তোমার প্রিয় শহরে তোমারই কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছেনা।
যে শহরের আলো বাতাসে তোমার বেড়ে ওঠা, সেখানেই কিনা তুমি গুম হয়ে গেলে?
গোধূলি জুড়ে লালের আভা দেখে আমার ভয় করে, ওই লালে কি তোমার রক্ত মিশে আছে?
তুমি, তোমরা ন্যায্য দাবী নিয়ে রাস্তায় নেমেছিলে,
তোমার কয়েকশ ভাই-বন্ধু বুলেটের আঘাতে শহীদ হলো।
তাদের লাশ রাস্তায় পড়ে ছিলো, শুধু তোমাকে আর খুঁজে পাওয়া গেলোনা...
কোথায় হারিয়ে গেলে?
সবুজের বুকে বুলেটবিদ্ধ হয়ে অস্তমিত সূর্যের মত ঢলে পড়েছে যারা,
ঘুমের দেশে সকাল হলে, তারা কি আবার জেগে উঠবে?
ঘুম ভেঙে মা-কে গিয়ে বলবে 'মা, আজকে ভুনাখিচুড়ি খাবো....'
সন্তানের জন্য এসব মায়ের প্রতীক্ষা কী কখনো শেষ হবে?
ওহ! তুমি কী করে বলবে, তুমি তো গুম হয়ে গেছো।
তোমার প্রিয় স্বদেশ,
স্বাধীন, সার্বভৌম দেশে তুমি গুম হয়ে গেছো, একটা ন্যায্য দাবীর জন্য।
আচ্ছা তুমি বেঁচে আছো তো?
তোমার মায়ের চোখে যে আর কোনো পানি অবশিষ্ট নেই।
আছে শুধু ঘৃণা আর ধিক্কার...-
Doctor💉
Love poetry📚
পাহাড়কে চিঠি লিখতে বসি, শহর জুড়ে শুষ্ক বাতাসে কী ভীষণ ক্লান্তি ভর করে...
সবুজের সমারোহ পেরিয়ে পিচ ঢালা রাস্তায় পরিচয়ে আসে যারা,
তারা হলুদ পাতায় লিখে যায় মনের গোপন কথা।
খেলার ছলে কেউ কেউ সেই হলুদ পাতা কুড়িয়ে পায়,
কিন্তু মানুষটা হারিয়ে যায় ভীড়ের স্রোতে।
কোথাও ঝর্ণার মত কথা ভেসে যায়,
কোথাও কথার মত ছুরি গেঁথে যায়...
শুধু লাল পথের পলাশ গুনে রাখে মন-বদল
আর রঙ বদলে কে লাল থেকে হলো নীল, কে নীল থেকে হলো লাল।
প্রকৃতির হিসেব বলে কথা...
পৌষের আরাধ্য উষ্ণতা যে বৈশাখে অযথা।
তবুও শূন্যের শূন্যতায় তলিয়ে গেছে যারা,
তাদের জন্যও আদর তোলা থাকে, ছুটির দিনে গল্প হয়।
শুধু তারা জানেনা...
অযত্নে মৃতপ্রায় কাগজের ফুল, ফুরিয়ে যাওয়া আতরের শিশি,
পাহাড়ের পাদদেশে চুপি চুপি ঘুমিয়ে পড়ে।
শুধু তারা জানেনা,
কাগজের ফুল জলরঙে নিজেকে রাঙাতে পারতো,
আতরের শিশিতে আবার আতর ভরা যেতো।-
রাইতে চেরাগের ফকফকা আলোতে তোমারে পরীর লাহান লাগতাছিলো,
তুমি যহন আমারে দরদ দিয়া টিনের থালায় ভাত বাইরা দাও মনে অয় আমি এক রাজার পোলা।
আমাগো শানশওকতের অভাব আছে, তয় মহব্বতের অভাব অয়নাই কহনো।
উডানের কাদাপানিত্ শামুকের দল কিয়ের মিছিল করতাছে বুঝবার পারতাছিনা।
আইজ গঞ্জে যাইয়া হুইনা আইলাম শহরে কী জানি গন্ডগোল হইছে।
পাকিস্তানিরা নাকি আমাগোরে বাংলা ভাষায় কতা কইতে দিবার চায়না।
ছুডুবেলায় আম্মা সোনার নথ নাইড়া নাইড়া রাজারাণীর কিচ্চা হুনাইতো।
হেই কিচ্চা হুইনা আমি আর মিয়াভাই নিজেগোরে রাজারপুত মনে করতাম।
এই ভাষায় আম্মার গায়ের গন্ধ লাইগা আছে...
আমি শহরে যাইতাছি, বাংলা ভাষার লাইগা মিটিং মিছিল হইবো হুনতাছি।
মিছিলে বেবাকের সামনে যাইয়া চিক্কুর পারুম...
নইলে তোমারে পরী ডাকুম ক্যমনে কও?
