বাসা বাঁধে মফস্বলের মাস্তুলে
অজুত শতক প্রাচীন ঝড়ের দীর্ঘশ্বাসে...
তার বর্ষাজড়ানো এস্রাজে শুনি সামুদ্রিক জলোচ্ছাস!
মধুফুলরঙ ধরে ভেজা সন্ধ্যার রেশমগুটির গায়ে
সদ্যোজাত প্রজাপতির মতো আলো পায়ে পায়ে
হাঁটে ওরা মেঠো তারার বিবর্ণ বন্দরে!
জেগে থাকি একলা সুরের আঁধারি টলমল ঘরে
সন্ধ্যা হয়ে, হাওয়ার চিঠি হাতে ধরে!-
তার আনা-কানাচ! কবে যেন প্রজাপতিদের পাড়ার সেই জানালাটাতে রোদে জলে মরচের বিবর্ণ রং ধরেছে... আকাশটাও কবে যেন হারিয়ে গেলো! বুঝতে পারি না এখন এই শিশিরেভেজা শহরের গন্ধটা এত অচেনা কেন লাগে! বারান্দার কোণে জ্যোৎস্নাঝরানো পেয়ারাফুলের পাপড়ি আর ভিড় জমায় না! বহুদিন হয়ে গেছে, ওপারে, সে লাল অশোকে ঢাকা নদীটার রূপকথা শোনায়নি কেউ! রামধনু প্যাষ্টেলের বাক্স চাপা পড়ে আছে শ্যামাঘাসে, বৃষ্টি আর দুর্গাটুনটুনির পায়ের চাপে এলোমেলো হয় তার নীরবতা... অনেকদিন যেন শাঁখের শব্দ কানে আসে না শরপাতার আড়ালে লুকোনো সেই পোড়ো মন্দির থেকে! এখনো কি বর্ষার মেঘ উঁকি দেয় সেই শিকে,কপাটে, শরতের একটুকরো চাঁদ? খুঁজতে থাকি রাস্তাদের, দরজা, সেই পেছনের জানালাটা! হঠাৎ দেখি, এতদিন খেয়ালই হয়নি কবে যেন সেই খোলা পাল্লার পাশে লোহার উপর জন্ম নিয়েছিলো এক অঙ্কুর! চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকি, অদম্য বুনোলতার জালে আচ্ছন্ন হয়ে গেছে আমার অতীত! ছায়া নামছে বুঝি স্মৃতির উঠোনে! অবশ্য একদিন তো সবই শেষ হয়ে যায়!
-
জ্যোৎস্নাভেজা হিমঝুরি যে তীরে পড়ে,একা মধুকুপী ঘাসে
কিংবা ক্লান্ত পানকৌড়ির পায়ের শব্দে ফুটন্ত কাশে
শিহরণ জাগে! তুলোপাপড়ি তার পাটাতন, অলিগলি ধরে কবিতায়
কৃত্তিকা নক্ষত্র হয়ে আশ্বিনের স্মৃতিতে লিখতে চায়!
নদীর গায়ে বিবর্ণ নলখাগড়ার গন্ধ, পুরোনো বন্ধু হয়ে এসে
নৌকোকে বলেছিলো কথা তাদের, তারাদের ভালোবেসে
যারা আজ বহুদূর, ধুসর আকাশও স্বপ্নে একা
যে জন্ম নিয়েছে যুগে যুগে, তার কালপুরুষের রেখা
এখনও আছে জেগে; ছাতিমরেনুর নেশায় অন্ধকার
জলে স্থলে, নৌকো আর নদী আজ মিলেমিশে একাকার!
-
শাখাপ্রশাখা চমকে ওঠার ফিরতি হাওয়ায় এক একদিন মনের জীর্ণ পত্রালী বিশ্বাস তুলে তাকিয়ে দেখি
সবুজ মনির নিস্তরঙ্গ চোখ নিয়ে গুনছে সে, চিলতে জ্যোৎস্না, সাপলুডোর ছকে গাঁথা আমাকে...
কখনো আমি, কখনো ছায়া কিংবা কখনো ভুলভাল সমান্তরাল মহাবিশ্বের সিঁড়ি বাইতে বাইতে
গাছটা আমার নীরবতাই অঙ্কে জোটায়... ইতিহাস হয়ে ত্রিকোনমিতি আঁকে অঙ্কেরা!
