এখন মাঝরাত,আকাশ আজ খুব পরিষ্কার,মাঝে মাঝে দু-চারটে মেঘের আনাগোনা চোখে পড়ছে..দোল-পূর্ণিমার জ্যোৎস্নার আলোয় চারদিক ধুয়ে যাচ্ছে,এক অনন্য–সুন্দর পরিবেশ।বেশ খানিকক্ষণ বসতে বসতে একরাশ পুরোনো স্মৃতি ভিড় করে এল,কবেকার সব কথা।টুকু চাঁদ দেখতে কত ভালবাসত।প্রতি পূর্ণিমায় ওকে নিয়ে ছাদে আসতেই হবে,নইলে সে কি অভিমান।টুকু আমার স্ত্রী,ভালো নাম অনিন্দিতা,অত বড় নাম আমার পছন্দ নয় বলে এই সহজ-সরল নামখানি আমার-ই দেওয়া।টুকু আমায় ছেড়ে চলে গিয়েছে তাও নয় নয় করে বছর পঁয়ত্রিশ হল।
তখন দুই ছেলে মেয়েকে নিয়ে আমার দিশেহারা অবস্থা,বাচ্ছাগুলোর মুখ চেয়ে আবার বিয়ে করলাম।আমার নতুন বউ এর নাম শেফালী।বড় ভালো মেয়ে, খুব বিচক্ষণ,একা হাতে আমার ভেসে যাওয়া সংসারটাকে সামলেছে,ছেলেমেয়ে আজ বিদেশে,এর পুরো কৃতিত্বই ওদের নতুন মায়ের।কোনো দাবি নেই শেফালীর,না আছে কোনো অভিযোগ,সারাদিন হাসি মুখে সবার জন্য করেই যায়।
আর আমার টুকু,ওর জন্য অফিস থেকে ফেরার পথে বকুল ফুল আনতে হত আমায়,না আনলে সে কি কান্না.ওকে কি করে বোঝাই যে সারাবছর বুকল ফোটে না..আমিও কোথাও যেন চাইতাম,ও এরকম অবুঝের মতই বায়না করুক।পাঁচ বছর ছিল টুকু আমার কাছে,তারপর দু-দিনের জ্বরে মেয়েটা সারাজীবনের জন্য চলে গেল,কতবার বললাম,আমি রোজ 'বকুল' আনব,তাও টুকু ফিরল না।এখন কেউ আর চাঁদ দেখার বায়না করে না,'বকুল' না আনলে কেউ ঠোঁট ফুলিয়ে কাঁদতে বসে না।শেফালী বড় ভালো মেয়ে,কিন্তু কখনো অভিমান করে না।-
রাস্তায় একজন অসুস্থ মানুষ পড়ে থাকলে দেখে দেখে চলে যাও,,it's cool,কিন্তু হঠাৎ যদি কেউ সেই মানুষটা কে help করতে যায়...তখন সেটা লোক দেখানো।
অন্যের অসুবিধায় পাশে থেকে সাহায্য করা সব মানুষ-ই লোক দেখানোর জন্য বা সবার কাছে ভালো হওয়ার জন্য এসব করে না,অনেকের সহজাত প্রবৃত্তি ই এমন হয়।কিন্তু কিছু মানুষের এই নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে ওই মানুষগুলো দ্বিতীয়বার কারুর বিপদে এগিয়ে আসার আগে দু-বার ভাবে,যে আবার হয়তো কাজ মিটে যাওয়ার পর তাকে এই কথা গুলো শুনতে হবে...মানুষের খারাপ গুলোকে কত সহজে আমরা identify করে ফেলি,কিন্তু একটা ভালো কিছুকে ভালো বলতে এত কিসের দ্বিধা,কেউ যদি লোক দেখিয়েও ভালো কাজ করে তাহলেও তো ভালো।আর লোক দেখানোর জন্য দু-চার বার কিছু করা যায়,সব-সময় করা যায় না।অন্যের কাছে ভালো সেজে তাদের কি লাভ,কেউ তাদের সোনার নেকলেস ও গড়িয়ে দেয় না,না টাকার বস্তা হাতে ধরিয়ে দেয়....তাই নিজে কিছু না পারলে অন্য কারুর পারাটাকে অসম্মান করে তাকে দু-কদম পিছিয়ে না দেওয়াই ভালো....আর আমরা যদি জানিই যে লোক ভালো সাজার জন্য এসব করে,তো আমরা-ই বা কেন সেই ভালো সাজার চেষ্টা টা করি না?ultimately,মানুষের ভালো করা নিয়েই তো কথা!-
একটা কাজ করলে কেমন হয়..হঠাৎ করে যদি হারিয়ে যাওয়া যায়,,মানে নিরুদ্দেশ হওয়ার কথা বলছি না আমি,,এই ধরুন,কিছুদিনের জন্য যদি ph টাকে বিশ্রাম দেওয়া যায়...বেশি না এই একমাস...
