কারোর প্রেম ঢাকা পড়ে যায়
অভিমানের চাদরে,
কারোর প্রেম বেড়ে ওঠে
প্রেমিকের আদরে।-
নিঃস্ব হলে হাত বাড়িয়ে 'বৃষ্টি' বলে ডেকো,
চুপি চুপি গোপনে ছুঁয়ে যাব তোমায়।
শান্তির বারিষধারায় সিক্ত করে দিয়ে যাব তোমায়।
ধুয়ে যাবে সব ক্লান্তি-শ্রান্তি, সব অভিমান-অপমান।
একরাশ কদম ফুলের মায়াবী গন্ধ কিংবা
বৃষ্টি ভেজা মাটির সোঁদা-বন্য গন্ধ
উপহার দিয়ে যাব তোমায়।
উন্মত্ত ময়ূরীর নৃত্যতালে মাতিয়ে তুলবো তোমায়।
'বৃষ্টি' হয়ে সংগোপনে ছুঁয়ে যাব তোমায়,
তোমার ওষ্ঠকে নির্লজ্জের মত ছুঁয়ে
নিঃশব্দে বলে যাব--
'ভালোবাসি ভালোবাসি'।
তারপর একসময় নিস্তেজ হয়ে গিয়ে
তোমার শরীরের সাথেই মিশে যাব চিরতরে।
-
ব্যর্থতার ভরাডুবিতে পাক খেতে খেতে
ডুবতে থাকে ভালোবাসার তরীখানি।
গাঙুরের পাড়ে নোঙর ফেলতে চায় এ-মন
কিন্তু অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় অভিমানের প্লাবন!-
অসময়ের বৃষ্টি...
হয়তো বৃষ্টি নেমেছিল সেদিন দু'চোখ বেয়ে,
অকালের জলভরা মেঘ থেকে সেদিন
ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নেমেছিল,
তোমার অজান্তেই!
সেই সহস্র শ্রাবণধারায়
আমি ভিজেছিলাম, একা।
তারপরেও কি জুড়িয়েছিল
এই অসহ্য দহনজ্বালা!
কিংবা নিভেছিল কি
বুকের মধ্যে দাউদাউ করে জ্বলতে থাকা
বিশ্বাসভঙ্গের যন্ত্রণামাখা লেলিহান শিখা!
দূরে কোথাও বেজে চলেছে
বিরহমাখা অজানা সুর।
চেনামুখের মধ্যে অচেনা ছায়া দেখতে দেখতে
আজকাল হারিয়ে যাচ্ছি ক্রমশ!
কিংবা, হারাতেই চাইছি হয়তো...
ছুটে বেড়াচ্ছি, ছুটেই চলেছি
সমতল থেকে পাহাড়ে, পাহাড় থেকে জঙ্গলে
কিন্তু কিসের সন্ধানে এই ছুটে চলা?!
কার কাছ থেকে লুকানোর জন্য এই ছুটে চলা?!
জানি না, অথচ ছুটে চলেছি সেই কবে থেকে!
দূর থেকে দূরান্তে, আরও দূরে, আরও গভীরে...
-
ইতিহাসের অলীক নিয়মে সময়ের চোরাস্রোত বেয়ে ফিরে ফিরে আসে সেই একই স্মৃতি... সব যন্ত্রণা কি আর ভোলা যায়! আর ভুলতে চাইলেও নির্দিষ্ট সময় অন্তর সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি আবার মনে করিয়ে দেয় সেই দুঃসহ যন্ত্রণার দিনগুলিকে আর আমরা আবার হারিয়ে যাই, ডুবে যাই অন্ধকার খাদের অতল গহ্বরে...
-
সীমান্তে একা দাঁড়িয়ে আজ আমি,
জীবনের শেষ সীমানায় দাঁড়িয়ে আমি আজও
খুঁজে চলেছি-- একটা মুষ্টিবদ্ধ, দৃঢ় হাত;
একটা প্রতিবাদী কন্ঠস্বর আর
একটা ঋজু-শক্ত-অভঙ্গুর-দৃঢ় মেরুদণ্ড...
