||আলো, কই?||
দ্বীপের শিখা নিভিয়ে দাও
একটু অন্ধকার উপভোগ করতে চায় চোখ দুটো।
মেকি আলোয় চোখ ধেঁধে যায় রোজকার বেঁচে থাকার কারখানায়
মন? একটা সমুদ্র ভালো রাখা উজাড় করে দেওয়ার পর বিপরীতে খুঁজতে থাকে আরেকটা সমুদ্র, সমুদ্র না হোক দিগন্ত! তিন ভাগই ফিরে আসে টিনের চাল কিংবা ডোবা হয়ে
এসে, বোবা করে দেয়।

কিন্তু, আলো, কই?
একটা ক্লান্ত বিকেলে, একা বসে থাকতে থাকতে মনে হয় মানব জাতির বিধ্বংসী সেই মানুষ জাতিই— মানুষ হতে হতে, এদের আর মানুষ হওয়া হল না
ভালো বাসার আলো দেখানো মানুষগুলোকে অন্ধকারে ঠেলে দিতে দিতে,
এদের আর আলো হওয়া হল না
তাই, এই আলোর জন্য আলো কই?

-

||তোমার জন্য রামধনু হবো||

জীবনের পঁচিশটা বছর কাটিয়ে বুঝেছি
আকাশ যখন ধৈর্য্য ধারণ করে,
রোদ ও বৃষ্টিকে একসঙ্গে আলিঙ্গন করার ক্ষমতা রাখে?
ঠিক তখনই, বুঝলে—
ঠিক তখনই, একটা সুন্দর রামধনু দেখা যায়।

তাই— তোমার জন্য রামধনু হবো
আঁকিবুঁকি কাটবো অভিমানী মেঘেদের পাতায়,
ভুলগুলো সব শুধরে দেবো নিছকই বৃষ্টিস্নাত বিকেলে
রোদেলা দুপুরে, তুমিই বলো, ছেড়ে যাবে কোথায়?

-

||মুছে যায়||
যুদ্ধ শেষে খোঁজ নিও তবে
মানুষ সেই মানুষেই খুন হলে—
রক্তের রং ধূসরে বদলায় বুঝি?
মানবিকতা ধুয়ে যায়, কোন নিথর জলে?

বাহির ঘরে অখণ্ড মহাভারত
ভেতর ঘরে মস্তিষ্কের নির্বাক যুদ্ধ চলে
কে বলবে 'একই বৃন্তে দুটি কুসুম'? শুধু—
মনুষ্য প্রাণ, মুছে যায় মনুষ্যেরই আড়ালে।

-

প্রিয় অম্বর,
জানিনা তোমার কটা রূপ, আমার জানা নেই পরিস্থিতিকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে আমার অন্তর, তোমায় ঠিক আর কতবার ক্ষমা করে দিয়ে কঠিনিকাথেকে চির তরল হয়ে উঠবে। শুধু আমি জানি, এই ছোটো ছোটো আঁচড়গুলো ফাটলে পরিণত হচ্ছে অহরহ, বোবা হয়ে উঠছে হৃদয় আর মস্তিষ্ক? সে বলছে বদলে যাচ্ছে সমীকরণ, বদল হচ্ছে "প্রাওররিটি লিস্ট", আবার সেই নিজের অস্তিত্ব বজায় রাখার একতরফা লড়াই। কিন্তু কি জন্য পড়ে থাকবো বলো? এপারের চামড়ায় নোনা জলের স্রোত দেখেও চোখে পড়ে না একটা ভালোবাসার মানুষের?! সবটাই কি শুধুই কর্তব্য? তবে এমন যান্ত্রিক কর্তব্যের থেকে নিজেকে মুক্তি দেবো ভেবেছি। অভিমানের ব্ল্যাক হোলে পিষে ফেলবো তোমায় নিয়ে জমানো যা কিছু অব্যক্ত। তোমার কাজ আর মুখের কথা এখন বিপরীতমুখী। আজও ভোরে তোমায় নিয়েই স্বপ্ন দেখেছি, শুনবে? কিন্তু তোমার সময় কোথায়? বরং ঘুমিয়ে পড়ো। আমিও আসি, খুব ক্লান্ত, এবার হয়ত আর ফেরা হবে না। এই ভীষণ গ্রীষ্মে এক শীতল হৃদপিণ্ড উপহার দেবো তোমায়।
ইতি তোমার অম্বালিকা মেঘ

