'আনন্দম'
সংসার বলতেই একটা চাপ বোঝায়। যে যাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে সাধারণ মানুষ আনন্দ, দুঃখ, এমনকি অনেক ক্ষেত্রে নিজেকেই ভুলে যায়! অনেক তুচ্ছ দুঃখ জীবনকে চঞ্চল করে। আবার, এমনও কিছু দুঃখ আছে যা জীবনকে নাড়িয়ে দেয়। প্রকৃত দুঃখ সেটাই যা মানুষকে ঊর্ধমুখী করে। সেই দুঃখ মানুষকে আনন্দের পথে নিয়ে যায়। সে এমন এক আনন্দ, যা প্রায় সমস্ত দুঃখকেই তুচ্ছ করে দেয়।-
'সমস্যা'
জীবনে প্রতিবন্ধকতার এক রূপ হল সমস্যা। এই রূপ যখন প্রকটিত হয় তখন জীবনের চলার পথটাই আটকে দেয়। সমস্যা যখন ছায়ার মতো থাকে তখন জীবন চলে বটে তবে কোণঠেসে।
সমস্যাকে প্রতিরোধ করার এক অন্যতম অস্ত্র হল হাসি। অভিনেতাগণ বিষয়টাকে যতটা রপ্ত করতে পারেন, লেখক-লেখিকাগণ ততটা পারেন না আর সাধারণ মানুষ তো একেবারেই নয়। অভ্যাস বিষয়টার গুহ্য কথাই হল বার বার অনুশীলন।
জীবনের সাথে মৃত্যুর এক অনন্ত রসায়ন আছে সমস্যার মধ্যে। যে মানুষের জীবনে সমস্যা যত কম সেই মানুষ জীবনকে তত বেশি ভালোবাসে, মৃত্যুকে নয়। সমস্যা বেশি থাকলে জীবনের সাথে প্রেম কম হয়ে যায়, জীবনের মধ্যে আমি একটু কখনো কখনো কোনো রূপে উঁকি মারে— সে হয়তো নিজেকে উদঘাটন করতে চায়!-
'টান'
এই পৃথিবী তো আশ্চর্যের বটেই! কত কিছুই ঘটে যার আমরা কোনো উত্তর পাই না। সেইরকমই এক বিষয় হল টান— জীবনের টান। গভীরভাবে শান্ত হলে আমরা কখনো উপলব্ধি করতে পারি যে, জীবনের এক টান আছে। সময় তার বাহক হয়ে সেই পথেই নিয়ে যায় ক্রমশ:। আমরা সবসময় সেটা বুঝতে পারি না, অনেকটা দূরে চলে গেলে যখন পিছনের দিকে তাকাই তখন মনে হয়, যেন জীবন সেটাই চেয়েছিল!-
'আশ্চর্য্যতত্ত্ব'
এই পৃথিবীতে এত শ্রেণী-বিভাজনের মধ্যে আশ্চর্য সমস্তকিছুকে যদি এক পৃথক শ্রেণী প্রদান করা হয় তাহলে বোধ হয় কারোর বিশেষ আপত্তি থাকবে না। মানুষের মধ্যেও আবার দুই শ্রেণী আছে বিশ্বাসী আর অবিশ্বাসী— একটু সহজভাবে বলতে গেলে আস্তিক ও নাস্তিক। সমাজের প্রায় প্রতিটি উচ্চশ্রেণীর মানুষের মধ্যেই বিশ্বাসের ভাবটা খুব গভীর। এনাদের মধ্যেও কিছু জন কোনো কোনো কারণে বলে থাকেন যে, আমি নাস্তিক, আমি তেমন বিশ্বাস করি না।
যারা প্রকৃতই নাস্তিক (তাদের মধ্যে এমন মানুষও অনেক আছে যারা শুধু চাওয়ার জন্যই দেব-দেবীর সম্মুখে নতমস্তকে হাতজোড় করে দাঁড়ায়) তারা তখন সেই তথাকথিত মানুষদের দিকে আঙ্গুল তুলে ধরে বলে দেখো যে, তারা তো বিশ্বাস করে না তবুও এত উন্নতি করেছে। কিন্তু একটু গভীরে বিচার করলেই দেখা যাবে যে, সেই শ্রেণীর মানুষদের মধ্যে যারা কোনো কারণে নিজেদের 'নাস্তিক' বলছে, তাদের সাথেও বিশ্বাসের এক গভীর সংযোগ আছে— কোনো না কোনোভাবে, অবশ্যই।-
'সম্পর্ক ও বিচার'
সম্পর্ক ও বিচার উভয়ে বিপরীত মেরুতে অবস্থান করে। সংসারে সম্পর্ক কী, সেটা দার্শনিকের থেকে বোধ হয় সংসারীরাই ভালো জানে! বিচার এমন এক জিনিস যা সকলের আসে না। বিচারকের আসনে অনেকেই বসতে চায় কিন্তু জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও বিচারের অভাবে সেই স্থান লাভ করতে পারে না। সাংসারিক বিচারেও সমস্ত কিছুর মধ্যেও যা মায়ায় অলক্ষ্যে রয়ে যায় তা' হল বিচারের সময়েও সম্পর্ককে টেনে আনা। বিচারে ব্যক্তির মূল্যায়ন টেনে আনা মানেই ন্যায়বিচারের গরিমা নষ্ট করে দেওয়া।-
'প্রতিবন্ধকতা'