কি হবে এরপর?facebook,whatsapp সব কিছু থেকে ছুটি..সন্ধ্যেয় পাঠানো msg টা রাত ১২টার পর ও seen হয়নি দেখে আপনার best friend হয়তো একটু চিন্তা করবে,,আরো দু-চারটা msg করবে,,যারা দু তিন দিন অন্তর একবার আপনার খোঁজ নেয় তারা খোঁজ নেবে,,আপনি তাদের পাঁচদিন পর ও reply করেননি,,সেটা বোধহয় তাদের মধ্যে দু-এক জনের চোখে পড়বে..যারা কোনো প্রয়োজন ছাড়া msg করে না,এর মাঝে তাদের যদি কোনো দরকার পড়ে তাহলেই মুশকিল,,কি হবে তাদের..চিন্তা করবেন না,,তারা আপনার মত ই অন্য কারো থেকে নিজেদের দরকারটা ঠিক মিটিয়ে নেবে,,এরপর বাকি রইল তাদের কথা,,যারা কখনো কখনো আপনার status এর reply করে বলে..'এটা পাঠা তো'..না তাদের আর আপনার কথা ইহজীবনে মনে পড়বে বলে মনে হয় না,,,আর কিছু মানুষ যারা আপনার পাঠানো msg seen করে বহুকাল reply করেনি,,বিশ্বাস করুন তারা জানেই না,, আপনার মত একটা জীবও তাদের contact list এ আছে..কিন্তু এতকিছুর মাঝেও যদি দেখেন,দু-একটা মানুষ ঠিক কোথাও থেকে আপনার মা/বাবা,ভাই/বোনের no জোগাড় করে খোঁজ নিয়েছে,বা না খোঁজ পেয়ে বাড়ি চলে এসেছে..তাহলে সত্যিই আপনি ভাগ্যবান..lifeএ শুধু এই সম্পর্কগুলোকে যেকোনো কিছুর বিনিময়ে বাঁচিয়ে রাখুন।বাকিগুলো হাসি মুখে ছেড়ে দিন।-
এই যে বন্ধু,লোককে উপদেশ দিচ্ছেন,'মুখে এক আর মনে আর এক হয়ে লাভ নেই'।তা নিজের বেলায় কি সেটি পালন করা হয়?এই যে আপনি বুকের মধ্যে একরাশ কষ্ট লুকিয়ে হাসি-হাসি মুখে কিচ্ছুটি হয় নি এমন এক-খানা ভাব নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন...এটা কি তবে...?
কেন জানিনা,খুশির খবরটা সকলের সাথে ভাগ করে নিতে চাইলেও দুঃখগুলোকে বাক্সবন্দী করে নিজের মধ্যে আটকে রেখে আমরা গুমরে মরতেই বেশি ভালোবাসি।আমাদের মনে হয়,আমরা যদি নিজের কষ্টগুলো প্রকাশ করি,যদি কাঁদি,যদি আবেগপ্রবণ হয়ে গিয়ে কিছু বলে ফেলি...তাহলে সামনের মানুষগুলো আমাদের দুর্বল ভাববে।সেই ঘুরে ফিরে একই জায়গায় পৌঁছে যাই আমরা লোকে কি ভাববে...
...আর এই ভালো থাকার অভিনয় করতে করতে আমরা প্রতিদিন শুধু নিজেদেরকেই ঠকিয়ে যাই,,,কেন আমার কষ্ট হলে আমি কাঁদতে পারব না?কেন মন খারাপ থাকলেও আমাকে জোর করে দেখাতে হবে যে আমি ভালো আছি, কেন ভেতরে ভেতরে শেষ হয়ে গেলেও আমাকে হাসি মুখ নিয়ে ঘুরতে হবে?Just লোক আমাদের দুর্বল ভাববে এই কারণে?এই নিয়মটা কে তৈরি করেছে যে যারা আবেগপ্রবণ,যাদের সামান্য আঘাতে চোখে জল আসে...তারা দুর্বল...?
