।।হিটওয়েভ।।
সেদিন হঠাৎ দেখা, যেন সকালের রোদে মাখা,
তপ্ত দুপুরে ক্লান্ত হাওয়ায়, অলস চাদরে ঢাকা।
সময় তখন উল্টো পথে, সস্তার নস্টালজিয়ায়,
রাস্তার মোড়ে চলে হাত ধরে, ক্লান্তি জড়ানো গায়ে।
যেমন হঠাৎ করে দমকা হওয়া আসে, গ্রীষ্মের মাসে,
যেন ছুঁয়ে যায় এক বুক স্নিগ্ধতায়, বাঁধভাঙা উল্লাসে।
সেদিন হঠাৎ থমকে দাঁড়ায়, বার বার ফিরে যায়,
ফেলা আসা সমাধির বিষন্নতায়, রংচটা দরজায়।
জল মাখা হাতে ধুয়ে যায়, হিসেবে লেখা কে? কখন? কবে?
তোমার ঘড়ির কাটা মেপে, বর্ষার রাতে আবার দেখা হবে।
উষ্ণ যখন শীতল মায়ায়, সিলিং ফ্যানে বন্দী হায়!
তোমার শহরে সূর্য উঠে, জানলা দিয়ে আলোর ছোঁয়ায়।-
অত্যন্ত সাধ... read more
মনে থাকা মুহূর্ত গুলো খুব সার্থপর। নিজেদের কিছুতেই ভুলতে দেয় না। কোনো অলিগলির বাঁকে, কোনো কবিতায়, কোনো গানে, কোনো এক গন্ধে কিংবা কোনো কথার টানে, ঠিক ফিরে আসে। যতই দূরে যায়, ততই কাছে ফিরে আসে। বারবার।
আমাদের মাথায় যদি সলিড স্টেট ড্রাইভ থাকতো, ভালই হত। কন্ট্রোল+শিফট+ডিলিট। ব্যস, সমস্যার সমাধান। কিন্তু মানুষের মন বড়জোর রিসাইকেল বিন অব্দি যায়, তারপর আবার রিস্টোর। তাই,
তাদের কথা হঠাৎ করে জানতে ইচ্ছে করে,
যারা নীরবতায় বিপ্লব এনেছে, ভিতরঘর পুড়িয়ে।
কেমন আছে, কি করছে, মনে কি পড়ে তাদের,
যাদের সঙ্গে দিন কাটত, হিসাব ছিলনা লাভ-ক্ষতি-সুধের।
একই পথে যেতে যেতেই খুব আপন থেকে পর,
অভ্যাসের ঘেরাটোপে প্রিয় মানুষই বিরক্তিকর।
ভাবছো বুঝি আঁকড়ে থাকি কেন? অথবা দুঃখ বিলাসি?
আসলে পূর্ণ থাকা শূন্যস্থানে, অপূর্ণতা যেন বাঁধনহারা সন্ত্রাসী।-
।।শূন্য দশমিক।।
একটা সংখ্যার কাছে ভগ্নাংশ খুবই অর্থহীন।
০.৫ এর বেশি বা কমের ওপর তার অস্তিত্ব নির্ভর করে।
একটা নম্বরের ওপর চাপিয়ে দেওয়া দায়ভার,
যেটা সে কখনোই বয়ে বেড়াতে চায় না।
আমরা যারা ভগ্নাংশে বাঁচি, তারা বড়ই বোকা।
সংখ্যাদের কাছে আমরা বড় মূল্যহীন, অতিরিক্ত।
আমাদের কাছে যারা ১০০, তাদের কাছে আমরা শূন্য দশমিক।
সংখ্যাগরিষ্ঠতায় আমাদের খুঁজে পাওয়া যায়না ঠিকই,
তবে জীবনের ছোট ছোট স্মৃতির ভগ্নাংশ গুলোই কিন্তু,
সেই শেষ সুতোটাকে আগলে রাখে, দশমিকের বন্ধু হয়ে।-
।। রাজকন্যা ।।
আমি গল্পে লেখা রাজকন্যা দেখিনি।
দেখিনি মেঘবালিকার ডানা মেলা জলছবি।
আমি দেখিনি বনলতা সেনের চুলের বাহার,
শুধু পড়েছি তোমার অসমাপ্ত চোখের সমাচার।
কাব্যে লেখা নায়িকারা মেকআপ করে মুখ লুকায়।
লুকিয়ে থাকা ব্যস্ত নাবিক ধ্রুবতারার গান গায়।
যেই হাসিতে আমার নাম লেখা থাকে চুপটি করে,
তার চেয়ে বেশি মিষ্টি কি হয়? বলতে পারো গানের সুরে?
তোমার যা কিছু খুঁত, যা কিছু কম, জমে থাকা নালিশ,
যা কিছু তোমার অবশেষে থাকা বৃষ্টিভেজা পাশবালিশ।
তার সবটাই সুন্দর, সবটাই ভালো, মেঘে ঢাকা আলো,
তোমার অস্তিত্বের প্রাপ্তি, তোমায় পাওয়ার সুখের মতোই ধারালো।
-
।। আদরের চোরাবালি ।।
এই শহরের লোডশেডিং,
সিলিং ফ্যানের ছায়ার কোণে,
ক্লান্ত চোখে গল্প লেখে,
গ্রীষ্মকালের মেঘলা দিনে।
এই শহরের পাসবই-টায়,
অনুভূতিদের ব্লাঙ্ক চেকে সই,
হারিয়ে ফেলা মানুষগুলো,
নতুন করে ফিরে আসে কই?
