প্রতি কবিতা জুড়ে থাকে তোমার, বনলতা সেনের কথা,
যা একমাত্র প্রিয় কবির জানা, না মিলেছে তার দেখা।
প্রকৃতির ভালোবাসায় কবির জীবন মুগ্ধতায় পরিপূর্ণ,
তোমার কবিতার মাঝে খুঁজি আজ আমার বাঁচার নতুন ঠিকানা।
শত কষ্টের মাঝেও তোমার কবিতায় জীবনে নতুন ভালোবাসার বাহানা,
বঙ্গনারীর নামের ছোঁয়ায় তোমার প্রতিটা কবিতা অনন্য,
শুভ জন্মদিনে অনেক শ্রদ্ধা রইলো আমার প্রিয় কবির জন্য....-
সত্যি করে বলো কবি― কার রূপের বর্ণনায় তুমি এই বিশ্ব সংসারকে তোলপাড় করে দিয়েছো। নক্ষত্র খোচিত দারুচিনি বনানীর দূরতর দ্বীপে কার জন্য তুমি এখনো প্রতীক্ষারত। কার ভালোবাসার রোমহর্ষ স্পর্শটুকু পেতে চৈত্রের জ্যোৎস্নায় গা ভিজিয়েছিলে। কোন সে নারীর চোখে ধরা দিতে ধ্রুবতারা, শুকতারা-কে টেনে নামিয়ে এনেছিলেন জ্যৈষ্ঠের এই ভরা রোদে...।?
সত্যি করে বলো কবি; আমার থেকে শ্রেষ্ঠ প্রেমিকা কে আছে তোমার এই সংসারে...?।
জানো কবি; ফাল্গুনের বাতাস যখন স্পর্শ করে আমার খোলা চুল কিংবা শ্রাবণের নিষ্পাপ চাঁদের আলো যখন জানালার ফাঁকটুকু দিয়ে উকি মারে আমার ঘরের বিছানায়, স্পর্শ করে আমার ঠোঁট, আচ্ছন্ন করে রাখে আমার চেতনাকে, আমি তখন তোমার কবিতাকে বুকে জড়িয়ে পাড়ি দিই এক গভীর শীত ঘুমের দেশে।।
-
পাণ্ডুলিপি ধূসর হয় বাড়ির ছাদে বসে
কবিতার মতো লিখি নাকি,গল্প অবশেষে;
প্রশ্ন যদি কবিতা -কঠিন, বলি তবে শোনো
টীকাকার চর্যার ছিল,
জীবনানন্দের নেই কোনো।-
||'শুধু জীবনানন্দ'||
― "দূরে কাছে কেবলি নগর, ঘর ভাঙে;
গ্রামপতনের শব্দ হয়,
মানুষেরা ঢের যুগ কাটিয়ে দিয়েছে পৃথিবীতে,
দেয়ালে তাদের ছায়া তবু
ক্ষতি, মৃত্যু, ভয়,
বিহ্বলতা ব'লে মনে হয় ।"
কী বুঝলে সুরঞ্জনা? বুকের ভেতরটা....
― "এ-সব শূন্যতা ছাড়া কোনদিকে আজ কিছু নেই সময়ের তীরে"
তারই স্বর ধরে পাশ থেকে বনলতা বলে উঠল,
― "তবু ব্যর্থ মানুষের গ্লানি ভুল চিন্তা সংকল্পের অবিরল মরুভূমি ঘিরে"
সুদর্শনাও এবার গল্পগুচ্ছটা বন্ধ করে ম্লান মুখে চোখ বন্ধ ক'রে বলে উঠল,
― "বিচিত্র বৃক্ষের শব্দে স্নিগ্ধ এক দেশ,
এ পৃথিবী, এই প্রেম, জ্ঞান, আর হৃদয়ের এই নির্দেশ ।"
― নাঃ এই জীবনানন্দ বাবুর সৃষ্টি 'পৃথিবীলোক','আকাশনীলা' এগুলোতে আজীবন শান্তি আছে...আমদের এই ছোট্ট সঙ্গ বৃত্তটি আভিজাত্যের, কি বলো হে শঙ্খচিল?
