শায়েরী ভালো লিখতো নীতি। কমলাদেবী মেয়ের ডাইরির পাতাটা ওলটাচ্ছিলেন। চোখ আটকে গেল "ছোটি সি বাত" কবিতাটায় এসে।

গত বছর এই ডিসেম্বরের শীতে মেয়েটা বেড়িয়েছিল বন্ধুদের সাথে। ফেরেনি আর।

অপেক্ষার রাতগুলো সত্যিই বড্ড কঠিন। খোলা জানালার দিকে তাকান কমলা দেবী।

হঠাৎ খেয়াল করেন কমলা দেবী ঘামছেন ভীষণ। দু-এক পশলা বৃষ্টি হলে ভালো হত কি?

-

"ছোটি সি বাত হ্যা, মুঝে তুমসে প্যায়ার হ্যা..." উদাত্ত কন্ঠে ভুল লিরিক্স গাইছে নক্ষত্র... 'তাদের' রান্নাঘরে।
পূর্বের খোলা জানলা থেকে আসা জ্যোৎস্নায় ভেসে যাচ্ছে 'তাদের' বেডরুম।
দু-এক পশলা বৃষ্টিতে প্রাণবন্ত 'তাদের' বাগানের নয়নতারা।
বছরপাঁচেক ধরে ভাড়াবাড়িতে নিজেদের পরিশ্রমে নিজেদের বাড়ির যে স্বপ্ন তারা দেখত আজ তা পূরণ হলো।
এই রাত তিথিদের অনেক অপেক্ষার রাত।

-

খোলা জানলার ধারে বসেছিল কাজল, হঠাৎ চোখদুটো ঝাপসা হয়ে এলো মিলিটারি স্বামীর স্মৃতিচারণায়।
আজকাল ঝুপঝাপ দু-এক পসলা বৃষ্টি নেমে আসে কাজলের চোখে।
তিনমাস আগে বর্ডার থেকে স্বামী শেষবার ফোনে বলেছিল, " হামারে প্যায়ার মে দূরিয়াতো ছোটি সি বাত হ্যায়, আর কয়েকটা অপেক্ষার রাত, তারপর তোমার কাছে থাকবো"।
পরেরদিন খবর এসেছিল বর্ডারে হামলার। কাজলের অপেক্ষার রাত আজও চলছে ।

-

-- আরে ইন্দু, এসব তো ছোটি সি বাত আছে; এলাইনে ওপরে যেতে গেলে থোরা বহুত কম্প্ৰমাইজ তো....
-- হুম ।।

এই অপেক্ষার রাতটুকুর শেষ হওয়ার প্রতিক্ষা,
ভোরের সাথেই উজ্জ্বল হবে ওর ভবিষ্যত ও ।
খোলা জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো ইন্দ্রাণী, দু-এক পশলা বৃষ্টি হচ্ছে বোধহয়; নাকি সবটুকুই ভ্রম !

-

ছোটি সি বাত -- না না তা কেন হবে, প্রায় অর্ণবের শার্টে লিপস্টিকের দাগ দেখতে পায় নীরা, ব্যাপারটা আর ছোট নয়।

সদ্য দু-এক পশলা বৃষ্টি হলো, খোলা জানালার ধারে দাঁড়িয়ে নীরা ভাবতে থাকে অর্ণবের পরিবর্তনের কারণ। এখনও অর্ণব বাড়ি ফেরেনি, আজও অপেক্ষার রাত।

ক্যান্সারের লাস্ট স্টেজ অর্ণবের, সে চায় নীরা তাকে আরও বেশি ঘৃণা করুক।

-

আর একটা অপেক্ষার রাত। কাল খোলা জানলা দিয়ে নতুন সূর্যালোক প্রবেশের সাথে, নতুন জীবনের শুরু ওদের...
হঠাৎ টাচস্ক্রিনে, কুলজিৎ কলিং...
-"বলো"।
- "বাস ছোটি সি বাত... তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি"।
কুলজিৎের মুখে প্রথম বাংলা...স্বাগতার চোখে দু-এক পশলা বৃষ্টি।
চার বছরের অপেক্ষা... অনেক লড়াই.. শেষে ননবেঙ্গলিকে জামাই মেনেছেন স্বাগতার গোঁড়া বাঙালি ব্রাহ্মণ পরিবার। কাল ওদের বিয়ে...

-

খোলা জানালা আটকে ফুলন বলল - ছোটি সি বাত! বেচ ডালা হামে বেইশ্যা টোলি মে,কমসে কম আপকি জয়সি ইসকা বিবি হোনে কা সাজা নহী দিয়া!

মৈত্রী বলল - আমার রাতগুলোও অপেক্ষার রাত।তুমি খরিদ্দারের অপেক্ষায়,আমি অত্যাচার সমাপ্তির।বাঁচার লড়াই।

- ফির, কেক দোনো একসাথ কাটেঙ্গে ।


তারপর, পুরুষদেহে বিধাঁনো ছুরির ফলাটা দু'এক পশলা লাল বৃষ্টি ঝড়াল।

-

-"ছোটি সি বাত..."
-"না না বাবু ভুল হচ্ছে ছোটিসি পঙ্ছী..ছোট্ট ঠোঁটে রে.."
ছেলের মুখে প্রথম শব্দ আসা থেকে তার ফ্লাইটে ওঠা অবধি বাবা তার সর্বদা পাশে থেকেছে।
আজ খোলা জানালার দিকে তাকিয়ে অপেক্ষার রাত কাটে!
বাইরে দু-এক পশলা বৃষ্টি পড়ছে, সাথে দীর্ঘনিশ্বাসও!!

-

আজ সেই শেষ অপেক্ষার রাত,

রজনীর চোখ ছলছল করে উঠলো, অর্ণব কাল দেশে ফিরবে।
খোলা জানলার সামনে দাঁড়িয়ে স্মৃতি রোমন্থনকালে রজনী দেখলো বাইরে দুএক পশলা বৃষ্টি হচ্ছে।
হঠাৎই মনে পরে গেলো ....
-"৬ বছর দূরে থাকবো ,ছোটি সি বাত" ।
মায়ের মনটা যেন আবারও হুঁহুঁ করে কেঁদে উঠলো।

-

ছেলেবেলায় আলাদা হয়েছিল দুই বন্ধু। শুভ বিদেশে পড়তে গিয়েছিল। কুড়ি বছর পর কাল শুভ এদেশে ফিরছে। আজকের অপেক্ষার রাত যেন শেষই হচ্ছে না তৃণার। খোলা জানলা দিয়ে সূর্যের আলো ঢুকতেই এয়ারপোর্টে তৃণা... প্লেন থেকে নেমেই তৃণাকে জড়িয়ে শুভ বলে," এক ছোটি সি বাত কহুঙ্গি! বিয়ে করবি আমায়?" তৃণার চোখে তখন আনন্দের দু-এক পশলা বৃষ্টি।

-