আমরা হয়তো পারফেক্ট নই, আমাদের মধ্যেও খামতি আছে অনেক; কিন্তু-
ভালো লাগে তার, কোথাও যাওয়ার সময় আগে পৌঁছে আমার জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে; আর আমার ভালো লাগে, বাড়ি ফেরার সময় তাকে বাসে তুলে তবেই ফিরতে।।
ভালো লাগে তার, আমার পকেট ফাঁকা জানা সত্ত্বেও যখন আমায় জোর করে নিয়ে যায় সে তার জমানো টাকা দিয়ে একসাথে কিছু খেতে; আর আমার ভালো লাগে, তার পছন্দের চকলেট তাকে দিলে তার মুখের হাসিটা দেখতে।।
ভালো লাগে তার, আমি সমস্যায় পড়লে আমার জন্য সবসময় আমার পাশে দাঁড়াতে; ভালো লাগে আমার, রাতের পর রাত জেগে তার খারাপ সময়গুলোতে তার কথাগুলো শুনতে।।
আমাদের ভালোলাগা গুলো খুবই ছোটোখাটো আর সীমিত, আমরা বিশ্বাস করি সেই সীমিত Effort-টাকে।।
"হারিয়ে যাব দুজনে একদিন, আমি হবো একা আর তুই আকাশের তাঁরা
তোর কবরই সাক্ষী থাকবে, ভালোবেসে Effort-এ বিশ্বাস করে যারা"-
'ভালোবাসা' এই বিষয়টি নিয়ে যখনই কেউ কিছু প্রশ্ন করেছে আমি চুপ থেকেছি।।
তবে তুমি আমার জীবনে আসার পর থেকেই এই বিষয়টি বুঝতে শিখেছি অল্প অল্প করে।।
যখন তুমি হাজার ব্যস্ততার মাঝেও আমাকে একটু আড় চোখে দেখে নাও আমি কি করছি;
যখন আমি তোমার পছন্দের সূর্যমুখী ফুল দিলে তোমার চোখে খুশির হাসিটা ফুটে ওঠে;
যখন তুমি আমার সামর্থ্যের থেকে বেশি কিছু না চেয়ে বলো বেশি কিছু লাগবে না পাশে থাকলেই হবে;
যখন আমি দিনের শেষে তোমার সাথে কথা বললে আমার সারাদিনের মানসিক ক্লান্তি দূর হয়ে যায়।।
ঠিক তখনই আমি অনুভব করি আমার কাছে এইগুলোই ভালোবাসার ব্যাখা।।
আমি খুশি তোমাকে আমার পাশে পেয়ে।।
জীবনে অনেক কিছু না পাওয়ার মধ্যে শুধু 'তুমি' অনেকটাই পাওয়া।।
"তুমি শুধু থেকো পাশে, শক্ত ভাবে দুহাত ধরে
আগলে তোমায় রাখবো ভীষণ, ভালোবেসে যত্ন করে"-
প্রতিবারই তোমাকে বাড়ির গলির মুখটায় ছেড়ে তোমার বাড়িতে ঢোকার অপেক্ষা করতাম।।
কিন্তু তোমার অভ্যাস কোনোদিনও ছিল না যাওয়ার আগে একটিবার পিছন ফিরে দেখার।।
শেষবারেও তুমি যাওয়ার আগে ফিরে দেখোনি; বরং সেইদিন একটু বেশি ব্যস্ত ছিলে তোমার নতুন জীবন নিয়ে ভাবতে।।
হ্যাঁ, আমি কিছুটা বোকার মতন চোখের কোণে একরাশ হতাশা নিয়ে তোমার ফিরে দেখার আর ফিরে আসার অপেক্ষায় বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলাম।।
বুঝেছিলাম ভদ্র সমাজের আখ্যা দেওয়া 'পারস্পরিক বিচ্ছেদ'-টাও, ঠিক কোনো সম্পর্ক ভাঙার মতনই কষ্টের।।
সেইদিন তোমাকে আটকানোর চেষ্টা করিনি, বরং যেতে দিয়েছি।।
আমি চাইনি কোনোরকম বিভ্রান্তিতে পর তুমি আমার আর তোমার নতুন জীবনকে বাছাই করতে।।
ভালোই করেছিলে তুমি ফিরে না দেখে আর না এসে; আজ তোমার থেকে দূরে সরে নিজেকে অনেকটাই স্বাবলম্বী করেছি।।
"গুরুত্ব কমলে যেতে দেওয়াই ভালো, জোর করে আটকানোটা সাময়িক
অভিযোগগুলো তোমার অজুহাত মাত্র, ভালো বিকল্প খোঁজাটা আসলে বাস্তবিক"-
সবারই চোখে পৃথিবীর সবচেয়ে মিষ্টি সম্পর্ক হল ভাই-বোনের সম্পর্ক।।