― তা আর বলতে? কোটি নমস্কার, অমূল্য কবির সৃষ্টি! এখনকার যান্ত্রিক রোগ আমাদের পাঁজর ঘেঁষে গেলেও কোনোভাবেই স্পর্শ করতে পারবে না আমাদের রুচিকে, 'আবার আসিব ফিরে'.....সাহিত্য ভালোবেসে, ভালোবাসায় ভুলিয়া সমূহ সমরে !
সেদিন ট্রেনের ওই কম্পার্টমেন্টের বাকি যাত্রীরা মুগ্ধ হয়ে শুনেছিল একরাশ বেঁচে থাকার 'ধূসর পাণ্ডুলিপি', প্রযত্নে 'শুধু জীবনানন্দ'।-
“তবু তোমাকে ভালোবেসে
মুহূর্তের মধ্যে ফিরে এসে
বুঝেছি অকূলে জেগে রয়
ঘড়ির সময়ে আর মহাকালে যেখানেই রাখি এ হৃদয়।”
❤️জীবনানন্দ দাশ❤️-
বাংলার অপরূপ রূপে মিশে গেছে যত সত্ত্বা, যত প্রাণ
জীবনানন্দের চোখে খুঁজি রূপসী বাংলা যা অমৃতের সমান।
"ধূসর পাণ্ডুলিপি"-র অজস্র রং মেখে "আবহমান" স্বপ্ন ভেসে যায়
"মহাপৃথিবী"-র নির্জন প্রেমে "বনলতা সেন" অনন্ত সুখে হারায়।
গোধুলি বেলায় শঙ্খচিল উড়ে চলে নিজের বাসায় নির্জনে
অন্ধকারেও সুসজ্জিত হয় এই পৃথ্বী "আলো জল আকাশের টানে"।
ট্রামলাইন এগিয়ে চলে নিঃশব্দে সরলরেখায় নিজের মতো
জীবনানন্দ ফিরে আসুক আবার, গ্রাম বাংলা থাকুক অক্ষত।-
রক্ত, ঘুমের ওষুধ আর তুমি
একটা পদ্ম না কি ফুটেছিল শুনলাম তখন,
নোনা জলে স্নান করে যখন তুমি নোনা মেয়ে মানুষ;
প্রকৃতির বর্ষা আর তুমি এক হতে চেয়ে আটকে যাও।
মগের জলে ধুয়ে দি রক্ত, স্মৃতি চিহ্ন।
এক পাতা ঘুমের ওষুধ অবহেলিত আজ,
প্রয়োজন থাকার পরেও।
সবাই সেই মন্দিরের দেওয়াল গাঁথার মতো এক কথা বলে,
সাদা হিমালয়ও যে স্বর্ণ লোভী, দিবাকর তার প্রমাণ;
তোমার চলন তার বেশি কিছু বলে না যে।
কুয়াশার মধ্যে মরে দ্যাখ রোজ, মেয়ে মানুষের ঘ্রাণ পাবে।-
জীবনানন্দ দাশ
বনলতা সেনের প্রেমিক রূপসী বাংলার কবি,
হে জীবনানন্দ, আজ তোমার জন্মদিন।
প্রচার বিমুখ লেখাতেই সুখ, পাশাপাশি অধ্যাপনা,
আধুনিক কবিতার জনক, তুমি তুলনাহীন।।
17ই ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের বরিশালে জন্ম,
ছোটবেলার মিলু ছিল খুবই মুখচোরা।
পিতা সত্যানন্দ পেশায় ছিলেন স্কুলের শিক্ষক,
মাতা কুসুমকুমারী লিখতেন কবিতা ছড়া।।
শরীর খারাপের কারণে বায়ু পরিবর্তনের জন্য
মামার সঙ্গে দিল্লি লখনো আগ্রা ভ্রমণ।
রাতের আকাশ, নক্ষত্র, প্রকৃতির সাথে ছিল বন্ধুত্ব,
তাদের জন্যে তাঁর মন করত কেমন।।
