতসারে,
উচ্ছিষ্ট টুকুও বাঁচেনা শেষপাতে..
-
প্রিয় শহর ,
কলকাতা,
তোমাকে দেখেছি বর্ষাস্নাত হতে
তোমাকে দেখেছি শারদপ্রাতে,
তোমাকে দেখেছি পূর্ণিমার চাঁদনী রাতে
তোমাকে দেখেছি গরমে ঘর্মে সিক্ত হতে
তোমাকে দেখেছি গ্রীষ্মের খরতাপে তপ্ত হতে,
তোমাকে দেখেছি শীতের কনকনে ঠাণ্ডাতে
তোমাকে দেখেছি দুর্গোৎসবের জনপ্লাবনে ভাসতে
তোমাকে দেখেছি আলোকসজ্জায় সজ্জিত হতে,
তোমাকে দেখেছি উত্তর কলকাতার অলিতে গলিতে
তোমাকে দেখেছি প্রেমের কলকাতা হতে
তোমাকে দেখেছি বনেদিয়ানা ও সাবেকিয়ানাতে
তোমাকে দেখেছি বসন্ত উৎসবে রঙিন হতে
তোমাকে দেখেছি ঐতিহ্যের আড়ম্বরে মুড়ে থাকতে।।-
ভালো থাক আমার শহর, বেঁচে থাক ট্রামেদের কোলাহল ;
ভালো থাক সমস্ত অলিগলি, ঝড়ে যাওয়া কিছু অসমাপ্ত প্রেম..
ভালো থাক নোঙর ফেলা জাহাজ, পলি জমে থাক অলস নদীপাড় জুড়ে ;
বাড়ি ফিরে যাক উদবাস্তু মেঘের দল, চোখ ভিজে যায় মরচে ধরা নোনা জলে ..
-
প্রবাহিত জনস্রোত আর ব্যস্ততার ভিড়ে,
আবেগী গল্প বাড়ে শহর কলকাতা ঘিরে।
কখনো বা ট্রেনে, কখনো বা ট্রামে,
এক বৈচিত্র্যের ছন্দ লেগে থাকে।
আবার ওই ইডেন গার্ডেন, মোহনবাগান,
যেন প্রতিটি বাঙালির জন্মগত ইমোশন।
শহরতলির বইপাড়া বা কলেজস্ট্রিট,
আজও সকলের ভালোবাসায় আঁকা জলছবি।
হলুদ-নীল আলো, ক্লান্তিহীন রাতের কলকাতায়,
এক মায়াবী প্রেমের প্রদীপ জ্বালায়।-
তোমার আমার প্রাণের শহর
এই 'সিটি অফ জয়'
আমফান প্রভাবে চেহারা
যে তার আজ শীর্ণকায়
কতো না লড়াই করলে তুমি
বুকে পেলে কতো ঘা
সেরে উঠে তুমি ফিরে পাও
আবার সেরা শহরের আখ্যা।-