স্বীকারোক্তি
আমি যে বাড়িটার চার তলায় থাকি,
সেখানে আমার প্রতিবেশী বলতে দুটো টিকটিকি।
তারা সারা দেওয়াল জুরে ছোটাছুটি করে,
ছাতের থেকে লাফিয়ে মেঝের উপর পরে।
আমার বাড়িতে কোনো আয়না নেই,
কারণ আমি বা সে কেউই মুখ দেখি না।
আয়নার বদলে আছে শুধু, কিছু ধূলো জমা বই,
এই গুলো যদিও আমার, এতে তারা শুধু হাগে।
এই বই গুলো আমার অনুভূতি টুকু ধরে রাখে,
আর আমার প্রতিবেশীরা তাতে প্রাতঃকৃত্য করে।
এই অনুভূতি গুলো অনেকটা নিঃশ্বাস এর মতো,
যাকে আমি বিশ্বাস করি, আর কেউ না।
কিংবা অনেকটা ঘড়ির সময়ের মতন,
ফিরে আসে, কিন্তু অনেকটা অন্য ভাবে।
কিংবা ধরা যাক এক মুঠো বালির মতো,
মুঠো যতই শক্ত করো, বালি ঠিক চলে যাবে।
দুর্বলতা কোনো দিনও বলতে নেই বা বলা ঠিক না,
সবটা বলে দিলে সেটা আস্তাকুর হয়ে যায়।
আমি রোজ হিংসে করি আমার প্রতিবেশীদের,
কারণ ওরা টিকটিকি, আর আমি মানুষ।।
-
৭১ ১৭
একটা কুয়াশা ঢাকা শীতের সকাল,
ধোঁয়া ওঠা চা এর কাপ, মলয় ইথার সেনা,
নিশ্বাস ভারী হয়ে যায় পোড়া বারুদের গন্ধে।
সরকারি সীসা দখল নিয়েছে সময়ের ফুসফুস।
কলকাতা ৭১।।
কলরবের দখলে রাজপথ,
ক্ষমতার মুখ থেকে ছুটে আসা টিয়ার গ্যাসের শেল,
পরে আছে রাস্তার পাশে আরশোলার নাদির মত।
আবার সে নাদি ছুটে যায় ক্ষমতার দিকে।
কলকাতা ১৭।।-
প্রেম এসে ছিল
শহরে সে বার শীত তখনও পড়েনি,
শরীরের অন্ধকার ছিল পায়ের তলায়,
কান ছুঁয়ে পিঠ গড়িয়ে নাম ছিল ঘাম !
ঘামের চেয়ে জীবন্ত পারফিউম আর নেই।
শহরের ভাঁজে দেখেছিলাম, হাত ধরে ছিলাম,
হাত ধরে ছিলাম, বিষুবরেখা ধরে হাঁটবো বলে!
যদিও আমি মহাপুণ্যবান, আমি নাস্তিক।
ফুটপাত ধরে হেঁটে গেছি দরজার দিকে,
সেই বন্ধ দরজাটা আজও বন্ধ,
তুই আর কিছু একটু বল, হোক মিথ্যে,
আমি বিশ্বাস করতে চাই, আমি শুনতে চাই।
শরীরের অন্ধকার আমার চেয়েও দীর্ঘ,
বিষুবরেখা ধরে হাঁটা হলনা মৃত্যুর আগে,
আমার সাথে রাত জাগে হলুদ নাইট বাল্ব।
শহর থেকে শীত তখনও ঝরে পড়েনি,
গাছের পাতারাও ঝরে পড়েনি,
কিন্তু শহর থেকে ঝরে পড়ে ছিলাম আমরা।।
-
অসম্পূর্ণ
ছিঁচ কাঁদুনে আকাশ, আমার একদম ভালো লাগে না;
জল ধরতে ধরতে ভেজা বাড়ী আর গাছ গুলো ক্লান্ত।
আমি একটা দরজা খুঁজছি,
যেখানে চটি খুলে ভিতরে যাওয়া যায়।
তুমি রোজ কানের দুল খোলো, অন্য কারো জন্য,
অন্য কোনো আঙুল তোমার চুল গুনে যায়,
আমি গন্ধ পাই !