মনোবিজ্ঞান কিন্তু বলে,যারা নিজেদের আবেগ-অনুভূতি প্রকাশ করতে পারে,কান্না পেলে কাঁদতে পারে,আনন্দে প্রাণ খুলে হাসতে পারে তারা 'ভালো থাকার অভিনয় করা মানুষ' গুলোর থেকে মানসিক ভাবে অনেক বেশি দৃঢ়।তাদের জীবন কিন্তু লোক কি ভাবল,লোক কি বললো তার ওপর নির্ভর করে চলে না...-
–এই তোর কি হয়েছে?
–কিছু না।
–বল না,,,,কি হয়েছে?
–বললাম তো কিছু হয় নি।
–তুই বলবি...হ্যাঁ কি না?
–আরে বাবা,বললাম তো কিছু হয় নি,তুই শুনে কি করবি?Solve করে দিবি আমার সমস্যা গুলো?বিরক্ত করিস না,,Please চলে যা...
(একটু দূরে গিয়ে তখনো দরজার পাশে চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিল দিশা)
হ্যাঁ,পৃথিবীতে কেউ কারো সমস্যার সমাধান হয়তো করতে পারে না,,,কিন্তু খুব বিরক্ত হয়ে তাড়িয়ে দেওয়ার পরও যে মানুষগুলো আরো একবার জানতে চায় সত্যিই কিছু হয়েছে কিনা,,,,আপাত দৃষ্টিতে আপনার মনে হতেই পারে,এদের self-respect এর চূড়ান্ত অভাব...কিন্তু,সত্যিই কি তাই?
না মশাই,এই মানুষগুলোর আপনার কিছু হলে সত্যিই যায় আসে,,যদি দিনশেষে আপনার সমস্যাগুলো solve করা নয় শুধু শোনার মতো ও কেউ থাকে,তাহলে বিশ্বাস করুন আপনি এই পৃথিবীর অসম্ভব ভাগ্যবান একজন মানুষ।এই self-respect হীন মানুষগুলোই কিন্তু পারে আবার কখনো আপনার প্রয়োজন হলে সব ভুলে গিয়ে পাশে এসে দাঁড়াতে...
আত্ম-সম্মান দুনিয়ায় সবার থাকে রে ভাই...কিন্তু,কিছু মানুষ আর কিছু সম্পর্ক এগুলোর থেকেও দামি হয়,,,তাই অনেক সময় হয়তো উল্টোদিকের মানুষটাকে 'গায়ে-পড়া'বলে মনে হয় আমাদের।সত্যি বলতে এই 'গায়ে-পড়া'মানুষগুলোর সংখ্যা ধীরে ধীরে কমে আসছে,,,একদিন আপনার পাশে এই ধরনের মানুষ আর থাকবে না...বিরক্তি উপেক্ষা করেও সেদিন আর কেউ জানতে আসবে না,,,'কি রে,তোর কিছু হয়েছে?'-
পাহাড়ের ওপারে কি আছে জানিনা, তবুও ওই পারের পৃথিবীর প্রতিই যত আকর্ষণ,এপারের সব কিছু আজকাল একঘেয়ে মনে হয়,কেমন যেন সব চেনা,সব জানা,সব পুরোনো হয়ে গেছে...
জানিনা,,,পাহাড়ের পেছনের পৃথিবীতে আজও পূর্ণিমার রাতে গোল থালার মত চাঁদ ওঠে কিনা? সবুজ পাতায় রুপোলি আলো আজও খেলে কিনা,,,, আজও দূরে....ঝর্ণার পাশে বসে কেউ আপন মনে বাঁশি বাজায় কিনা??এও জানিনা... আকাশের নিচে ঘাসের বিছানায় শুয়ে কেউ নক্ষত্র গোনে কিনা....
জানার মধ্যে শুধু এটুকুই,,,ওই পৃথিবীতে হারিয়ে ফেলার কোনো ভয় নেই,,না আছে কোনো
অভিমান-অভিযোগ-কষ্ট,,,আছে শুধু একরাশ শান্তি,,আরও একবার বাঁচবার ইচ্ছে...ওখানে বসন্তের জন্য অপেক্ষা করতে হয় না,,,পলাশ ফোটার জন্য সবুজ পাতা গুলোকে ঝরিয়ে ফেলে গাছটাকে ন্যাড়া হতে হয় না,,,ওখানে সন্ধ্যের অন্ধকারে কোনো পাখি পথ হারায় না....চোখের ভুলে মিলিয়ে যাওয়া তারা টা আবার জ্বলজ্বল করে ওঠে...
