||অমূল্য||
সে আর কান্না মেখে বাঁচবে না বলে ভেবেছিল পাখি হয়ে যাবে কোনো এক কাব্যে, সে আর তোমার ভাঙ্গা গড়ার মাটির তাল হবে না বলে— এবার আগমনী প্রতিমা হয়ে ফিরবে। বিসর্জনের শেষ রাতে, তোমার দুচোখ বেয়ে নামবে অকাল শ্রাবণ
সজাগ অবহেলায় মিশবে না তোমার স্নায়ু,
তুমি অপেক্ষায় ডুববে আরেকটা তিনশো পঁয়ষট্টি প্রহরের, তবু ভুলতে পারবে কি তাকে? তার পরিবর্তে খুঁজে পাবে না কোনো অন্য মূর্তি
কিংবা অনুভুতির আত্ম সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্য।
সেদিন বুঝবে উপেক্ষার ভেলায় ভাসিয়ে দেওয়া ভালোবাসা,
জলের দামে বিক্রি হয়নি এখনো
ট্রেনের সাইরেন, শোনো? ঘরে ফেরার আকুতি, নিজের কাছে মানুষের সাথে পুজোর এই দিনগুলো আগলাতে মানুষ অহরহ খেটে চলেছে, কেন?
কারণ "কেউ কথা রাখেনি"র ভিড়েও কেউ কথা
রেখে যায়, অমূল্য কিছু মুহূর্তে বাঁচবে বলে
অমূল্য কিছু একান্ত আপন ঘর, আগলে রাখবে বলে।

-

||অদৃষ্ট||
যে মানুষটা নাস্তিক সেও অদৃষ্টকে বিশ্বাস করে,
কপালের ওপরে বোধহয় গোপালও নেই
যে ভাঙ্গন অবধারিত, যে সূক্ষ্ম ক্ষতি নির্দ্ধিধায় কান ঘেঁষে স্পর্শক হয়ে বেরিয়ে যেতে যেতেও যায় না, সেটাকে আর কি বলা যায়?
মুখের ওপর দরজা বন্ধ আর তীব্র অভিমানে দগ্ধ হয়ে সবটা ত্যাগ করে দরজা বন্ধ করে সরে আসার মধ্যে যেটুকু তফাৎ?
সেই তফাৎ বুঝে দূরত্বটা দুচোখের পলকে টেনে এনে এক সমুদ্র বোবা কান্না গিলে, অন্তত খোলা জানলার ওপার থেকে কথা বলতে চাওয়ার ইচ্ছায় ঝাপিয়ে পড়া এমন একখান দিলদরিয়া লালন পাওয়াও— আদতে অদৃষ্ট।
যা কিছু হাতের বাইরে চলে গিয়ে আর ফেরত আসে না, একশো শতাংশ স্বচ্ছ জলও বাসি হলে, যে এক পরিণাম শ্যাওলা জমে? সে সমস্ত টিকিয়ে রাখার প্রচেষ্টা, ব্যর্থতায় পরিণত হওয়া অসম্পৃক্ত সমীকরণে প্রাত্যহিক টানাপোড়েনের যে উপশম—
সেটাও এই অর্বাচীন
অদৃষ্টেরই খেলা।

-

— প্রথম প্রেম তো... ওহ্ একটু....
— কেন, আমি তো শেষ প্রেম কেও প্রথম প্রেম ভেবেই নতুন অধ্যায়ে ধৈর্য শক্তি তিনগুণ করে মাঠে নেমেছিলাম। তুচ্ছকে মেনে মানিয়ে বৃহৎ অবহেলা কি কড়া নাড়েনি?
— টিকে থাকার লড়াই?
— টিকিয়ে রাখার মন ও মস্তিষ্কের দ্বন্দ্ব! ওসব প্রথম শেষে কিছু হয়না, মানুষ ও পরিস্থিতি সঠিক থাকলে সব খড়কুটোর মতন হলেও থেকে যায়...
— সময় কি সঠিক হয় আদৌ?
— মানুষকে সঠিক মনে হওয়া আর সময়ের তালিকায় মানুষটা সত্যিই সঠিক বেরিয়ে আসার মধ্যে তফাতটাই আমাদের অনেক বড় করে দেয়।
— আর তখন?
— শেষ প্রেম নয়, শেষ ভালোবাসাটাও প্রথমের মতনই নিঃস্ব ফকির করে মনে করে জিতে গেছে। সময়কে সময় দিয়ে, বোঝাদের বুঝতে পাশে বসেও, ব্যস্ততায় পিষে আসা ছোটো ছোটো বদলগুলোকে যত্ন করার সময় ফিরে পায় কি?

-

||ক্ষমতা||
মানুষ: জানেই না অলক্ষ্যেই, তার ক্ষমতা অপরিসীম। সে চাইলেই নিজের গুরুত্ব বুঝিয়ে দিতে পারে পাঁজর ঘেঁষে দাঁড়িয়েও, চোখে চোখ রেখেও। সে চাইলেই বুঝিয়ে দিতে পারে, আপেক্ষিক দৃষ্টিতে দূর থেকে উঁচু বিল্ডিং আর আকাশের দূরত্বটা নগণ্য মনে হলেও তা সঠিক নয়। বুঝিয়ে দিতে পারে যারা কারোর একটা শব্দে কিংবা ব্যবহারে, একটা আকুতিতে পৃথিবীর সব বাধা অতিক্রম কোরে তা পালন করার ক্ষমতা রাখে, তারাই আবার সেই শব্দেবাণে আহত হলে, বারবার ফিরে আসে না— দোষটা কার? শব্দের নাকি জিহ্বার? পরিপক্ক মানুষ হলেই তবে বুঝবে যে সহিষ্ণু মানুষরা দুর্বল কিংবা সস্তা নয়, তাদের জবাবটাই হল জবাব না দিয়ে নিজেকে সরিয়ে নেওয়া। তাই ক্ষমতা তো এসব মানুষের আছে, মানুষকে মানুষের মতন মেনে নিয়ে ছেড়ে দেওয়াটাও একটা বিরাট বড় ক্ষমতা। মনে রেখো, এরা নিঃস্বার্থ হতে পারে, নির্ভরশীল নয়। ত্যাগে নির্ভরশীলতা থাকে না, নিভু আগুন থাকে। যেটা সময় মতন জ্বেলে নেওয়াই বিধ্বংসী - ক্ষমতা। আর এই ক্ষমতা দেখানোর প্রয়োজন পড়ে না, প্রয়োজন পড়লে অন্যের আগবাড়িয়ে পাশে থাকতে চাওয়ার ব্যামো চাইলেই ত্যাগ কোরে নিজের পথে একাই চলতে জানে। আসল ক্ষমতা তো সেখানেই!

