সত্যবালা'জ় কিচেন
(গল্পের স্বাদ গ্রহণের
জন্য ক্যাপশানে আসুন)-
◆ রান্নাঘর - এক রূপকথা ◆
রান্না ব্যাপারটা সবাই না পারলেও খেতে আমরা সবাই পারি, কিন্তু রান্নাটাকে ভালোবাসতে আমরা কজন পারি??
সারাদিনের অনেকটা সময় খরচ করে আমাদের কাছে যে রান্না করা খাবার গুলো আসে তাদের আসল মজা আমরা কজনই বা নি!
একটু ভেবেই দেখি না কেমন হয় রান্নাঘর থেকে তৈরি হওয়া খাবারের জীবন...রান্নাঘরের নিজের কেমন লাগে আমাদের কাছ পর্যন্ত এই সুস্বাদু বা বিস্বাদ খাবার গুলোকে পৌঁছে!!
( জানতে হলে চলে যেতে হবে ক্যাপশনে )
-
মোরামের রাস্তা দিয়ে শনি মন্দিরটাকে বাঁ-এ রেখে লুলা মোড়লের ঘরের পাশ দিয়ে কিছুটা এগোলেই আমার দেশের বাড়ি।সিমেন্টের ভিতের উপর চারদিক জুড়ে মাটির ঘরগুলো সাজানো।মাঝখানে চৌকো উঠোন, কুয়োতলা, তুলসী মন্দির; আর পিছনে রান্নাঘর।
জ্ঞান হওয়া থেকে যারা শহরের গ্যাস ওভেনে রান্না দেখে অভ্যস্ত সেই বাচ্চাদের কাছে মাটির উনুনে রান্নাটা পি.সি সরকারের যাদুর থেকে কিছু কম নয়।ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে দাঁত মাজতে মাজতেই রান্নাঘরে।মা,জ্যেঠিমা,পিসি আর দিদার একসঙ্গে আনাজ কাটা; চা খেতে খেতে বাবা-জ্যেঠুর হরেক রকম গল্প; আর দাদা-দিদিদের কলেজ যাওয়ার তোড়জোড়।সবমিলিয়ে রূপকথা নেমে আসত বাস্তবে।
একটু বেলায় দাদু ঢুকতেন পছন্দ মতো বাজার নিয়ে; মাছ-মাংস-সব্জি-ফল আরো কত কী।তারপর শুরু হত রান্না যজ্ঞ।আমার কাজ ছিল জ্বালানি কাঠ,শুকনো ঘুঁটে,কাঠের গুঁড়ো সব উনুনে দেওয়া; অবশ্যই প্রয়োজনের থেকে বেশি; আর আগুনের আঁচ কমে আসলেই লোহার বাঁশির মতো অদ্ভুত এক যন্ত্রের মাথায় ফুঁ দিয়ে আগুনটাকে চাগিয়ে তোলা।ধোঁয়া, খাবার আর গোয়ালের গন্ধ মিলেমিশে এক আবেশের জন্ম দিত।তারপর রান্নাশেষে রান্নাঘরের একপাশে চাটাই পেতে একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া।
এখনো রাস্তায় যেতে যেতে সদ্য জ্বালানো চায়ের দোকানের উনুনের গন্ধ নাকে আসলেই আমি চোখ বন্ধ করি।খেতে খেতে দাদু বলে ওঠেন,"কইগো, দাদুভাই এর পাতে মাংস দাও।"
আমার স্মৃতির রান্নাঘরে মনমাতানো গন্ধ ওঠে।-
মেহেন্দি লাগা হাতে প্রথম যেদিন বউ হয়ে এসে রান্নাঘরে হাতাখুন্তির সাথে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছিল, সেই মেয়েটা সকাল ১০ টার আগে কোনোদিন ঘুম থেকে ওঠেনি।
যার হাতের রান্নায় আজ সকলে ধন্য ধন্য করছে তার চা খাওয়ার ভয়ে একদিন সকলে চমকে উঠতো।
আর সেই ছেলেটা,যার রান্নাটা প্রিয় ছিলো সেই ছোট থেকেই সে আজ মাস্টার শেফ প্রসিদ্ধ এক রেস্তোরাঁয়।
রান্নাঘরের দেওয়াল ছাড়িয়ে ছ্যাঁকছোঁক,টিংটিং,খুটখুট, শব্দ,আর গন্ধে ম ম করা সেসব আস্বাদ প্রত্যেকের উদরপূর্তির জোগান দিচ্ছে রোজ।
তাই রান্নাঘর ভালোবাসার আরেক নাম।-
রান্নাঘরে সাজিয়ে রাখা ভাজা মাছটার সঙ্গে নিজের বড় মিল খুঁজে পেলাম সেদিন। জীবন নামক কড়াই এ অভিজ্ঞতার গরম তেলে ভাজতে ভাজতে নিজেকে অনেকটা শক্ত করে ফেলেছি।
-
রান্নাঘর-
-শোন, মা অনু। তোদের বিয়ের ক'দিন বড় তেল ঝাল খেয়েছিস। বাবুকে বললাম, আজ হালকা করে আলু পোস্ত, ভাত করবো। আর একটু হালকা করে মাছ করবো, তার তো গাল ফুলে গেলো। কেন মাছ করবে ?
- আঃ, মা, মাছ না হয় না খেলাম।আর ও ও তো খেতে চায়না।
- আহা, আমার ছেলে খাবে না বলে কি আমার মেয়ে ও খেতে পারবে না। কত আর কম্প্রোমাইজ করবি বল তো মা!
-কিসের কম্প্রোমাইজ মা? আমি তো দিব্যি আছি।
- বাঙাল মেয়ে, ঘটি বাড়ির বৌ হয়ে এসে কত কষ্ট করছিস। মিষ্টি খাবার খাওয়ার অভ্যাস নেই তোর।
(শাশুড়ি মা এত বোঝে কোনো বৌমাকে, জানতো না অনু)
-আচ্ছা, ছাড় সেসব। নতুন বউ, যা গিয়ে দেখ তো আমার ছেলেটা ঝালের জ্বালায় ছটফট করছে না তো?
- ঝাল !!!
- আর পারলে তুইও চেখে বল দেখি মুড়িঘন্টটা মন মতো হয়েছে কিনা!
- মা !!! তুমি করলে !! মুড়িঘন্ট !!
( অনু জড়িয়ে ধরলো শাশুড়ি মাকে। রান্নাঘর শাশুড়ি মাকে চেনার শ্রেষ্ঠ উপায় হলো )
- তুমি শাশুড়ি না। তুমি মা।-