ওই পৃথিবীতে সব মিলে যায়,,,সবাই ঘরে ফেরে,,গাছটা সারাবছর মাথায় ঝাঁকড়া চুল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে...হিসেবের কোনো গরমিল হয় না,,,কোনো নিয়ম নেই ওই পৃথিবীর, তাই নিয়ম ভাঙার ভয় ও নেই।
থাকার মধ্যে আছে শুধু একরাশ শান্তি....
পাহাড়ের ওই পারের পৃথিবীটা আছে... এটা সত্যি.... কিন্তু পাহাড় টা কোথায়?-
মুখের ওপর ঠিকভাবে 'না' বলতে না-পারা মানুষগুলোর জীবনের সবথেকে বড় সমস্যা হল...তারা দিনরাত এক অদ্ভুত টানা-পোড়েনের মধ্যে থাকে।
অনুরোধ না রাখলে উল্টোদিকের মানুষটার খারাপ লাগবে...এটা ভেবেই তারা মন না চাইলেও অনেক কিছু করে...
এবার যদি দেখা যায় সেই কারণে শেষমেষ উল্টোদিকের মানুষটার খারাপ-ই হল,,,তখন ও তারা নিজেদের দায়ী করতে থাকে।
আসলে আমরা নিজেরাই খুব স্বার্থপর,,,ঠিকভাবে ভেবে দেখতে গেলে...বেশিরভাগ সময়ই কাউকে না বলার পর আমাদের নিজেদের খারাপ লাগবে বলেই আমরা বিবেকের কাছে ঠিক থাকার জন্য তাদের অনুরোধ গুলো রাখতে থাকি,,কিন্তু এটা ভেবে দেখতে প্রায় ই ভুলে যাই যে সেটার ultimate result কি হবে....
তাই,'না' বলতে শেখাটা খুব জরুরি...কারন কারুর খারাপ লাগা বা ভালো লাগার থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো তার ভালো করা....
-
না-পাওয়া এক নম্বরের জন্য আফসোস করতে করতে বাকি যে নিরানব্বইটা নম্বর পেয়েছিলাম সেটার জন্য আনন্দ করতেই ভুলে যাই আমরা....
কে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে,কে কথা রাখেনি সেসবের ভিড়ে হারিয়ে ফেলি তাদেরকে,যারা শত বিপদেও আমাদের হাত ছেড়ে দেয় নি...
টাইগার হিলে sunrise miss হয়ে গেল বলে মনমরা হয়ে বসে থাকতে গিয়ে পড়ন্ত বিকেলের শেষ আলোটা বা সব খারাপ-লাগা মুছিয়ে দেওয়া বৃষ্টিটাকে গায়ে মাখার কথা মনেই থাকে না...
দামি রেস্টুরেন্টে বসে বিরিয়ানি না খেতে পারার শোকে কখন যে স্টেশনের পাশে বিক্রি হওয়া ঝালমুড়ির স্বাদটা অজান্তে আমাদের জীবন থেকে হারিয়ে যায় তার খেয়ালই থাকে না ...
না-পাওয়ার দুঃখগুলোকে দূরে সরিয়ে রেখে যদি একবার পাওয়ার হিসেবগুলো করতে বসি আমরা....list নেহাত কম হবে বলে মনে হয় না!এক-জীবনে সবই যদি পেয়ে গেলাম,তবে প্রাপ্তির যে সুখটা থাকে সেটা আর কোনোদিন আলাদা করে অনুভূত হবে না....সব পেলে সত্যিই হয়তো নষ্ট-জীবন!-
উপহার হিসেবে বুঝি গোলাপ-ই চাই তোমার?অন্য কিছু যদি দেই,,হবে না?
ধরো যদি,পথের পাশে ধুলোর মাঝে ছড়িয়ে থাকা পলাশ কুড়িয়ে আনি কিংবা ভোরের শিশির ভেজা এক মুঠো শিউলি...নেবে না তুমি?
বা ধরো,একগুচ্ছ শালুক তুলে আনি,যদি নাম না জানা জংলী ফুল ছিঁড়ে আনি...ফিরিয়ে দেবে?
থাক তবে,এ সবে আর কাজ নেই...আসলে কি জানো,ডাইরির পাতার মাঝে শুকনো গোলাপ রাখতে বেশি ভালবাসি।উপহারে গোলাপ দিলে তো অপেক্ষাটা-ই শেষ হয়ে যাবে...প্রতীক্ষাহীন প্রেম...হয় বুঝি???
-
It's hard to pretend that you love someone when you don't but it's harder to pretend that you don't love someone when you really do.
-