২৮২. “ পশ্চাতে চাহি নিশিকালে "
- সুমিত চন্দ
পশ্চাতে চাহি , বুঝেছি আজি এ নিশি কালে ,
যাচ্ছে ভবিষ্যত পরিকল্পনার বিপরীতে ।
বুঝাচ্ছে নিশি , হারছি দিনমান ধরি প্রতি পথে ,
নিজচক্ষে চাহিয়া যা বুঝি জীয়নের দোলাচল হতে ।।
প্রতিদিন মনের স্থিরতা যেন ঝরে পড়ছে একারণে ,
মাঘের শীতে বৃক্ষের পাতার মতো অঝোরে।
কোথা শান্তির কোণ , খুঁজে মরি সংসারে,
দিশাহীন প্রবাহে হাঁসির মোড়কে শূণ্যতায় ভরে ।।
ছিল কত আশা দিবানিশি জুড়িয়া ,
লভিব সকল সুখ হাতের মুঠোয় লহিয়া ।
বাঁচিব বাঁচার মতন , মন ভরিয়া,
জীয়ন করিব উৎসবময় উজরিয়া ।।
কালক্রমে বদল হল মোর সোপনের সংজ্ঞা ,
জেমতি বদলিল মোর তনুদির সাজ ।
চাহি না আমি আর আকাশ কুসুম , কোনো রাজ্যের রাজ ,
চাহি শুধু আজ শান্তি ও অপার সুখের তাজ ।।

-

২৮১. “ যা কিছু হারায় ”
                                - সুমিত চন্দ 
যা কিছু হারায়ে যাচ্ছে এ জীবন পানে ,
অনন্ত আঁধারে তা লুকায়ে থাকে এ ভবসাগরে ।
পাইনে খুঁজে তা আর সহস্র চেষ্টার পরে ,
কর্মক্লান্ত দিনের অবসানে ভবের মাঝারে ।।
বিপন্ন মননের মুহুর্তে পাইনি কোনো আপনজন ,
পাইনি কভু শুনতে একদা শ্রান্তির বাণী।
শুনেছি শুধু অমরত্বের আকাঙ্ক্ষার কাহিনী,
দেখেছি মানুষ বিভাজিত, ভাগে ভাগে বিভ্রান্ত গামিনী।
তবুও আকুল কন্ঠে ডাকছি প্রিয় তোমারে ,
পূর্ণ করো আমারে জীবনের কোণে কোণে।
প্রত্যাশার যে হার বুনেছি মনের গহনে ,
নীরব ঐক্যতানে কর্ম ও প্রেমের সঙ্গম স্থানে।।
তব দুটি বাণী শুনিলে উছলি উঠিবে জাগিয়া প্রাণ ,
মাতিবে মন নিত্যনতুন উন্মাদনায় ।
সুরে ছন্দে গাইবো ভালোলাগার গান নব ধারায় ,
ধরার শান্ত গরিমায় যৌবন যা চায় ।।

-

২৮০. " হৃদয়ের জাগরণ"
- সুমিত চন্দ
জীবন হইতেছে কঠোর সতত ,
নির্লোভ চিত্তও পড়িতেছে শান্তির লোভে নিয়ত।
তাই সবার সংসারে ভবের মাঝারে,
আপন স্বার্থে মেতেছে মন নিষ্ঠুরের মত ।।
কে কার আপন ? ভুলিতে আকুল হৃদয়,
হৃদয়ের অলিন্দে তিয়াসার তীব্রতায় ।
যে তিয়াসা মজিছে আজি অদম্য বাঁচার আকাঙ্ক্ষায় ,
ভূমিষ্ঠ শিশু যেভাবে মাতাকে জড়াতে চায় ।।
তবুও নিজচক্ষে লজ্জিত হইয়া বর্জিত করিলাম স্বার্থ,
মনের সেতারে ঝংকৃত এক শব্দ শুনিয়া।
তখনই নব জাগরণ ঘটিল মনে বিলাসীতা ভুলিয়া ,
সুখী থেকো‌ পরের সুখের আনন্দ যজ্ঞে জাগিয়া ।।

