||এপার- ওপার বসন্তটা এক||
তুমি নাহয় এবার পলাশ হয়ে ফিরো, সারিয়ে আপন ঘরের ক্ষত—
বাইরে এসে দেখবে কেমন, রঙিন দুনিয়া, ঠিক তোমারই মনের মত।

এপার- ওপার বসন্তটা এক, শুধু সময়মাফিক মূর্তিগুলো ভিন্ন—
সিঁড়ির ধাপেই শিখছে বয়স, রংমিলান্তি, তুমি তো সেই অনন্য।

হারিয়ে গেছে যাক না অতীত, সাদা কালোয় কি বাঁচা যায়?
এপার- ওপার বসন্তটা এক, সব পলাশ কি আর কৃষ্ণচূড়া চায়?

-

||কানামাছি||
অতঃপর আর ফিরে তাকাইনি ব্যার্থতার ধূসর পাণ্ডুলিপির মলাটের রংরুটে
অতীতের পুনরাবৃত্তি ঘটতে দিইনি অভ্যন্তরীণ হৃদপিণ্ডের ঘেরাটোপে।
একটা সময় পর, বাহ্যিক ঝড়? কতবার একই ভাবে নিঃশেষ করার ক্ষমতা রাখে?
ঝড়ের পূর্বাভাসে এখন মজবুত বাড়ির ছাদ
মানুষ কেবলই চলরাশি, পৃথিবীতে সবটা বোধহয় হাতের মুঠোয় চেপে রাখা যায়না, যেমন "বালি"! অথচ সেই চোরাবালিতেই আটকে পড়ে পা। সমুদ্রেরও পিছুটান, অসীম দিগন্তরেখা জানে।
ওরা যেটা জানেনা, বীভৎস সুন্দর ভাঙ্গতে গিয়ে আদতে অজান্তেই গড়ে চলছে রোজ।
ওরা জানেনা মনের কোনো হাড় নেই বলেই যতবার ভাঙ্গে তারও দ্বিগুণ জুড়ে যায় ক্ষতের বিপরীতমুখী রক্তবৎ শিথিল চৌম্বক মেরু
এই মন নিজে যখন মগজে পরিণত হয়, অতিরিক্ত আবেগের চর্বি গলতে গলতে সজাগ হয়? তখন সমস্ত ভারসাম্যহীন সমীকরণগুলো অক্ষরের মতন ভেসে ওঠে অদৃশ্যে রোমহর্ষক হরফ হয়ে
অতীত তখন বর্তমানের শুধুই নীরব দর্শক।

বুঝলে কাবেরী, রোশনাইয়ের রজনীগন্ধা পেরিয়ে নতুন ভোর আসে
তবু গতকালগুলো, আজগুলোকে গিলতে পারে না আর—
নয় তুমি লড়বে নাহলে হেরেও জিতবে কিন্তু তোমার হারানোর আর কিছু নেই
আত্মবিশ্বাসী শিবিরে, "ধাবমান অতীত" তখন কানামাছি খেলায়, নিছকই "দুধে ভাতে" মাত্র!

-

||খুব সাধারণ!||
মেরুর ওপারে সর্ব সুখ বিজড়িত ভেবে যখন উদ্বেল হয়ে ছুটে গেলে এপার থেকে—
দেখলে ওপারেও সাদা মাটা দিনের সেই একঘেঁয়ে অনুরূপ মানচিত্র, কঠিন শীতে ওখানেও অদৃশ্য বাষ্প জমে চশমার কাঁচে। সূর্য্য ওঠে, সারাদিন রক্তজল করা মূর্তির হাসিমুখে কান্না চাপা আস্ফালনে অহরহ ছুটে চলেছে : "যন্ত্রমানব"
কখনও কখনও সূর্যাস্ত ফুটে ওঠে ওদের চোখে- মুখে, বিষণ্ণতার ভাষা নির্বাক শ্রোতার মতনই যদি তুমি নিস্তেজ হয়ে পড়ে থাকো, বুঝবে তা শুধুই তোমার লোকসান
তুমি নাক- কান- কেটে বাঁচতে না শিখলে সে শুধুই তোমার অক্ষমতা,
কারণ? এ দুনিয়ায় সময় বেচেও যারা বাঁচতে পারেনি, তাদের সংগ্রামে
পিষে ফেলা হয় আত্মবিশ্বাসী তবু অতিরিক্ত সাধাসিধে ছাঁচের হৃদপিণ্ডগুলোকে
তাই এর মধ্যেই তোমায় শিখে নিতে হবে জিহ্বার ইস্তামাল— স্নায়ু, ঘ্রাণ, স্বজ্ঞা সক্রিয় রেখে খেলা ঘোরাতে হবে পায়ের তলার মাটি ধরে রাখার তাগিদে।

বোঝাকে, বোঝা না মনে করেই কাঁধ চওড়া করে ওদের বোঝাতে হবে তুমি "যন্ত্রমানব" নও, তুমি খুব সাধারণ মানুষ— যতটা সাধারণ হলে, ভেতরের সবটা সহজেই অনুভব করা সম্ভব।
যতটা সাধারণ হলে বুদ্ধি দিয়ে সমস্ত ভাসমান চলতি রাজনীতি স্ক্যান করা জল ভাতের মতই "খুব সাধারণ!"

