নীরবে লালিত হোক বুকের ভিতরের কান্না।

-

আমার কলমের কালি ফুরিয়ে যায়,
শব্দগুলো সাদা পাতায় কাটে না দাগ।
গলার কাছে উঠে আসা বুকের অনুভূতি
ঝর্ণার মত ঝরে পড়ে না পাতায় পাতায়।

ঝর্ণা একদৃষ্টে চেয়ে দেখবে কিছু লোক,
ভাববে কতটা শীতল সেই জল ?
কতটা গভীরতা আছে সেখানে ?
চেখে দেখবে যেমনই তার স্বাদ হোক ?

সবশেষে বুঝবে ওই জল আমার চোখে।
যে জলে ডুব দিয়ে পাই মুক্তি, পাই আনন্দ,
সেই জল নাকি আমার বুকের যন্ত্রণার !
সেই জল ঘোলা হতে থাকে তীর্যক চোখে।

দিনশেষে সারা শরীরে কাদাগোলা জল নিয়ে
আমি বন্ধ করি সাদা পাতা।
ঝর্ণার জল কলম বেয়ে নামে না আর,
আমার মুক্তি আনন্দ সাদা পাতায় যায় হারিয়ে।

-

আমার শহর হারিয়ে যায় তোমার পথ খুঁজতে...

-

আঙ্গুল ছুঁতে আলোকবর্ষ পার হই,
তারাদের ধূলো লাগে হাতে।
আঙ্গুলে হাত রাখা যায় না,
পাওয়াটা তবু থাকে বুকের ভিতরে।

-

যদি আবার এক আকাশ হতে বলো,
আমি রোদ হয়ে ছড়িয়ে পড়ব মেঘের মাঝে।
যদি আবার আঙ্গুল ধরতে বলো,
আমি অনুভব করব তোমায় প্রতিটা রোমকূপে।
যদি চোখে চোখ রাখতে বলো,
কালো মেঘ ঝরে পড়বে আমার দু'চোখ বেয়ে।

কবিতার পাতা গেছে ভিজে,
শব্দেরা কবেই হারিয়েছে কলমের আঁচড়।
বর্ষাশেষের রোদ্দুর মনে করিয়ে দিল,
তোমাকে না লেখা কবিতাটা রাতের বালিশের
পাশেই রয়ে গেছে এখনও।
তার শব্দেরা আমাকে ছুঁয়ে চলুক তোমার কাছে,
আর আমি আকাশের নরমে মুখ ঢেকে
তোমার সুখে হব বিলীন।

-

তখন ছিল মধ্যরাত ।
সবাই নিজের স্বপ্নে বিভোর ঘুমে ব্যস্ত ।
সেই মধ্যরাতেই আমি উঠলাম জেগে ।
মনের তল ছোঁয়া এক আহ্বানে
হল নিদ্রাভঙ্গ ।
নিদ্রিত আমাকে জাগিয়ে দিয়ে সে বলল ,
ভালোবাসি ।
জাগ্রত চেতনা জুড়ে মায়াজাল রচনা হল ,
স্বপ্নলোকে যে জেগেও যাওয়া যায় ,
জানতাম না !
সে আমার হাত ধরে নিয়ে গেল
এক বিশাল ভালোবাসার সাগরে ।
যেখানে ভালোবাসাবাসির কোনো হিসাব নেই , শর্ত নেই !
বেহিসাবী সে ভালোবাসায় আকন্ঠ ডুবে
মাতাল হলাম আমি ।
নেশাতুর চোখে আমার জমানো যত প্রেম-মন-শরীর
সব ঢেলে দিলাম তার পায়ে ।
নিঃস্ব আমি নিঃস্ব....
তবু নেশা ছাড়ে না ।

আজ আমি আসক্ত ।
ছাতিম ফুলের তীব্র গন্ধের মত
তীব্র অনুরাগে আসক্ত ।
মধ্যরাতে হাতে তুলে নিই সেই পেয়ালা ,
যা দিয়ে প্রথমবার নেশা করিয়েছিলে ।
সব ছাড়ি তবু , নেশায় মিশে আছো তুমি -
রক্তেস্রোতে মেশে নেশা ।
মধ্যরাত্রের সে নেশা আমাকে ছাড়ে না ।

আরো একবার নিজের হাতে আমাকে দাও তুলে সে পেয়ালা ।
মৃত্যুর আগে তোমার হাতেই পান করি সে বিষ শেষবার....

