উচ্ছ্বাসে ময়ূর তোলে ধ্বনি, তাহি নীরবে শুনি,
নাচিতে চায় পেখম তুলি, বর্ষার বাজনা গুনি।
নীলকণ্ঠী ময়ূরের আঁখি, নীলাকাশের প্রাণে...
নীরদহীন , সারাদিন
কহিয়া রয় শীতল ময় শোঁ শোঁ সমীরণ
নাচিবে মন ময়ূর, ঝিরিঝিরি বাদলার গানে....
উথলিয়া উঠিবে মন তোমারি পরশে ;
মায়ার কাজল চোখে, তখন মায়াবী বরষা আসে।-
ওই যে দেখছ শক্ত লোহা পাতা রেলের রাস্তাটা, দেখো ভালো করে কত্তো
লাল ফুলে পুরো জায়গাটা রাঙা হয়ে গেছে। ওখানে আগে অনেক
ট্রেন ছুটত। ভীষণ মন মাতানো জায়গা ছিল। আজও তেমনটাই
সুন্দর হয়ে আছে। শুধু আমার মনে কেটে দিয়ে গেছে দুবছর আগের
এক অভিশপ্ত দিনের দাগ।
আমি সেবার যাচ্ছিলাম আমার স্বপ্নপূরণের আশায় এই রাস্তা দিয়েই। ট্রেনের
একটি কামরাতে আমি একেবারে জানালার ধারে বসেছিলাম। বাইরের
দিকে তাকিয়ে পাখিদের কুহু ডাক আর তাদের নৃত্য উপভোগ করছিলাম।
আমার মনও যে নৃত্যের ছন্দধারায় বাঁধা। তাই আমি খুব
মনোযোগ দিয়েই তাদের দেখছিলাম।তাদের দেখে আমারও মনে
সেদিন জয়ী হওয়ার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ পেয়েছিল। আমি মনে মনে
ঠিক করে নিয়েছিলাম ওই নৃত্য প্রতিযোগিতায় আমাকে জিততেই হবে।
কিন্তু দুর্ভাগ্য আমার। সে আশা আমার পূর্ণ হয়নি। কেন জানো? ওই রাস্তার ঠিক
পাশে যে নদীটা দেখতে পাচ্ছো ওখানে পড়ে গিয়েছিল আমাদের ট্রেনটা।
জলের ভিতরে থেকে ভীষণ কষ্ট হচ্ছিল। দম বন্ধ হয়ে আসছিল। ভেবেছিলাম
বাঁচব না। কিন্তু বিধাতা আমাকে বাঁচিয়ে দিল শুধু আমার স্বপ্নটাকে আমার
জীবন থেকে চিরকালের জন্য মুছে দিয়ে। আজ আমার একমাত্র সঙ্গী
আমার এই হুইল চেয়ার। এখন আমি রোজ বেড়াতে আসি এখানে আমার
দিদির সাথে। দূর থেকেই চোখে পড়ে যায় ওই লাল ফুলেদের খেলা,
তাদের গন্ধ আর সেই পাখিগুলোর নৃত্য।।-
ছোটবেলা থেকেই মিষ্টির নাচের হাতেখড়ি হয়েছিল.খুব ভালোবাসতো মিষ্টি নাচটাকে, নাচ নিয়েই বড়ো হয়ে কিছু করার খুব ইচ্ছে ছিল ওর... ধীরে ধীরে মিষ্টি নাচটাকে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিল, এক এর পর এক সিঁড়ির ধাপ গুলো পেরিয়ে মিষ্টি যাচ্ছিল ওর স্বপ্ন পূরণের দিকে.... কিন্তু হঠাৎ স্বপ্নের রাস্তায় আসল একটা বাঁধা! একদিন একটা দুর্ঘটনায় মিষ্টির বাঁ পায়ে মারাত্মক চোট লাগে, ডাক্তার বলে দেয় আর কোনোদিন সে নাচ করতে পারবেনা... চোখের সামনে সব অন্ধকার দেখলো মিষ্টি, নিজের স্বপ্ন গুলো ভেঙে যাওয়ার দুঃখটা মিষ্টি মেনে নিতে পারেনি... ভেবেছিল যে নিজেকে শেষ করে ফেলবে. কিন্তু আজ মিষ্টি এক প্রতিষ্ঠিত নৃত্যশিল্পী. সেইদিন সে ভেঙে পরেনি, সব বাঁধা পেরিয়ে এগিয়ে যাওয়ার জন্য তৈরী হয়েছিল.... নিজের পায়ের সমস্যা অতিক্রম করে সে আবার নাচতে শিখেছে..