আমরা সকলেই সুন্দর, স্বচ্ছল জীবন চাই। যে জীবন সর্বদা অগ্রগামী হবে, যেন জলের অবারিত স্রোতের মতো, কোনো কিছুই তাকে আটকে রাখতে পারবে না। কিন্তু সময় বাঁধ দেয়।
আবারও, রাজপ্রাসাদে প্রবেশ করার ফটকটা আমাদের মুখের সামনে বন্ধ হয়ে না গেলে, আমরা তো আর খোঁজ নিতাম না সেই প্রাসাদে কতগুলো দরজা আছে। সৌভাগ্যবান বোধহয় তাকেই বলে জীবন যাকে নিজের হাতে শিখিয়ে দিয়েছে নিজের সম্ভাবনাগুলোকে কীভাবে বার করে আনতে হয়। সঠিক পরিস্থিতি না আসলে সুযোগটাও আসে না।-
'অভিনয়'
শিল্পের যে সমস্ত শাখাগুলো আছে অভিনয় তার মধ্যে এক ব্যতিক্রম। কেন? তার মধ্যে অন্য অনেক শিল্পের মিশ্রণ আছে। যে শিল্পী যত সুন্দরভাবে মিশ্রণ করতে পারে সেই শিল্পীই তত ভালো অভিনেতা হয়ে উঠতে পারে। আবারও, যে শিল্পী নিজের সাথে যত ভালো অভিনয় করতে পারে সেই শিল্পীই দক্ষ অভিনেতা হয়ে উঠতে পারে।
সংসারের নিয়মে যেমন কিছু পেতে গেলে কিছু দিতে হয়, তেমনই সেক্ষেত্রে তাকে নিজের জীবনটাই উৎসর্গ করতে হয়। না না তেমন কিছু নয়, শুধু বারবার জীবনটা ঘেঁটে যায় মানে ওই ওলট-পালট হয়ে যায়, তবুও সেটাকে সাজাতে হয়। আরো বেশি সুন্দর করে তুলতে হয়, বৈচিত্র্যময় করে তুলতে হয়।-
'ভালো'
বিজ্ঞানী অ্যালবার্ট আইনস্টাইন থেকে বহু দার্শনিক বলে গিয়েছেন এই পৃথিবী আপেক্ষিক। শঙ্করাচার্য্য তো মায়াবাদের জন্যই প্রসিদ্ধ। এই বিশ্বের মধ্যেও সবচেয়ে আপেক্ষিক শব্দ বোধ হয় 'ভালো'। কে, কেন ভালো— কোনো সময়েই তার সঠিক উত্তর পাওয়া যায় না, সম্ভব নয়। কারণ একজনের কাছে ভালো মানুষ অন্যজনের কাছে 'ভালো' নাও হতে পারে! আর যে মানুষ সকলের কাছে সবসময় 'ভালো' থাকার চেষ্টা করে সেই মানুষের চেয়ে মূর্খ ও খারাপ মানুষ খুব কমই আছে।-
'গোছানো'
আমরা কথ্য ভাষায় যাকে বলি 'গোছানো' যদি দৃষ্টি প্রসারিত করে দেখি তার ব্যাপ্তি অনেক দূর পর্যন্ত হতে পারে। অনেকেই বলে "মেয়েটাকে দেখো সংসারটা একদম গুছিয়ে রেখেছে, ঘরদোর পরিপাটি করে রেখেছে।" আবার, শুধু তো মেয়েরা যে 'গোছানো' হয়, এমন তো নয়।
ছেলেরা অগোছালো হয় বটে তবে তারাও তো গোছানো হতেই পারে! তবে গোছানো কি শুধুমাত্র সংসারের জন্যই? 'গোছানো'কে যদি শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যায় তার ব্যাপ্তি সুদূর প্রসারিত।
'গোছানো' বলতে ঘর-বাড়ি হয়, গৃহকর্ম হয়, পেশাদারি কর্ম হয়, শিল্প-কলা তো তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ, পড়াশোনা হয় (জীবন সম্পর্কে), এমনকি বেঁধে কথা বলার সাথে সাথে যুক্তিপূর্ণ তর্কও সেই 'গোছানো'র মধ্যেই পড়ে।
আমাদের প্রত্যেকের দৃষ্টি যেমন আমরা এই পৃথিবী থেকে,, প্রত্যেকটি মানুষকে সেইভাবেই দেখে থাকি। তাই একজন মানুষ কখনোই সকলের কাছে ভালো বা মন্দ হতে পারে না।-
'মানসিক আঘাত' (Trauma) 🧠
বিশ্বখ্যাত অস্ট্রিয়ান মনস্তত্ত্ববিদ এবং স্নায়ু চিকিৎসক বলেছিলেন, "মন হল হিমশৈলের মতো; এটি তার এক-সপ্তমাংশ জলের উপরে ভাসমান রাখে"। তাই মনের পাঠ এক দুরূহ ব্যাপার। স্বাভাবিক, যে মানুষ সেই বিদ্যা অর্জন করতে পারে সেই মানুষের সাফল্য অবশ্যম্ভাবী।
মনস্তত্ত্ববিদগণ গভীর এক মানসিক আঘাতকে 'ট্রমা' আখ্যায়িত করেছেন। এই ট্রমা মনের সুস্থ বিকাশের ক্ষেত্রে গভীর প্রভাব বিস্তার করে। ট্রমা যেকোনো বয়সেই হতে পারে তবে তা' শিশু মনেই এই সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করে। একটি বীজ কখন ফল প্রসব করে তা' বলা সবচেয়ে কঠিন।-