প্ল্যাকার্ড
এক নিঃশব্দের রাতে
হেঁটে চলি এক নিস্তব্ধতা নিয়ে
সারি সারি মানুষ দাঁড়িয়ে মুখে কুলুপ এঁটে
হাতে ভর্তি প্ল্যাকার্ড, কিছুর বিরোধ করছে যেন।
আমি হেঁটে চলি, সামনে দেখি আলোর রেখা এগিয়ে আসছে
সে ঝলকানি ছোট থেকে বড়ো হচ্ছে আরও বড়ো একদম মুখের সামনে
গলার সোনালী ধাতুটা জ্বল জ্বল করে উঠলো।
এক হ্যাঁচকা টান।
হাতে থাকা মুদির বাজার রাস্তায় গড়াগড়ি গেল
কয়েক জন নিস্তব্ধতা ভেঙে কিছু বলছিল যেন ;
কিন্তু হাত তাঁদের ভর্তি প্ল্যাকার্ডে ,
কিছুর বিরোধীতা করছে যেন ।
হাত বাড়িয়ে এগিয়ে আসতে পারলোনা।
আমি চোখ মুছে রাস্তা থেকে গুছিয়ে নিলাম
সপ্তাহের মুদির বাজার ।
দু হাতে নিস্তব্ধতা ভর্তি করে রওনা দিলাম বাড়ির পথে
প্ল্যাকার্ড হাতে কয়েক জন মুখে কিছু আওয়াজ করছিল যেন ।
দুঃখ সূচক । কিন্তু প্ল্যাকার্ড ছাড়লো না ।
কে জানে হয়তো প্ল্যাকার্ডেই বিপ্লব আসছে।-
ব্যাথা ভালোবাসিনা
বোর হইনা আর
আমরা ব্যাথা পেতে ভালোবাসিনা।
নিজের সঙ্গে সময় কাটাই না
মুঠোফোন মুখের সামনে ধরে থাকি
বোর হলে, ব্যাথা পেলে, নিরালায় নিজেকে পেলে
মস্তিষ্ক ভাবতে শুরু করে।
ভাবা বেশ কঠিন কাজ।
মাথা ধরে যেতে থাকে।
মাথা ধরা পছন্দ করিনা।
সস্তা বিনোদন খুঁজি।
মনে কোনো কথা তৈরি হয়না
মন উজাড় করে বলার লোক পাওয়া যায়না
মন দিয়ে শোনার ধৈর্য থাকে না
আমরা ব্যাথা ভালোবাসি না।
ব্যাথা মানতে চাইনা
ব্যাথা উদযাপন করিনা।
হাসি শুধু ছড়িয়ে পরে মুঠোফোনের ওপার থেকে।
কান্না ভুলে যায়, অনুভূতি ভুলে যায়,
শুধু ফাঁকা ফাঁকা শূন্যতা নিয়ে হাসতে থাকি।-
বিশ্বের ভবিতব্য এক
একসঙ্গে চলা বারন
কুহুর কাকলি ফুলের পাপড়ি
স্নিগ্ধ জোছনা মধুর সুবাস
মন উতলা হাতছানি আর
অনুভূতির অরুণিমা
সবাই আছে
তবে একই ভাবে নয়
যে যার মতো বিশুদ্ধ
যে যার মতো স্বাধীন
তাঁর আঁচলের আভা
রাঙিয়ে দিয়ে যায় যং ধরা কলমের কালি ঝুলি
তাই এক দিন পূর্ণিমা আর এক দিন অমাবস্যার কথা বলি।-
আমার শহরে কোন ভ্যালেনটাইন নেই
নেই কোন দুরুদুরু বুকে হাত খামচে ধরার হাতছানি
ভ্যালেনটাইন থাকলে আমিও হতাম কোন বলগা হরিণ
হৃদপিণ্ডের কম্পন বাড়িয়ে জরিয়ে রাখতাম হাতের বাঁধনে
কোন এক নির্জন নদীর পাড়ে এক আকাশ স্বপ্ন ঢেলেদিতাম
তাঁর স্থিরতা বিনুনি কেঁটে দিত আমার উদ্ভ্রান্ত মস্তিষ্কে
আমিও সারা দুপুর অবস হয়ে থাকতাম তার চোখের দিকে তাকিয়ে
আমার শহরে কোন ভ্যালেনটাইন নেই
থাকলে আমিও জাপটে ধরে বলতাম তোমায় প্রচন্ড ভালোবাসি।-
অনেক কিছু হবার কথা ছিল
এই অস্তগামী সূর্যের ছটায় রূপসী কে নিয়ে
মাটির ধান দুর্বা খেলা বা চির আধুনিকতার মেলা
শীতের দুপুরের মতো সময় শেষ হয়ে যায়
মহাকাশের ধুমকেতু দ্রুত এগিয়ে চলে
অস্তাচলে পরে থাকা অগোছালো হাঁসের দল বাড়ির কথা বলে
আকাশের তাঁরা দের এখন নিঝুম হতে হয়
মায়াবিনী নিশি তার আঁচল বিছিয়ে দেয়
কতকিছু হবার কথা থাকে, তবুও, ধরনীর, কাজে সাঙ্গ দিতে হয়
এক প্রকান্ড কর্ম যুদ্ধের দামামা বাজে
নিশির শিশি থেকে বের হয় নিশাচরের দল
এ রাজ্যপাট তখন তাদের ছেড়ে দিতে হয়।-
নির্জনতা নিস্তব্দতা বিমর্ষ করে তোলে
অনেক দুর পর্যন্ত হেঁটে এসেছি
চারিদিকে ধুধু বালুচর
দু-চার জন যারা সঙ্গে ছিল
খসে পরেছে তারা একটার পর একটা পর পর
কোন বনলতা সেন আর নেই
কোন অপেক্ষা করার মানুষ আর নেই
কোন প্রাণ নেই যে দরদ দিয়ে বলবে "এতদিন কোথায় ছিলেন!"