সারাটা বছর ঝগড়া, মারামারি, রাগ, অভিমান, স্নেহ, ভালোবাসা এইভাবেই কেটে যায় তাদের।।
কখনও কোনো জিনিসের বা কোনো খাবারের বা টিভির রিমোটের ইত্যাদি নানান অধিকারে প্রতিনিয়ত লড়াই করা বোন, আবার রাঁখি ও ভাইফোঁটায় ভাইয়ের ভালো থাকা, সুস্থ থাকার কামনা করে।।
একইভাবে বোনকে ঘরে শান্তিতে না থাকতে দেওয়া ও সবসময় জ্বালাতন করা ভাই, আবার বোনের সমস্ত বিপদে আগলানো থেকে বোনের বিয়ের সময় সমস্ত দায়িত্ব নিজের কাঁধে নেয় এবং সবচেয়ে কাছের মানুষটিকে বিদায় দেওয়ার আগে চোখে জলটা তারই প্রথম আসে।।
এইভাবেই হয়তো ভাই-বোনের এই সম্পর্কটি পৃথিবীর সবচেয়ে মিষ্টি সম্পর্ককের দাবি আজও ধরে রেখেছে।।
"দুজন-দুজনের চরম শত্রু, আবার একে-অপরকে ছাড়া চলে না
ভাই-বোনের এই মিষ্টি সম্পর্ক, লড়াই-ঝগড়া ছাড়া, হয়তো মানায় না"-
আমিতো চাইনি কখনই বিকল্প হতে, না কারোর ভালোবাসার তৃতীয় ব্যক্তি হতে।।
কিন্তু প্রতিবারই তাদের কাছে আমার জায়গাটা নির্দিষ্ট।।
তবে আমিও চাই কোনো একজনের কাছে আমার ভালোবাসাটা প্রকাশ করতে, অনুভূতিগুলোকে ব্যক্ত করতে।।
এই ব্যস্ত শহরে স্থায়ী সঙ্গী হতে, সমস্ত পরিস্থিতিতে তার ভরসা ও বিশ্বাসযোগ্য কাছের মানুষ হতে।।
আমি জানি, আমার কল্পনার সাথে বাস্তবের বিস্তর ফারাক;
তাও ভাবতে ভালো লাগে ভালোবাসার মানুষটির হাতে হাত রেখে এই শহরের সমস্ত অলিগলি ঘুরতে, কোনো এক গঙ্গার পাড়ে কাঁধে মাথা রেখে একটা সুন্দর বিকেল দেখতে, এক বর্ষার সন্ধ্যায় দুজনে একটি ছাতার তলায় দাঁড়িয়ে গরম চায়ের সাথে বৃষ্টির প্রতিটি ফোঁটাকে উপভোগ করতে।।
আমি আশাবাদী, হয়তো একদিন আমার কল্পনা পাবে বাস্তবে রূপ;
কারোর বিকল্প নয়, 'প্রথম অগ্রাধিকার' হবে আমার স্থান।।
"ভালোবাসার বদলে শুধুই বিকল্প, পায় নি কারোর অগ্রাধিকার
অপেক্ষায় আছি প্রতিনিয়ত, যার প্রতি কেবল আমার অধিকার"-
'পরিস্থিতি ও সময়' শত অনিচ্ছা সত্ত্বেও আজ তাদের আলাদা করেছে।।
দুজনে মুখোমুখি বসে, এইটাই তাদের শেষ দেখা;
কিন্তু দুপুর থেকে সন্ধ্যা কখন যে কেটে গেছে, বুঝতে পারে নি তারা।।
শেষবারের মতন একে-অপরকে জড়িয়ে ধরল, দুজনেরই চোখটা ভিজেছে জলে।।
প্রথম ভালোবাসার প্রস্তাব থেকে শেষবারের ঝগড়া; ভয়ে ভয়ে প্রথম চুমু থেকে রাস্তার অলিতে গলিতে হাতে হাত রেখে ঘুরে বেড়ানো; সবার অবর্তমানে প্রথম জড়িয়ে ধরা থেকে শরীরের নানান স্পর্শ ও গন্ধ।।
এইরকম মুহূর্তগুলো বারবার মনে পড়ছে তাদের।।
এরপর দিয়ে এইসব হয়তো শুধুই স্মৃতি হয়ে থেকে যাবে।।
মেয়েটি উঠল এবং কিছুটা এগিয়ে পিছনে ফিরে বলল- 'ভালো থাকিস'।।
আর ছেলেটি চুপ করে শুধু একটিবার মাথা নাড়ল।।
"আলাদা হওয়ার নানান কারণে, সম্পর্ক ভাঙছে যাদের প্রতিনিয়ত
মুখে তাদের হাসির মুখোশ, হৃদয়জুড়ে গভীর ক্ষত"-
সেদিন অফিসে তাড়াতাড়ি ছুটি হওয়াতে গিয়ে বসলাম গঙ্গার পাড়ে।।
নদীতে তখন জোয়ারের স্রোত, আকাশে বিকেলের আলো-আঁধারের খেলার সাথে ক্রমাগত বয়ে চলা স্নিগ্ধ ঠান্ডা হাওয়া।।
ইচ্ছে ছিল; কোনো একদিন এক গঙ্গার পাড়ে বসে তোমার হাতে হাত রেখে এইরকমই সুন্দর বিকেলটা দেখার।।