আজ নয়... এসব বেশ শ্যাওলাধরা কথা... শব্দের ইটে খোঁজ নিয়ে দেখো, অন্ধকার ঘনিয়েছে বেশ
সেই কোন সমুদ্রনীল বিকেল থেকে বসে বসে এইখানে পাথরের মত আটকে যাচ্ছি একলা রাস্তায়
শিকড় ধরে লতিয়ে ওঠে অশ্বত্থরঙা শীত...হাওয়ার শ্বাস- প্রশ্বাসে ভাবছে সে!
ভাবছি আমিও মাঝে মাঝে, চৌরঙ্গি মনের গলিঘুঁজি বেয়ে
অনেকবার! অনেক প্রজন্মের পর কলমের প্রজাপতি ধরে ফুল ফোটাতে ফোটাতে
নিজেকে চিনেছি খসা পাপড়ির ভাঁজে... পাতা-মুকুলের কোনা বেয়ে যাওয়া সেই পথে
যেখানে কখনো বর্ষা নামে, অলস হেমন্ত হাত গুটিয়ে বসে থাকে, পাতাঝরা মরসুমের চাদর গায়ে
অস্তিত্বে দেখি, আয়ুরেখা গাছ দেখে আমাকে... একটা একটা করে কল্পবর্ষ হাঁটতে থাকে পায়ে পায়ে!
জানো, এই আমি আজও আমার কল্পনামাত্র!
-Soumanti Sinhababu-
মনের ওপরের মলাট সরিয়ে মাঝে মাঝে দেখি জন্ম নিচ্ছে সেই বইটা, আজও যা হয়নি পড়া!
-
মাইলফলকে এক একটা আয়ুর রোদ্দুরভেজা স্তবক পার করে প্রতিদিন পা রাখি আরেকটু নদী হওয়ার পথে, আর খানিকটা ক্ষয়ে যাওয়ার খরস্রোতে!
-
প্রতিবর্ত অভ্যাসের কাঁটা ফেলে আস্তে আস্তে বেনামী উপকূলে সরে যাওয়ার ভোরে
বহু আলোকবর্ষ নুব্জ আমার কম্পাস স্থির হয়ে আসে সমুদ্র ডানায়
পুরোনো কলমের মত শব্দের তীরে স্রোত রেখে যায় এক এক বিন্দু অন্ধকার!
অন্ধকার অঞ্জলিতে নীহারিকা গেঁথে তুলি... নীহারিকাকে সাজাই কখনো শহর, কখনো দেশ
কিংবা মাস, সপ্তাহ, ভালোবাসা অথবা কোনোদিন একবন্দর বিশ্বাস!
কেউ দেখেনি তাকে... সে দ্বীপ বহুদূর একাকীত্বের বালুচরে ...
খানিক কুয়াশা, অনেক নক্ষত্রান্তর অনেক মৃত্যু পর
মুক্তো-ঝিনুক রূপকথা লিখেছিল যে অক্ষরের গায়ে
সেই অক্ষর ছুঁয়ে! ভাবনার ঢেউ বেয়ে ধীরে ধীরে পরিচিত আবছায়া ধরে চোখের পাতার কিনারে
ধীরে ধীরে বুঝি, নৈঃশব্দ একলা জানে শুধু আমার আসল নাম!
-
বাড়িয়ে দেওয়া আলো-বিন্দুর আঙুলগুলো ঝাপসা হওয়ার সন্ধ্যায় নিঃসঙ্গ ছায়াটুকু খালি বাঁচতে শিখিয়েছিল কর্নিয়ার ঘরে, নিকটদৃষ্টি অভ্যাস আঁকড়ে!
-
আয়নার গভীর ডুবজলে তলিয়ে যাওয়া ওই সমান্তরাল মহাবিশ্বটার কাছে হলো না কোনোদিন প্রতিবিম্ব থেকে আসল হয়ে ওঠা!
-
রক্তে বাঁচিয়ে রাখা অনুভূতি প্রজন্মান্তরে হয় সাহসী নদী...বিশ্বাস দেশপ্রেম!
-