শহর যে আজ মেঘে ঢাকা,
চাই তুমুল বৃষ্টি নামুক!
তুমি আমিতে ভিজবো দুজন,
সাথে ঝরো ঝরো দৃষ্টিসুখ ।।-
দূরে জানলার রোদে–
ঘাই মারে জলফড়িং
বিষন্ন অক্সিজেনে,
ক্লান্তিহীন...-
।।পর্ণমোচী।।
চিরহরিৎ, কেমন আছো?
এই দেখো, একগাল গুরুগম্ভীর ধোঁয়ায় কেমন নেশাটা কাটিয়ে নিচ্ছি।
সবাই বেদনা লুকোতে চায়, গিলে খেতে চায় আগুন;
আমরা কিন্তু ফাগুনের জ্বলন্ত নদীর কথা ভাবি,
হাত ধুয়ে নিই জলে
দুজোড়া চোখ নিঙড়ানোর পরে...
চিরহরিৎ, আমরা তোমাদেরই কথা ভাবি!
চিরহরিৎ, তোমাদের দেশে রাজনীতি আছে? নির্বাচন হয়?
তোমাদেরও কি ক্ষুধাতুর দিন যায়? আন্দোলনে নামো?
বেকারত্বের জ্বালায় কি মিথ্যে আশায় ভোলো?
চিরহরিৎ, তোমরাও আবার পর্ণমোচী হয়োনা যেন!
আমরা পর্ণমোচী; আমাদের শরীরে শুধু শীত বাড়ে।
উনিশের নামতায় লুকিয়ে রাখি খুচরো যৌনতার এনথু।
আলো-আঁধারের মাঝে বেদনার ছেলেমানুষী ঢঙে
খুঁজে বেড়াই একমুঠো রোদ আর মানানসই মৃত্যু!
তবু হু-হু করে হেঁসে উঠি, কেঁদে ফেলি
যখন দোলনচাঁপারা দোলে,
আমরা পর্ণমোচী; তাই তো মরে মরে বেঁচে উঠি
কাঁচা কাশবনের হিন্দোলে।
-
শারীরিক
এমনই কোনো দানবীয় সন্ধ্যায় তোমার শরীর যখন কথা বলেছিল,
যখন বিজাতীয় ধ্রুবতারার ও রাগমোচন হয়েছিল লাজুক কষ্টের কথা ভেবে,
যখন ঝড় উঠেছিল উদ্দাম ঝরাপাতার নগ্ন উল্লাসে,
তিলোত্তমা, তখনও তোমার মন কথা বলেনি।
যখন পতনের ধ্বনি বাজে উত্থানের পাশে,
যখন সভ্যতার বীজ আসে শরীরের মেঠো ঘাসে,
অন্ধকার বেলাভূমিতে যখন সময় থমকে আসে,
তিলোত্তমা, তখনও তোমায় খুঁজে পাইনি।
তাই তো সময় আমার স্ব-ময় হয় না বহুদিন....
চলতে থাকে নতুন-পুরোনো খেলা, বাকিসব বে রঙিন।
ক্ষুদ্র জ্ঞানে যেটুকু বুঝি, অশনি আমি, যাত্রী মহাকাল,
তুমি তো আকাশের মেঘ, আজন্ম মাটির তাল।-
শরীর বোঝে, মনও বোঝে - আশা,
বোঝে হামাগুড়ি দেওয়া গুমোট ভালোবাসা;
প্রতিনিয়ত তবু স্বপ্ন ভোলার ছলে
কেন বান ডাকো চোখের গহীন জলে?
কল্পনা আর বাস্তবের এই খেলায়
রোজই জয় খুঁজি অলীক কিছু পাওয়ায়।
নিঃশ্বাসেতে পারদ মিশিয়ে যদি দিলে..
হারছি না তাও ; খ্যাতির তহবিলে
দান করেছি যে নষ্ট স্মৃতির হীরে।-
শিশির ঝরা অলস সকাল গুলোয়
ছড়ানো ছিটানো আবীর মাখা রোদে
মিশে যায় যদি হঠাৎ হারিয়ে যাওয়া...
মনে বেঁধো ঘর, প্রেমে নিরবধি।
তোমার চুলে মুখ লুকিয়ে হাওয়া
সুখের পালে আশকারা চায় যদি,
তবে কেন আর তোমার ভয় পাওয়া?
নিবিড় হৃদয়ে সামলে রেখো নদী।-
এমনই আধোঘুমে শীতের প্রাচীন পর্দা ফুঁড়ে
যখন তুমি উঁকি দাও রাতের আকাশে
তারাদের হরিজন্টাল লাইন জুড়ে,
প্লাবনের মতো থৈ থৈ করে বেড়ে ওঠে বোধেরা;
আমি তখন মানুষ-খোলস ছেড়ে ব্রহ্মা হয়ে উঠি।
উল্লাসে নেচে ওঠে নদীরা, চলকে ওঠে প্রাণ-মদিরা....
তখন কি তোমার মনেও পদ্ম হয়ে ফুটি???
বাসা বাঁধতে পারে কি অনুচ্চারিত শব্দেরা
তোমার নাভীকূপের অতলে...
শক্ত হাতের তালুতে, দুনিয়াময় প্রেমে?
তিলোত্তমা, তোমায় তাই তো বলি
এলোমেলো নীল দেখিওনা আর।
কাক-ডাকা বিকেলে হঠাৎ ডাক না দিলে
সাদায় কালোয় থাকে ভয় হারাবার।।
-
এসো ঝরো ঝরো বৃষ্টিতে যদি মন কাঁদে,
এসো তবে কমল-শ্যামল ছায়ায়,কোনো এক বর্ষায়;
আমি আর চাতক নই...
বুক ভরা তেষ্টায় কোনোক্রমের চেষ্টায় উড়তে থাকা ক্লান্ত এক কাক।
জল ভরা দৃষ্টিতে প্লিজ ফিরে এসো এই বর্ষায়!-
নিজগণিত
পর্ব-১
আমি আমি নই, নই অন্য কেউও,
আমি এর মাঝামাঝি একটা কিছু:
যে ভালবাসে দূরত্ব আর মরীচিকা,
যে ভালবাসে খরস্রোত আর জন্মভূমি....
ভয় পাই আমাকে। আমি কে? এলাম কোথা থেকে?
ইতিহাস বলে আমি নাকি এক অতি সক্রিয় অণু!
অন্ধকার রাতে জ্বলন্ত মশালের মতোই উন্মাদনা আছে আমার।
ঠোঁটে রক্ত আর ঝড়ের গান অনুভব করতে করতে
উড়ে চলি ঘূর্ণি হাওয়ায় ছেঁড়া কাগজের মতো....
ইতিহাস বলে আমি মানুষ, আমি কলঙ্কিত,
আমি নষ্ট করি সভ্যতার আদিম শুচিতা যতো!
ক্রমশ....-
আনকোরা এক কলম আমি, শব্দ খুঁজে বেড়াই রোজ;
এখানে কমা, ওখানে দাঁড়ি, তুমি মরমিয়া থেকো নিখোঁজ।-