-

||জীবনের হিসাব||

সারমর্ম? তোমার কর্ম দক্ষতা, আত্ম শৃঙ্খলা যদি সঠিক হয়, যদি নিজের আত্ম বিশ্বাসের ওপর আস্থা থাকে তাহলে তোমার কোনো অতীতের বিচ্যুতি কিংবা ব্যার্থতার ধূসর পাণ্ডুলিপি তোমার বর্তমানকে ক্ষতি গ্রস্থ করতে পারে না। বিশ্বাস করো, যারা শূন্য থেকে শুরু করতে আর ভয় পায় না, তারা শূন্যের আগে ও পরে সংখ্যা বসানোরও ক্ষমতা রাখে। সবটাই সময় মাফিক, সময় খারাপের পর যে ভালোর ঢেউ ফিরে আসে সেই ঢেউতে পায়ের তলার মাটি শক্ত রাখতে জানতে হয়, আকাশে উড়লেও মাটির টান যে ভুলতে নেই! ওই টানেই তো মানুষ, মানবিক থাকে। জীবনের সব হিসাবে লাভ খুঁজতে নেই, কিছু ক্ষতিতেও যে বিরাট পরিমান লাভ লুকিয়ে থাকে, সে "লোকসান" যে আদতে "মুশকিল আসান"!

-

||নির্জনতা||
একাধিক ঝরা পাতার মরশুম পেরিয়ে যে আবহাওয়ায় মৌসুমী বায়ু পাহাড়ের উপত্যকায় বয় তবু তার প্রভাবে বৃষ্টি খুব সহজেই ঝরাতে পারে না, কেবলই রোদ আর মেঘের লুকোচুরির মানচিত্র এঁকে স্নায়ু শক্ত রেখে আশ্বাস দিতে পারে
যা কিছু যত কঠিনই হোক না কেন, তা সত্য বটেই!
আর এই সত্যকে ঘিরেই মানব জীবনের দৈনন্দিন নগরদোলা, তবু বর্ষবরণ করতে ভুলে যায়নি কেউ—প্রতিটা বছর বোধহয় একই ভাবে একই জায়গায় সময়, ঘা দিতে পারেনা
গতানুগতিক বেড়ে ওঠায় বদল হওয়া দরকার, কিছু বদল পায়ের তলার মাটি শক্ত করে দেয়, কিছু না পাওয়ার ক্রম— দেওয়ার অঙ্গীকার আবদ্ধ করে নেয় আর তারপর? এ মানব জীবনে আর কোনো অভিলাষ কিংবা আফসোস থাকে না।
বিসর্জনী শিবিরে ফিরে আসে না কেউ, শীতের কুয়াশায় মিশে যায় পাওনাদার মূর্তিদের ডগা।
কাদা ছোঁড়াছুঁড়ির আখড়া পেরিয়ে, এক ঋজু ভোরের আলোয় তার মুখোমুখি হয়ে দেখো মনে পড়বে কি তার এমন কোনো ব্যবহার, যে ব্যবহারে তুমি তোমার থেকে আলাদা হয়েছিল? যে ব্যবহারে, সে তোমার পাশে বসেও তোমায় অনাশ্রিত, অসহায় নির্জনতা অনুভব করিয়েছিল!

-

রেশ রেখে যাওয়া শেষ, এ বছর কি কি শিখলাম, বলি? তা বেশ—
১) মানুষ বড় চলরাশি, মতিভ্রমে কখন কি ঘটে কি জানি,
যে যেমন তাকে তেমনই গ্রহণ করা ভালো, এখন তা মানি।
২) তোমার কর্ম তুমি করো ভাই, কত কথা বলবে কত জনে
নাক কান কেটে, বডি লোশন মেখো, তবু কথা মেখো না মনে।
৩) সময় নৈঃশব্দেও বাচাল ভীষণ, সময় সবারই ফিরে আসে
আত্মবিশ্বাস জড়িয়ে নিলে বাকি বাহ্যিক যা কিছু কর্পূরের মতন ভাসে!
৪) এগিয়ে যাওয়া ভালো নিজের ছন্দে, ছন্দপতনের খোঁজ রাখে কে?
তুমি না চাইলে তোমার ভেতর ঘর দখল করার ক্ষমতা রাখে সে?
৫) বয়স বাড়ে বয়স ক্রমে, নিঃসন্দেহে বাতিলের তালিকা বাড়ুক তত
তাদের মতন বানাতে পারেনি তোমায়, আদতে মানুষের ব্রহ্মাস্ত্র তাদের অতীতের ক্ষত।