(বাকিটা ক্যাপশনে)-
অনেক দূরে কোথাও হয়তো
কেউ আজও অপেক্ষা করে বসে থাকে--
এক অন্তহীন অপেক্ষার প্রহর গুনে চলে সে।
মস্তিষ্ক বলে, সে আর নয় গো তোমার,
সে আর ফিরবে না!
কিন্তু মন যে বড্ড অবুঝ।
মস্তিষ্ক আর মনে চিরন্তন দ্বন্দ্বে
এভাবেই এগিয়ে চলে দিন।
কোনো এক অজানা পাহাড়ের কোলে
আজও ফোটে-- নাম না-জানা বুনোফুল,
শুধু তা খোঁপায় গুঁজে দেওয়ার লোকটাই
নিরুদ্দেশ!
-
অসময়ে ঝরে পড়া টুপটাপ বৃষ্টি ফোঁটারা
ঝরে পড়ে চশমার কাঁচে,
এক এক করে বাড়তে থাকে তাদের সদস্য সংখ্যা--
পারস্পরিক সহযোগিতায় গড়ে ওঠে
তাদের এক বৃহৎ একান্নবর্তী পরিবার।
ক্ষণস্থায়ী জেনেও
ঐ একটুখানি মুহূর্তটুকুই হেসে-খেলে-আনন্দে
বাঁচতে চায় তারা,
পেতে চায় বাঁচার স্বাদ, স্বাধীনতার স্বাদ।
ওদের এই সাময়িক উপস্থিতিটুকু আমায়
ভাসিয়ে নিয়ে যায় স্মৃতির ভেলায়--
অস্পষ্ট-ঝাঁপসা কাঁচের চিত্রপটে ভেসে ওঠে--
হয়েও না-হওয়া একটা সংসারের প্রতিচ্ছবি,
যে সংসারটা হয়তো একদিন আমার হওয়ার কথা ছিল,
আজ হয়তো অন্য কেউ সেথায় করছে রাজ্যত্ব!
পরম মমতায় সাজিয়ে তোলা তার সেই সংসার।
যে বুকের ওমের উপর ছিল একমাত্র আমার দখল,
সেই বুকেই হয়তো আজ অন্য কেউ মুখ লুকায়
লজ্জায়!
যে হাতদুটো একদা পরম আদরে-যত্নে-মমতায়
জড়িয়ে ধরতো আমায়,
আজ হয়তো জড়িয়ে ধরে অন্য কাউকে!
দূরের ধূসর আকাশের বুকে স্মৃতির ক্যানভাসে
ফুটে ওঠে, এক সুখী গৃহকোণের প্রতিরূপ
আর আমার বুক পুড়তে থাকে
বিভীষিকাময় স্মৃতির আগুনে!
যে হাতের বাঁধন আলগা করে
একদিন ফেলে এসেছিলাম তারে পথের ধারে
বন্ধনমুক্ত হওয়ার অজুহাতে,
তার শত অনুরোধ স্বত্ত্বেও
মিলিয়ে গিয়েছিলাম পথের বাঁকে--
আজ কেন তাহলে তার তরে
বুকের মাঝে জেগে ওঠে
দহন-জ্বালা!
-
চেনা পথের খোঁজে ঘুরতে ঘুরতে
আমরা একদিন মিলিয়ে যাই
পথের বাঁকে!
অথচ আমরাও তো একদিন ভিজতে চেয়েছিলাম--
মেঘেদের দু'চোখ বেয়ে ঝরে পড়া
অবিশ্রান্ত বারিধারায়,
কিংবা পুড়তে চেয়েছিলাম--
চৈত্রের দুপুরের প্রচণ্ড উত্তাপে।
কিন্তু পারলাম কই! পারিনি...
সময়ের কালচক্রে আবর্তিত হতে হতে
একদিন হঠাৎ হারিয়ে গেলাম কালের চোরাস্রোতে।
অথচ সারাটা জীবন ধরে করে গেলাম
একটা চেনা পথের সন্ধান।।
-
ছেড়ে যাওয়া মানুষগুলো
কালের নিয়ম মেনে একসময়
হারিয়ে যায় পথের বাঁকে।
চিরপরিচিত পথের ধারে,
ফেলে আসা ছায়াপথ জুড়ে
ইতিউতি ছড়িয়ে রেখে যায়--
পাথরকুচি ফুলের রাশি আর
অসংখ্য স্মৃতিচিহ্ন!
-