আফসোসের ঘেরাটোপে আজ,
অপেক্ষাদের ঘাম ঝরে খালি,
যদি ফিরে পাওয়া যেত একটু সময়,
আগলে রাখতো আদরের চোরাবালি।-
।। বাকিটা অপ্রকাশিত ।।
হঠাৎ বছর দশেক পরে, কোনো এক রাস্তার মোড়ে,
দেখা হলো দুই পথিকের, যারা হারিয়ে গেছে সময়ের অগোচরে।
- "কেন করেছিলে অপরাধ, কেন পেয়েছিলে শাস্তি?"
- "অপরাধ যদি হয় ভালোবাসার, তবে যাবজ্জীবন বাঞ্ছনীয়"
- "ঠাট্টা করছো?"
- "না, খালি সত্যি বলেছিলাম।"
- "না বললেই পারতে।"
- "ঠিক। শুধু ভালোবেসেছিলাম তোমার নাম, তোমার বলা কথাদের।
ভালোবেসেছিলাম তুমি লেগে থাকা সময়গুলোকে।
ভালোবেসেছিলাম একটা বন্ধুত্ব, যেখানে সহজে নিজের লুকনোগুলোকে মেলে ধরা যায়।
ভালোবেসেছিলাম একটা অস্তিত্বকে, শুধু প্রেমিকা বানাতে চাইনি।
- "কিন্তু, সেটা কি ঠিক?"
- "মানুষ যে এত গান লেখে, কবিতা বানায়, বার বার ফিরে যায় ভালোবাসায়,
সব কি ঠিক? কিছুই কি নেই ভুল?
ভালোবাসলে হিসেব কষতে পারো?"
- "না তবে অসম্পূর্ণতা থেকে সরে যাওয়া কি ভুল?"
- "জন্ম থেকে মৃত্যু আমরা অসম্পূর্ণতার ছাদের তলায় বাঁচি।
কি পেলাম এর থেকে কি পেলাম না এর কদর বেশি।
তাই বলে কি আমরা খুঁজি না? আমাদের মনের মাঝের ইচ্ছেদের?
- কিছু নিস্তব্ধতা, তারপর "ভালোবেসেছিলে? আর বাসনা?"
উত্তরে পাওয়া যায় শুধু একটা হাসি, সন্ধ্যার অন্ধকারের মত ম্লান।
নিয়ন আলোর রাস্তা ছিড়ে, চলে যায় আরো একটা বেঁচে থাকার গান।-
।।প্রাকটিক্যাল।।
তোমার প্র্যাক্টিক্যাল খাতায়
নাম কাটানোর দরখাস্তে বিশ্বাস।
ম্যাচুরিটির স্লোগান ঠেলে
মূল্যহীন হৃদয়ের মৃত দীর্ঘশ্বাস।
হত্যা করা ইচ্ছেগুলো
হিমঘরে ভায়োলিন বজায়,
অবাধ্য রাত জাগা ভ্যাকসিন
মহামারীর অবৈধ প্রতিবাদ সাজায়।
-
শহর যখন বৃষ্টি চায়, মধ্যরাত্রির চোখের কোনায়,
তোমার কাজলে অসুখ আঁকে, অস্থির তাপমাত্রায়।
নোটিফিকেশান সময় বেচে, লোকসানের অপেক্ষায়,
কালৈশাখীর ঝড় তখন, উষ্ণতম দপ্তরে গান শোনায়।-
।। মন কেমন? ।।
মন তুই বড্ড বাজে ভুলতে গেলে মনে করাস,
আবার মনে কিছু রাখতে গেলে বেজায় ভুলে মুখ লোকাস।
কোথায় যাবি কোথায় হারাবি হিসেব ভালই করতে পারিস,
তবে মনের কথা শুনতে পেলেই সিগনাল ভাঙ্গার ঝান্ডা নারিস।
মন তুই বাচ্চা ভীষণ, আবার কখনো ভীষণ রকম বুড়ো সন্ন্যাস,
সত্যি কথার নকশিকাঁথা পড়তে বসে দু চোখ ভরা চেনা ইতিহাস।
ঠিক ভুলের আদালতে তোর ইচ্ছের সাথে চুক্তির বায়না,
অকারণের শাস্তি দিতে তুলে ধরিস তোর অপরাধের আয়না।
পালাতে গিয়ে ফিরে এলি, চোখ ঢেকে আড়ালে থাকার চৈত্র মাস,
মিথ্যে কথার সরলতায় মানতে চাস না সত্যবাদীর দীর্ঘশ্বাস।
-
।। যদি হটাৎ ।।
হঠাৎ যদি কান্না পায়,
পাহাড় চূড়ায়,
বরফ জমে অভিমানী।
রোদ্দুর হয়ে এসো,
সোনালী কাঞ্চনঙ্ঘার মত,
বাড়িয়ে দিয়ে হাতখানি।
যদি হঠাৎ বৃষ্টি আসে,
মনের আকাশে,
চুপটি করে থাকা চোখে।
ভিজবে কি একসাথে?
জল ফড়িং এর ব্যস্ত ডানায়,
মুখ লুকোবো মধ্যাহ্নের ছাদে।
ঢেউ যদি আঘাত নামায়,
অসহায় মোহনায়,
ব্যর্থ মুক্ত খোঁজার রশিদে।
পারলে পাল তুলে দিও,
তোমার আদরের নৌকায়,
বাঁচব ঘর বাঁধার তাগিদে।
অন্ধকার মোড়ে হটাৎ দেখা,
নিঃশব্দে একা,
অতীত করেছে তাড়া দুরন্ত গতিতে।
আলো দেখিও ভবিষ্যতের,
মিথ্যে হলেও ভরসা রেখো কাধে,
আমার প্রেম যেন হয়, ন হন্যতে।-