-

২৭৮. " মনের ভিতর যে মন"
- সুমিত চন্দ
মনের ভিতর যে মন মোর দেহেই,
যেথা ভয়ভীতি, হাঁসিকান্না লুকিয়ে রাখা সংগোপনে ।
পথিক হয়ে চলার পথেই‌ বেঁধেছি যা গভীর গোপনে ,
অসীম কল্পনায় বাস্তবের সময়ের শাসনে ।
সকলি কথা মিলায়ে মিশায় রাখা যেথা ,
যা বোঝা যায় না বক্ষে ও চক্ষে নিঠুর রণস্থলে ,
তাই চাহে মন এমন এক আপনজন নিজের বলে ,
পিরিতি বাঁধনে নিজেরে বাঁধিয়া রাখিবে যে জীবনকালে ।।
খুইজ্যা নাহি পাই তাঁরে এতকাল ধরে,
দিবানিশি জুইড়া খোঁজার পরেও ধরণীর অন্তরে ।
কেমনে পাবো তাঁরে , মনের মানুষ বলিব যারে ,
তবেই তো সমাপ্ত হবে অসহ অধ্যায় জীবন মাঝারে ।।

-

২৭৭. “ আলোর বারান্দা"
- সুমিত চন্দ
আলোর বারান্দায় বসে আছি একাকীত্বে ,
সকল কালো ক্ষয় পরাজয় ধুয়ে দিতে ।
তবুও পারিনি বসিতে কভু একধারাতে ,
পুনঃ পুনঃ যে ফিরিতে হয় জীবনের কারাগারেতে ।।
বিদ্বেষ জাগে কখনো কখনো মননে কভু স্মরণে ,
কারাগার হতে দেখি যবে পক্ষীকে ঐ বিস্তৃত আকাশে ।
তক্ষুনি জাগে অপার জনমের তৃষা নব আশ্বাসে,
কড়িখেলার তরে পুঞ্জীভূত বিষাদের আশ্লেষে।।
জানিনে এ তৃষা মিটিবে কবে পূর্ণ আবেগে ,
শ্রীভূমির ধরাতলে গভীর মায়ায় জড়ায়ে ।
তবুও আছি ধরার সম ধৈর্য্য লয়ে ,
অসহ জীবন কারগারে অতৃপ্ত কামনা লুকায়ে।।

-

২৭৬. " স্রোতস্বিনী সাজিছে " 
                                      - সুমিত চন্দ 
স্রোতস্বিনী সাজিছে শরতের আগমনের সহিতে,
নব উদ্যমে উৎসব মুখর পরিবেশের উত্তরণে ।
দেখেছি তা সেদিন রাত কাটানোর ভোরের ক্ষণে ,
অসহ রজনীর অবসানে অসূয়া সদনে ।।
ভুলেছি তক্ষুনি জীবনের সকল দেওয়া নেওয়া,
বিড়ম্বিত জীবনে নবীন চৈতন্য লইয়া ।
ছিল সেথা কাশফুলের কোমল শুভ্র হাওয়া ,
আর সূর্য কিরণের সোনালী রঙের স্বর্ণ ছাওয়া ।।
দ্বিধা জড়িত চরণে অসহ নিঃস্ব জীবনে ,
এই অমূল্য চিত্র যেন দিয়েছে মোরে ত্রাণ ।
যে ত্রাণের তরে হাঁটবো আরও কিছু পথ দিনমান,
উলঙ্গ মিথ্যাচারের দুনিয়ায় লহে তাপিত পরাণ ।।