তাই আজ সে সাফল্যের শিরোপার জন্য যোগ্য হয়ে উঠতে পেরেছে....-
বয়স তখন সবে ৪,তখন থেকেই নাচ শেখা শুরু,
আমার মামা একজন নাচের শিক্ষক(western dance) মামার হাত ধরেই নাচের জগৎ এ আসা। ছোটো থেকেই Hip-hop, salsa,ballet, swing, break dance এগুলোর প্রতি টান ছিল ভীষণ। MJ কে গুরুদেব ভাবতাম ,তাঁর moon walk দেখে আয়নার সামনে একই ভাবে করার চেষ্টা করতাম, প্রতি রবিবার ১০-১.৩০ ক্লাস থাকতো, মনে বিশাল আশা নিয়ে যেতাম বড় নৃত্য শিল্পী হব একদিন ঠিক।নিজের কঠোর পরিশ্রম একের পর এক প্রতিযোগিতায় আমায় সাফল্য এনে দিয়েছিল, ১২ বছরর বয়স এর মধ্যে অনেক পুরস্কার ও সম্মান অর্জন করেছিলাম। আমার দাদা (জ্যেঠুর ছেলে) খুব বাহবা দিত আমায়, সবসময় বলত "পাশে আছি নাচ ছাড়িস না যেন, আমি জানি তুই একদিন বড় সাফল্য পাবি " উৎসাহ দিত খুব। দাদা একটা এক্সিডেন্টে মারা যায় সময় সত্যি থমকে গেছিলো, তবুও দাদার কথাকে সত্যি করতে পরিশ্রম করা ছাড়িনি। ক্লাস ৯ এ যখন উঠলাম পড়াশোনার চাপে কম হয়ে গেল সব,মা একদিন হঠাৎ বলে ওঠে "বাবু নাচটা ছেড়ে দেনা এখন পড়াশোনাতে মন দে, মুসলিম পরিবারের মেয়ে তুই বড় হয়েছিস ওত বাইরে বাইরে নাচতে নেই লোকে কি বলবে"আমার মা খুবই মর্ডান তাই মায়ের মুখে একথা মেনে নিতে পারিনি, পাড়ার লোকে নাকি চারটে কথা বলে. শত চেষ্টা করেও পারিনি বোঝাতে স্বপ্ন গুলোকে কবর দিয়েছিলাম সেদিন ছেড়ে দিতে হয়েছিল নাচ।এখন মা আমার নাচের সুনাম অনেক এর কাছে শুনে বলে সত্যি সেদিন ভুল করেছিলাম আমি।
-
শরীরে নেগেটিভ এনার্জি শরীর থেকে বেরিয়ে যাওয়া ই শ্রেয়।
স্ট্রেস আমাদের শরীর ও মনের জন্য বড়োই ক্ষতিকারক।
কেউ বলেন, আঁকা শেখো তো কেউ বলেন গান।
কেউ বলেন, আবৃত্তি শেখো তো কেউ বলেন বাজনা।
আমি নতুন হবি হিসেবে কত্থক নৃত্য কে বেছে নিলাম।
যাইহোক না কেন, সর্বশেষে পার্সোনাল হ্যাপিনেস ই বেশি ম্যাটার করে কোনো মানুষের জন্যে।-
একযে ছিল মেয়ে, মুখখানা তার মিষ্টি ভারি।
নাচ ছিল তার ভালোবাসা, সব ত্যাগেই রাজি।
তাল ছিল তার ঘুঙুর জুড়ে, ছন্দ ছিল পায়ে।
লয়ের গতিতে নাচত সে, লাগুক যতই আঁচ গায়ে।
পাড়ার সবাই চিনত তাকে নাচতে ভালো পারে।
মোহিনী নাম ছিল তার, কত্থক নাচত মনের মতন করে।
স্বপ্ন ছিল নৃত্যশিল্পী হিসেবে পরিচিতি পাবে।
গরিব ছিল, বাবা ছিল তার একমাত্র আপন।
একদিন হঠাৎ বাবা অসুস্থ, মুখভার করেছে গগন।
ঝড় উঠেছে প্রবল বেগে, বিদ্যুতের ঝলকানি।
বাবার আজ অপারেশন করাবেই, প্রতিশ্রুতি মনে মনে।
এমন সময়, পান চেবানো এক বাবুর সাথে দেখা।
বলল নাচতে দেবো, যাবি? তুই শুধু নোস একা।
কত মেয়ে নাচে গায়, টাকা কামায়, ভালো লাগবে, চল।
মোহিনী চলল পিছন পিছন, গা ভেজায় বৃষ্টির জল।
সিংহদরজা খুলে যেতেই , একি? চমকে ওঠে মোহিনী।
পিছন ফেরার উপায় নেই, টাকাটা খুব দরকারী।
রং মাখল আলোর ভিড়ে, পায়ে ঘুঙুর, হাতে কাঁচের চুড়ি,
আলতা রঙের হাত পা যেন বন্দি হল শিশমহলের নাচের ঘরে।
পা রাখল জলসাঘরে, উঠল কেঁপে ঝংকারে।
বাবুদের মন জুড়োলো, কষ্টচাপা হাসিতে।
লয়ের গতি বেড়ে চলল, যেন চাইলেই প্রলয় আনতে পারে।
তবলার আর সারঙ্গীতে তাল মিলিয়ে,
শুরু হল তার অন্যজীবন, মূল স্রোতে আর ফেরার উপায় নাই।
টাকা পেল অনেক টাকা, কিন্তু ভালোবাসা এল না।
অনেকেই মন দিল, কিন্তু সমাজে নিয়ে গেল না।
নাচকে বড় আপন করেও, নৃত্যশিল্পীর মান পেলোনা।
সমাজের মূল স্রোতে যে, বাঈজীদের ঠাঁই জোটে না।-