-

জানলার পাশে এক চিলতে আকাশে
মেঘ জমাট হয়ে আসে উতল বাতাসে ।
বেড়ে ওঠা অশ্বত্থের চারা কার্ণিশ বেয়ে
দুলে দুলে সারা মেঘপ্রেমিকার গান গেয়ে ।
খসে পড়া পলেস্তরা তার জীর্ণ কপাটে
ভিজে ওঠে ঝরতে থাকা শীতল ফোঁটাতে ।
অন্ধ সিঁড়িঘরের দেওয়াল কান পেতে শোনে
কার কথা নীরবে ওঠে একান্তে বুকের কোণে ।
নোনা ধরা ইঁটের পাঁজরের অগুণতি স্বপ্নে
ভোর হতে সেজে বসে থাকে পরম যত্নে ।
আকাশের আরশিতে আলো আসে যেখানে
বৃষ্টি শেষে হবে মিলন অলিন্দের এককোণে ।

-

খুব আলতো হাতে তুলে নিই ,
নরম উষ্ণতা মাখা আবেশ
মেখে নিই চোখে , মুখে , শরীরে ।
সেই আবেশ মানুষের রূপ নিতে থাকলে
প্রস্তরীভূত মাটির দিকে চোখ পড়ে ,
বন্ধ হয় সব আবেশের মাখামাখি ।
মাংসের হৃদয় খুবলে খায়
পাথর হয়ে থাকা পদতল ।
ব্লক লিস্ট...
শুধুই কি শত্রুতার অপর নাম ?
না , তার চেয়েও অনুক্ত অনেক কিছু !

-

রাত বেড়ে চলে নিঃশব্দে
এই বুকের ভেতর ।
একঘেয়ে অভিমান ঝিঁঝিঁর ডাকের মত
বাজতে থাকে.....অবিরাম ।
ঝরে পড়তে থাকে শিশির বিন্দু
গাছের পাতা বেয়ে ঘাসে ।
ভিজে ওঠে ঘাস...
ভেজে কি মন ?
ভিজতে চায় ভোরের শিউলির মত -
ভেজে না...
ভেজে না মন , ভেজে না চোখ ,
শুষ্ক অপাঙ্গে চেয়ে দেখি ভিজে ওঠে রাত !
ভিজতে চাই...একবুক আবদ্ধ নোনাজলে
ভিজতে চাই একটিবার ।

-

দূর থেকে দেখি শুধু দু'জন দু'জনকে ।
চোখ নেই , নাক নেই , কপাল - ভ্রূ যুগল কিচ্ছু নেই ।
আছে একটা অনুভূতি , খুব সূক্ষ্ম অনুভূতি ।
তাকে দেখা যায় না খালি চোখে ।
মোটা যে আতশ কাঁচের তলায় রেখে বিচার হয় অনুভূতির শুদ্ধতার...তাতেও ধরা পড়ে না সে ।
আছে তবু আছে...থাকবেও ।
সূর্যের অবিরাম প্রদক্ষিণের চিরকালীন সত্যের মত থেকে যাবে সে...থেকে যাবে লোকচক্ষুর আড়ালে , বুকের নরম গভীর অন্ধকারে ।
থাকবে ততদিন , যতদিন না ধমনীর ভেতর রক্তের স্রোত বন্ধ হবে , চোখ বন্ধ হবে ।
বন্ধ চোখের ওইপারের জগত হতে যদি কখনও ফিরে আসি...তাকে নিয়েই পুনর্বার ফিরব ।
ফিরব আমি সেই চোখহীন , মুখহীন অনুভূতিকে ভালোবেসে ।

-