-

||অভিশাপ||
প্রিয় দিদুন,
আশীর্বাদ আর অভিশাপের কাটাকুটি খেলায় বয়ঃসন্ধিকাল পেরিয়ে
অভিশাপগুলোই আশির্বাদ হয়ে জিতে গেছে।
জানতো বাগানের একটা গাছের গোড়ায় পোকা
ধরেছিল বলে মা সেটা গোড়া থেকে ছেঁটে দেয়—
গাছটা হয়ত মরে যেতে পারতো,
কিন্তু নিয়তিই আগলে নিল একপ্রকার।
ফুল, ফল দেয়নি বলে ওরা বলেছিল গাছটা বাজে, পোকা গাছ
কিন্তু ওরা জানেনা, বাঁচতে আর বাঁচাতে গেলে ওসব ছাঁটতে জানতে হয় সময় মতন
আর গোড়া থেকে হলে? তবে তাই!
গাছটা এক জীবনেই জন্মান্তরে জেগে উঠল
এবার তুমিই বলো, গাছটার জন্য সেটা আশীর্বাদ নাকি অভিশাপ?
ইতি তোমার ছোটো মেয়ের উড়নচণ্ডী অভিশপ্ত নাতনি।

-

তারপর অপালা দেবী আরেকবার কাঁচ নামিয়ে সামনের কোট পরা মানুষটাকে শিথিল কণ্ঠে হেসেই নাট্য মঞ্চের শ্রেষ্ট ডায়লগ আউড়ে দিল। সেই একই মেজাজ, একই তীব্রতা, একই জেদের আগুন দুচোখে, টিকে থাকার অদ্ভুত ক্ষুধা আজও—
"কারোর দুশ্চরিত্রের নায়িকা হওয়ার চেয়ে, সৎ চরিত্রের খল নায়িকা হওয়াটা বেশি পছন্দ করি নায়েব মশাই। দিনশেষে যখন মুখোশটা খুলি চার দেওয়ালের এপারে, আমার আয়নার কোনো অভিযোগ থাকে না। না আফসোস। এর পরেও কোটি কোটি টাকা, বাড়ি, গাড়ি, রূপ, ইনাম, সহরাত, ইমারত ছাড়াই কেমন আছি জিজ্ঞাসা করবেন?!"

-

||অপরাজেয়||
এখন কেউ আর অতটা দুঃখ দিতে পারে না, যতটা দুঃখ পেলে পাওয়ার কোনো চাহিদা নেই, আর না পাওয়ার কোনো অভিলাষ? ইস্তফার দলে।
বস্তুত যেটুকু খলামকুচি উড়ে বেড়ায় মুঠোফোনের পর্দায়, ফালা ফালা বিচ্ছুরিত বিদ্যমান প্রেক্ষাপটে এক প্রাক্কালের রঙিন শৈশব—
ঝলমলে, হাসিখুশি, ক্যাবলার সঙ্গে ছ্যাবলা, আবার আঁটোসাঁটো খামখেয়ালী ফিনিক
ভূ- ভারতে যারা আনুকূল্যের সাঁকো পেরোতে পেরোতে আয়নার হাত ধরতে শিখে যায়,
তাদের ফিরে "আয়... না...", বললেও তারা ফিরে তাকায় না।
তাদের জন্য ভাওলিন কিংবা শীতের ফাটলে বোরোলিন কোনোটাই বরাদ্দ থাকে না,
শুধু তারা গোপনে টেলারিং শিখে যায়, ভাঙার আগে কতগুলো হৃদপিণ্ড আদতে জুড়তে চায় সেটা বুঝতে শিখে যায় অনাহাসেই— সময়ের হেফাজতে।
তুমিও না হয় তোমারটা বুঝে নিও, "যা, যা গেছে তা যাক...", বলেই তো কাটিয়ে দিলে এক এক প্রলয় ঠাণ্ডা পাহাড় হয়ে, না হয় আরও কটা ডিসেম্বরে ঝরতে দিও মরা পাতা, নতুন শিকড় পুঁতবে বলে— নতুন আশায় বাঁচবে বলে
না হয় হলে মুখ চেনা তবু অপরিচিত, মহত্তম, একরোখা, অটল, দুর্দম্য, অপরাজেয়।

-

.........

-