-

||বৈশাখ, তুমি একলা নও||

এমন বহু চিরাচরিত গল্পে বৈশাখী ঝড়ে
অঝরে ঝরে পড়া পাতাদের সমারোহে ফুটে ওঠেনি নতুন কন্ঠস্বর
তবে আজ একলা বৈশাখ, শিখে যায় একসঙ্গে বাঁচতে—
আবারও এক নববর্ষ জড়ো করে, একরাশ কোলাহল মাখা অস্থির ছন্নছাড়া জীবনগুলোকে
হাওয়া বদলে ভেসে ওঠে, 'বৈশাখ তুমি একলা নও' তথৈবচ সব উক্তি
জিতে যায় বাঙালিয়ানা ও রসগোল্লার মতনই মিষ্টি আবেগের ভাণ্ডার বিতরণী!
সে শেষ যাই হোক না কেন, শুরুটা যেন একঘর প্রাণোজ্জল আলোয় ভরে ওঠে— ফিকে হয়ে যাক নৈরাশ্যের বিষণ্নতা
ফেরা যাক কর্ম ব্যস্ততায়, তবে ভালো থাকা ও রাখার কোমল আঁচে,
ক্ষণিক স্বস্তির আশ্বাসে।

-

||বাড়ি ফিরে এসো||

সত্যিই মন কেমন করলে, বাড়ি ফিরে এসো
এক সমুদ্র সময় তোমায় দেওয়ার আছে
তবে যন্ত্র হয়ে ফিরে এসো না
এখানে যন্ত্রেরাও থাকতে থাকতে কেমন মানুষ হয়ে গেছে
শুধু মানুষেরই আর মানুষ হওয়া হল কই?
তবু বাড়ি ফিরে এসো, বাড়িতে এখনো মনুষ্য অপেক্ষা বেঁচে আছে।

-

||সত্যিই, মানুষ— খুবই ব্যস্ত||
অতঃপর, আবার কিছু মানুষকে অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে ছাঁটাইয়ের পালা
সংখ্যাটা কমতে কমতে তিন থেকে তবে দুটি বিন্দুতে আসুক।
ধরে নেওয়া যাক? নাহ্ হতেই পারে যা দেখছি তাই সত্যি
মানুষ ব্যস্ত। মানুষ সত্যিই নিজের ঘর নতুন করে অগোছালো করে গোছাতে ভীষণ ব্যস্ত, মানুষ মুঠোফোনে ডুবে গিয়ে নিজেকে আনন্দে রাখতে ব্যস্ত ।
এতটাই ব্যস্ত যে— কন্ট্যাক্ট লিস্টে যে মানুষটাকে একটা ম্যাসেজ করলেই তড়িঘড়ি করে সে রিপ্লাই করে মরে বরাবরের মতনই, অথচ তার এমারজেন্সি কোনো অসুস্থতার হোয়াটস অ্যাপ স্ট্যাটাস ইনস্টা রিলসের মতই স্ক্রল করা যায়।
আচ্ছা, তোমার কখনো মনে হয়নি সে তোমায় তার ব্যস্ততার মাত্রাটা না বুঝিয়েই, শুনে গেছে অহরহ তফাৎ বদলে যাওয়ায় নয়, কিংবা সময় বদলের নয়
তফাৎ শিরদাঁড়া হারিয়ে ফেলা, আত্মন্ধের পথে এগিয়ে চলার—
যেই অন্ধকারে মানুষ মেকি ব্যস্ততায় উড়তে উড়তে ভুলে যায়,
যে তার শিকড়ের টান বাধা আদতে এই মাটিতেই।
প্লাস্টিকের তৈরি ঘর সাজানোর গাছকে আর যাই
হোক, ঠিক "গাছ" বলা যায় না।

-

অতঃপর দুটো ভিন্ন উপন্যাসের পাতাগুলি একই অধ্যায় জুড়ে গিয়ে নামকরণ হল,
"Coincidence— the journey of infinity love, care, friendship, acceptance and patience for each other."

-

||হারিয়ে যাওয়া||

এ এক অদ্ভুত হারিয়ে যাওয়া
স্বজ্ঞানে, স্বইচ্ছায় অভিযোগ ছাড়াই হারিয়ে যাওয়া
শারীরিক উপস্থিতির মধ্যে অলক্ষ্যেই হারিয়ে যাওয়া
সময়ে অসময়ে হারিয়ে যাওয়া শিখে যায় সমস্ত জীবৎ- অনভিজ্ঞ- সিঁড়ি।

আর এভাবে যারা হারিয়ে যেতে দেয়— তারা আদতে কেউই রাখতে চায়না
দেখেও ফের দেখতে না পেয়ে, প্রশ্ন করতে আসেনা
"কেন হারিয়ে গেলে?"

-

||চলরাশি||

অতঃপর
সময়কে জানিয়ে দিও প্রদীপের যেমন শিখা ছাড়া হারানোর কিছু নেই— তেমনই,
তোমারও ইতিমধ্যে জীবনটুকু ছাড়া আর হারানোর কিছু নেই
কিছুই "না"
যা আছে, তা সবকিছুই চলরাশি।

-