-

ওই ধূসর মেঘ জমে সবার ভেতর ঘরে
যেমন চিরন্তনী- মেঘ জমায় আকাশ,
তেমনই সবার আকাশ জুড়েই উহ্য ইলশেগুঁড়ি
তুই শুধু, তোর কার্নিশটাই বিসালায়তন দেখাস।

-

||ক্ষমতা||

উপসংহারে লেখা রইল একটা ছোট্ট চিরকুট—
"আমাকে যখন তুমি গড়তে পারোনি, তখন আমায় ভাঙার সমস্ত ক্ষমতা আমি তোমার থেকে অনেক আগেই কেড়ে নিয়েছি।"

আকাশে তখন গাঢ় কালো মেঘ জমাট বেধে, মুষলধারে বৃষ্টি নামল। শুধু পিচ গলা ভেজা রাস্তায় আর জল জমলো না আগের মতন।
রাস্তার ধারণ ক্ষমতা বদলেছে বুঝি?

-

||অভিমান||
তারপর কপালের গা ঘেঁষে একটা আলগোছে ঘোলাটে মেঘ এসে দাঁড়ালো
সর্বহারা বিপ্লবের গান ভেসে এলো কানে
অপেক্ষাগুলো উপেক্ষার ঠিকানায় এখন খুব স্বাধীন,
তারা একাই বাঁচতে শিখে গেছে বেশ!
এখন বৃষ্টি ভেজা চুলের জলে ঠাণ্ডা লাগলেও বা কার কি যায় আসে? ব্যস্ততায় বাক্য বিন্যাসে সে সেমিকোলন টানে কি! ওহ্ যায় আসে না
শুকিয়ে যাওয়া মরু পথে মিলিয়ে যায় সেই মেঘ,
ফের ঝাঁ চকচকে রোদ ওঠে। এক চাপা কান্না হারিয়ে যায় কোন অদূরে বোবা মনের মিছিলে
ঘর ফাঁকা হয়। তালা পড়ে। কিছু অক্ষরে লেখা হয়
"কারোর বদলে কারোর আসা নিষিদ্ধ"
তবু পথ চেয়ে বসে থাকে পিছুটান ও কিছু বুদ্ধিহীন আবেগী মায়া—
চিলেকোঠা বলে, "বিকর্ষণ"
আকাশ চিৎকার করে বলে ওঠে, "অভিমান" ওরফে "নিখোঁজ কায়া"।

-

ওসব কথার কথা মিলিয়ে যায় বাষ্প জমা কাঁচে
আবার বৃষ্টি নামল বুঝি? খুব গোপনে উষ্ণ আঁচে।

অদৃশ্য আঁচড়গুলো ভিজলো বুঝি, ফের নূতনের ডাক
মাটির সোঁদা গন্ধ মেখে— মানুষ, একাই স্নেহে বেঁচে থাক।

-

||When life makes you Live Roaster||
পর্ব -১

— বাবাহ্, তুই এরকম আজব কাঠখোট্টা কেন রে?
— কারণ সবটা জেনেও নিজেকে বিনাকারণে সবজান্তা হনু দেখানোর উড়ন্ত ট্যালেন্টটা বাজেয়াপ্ত করতে পারিনি তো, তাই!

-

||চিঠিতে নিজেকে||
প্রিয় আয়না
দিনে দিনে তোমার অবয়ব বদলাচ্ছে
ধৈর্য্যের এক বিরাট রেখা বরাবর হেঁটে চলেছি—
কখনো মধ্যচ্ছেদ, কখনো সমান্তরাল
কখনো আবার বক্ররেখায় স্পর্শক এঁকেছি
জিহ্বার এক প্রসারতা ও দখল, অনুভব করেছি ক্রমাগত
বুঝেছি, বৃত্তের কেন্দ্র থেকে বৃত্তের গায়ে লেগে থাকা বিন্দুগুলির দূরত্ব চির সমান থাকা সত্ত্বেও, কেন্দ্রের গুরুত্ব কখনোই বেড়ে বা কমে যায় না
বরং তুমি এক অনাবিল বদলের প্রত্যক্ষদর্শী, আর তাই একটা কেন্দ্রের "গুরুত্ব", তাকে ঘিরে থাকা কোনো বৃত্তে নয়— বরং তার একান্তই "ঐককেন্দ্রিক দৃঢ়তায়"।
বহু এলোমেলো ছারখার হওয়া, রাত জাগা, ভেজা শীতলপাটির শীর্ষে তার একই যায়গায় নিজেকে ধ্রুবক রেখে স্থিতিশীলতার ক্ষমতায়।
ইতি এক অত্যন্ত সাধারণ, জেদি, বাচাল- একগুঁয়ে, মুখচোরা- অভিমানী
কেন্দ্রবিন্দু

-