এক সাথে ভাত খাওয়া, এক সাথে স্নান করা,
এত কিছু চাইনি আমি;
আমার শুধু বলার ছিল,
আমার চশমা বাষ্প হলে, তোর হাতটা আমার দিও।।-
মৃত্যু কে আমি মরতে দেখেছি,
জ্যান্ত থাকার নেশায়।
গতর গুলোকে বেচতে দেখেছি,
পেট ভরানোর আশায়।
ভাইরাস নিয়ে লড়ছে দুনিয়া,
দিন গুলো ফুরিয়ে যাওয়ার ভয়ে।
রাম রাজত্বে বাজছে তালি জ্বলছে প্রদীপ,
ভক্ত ভাবে গরুর মুতে জীবাণু মুক্তি হয়।।-
শহর জুড়ে মেঘ করেছে হাতে ছাতা মানব জমিন,
কারো চোখ কাঁদে, কারো মুখ হাসে, কারো ভাবনায় ভালোবাসার দিন।
কাঁচের শার্সি ঝাপসা হচ্ছে ভাবুক কবি হারায় তল,
প্রাচীন তৃষ্ণা মিটিয়ে নিচ্ছে অভিশপ্ত চাতকের দল।
ভেজা বাড়ির ভেজা কার্নিশে কালো কাকটা দোলায় মাথা,
সপসপে হাত সপসপে কাঁধ, একটি ছাতায় দুটি মাথা।
ছাতার নিচে দুরন্ত প্রেম, গাছের নিচে খুনসুটি,
হাতে হাত রাজপথে সাথে সাথ চলবার প্রতিশ্রুতি।
নোংরা নালা গঙ্গা হচ্ছে শহর গলি গেরস্থালি,
গঙ্গার পানি ঠেলছে পায়ে মধ্যবিত্ত পাকস্থলী।
আজও আলো জ্বলে, আজও নেমে আসে বৃষ্টিধারা,
শ্রেণী বিভক্ত ধরাধামে দিন বদলের স্বপ্ন দেখে তারা কারা।
দিন গুলোতো বদলায় না, শুধু তারিখ বদলে যায়,
অবোধ শিশু মৃত মায়ের স্তনে রসদ খুঁজতে চায়।
তবু এখানে স্বপ্ন বাঁচে, ভালোবাসার ভালোথাকার স্বপ্ন বাঁচে,
স্বপ্ন গুলো বাঁচতে শিখুক, বেচেঁ থাকার স্বপ্ন বাঁচুক।
যদি মেঘের কোলে বৃষ্টি জমে গরিয়ে পরে তোমার গায়ে,
সেই ফোঁটাটার শিরায় শিরায় খুঁজে পাবে শুধু আমায়।।
-
এক আঁজলা পানি আর এক মুঠো খেজুঁর
এটাই আমার একমাত্র চাহিদা,
সীসার গরম বুলেট আর পোড়া বিড়িতে
কোনো তফাৎ নেই,
বৃদ্ধ ধ্রুবতারা আজও জ্বলছে আকাশে
অনেক ইতিহাস সাক্ষী রেখে গেছে তাঁকে
অনেক ভূতও সাক্ষী রাখবে তাঁকে,
পৃথিবীর শেষ স্টেশনে ট্রেন আজও পৌঁছায়নি,
আজও অপেক্ষা হয়ে পথ চেয়ে বসে আছি
একবার সে দাঁড়িয়ে বলুক, এই নাও
এক আঁজলা পানি আর এক মুঠো খেজুঁর ।।-
আমার দুর্গা হাঁটে চলে,
আমার দুর্গা কথাও বলে।
আমার দুর্গা রান্না করে,
আমার দুর্গা চুলও বাঁধে।
আমার দুর্গার সংসার ফুটপাথ,
আমার দুর্গা বিশ্বায়নের চিৎপত।
আমার দুর্গা কুন্তি হয়ে নালায় ভাসায় কর্ণ,
আমার দুর্গার শরীর নিয়ে তৈরি হচ্ছে পর্ণ।
আমার দুর্গা কুপী হাতে অন্ধকারে,
আমার দুর্গা অস্ত্র হাতে সন্ত্রাস শেষ করে।
আমার দুর্গা ভীষণ ভাবে প্রতিকূলে ডিঙা বায়,
আমার দুর্গা ক্রমাগত শিক্ষিত হতে চায়।
আমার দুর্গা শয্যাসঙ্গী মধ্যরাতে,
আমার দুর্গা এলো চুলে কাপড় শুকায় দুপুর ছাতে।
আমার দুর্গা বিক্রি হচ্ছে HD পর্দাতে,
আমার দুর্গা নেংটো হচ্ছে হোডিং পোস্টারে।
আমার দুর্গা নুন ভাত খায়,
আমার দুর্গা ট্রেন বাসেই যায়।
তবুও আমার দুর্গা খুঁজি পুতুল গড়ার ছাঁচে,
আমার কিন্তু পুতুল পূজি পাপ লাগে যায় পাছে।
কোটি টাকায় ভাসছে শহর,
দুর্গা ডুবছে নর্দমাতে,
অসুরের দল খাচ্ছে ছিঁড়ে,
তুলছে ছবি মিডিয়াতে।
মাটির ঢেলা মূর্তি টাকে, আনবো কিনে আসছে বছর,
পয়সা দিয়ে পুজবো তাকে,
কেবল দুর্গা টাকে সরিয়ে রেখে।-
ফেরিওলের ডাকে এসেছে নতুন ভোর,
সূর্যের রং তার ধপধপে কালো।
ছায়া হীন তৃতীয় গ্রহ,
অন্ধের দেশে আয়না ব্যাচার মত।
বধীর জনতা মুগ্ধ হচ্ছে,
নেরোর বাজনা শুনে।
মেহের আলীর জিভ খসে গেছে,
রাজার রোষানলে।
স্যাব ঝুট হ্যায়, স্যাব ঝুট হ্যায়,
স্যাব ঝুট হ্যায়, স্যাব ঝুট হ্যায়।।-