সঙ্গে থাকত কিছু পুরনো গান এবং আমাদের পছন্দের 'চা ও ঘটিগরম'।।
আমার কাঁধে রাখতে তোমার মাথা, আর আমি এক হাত দিয়ে আলতো করে জড়িয়ে ধরতাম তোমায়।।
ইউটিউবের প্লেলিস্টে তখন একটি গানের লাইন
"হাম তুম কিতনে পাস হে, কিতনে দূর হে চাঁন্দ সিতারে"।।
এইসব ভাবছি, হঠাৎই একটা মশার কামড়ে বুঝলাম সন্ধ্যে হয়েছে।।
লম্বা দীর্ঘশ্বাস দিয়ে উঠে দাঁড়ালাম; একটা সিগারেট ধরিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।।
"ইচ্ছেগুলো ঠুনকো ভীষণ, কাঁচের মতন ভাঙছে
ভাবছি যত তোমাকে নিয়ে, দীর্ঘশ্বাসটা ক্রমশ বাড়ছে"-
দূরত্ব ও যোগাযোগ বরাবরই একে-অপরের ব্যাস্তানুপাতিক।।
দূরত্ব যত বেড়েছে আমাদের যোগাযোগটাও ততই দ্রুত কমেছে।।
সমস্ত কঠিন পরিস্থিতিতে পাশে আছি বলা প্রতিশ্রুতিটা হয়েছে মিথ্যে।।
'না; তুমিতো আর নাও নি কোনো খোঁজ'
যখন আমি জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে গেছি, চেয়েছিলাম তুমি হয়তো ফিরে আসবে; ফিরে এসে বলবে, ভয় পেও না আমি তোমার পাশে আছি।।
কিন্তু না, তুমি তা করো নি; একদমই নাও নি কোনো খোঁজ।।
আমার সকালের আশা রাতের অন্ধকারে হতাশা হয়ে মিলিয়ে গেছে প্রতিদিনই।।
"যোগাযোগটা বহুদিন নেই, দূরত্বটা আজ ক্রমশই বেড়েছে
যখনই ভেবেছি ফিরবে তুমি, মনটা আমার বারবারই ভেঙেছে"-
সময়টার আজ অনেক বদলে গেছে, কিন্তু আজও সমাজের কিছু মানুষ নারীদের এই বদলকে মেনে নিতে পারে না।।
আজও তারা নারী-পুরুষের ভেদাভেদ করে, বিভিন্ন অজুহাতে তাদের আজও আড়াল করে রাখে।।
যা তাদের নিতান্তই মূর্খতা ছাড়া আর কিছুই নয়।।
আজকের মেয়েরা ঘরের পাশাপাশি বাইরের সমস্ত কাজে সমান পারদর্শী।।
একজন মেয়ে যেমন তার বাবা-মা'র সম্বল, ঠিক তেমনই তার সন্তানের প্রথম শিক্ষক।।
তারা যেমন একজন বন্ধুর ভরসার হাত, অন্যদিকে তাদের ভালোবাসার মানুষটির বিশ্বাসের সঙ্গী।।
তারাই পেরেছে বারবার সমাজকে ভুল প্রমাণিত করে নিজেদের অধিকার অর্জন করতে।।
"সমাজের নিয়মকে বদলে তারা, জবাব দিতে শিখেছে
আড়াল থেকে প্রকাশ্যে এসে, ভেদাভেদটা তারাই ভেঙেছে"-
হয়তো আমি এইরকমই একজনের খোঁজ করেছি প্রতিদিনই।।
তার সাথে প্রথম আলাপ হয় আমার প্রিয় বন্ধুর বিয়েতে।।
তারপর হঠাৎই একদিন ফেসবুকে তার রিকোয়েস্ট এল, একসেপ্টও করে নিলাম।।
শুরু হল কথা, নাম্বার এক্সচেঞ্জ; কিছুদিনের মধ্যেই দুজনেই দুজনের খুব কাছের মানুষ হয়ে উঠলাম।।
আমার ছোটো থেকে বড়ো সব সমস্যার সমাধানই তার জানা।।
যখনই আমি কোনো কারণে ভেঙে পড়ি, সে তার হাত আমার হাতের উপর রেখে ভরসা দিয়েছে শক্ত হওয়ার।।
ঠিক একইভাবে তার সমস্ত কঠিন সময়ে আমায় সে সবসময় পাশে পায়।।
ভয় হয় তাকে হারানোর, তাই প্রথমে বলতে পারি নি ভালোবাসি তাকে।।
কিন্তু তার জন্মদিনের দিন তাকে ডাকলাম আমাদের দেখা করার জায়গা গঙ্গারপাড়ে, তার পছন্দের কানের দুল দিয়ে হাঁটুগেড়ে বসে তাকে বলি- "ভালোবাসি তোকে!!"
"কষ্ট পেলে নেব জড়িয়ে, চুমু দেব আলতো করে মাথাতে
দিনের শেষে গুনব তারা, মাথা রেখে তোর কোলেতে"-