কিছু পাখির ডাক আছে
পাতা খসার শব্দ আছে
মানুষের কোলাহল আছে
আর এক আকাশ নীল রং আছে
হাজার চোখের ভিড়ে
কিছু স্নিগ্ধ চোখ পাওয়া যায়
কিন্তু সে চোখে ভরসা খোঁজার সাহস আর নেই।
এত না থাকার ভিড়ে তবুও কিছু যেন আছে
যার জন্য রোজ সূর্য্য ওঠে
রোজ ঘুম ভাঙ্গে ।-
শিরোনাম হীন
তোমায় পাবো বলেও যুদ্ধ করিনি
তোমায় হারাবো বলেও বেঁধে রাখিনি
যখন তুমি এসেছো মেনেছি তুমি আমার,
যখন তুমি নায় তখনও কিজানি হয়েছিল কিছু আমার
অস্তিত্বের সংগ্রামে টুকরো সময় কত হয়েছে বিলীন
সহস্রবার পুনর্জন্মে দেখেছি
ইতিহাস কিছুই মনে রাখেনা
তোমার আমার জন্মদিন... মৃত্যু দিন...
আরও আছে কতশত স্মরণীয় দিন!
মনের মৃত্যুর খবর চিরকালই শিরোনাম হীন।-
ঝঞ্ঝাটপূর্ণ প্রবাহের মাঝে
এক শান্ত স্রোত বয়ে চলে আজীবন।
গভীর থেকে আরও গভীরে শান্তি বিরাজ করে।
তুমি আমির চুলচেরা বিশ্লেষণের বাইরে
হয়তো এক শতবর্ষী অশ্বত্থের নীচে,
ফুটপাতে একটাকা দুটাকা ভিক্ষা পেয়ে তৃপ্ত মায়ের মুখ দেখে
তার শিশুর চোখে;
বা এক সারাদিনের ক্লান্তি বয়ে চলা বিকেলে
পাশাপাশি হাঁটতে থাকা দুটো মানুষের তৃপ্ত পরিতৃপ্ত সময়ে ;
এক অজানা নিশি রাতের ভোরে
ধচমচিয়ে উঠে দেখা যায়
রাত শেষ, শান্তির ঘুম শেষ,
যেটা নাকি বড্ড অপ্রয়োজনীয় সময়;
আসলে সেটাই সবচেয়ে বড় প্রয়োজন ।
দিনের শুরুতে আবারও ব্যস্ততার আগমন ঘটে
তুমি আমি আবারও হারিয়ে যায় অন্য কারো মুখোশের তলায়।-
হয়তো চিরতরে
তারপর একদিন আসে আমি হারিয়ে যায়..
ঠিক ভুল ভালো খারাপ সব মিশে যেতে থাকে
মহাজগতের ওপার থেকে আসা রশ্মির পথ বাঁকে,
ধরা ছোঁয়ার থেকে সরে যায়,
সরে যায় অনেক দুরে অচেনা অনুভূতির দেশে
যেখান থেকে ঘরে ফেরার আর পথ নাই।
রাস্তা মরুদেশের মরিচিকার মতো লাগে
উত্তর হীন শত প্রশ্ন মনে জাগে
ছোঁয়া, না ছোঁয়ার এই অসীম প্রবাহে
কে কোথায় সব আছে লুকায়ে!
দেখে দেখে হয়তো চোখে ধরা না যায়
তবুও সে ঝলসানো আলোকপথ
হারিয়েও হারিয়ে যায়নি কোথাও।-
কবিদের প্রেমিকা
কবিদের কোন প্রেমিকা হয় না
প্রেমিকা শুধুমাত্র কবির চোখের দিকে তাকালে
কবির কলমে তুফান ওঠে
অনুভূতির জোয়ার দুকূল ভাসায়।
সে বোঝেনা শুধু তার চাহনিতেই
সারা জীবনের খোরাক কবি পেয়ে যায়
সমস্ত অপার্থিব ভালবাসা উজার করে দিতে চাই চোখের কাজলে
প্রেমিকা তবুও নশ্বর পার্থিব প্রেম খোঁজে।
আশা হত প্রেমিক হয়ে কবিরা থেকে যায়
তাই কবিদের কোন প্রেমিকা হয় না।-