'সে-ই মেয়েটি'

লাল পাহাড়ির ওই যে দেশে, এক রূপসী মেয়ে আছে;
মনটা আমার চুরি গেছে, সে-ই মেয়েটির কাছে।

সে-ই মেয়েটি, চোখ দু'টো তার পদ্মপুকুর;
কাঁচা বয়স যেন, বাদলধারার টাপুর টুপুর!

সে-ই মেয়েটি, ক্ষণিকের চোখাচোখিতে;
তার আগুন রূপে, দৃষ্টি আমার পুড়েছিলো।
লালমাটির ওই পথের বাঁকে,
সে-ই মেয়েটি অতর্কিতেই, হারিয়ে গেলো!

সে-ই মেয়েটি, পায়ে ছিলো তার রূপোর নূপুর;
মাতোয়ালী ঠোঁট যেন তার, গহীন অন্তঃপুর!

সে-ই মেয়েটি, বৃষ্টি ভেজা সোনার অঙ্গে;
তার উপচে পড়া যৌবন ছিলো।
নদীর মত এঁকেবেঁকে,
সে-ই মেয়েটি হঠাৎ করেই মিলিয়ে গেলো!

সে-ই মেয়েটি, চুল ছিলো তার মেঘলা দুপুর;
স্রোতস্বিনী বুকে ছিলো, ভাটিয়ালী সুর!

সে-ই মেয়েটি, ছোটগল্পের শেষ পাতায়,
রেখে গেছে বিষণ্ণতার রেশ।
হৃদয়ের ভূখণ্ডে আজও,
সে-ই মেয়েটির উপনিবেশ।

-

শৈশব জুড়ে, যার স্বত্তা আছে মিশে
চলে গেলেন তিনি, না ফেরার দেশে।

-

শিমুল -পলাশ -কৃষ্ণচূড়া; নিবিড় সবুজে সবুজে ঘেরা আমার প্রাণের গাঁ,
কাঁচা মেঠো রাস্তা গিয়ে মিশেছে গাঁয়ের শেষে নদীর চড়ায়,
পথের দুধারে সবুজ বনানী যেন মাথা নত করে রাখে পথিক কে আলিঙ্গন করবে বলে,
চারিদিকে ছড়িয়ে থাকে বিশুদ্ধ বাতাস, চোখে-মুখে লাগে বাতাসের গন্ধ,
খোলা আকাশে চাঁদ -তারাদের গুনগুন গানে ঘুম নামে দু-চোখে,
তন্দ্রাবেশ ছাড়ে পাখিদের কলতানে,
দূরে ধানের ক্ষেতে চোখে পড়ে কৃষকদের নব সৃষ্টি......
নদীর জলের সাথে ভেসে আসে কোনো এক মাঝির ভাটিয়ালী সুর,
বেলা শেষে উদাস হয় মন.....অগোছালো হয় মনকেমনের দেরাজ,
কথা ছিল সেই লালমাটি বিছানো মোরামের পথে একসাথে হেঁটে যাবো!
ছুঁয়ে দেখবো সবুজ ধানের আগায় শিশির বিন্দু;
কান পেতে শুনবো নদীর গান হিজলের ধারে বসে;
তুমি কথা রাখোনি....কত যুগ কেটে গেল তোমার অপেক্ষায়...
ক্ষনিকের আগুন্তুক ছিলে বোধহয়,
আজ উদভ্রান্ত পথিকের মতো ঘুরে বেড়াই গভীর বনের ছায়,
জোনাকির ঝিকিমিকি আলো ম্লান হয়ে আসে চোখে....
ঋতু আসে, ঋতু যায়... গ্রামের ছবি বদলায়,
ছড়ানো দুঃখগুলো ধূসর ক্যানভাসে জলছবি এঁকে যায়,
চোখের জলে ঝাপসা হয়ে আসে অতীত স্মৃতিগুলো;
আলমারির কোণে পড়ে থাকে তোমার দেওয়া হলুদ জামদানী শাড়িটা,
তুমি তো কথা রাখোনি...

-

//প্রেমের উপনিবেশ//
শহরের পথ শেষ করে তুমি
হেঁটে চলো 'লালমাটি'র পথ ধরে।
চারিদিকে সবুজঘেরা বনাঞ্চল,
তারই মাঝেই ছোট্ট এক পাহাড়।

পাহাড়ের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে,
অজানা এক স্রোতস্বিনী নদী।
বড়ো স্বচ্ছ, শীতল জল তার,
তার তীরে গোচারন করছে কত রাখাল।

নদীর তীর বরাবর হেঁটে এসো,
বাঁমদিকের কাঁচা পথ ধরে।
রাস্তার দুধারে সারি সারি পলাশ,
ফুলে ফুলে ভর্তি ডালগুলো।

কাঁচা রাস্তা শেষে এবড়ো খেবড়ো পথে,
উঠে এসো পাহাড়ের সব থেকে উচুতে।
এই পাহাড়েই ভাটিয়ালি' গানের সুরে,
গড়েছি আমি প্রেমের 'উপনিবেশ'।

-

সবুজে সবুজে ঘেরা এই ছোট্ট আমার গ্রাম -
হেথা লালমাটি পথ গিয়েছে বেঁকে,পলাশপুর তার নাম।
মাঠের পর মাঠ ভরেছে কনক ধান্য শোভায় -
আঁকাবাঁকা ঐ শ্যামলা নদী, কলকল রবে বয়ে যায়।
মাঝিরা গাহে ভাটিয়ালি সুর, প্রভাতের স্নিগ্ধ সমীরনে,
হেথায় বাউল বাঁধে মাটির গান, তার একতারাটির সনে।
পাখিরা তোলে সুমধুর কলতান, স্নিগ্ধ ঊষার প্রাতে -
সাঁঝবাতি জ্বলে তুলসী তলায় সন্ধ্যা নামার সাথে।
প্রকৃতির এই অপরূপ শোভা পলাশপুর নিয়েছে অন্তরে এঁকে,
কোনো আগন্তুকের পরেনা চরণ, এই লালমাটিরই বুকে।

-

পিচের রাস্তায় পৃথিবী ভরেছে; ভুলেছি 'লালমাটি',
কবির লেখায় পূর্নিমার চাঁদ হয়েছে ঝলসানো রুটি।
দাঁড় হাতে নিয়ে মাঝিরা এখন আর গায়না 'ভাটিয়ালি',
সূর্যের তাপে নদী পুড়েছে, পড়ে আছে শুধু চোরাবালি।
চোখভরা স্বপ্ন ধুঁকতে থাকে, অনাহারে কাটে বেলা,
অহংকারী টাকার চাপে পিষে যায় গরীবের 'একতলা'।

-

'লালমাটি' পথ চলে, পাশে নদীজল,
'ভাটিয়ালী' সুর শোনা যায় দূরে ওই;
আঁকাবাঁকা পথ ধরে যার চলাচল,
'আগন্তুক'য়ের দেখা তার মেলে ক‌ই!

-

তোমার জন্য হাসতে শেখা..
তোমার জন্য মনখারাপের দুপুরে,
একটু ভালো থাকা...
আজ নক্ষত্রপতন হলেও,
আমাদের মনে সবসময় থাকবে
বাঁটুল দা, নন্টে-ফন্টে আর হাঁদা-ভোঁদা।

-

শৈশব হারিয়ে গেল আজ। যেখানেই থাকুন,
ভালো থাকুন। প্রণাম, গুরুদেব!

-