২১/০২/১৯৫২-
আবদারের বারুদ জ্বলে ডাক চিঠির নীরব কথায়,
ছোট ছোট ঢেউ, নিয়ে আসে কেউ অজানা ব্যথায়।
শঙ্কারা শহিদ হবে তোমার রাতজাগা কবিতার ভোরে,
অজ্ঞাতনামা ভ্যালেন্টাইন, তুমি ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁয়ে দিলে।-
তোমার মাহিন একদম চুপ হয়ে গেছে। হ্যাঁ, আমাদের বড় মেয়ে যার জন্মদিন তোমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দময় দিন ছিলো। প্রিয় বাবার মৃত্যু কী করে সইবে আমার ছোট্ট মেয়েটি? তুহিন তো কিছুই বুঝতে পারছেনা। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। আর একটু পর পর বা.. ব্বাহ.. বা... ব্বাহ... ডাকছে। আমি কী জবাব দেবো, তোমার মেয়েদের? বলে দাও আমায়... তুমি যে আমাকে অসীম সমুদ্রে ফেলে গেলে মতিউর!
আমাদের বিয়ের রাতে তোমার উপহার দেয়া কাঠের বাক্সটি খালি পড়ে আছে। সেখান থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে জোনাকিরা বের হয়ে আর তারার ফুল ফোটায়না। আমি সত্যিই আগে কখনো খেয়াল করিনি, তোমার কন্যাদের শরীর থেকে তোমার গায়ের ঘ্রাণ আসে। তোমার ছোট কন্যাকে বুকে জড়িয়ে আছি। আর অশ্রুতে দু'চোখ ভেসে যাচ্ছে। তোমার ঘ্রাণে বুঁদ হয়ে তোমাকে লিখছি...
(সম্পূর্ণটা ক্যাপশনে)-
ভেজা হাওয়ায় উড়িয়ে আঁচল-
তোমার খবর আনলো ডেকে
হলদে পাখির নরম পালক।-
কোথাও একটা দ্বিধার মফস্বল গড়ে উঠেছিলো।
প্রিয় অধ্যায় লিখতে যেয়ে কলমের কালি ফুরোতেই
মনে হলো, এই দাবদাহের উপশম তোমার কাছে।
যেমনটা চাইতে পারি, সুখের মতো মরসুমি ফুল
অকস্মাৎ গড়িয়ে পড়লে আঁচলে
মিটিয়ে নেয়া যেতো একান্নবর্তী অভিমান।
অত:পর শ্রাবণ এলো যে পথে,
মায়ার চাদর টেনে টুপ করে অলকানন্দা রোদ
লুটোপুটি খেলো কোলে।
যে রকম বয়ে গেছি এতদিন তোমাকে না দেখার অভিশাপ...
ভরসা দিলে, অন্ধচোখে এইটুকু মিথ্যে আলো
সত্যি ভেবে আগলে নিতাম।-
ম্যাপল পাতার শহরে শুভ্র মেঘের আনাগোনা,
সময় দেওয়া আছে কখন কার ঘরে ঝরবে বৃষ্টি-
কার ঘরে খরা...
অপেক্ষার রাতগুলো কেটে গেলে,
আয়না বসানো রাস্তায় তাকিয়ে দেখো, ভাঙা মুখ-
কীভাবে পেরিয়েছো মেঘলা শোক।
এ বুকে গোলাপের সারি নিয়ে অনর্থক পাহাড় পুষি...
তোমার ঠোঁটে কাজল বিসর্জন দিয়ে,
পাগল হতে যেয়েও হইনি।
এই যে আকাশে আলো-আঁধারের খেলা যেমন পালাক্রম,
তেমনি হাসি-কান্না...
তুমিও, পরবর্তী শোকের জন্য বাঁচিয়ে রেখো বৃষ্টিমন।-
তোমার কোলাহলের সামনে স্তব্ধতা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি...
তুমি সরব চোখে তাকালে, আরও বেশি কুঁকড়ে ঢুকে পড়ি তোমার নিবন্ধিত বুকে।
জানিনা কতটুকু জড়তায় বলা যায়না ভালোবাসি...
তবে তুমি এলোচুলে কৃষ্ণচূড়া গুঁজে দিলে,
তোমার পাতে গরম ভাত বেড়ে দিতে পারি।
হ্যাঁ আমি স্বাধীনতা খুইয়েছি...
সাবেকী আঘাতে ক'ফোঁটা শান্তির জল ছিটিয়ে তুমি,
আমাকে দ্রবীভূত করে নিয়েছো তোমার ইচ্ছেরাজ্যে।
আর আমি চূড়ান্ত কয়েদী হয়েছি খেলনাবাটি সংসারে...
তবু তোমার প্রজ্জ্বলিত আলোতে যে অদ্ভুত মায়া, তা এড়ানো যায়না।
এড়িয়ে যেতে পারিনি বলে, এই স্বেচ্ছামৃত্যু বেছে নিয়েছি।
সেদিনের মত যদি আবারো জিজ্ঞেস করো,
কতটা ভালোবাসি তোমায়...
ভেবে নিয়েছি বলবো, "যতটা ভালোবাসলে কবিতা ছেড়ে চলে যায়..."-