ধানসিঁড়ি নদী, পুকুর, মাঠ, বনানী, নয়ানজুলি
সবাই ছিল খুবই তাঁর আপনজন।
শুধু নিজের জন্যে লিখে যেতেন লেখা,
মৃত্যর পর অনেক লেখা হয় প্রকাশ।
ট্রাঙ্ক ভর্তি পাণ্ডুলিপি সযত্নে রেখেছিলেন,
মৃত্যুর পরে সন্ততিরা করে তা প্রকাশ।।
22শে অক্টোবর 1954 এই জ্যোতিষ্কের প্রয়ান,
1955 সালে পান সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার।
হে প্রিয় কবি আজ তোমার শুভ জন্মদিনে,
জানাই শ্রদ্ধা ভক্তি ভালোবাসা প্রনাম নমস্কার।।
কলমে : ভীষ্মদেব রানা
-
অক্টোবর মাসের এক চমৎকার রৌদ্রোজ্জ্বল বেলায় আমি মরে যাবার ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলাম।
আরো ভালো করে বলতে গেলে চৌদ্দই অক্টোবর , উনিশশো তিরাশি।
কি বললেন? তখনো আমি জন্মাইনি?
ভুল।
আমি দাঁড়িয়ে দেখেছি শম্ভুনাথ পন্ডিত রোডের সেই ঘাতক ট্রামের ড্রাইভারের মুখের প্রতিটি রেখা
প্রতিটি পথচারীর মুখের বিস্ময় বিবর্নতা
মারা যাবার আগে একটা সামান্য কমলালেবুর আর্তি
আমি নির্বাক বিস্ময়ে সাক্ষ্য রেখেছি কবিতার ঈশ্বরের অনিচ্ছুক আত্মহত্যার।
অক্টোবর মাসের এক চমৎকার রৌদ্রোজ্জ্বল বেলায় আমি আপনি আমরা সবাই মরে যাবার ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলাম।-
'সোনালী সিংহের গল্প'
কবি, শক্তি দাও-যে শক্তি তোমার নিজের পাণ্ডুলিপি রঙিন করে;
ধূসর রঙে।
কবি, শক্তি ছাড়া এ তো অন্য কিছু নয় :
পিরামিডের অন্ধকার থেকে গোধূলি-মদির মেয়েটার মতো,
দারুচিনি দ্বীপের সোনালী চিল আলোর অভিসঞ্জাতে,
সুচেতনা; সুরঞ্জনাও বটে।
আর একটা বেড়াল সূর্যের পেছনে...
কবি, মনে আছে তোমার ' অমৃতযোগ'?
অনন্ত রাত্রির বৃক্ষ তো একা নেই, তুমিও আছো;
তাহলে?
জানি কবি ঈশ্বর তুমি, তাই তো ফিরে আসবে- জানতে
শঙ্খচিল আর শালিক ছাড়াও কোনো এক বুকে, বেদনার গন্ধ হয়ে-
জানো কবি, তোমাকে চেনার পরেই বুঝলাম
সে গন্ধ তুমি পাও;হয়তো এই দুই 'মিতা'-র রূপে।
তাই আট বছর আগের লাশ আজ 'মৃত্যু স্বপ্ন সংকল্প' ত্যাগ করে
'মৃত্যুসাগর সরিয়ে সূর্যে বেঁচে আছি।'
কবি 'শেষ ট্রাম মুছে গেছে', 'চারিদিকে ঘরবাড়ি পোড়ো- সাঁকো'
তার মধ্যেও যে 'শাদা বক' উড়তে চায় সমুদ্রের দিকে।
মধুকর ডিঙা নিয়ে নাবিক মালয় সাগরে পারি দেবে যে,
কবি শক্তি দাও, কবি শক্তি দাও, কবি.......
-