-

২৭৫. " চিলেকোঠার সোহাগ "
- সুমিত চন্দ
চিলেকোঠার সোহাগ গেঁথে আছে মনে ,
একাকীত্বের পদতলে অসহ শূন্যতার তরে ।
অসাড়তা আঁকড়ে ধরেছে যেথা বারেবারে ,
সাফল্য হীন জীবনের সর্বাঙ্গ জুড়ে ।।
জ্বলেছি হিংসা ও দ্বেষ এর অনলে ,
পুড়েছি কতকাল প্রেমপাঠে বিরহের দহনে ।
পেয়েছি শান্তি এই চিলেকোঠায় স্বল্প মানে,
তাতেই সোহাগের মোহ লাগিল তনু মনে ।।
এই মোহের তরে সাঁধিয়াছি আজি নব নব কৌশল ,
শূন্য হতে পূর্ণ হবার নিষ্ফল বাসনায় ।
মরণের কাছে জীবন বাজি রেখে অসীম বেদনায় ,
মগ্ন হবো পুনরায় জীবন যোগের সাধনায় ।।

-

২৭৪.“ সুখের তারা ”
- সুমিত চন্দ
সুখের তারারা লুকিয়ে আছে মেঘময় মনে ,
কালো রঙে রঞ্জিত কালো বিষাদের আড়ালে ।
যেন পুনঃ আসিবে দুঃখের কালঝড় অসহ জীবনকালে ,
ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেবে সব নব মায়াজালে।।
আগে যা ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিয়েছিল ,
হারিয়ে গিয়েছিল অতীতের সুদূর দুরত্বে অন্তরে।
যা সাজায়েছিলাম নব আবেশে কারুকার্য করে ,
জীবন নাট্যের সূচনার পরক্ষণে সৃষ্টির খেলাঘরে ।।
আজি এহেন ঝড়ের পরে চিত্ত চাহিবে আশ্বাসের শ্বাস ,
সৃষ্টিকর্তার কাছে অশেষ প্রার্থনা করে ।
যেন স্থিতি থাকে সবকিছু জীবন নদীর তীরে ,
নিজের বিত্তি হতে নিজের পরিচয় একাধারে ।।

-

২৭৩. “ সময়ের সংলাপ "
- সুমিত চন্দ
সময়ের সংলাপ বুঝিয়েছে আমার স্থিতি ,
ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকা জীবনাঙনে ।
যা শুনে ভাবনায় বিষাদ জাগে সনে সনে ,
এক অদৃশ্য, অস্পৃশ্য, অচ্ছেদ্য বন্ধনে ।।
যে কড়ির তরে ভুলেছিলাম বিকেলের মাঠের সুখ ,
সময়ের সংলাপে তারই নাই আজ ঠাঁই।
এ মনের কথা প্রাণের কথা কাহারে যে শোনাই ?
একাকিত্ব বোধ কী হয় তা কাহারে যে বোঝাই ।।
সবকিছু বৃথা আজ সর্বগ্ৰাসী পিপাসুদের ভিড়ে ,
নিরুপায় জীবন লয়ে একা চলার বিড়ম্বনায় ।
আঁকড়ে ধরে চলছি তবু জীবনে সুখী হবার আশায় ,
বিরহ বেদনে একাকিত্বের সনে আপন গরিমায় ।।

-

২৭২." সঞ্চয়ের ঘরে শূন্য"
- সুমিত চন্দ
সঞ্চয়ের ঘরে আশার কোঠায় শূন্যের স্থিতি ,
জীবনের এই নিঃস্ব অসহ পর্যায়ের ক্ষণে ।
যা সঞ্চিত করেছিলাম তুলনারহিত পরিশ্রমে ,
দিবা রাত্রির মায়ার বাঁধন ছাড়িয়া ভূঅঙ্গনে ।।
আজ জীবন পড়েছে বড়ই অদ্ভুত দুর্বিপাকে,
দুর্বিষহ শূণ্যের তরে বঞ্চনা ও লাঞ্চনায় ।
কত ছিল ক্ষয় পরাজয় তবুও ছিলাম এক সাহারায় ,
নিষ্ঠুর মায়াজালে হারায়েছি তা বালুকা বেলায় ।।
মনে জাগিছে পথ ফুরাবে আজি আমার,
সন্ধ্যার ক্ষণে গুঞ্জিত সেই কম্বুনিনাদের সহিতে ।
যখন মোর চরণ চিহ্ন মুছে যাবে, না চাহিতে ,
বিলীন হবে যত শোক , মোহ সেই অনন্ত বাসনাতে ।।

-