এই হাত পেতে থাকা একপ্রকার অসহ্যকর।
এখানে উর্বর মাটি ;
সন্ধ্যে হলেই মিলবে মাসকলাই আর কলমি শাক।
দূরের শিশুনদ,আলসে হাতে জলকেলি ;
আমার দু'চোখ ধন্য হয়ে যাচ্ছে।
রাত বাড়লেই ; সমুদ্র পাতলা শিফন শাড়ি।
সর্বাঙ্গ কাঁপিয়ে দিচ্ছে পশ্চিমী হাওয়া।
হাড়ে হাড় ঠুকে বসে আছি,
এক জীবন্ত বিষোদগার।
কবেকার সেই বৃদ্ধ কাপালিক,
তাঁর ভোজের থালায় দেখেছি,
দিশি মদ আর নরমাংস।
দেখেছি আর পালিয়ে এসেছি।
চাপাস্বরে পৃথিবীকে বলেছি, “স্তব্ধ হও, স্তব্ধ হও”।-
দূর থেকে দেখি,
মানুষে মানুষে যত দূরত্ব
তত বেশি একাত্ম দুটো দেবদারু-ছায়া।
রাগ-ঘৃণা একাকার হয়ে পড়ে থাকে শুকনো কাঠ(গোলাপ)।
ডালিমরঙা দুপুর আর তার আদলে তৈরি সুগন্ধি বাতাস।
বিষাদ কত ভারী হলে টুপ করে ঝরে যায় বৃষ্টির দানা!
সেকেলে লন্ঠন ; তাঁর স্বল্পায়ু আলোয় দেখা যায়
আবহাওয়ার গতিবিধি।
এই ভরা কোটালে মা আগলে রাখে তুলসীমঞ্চ।
আমি দুর্যোগ আর দুর্যোগ আমার থেকে পালায়।
সহসা মনে পড়ে ;
“কোপাই আমার ঠিকানা নয় ”।-
এবার প্রয়োজনমতো ভুলে যাও ;
কতজন তোমার বুকের পাঁজরে শুয়ে
নিঃস্ব হয়েছে অথবা হয়নি।
তোমার জানলায় ছেড়ে যাই ডেঁয়ো পিঁপড়ে।
মানুষ কখনো কাঠের পুতুল কখনো রংমিলান্তি।
আমার কব্জিতে কত রং লেগে আছে!
পৃথিবীর আদিম পুরুষালী সুস্বাদু মাংস,
চেটেপুটে খেয়ে যাচ্ছে সেইসব ডেঁয়ো পিঁপড়ে।-
আমার পাশাপাশি শুয়ে থাকে
আমারই নষ্ট-নারী।
সেই তরলবসনার কোলের ওপর
ঢেলে দিই গরম চা কিংবা ভাতের ফ্যান!
তাঁর কানে কানে বলি,
“বেঁচে থাকার শর্ত কবিতার ওপর সঁপে দিতে নেই।”
বাসি বিছানা (অথবা দুঃস্বপ্ন) ছেড়ে উঠে বসো।
স্নান সেরে নাও। চুলে ভালো করে তেল লাগাও।
ভাঙা চিরুনি,তালপাখা,হলদে বাল্ব
থেকে শুরু করে —
গৃহসজ্জা,বুটিকের শাড়ি,রজনীগন্ধার স্টিক।
স্রেফ এতটুকু দূরত্বই কিনা আমাদের মাথাব্যথা!
প্রেমিকার মৃত্যুকে সমর্থন করার আগে ;
চলো যে যার মতো মাথা উঁচু রেখে মরে যাই।-
তারপর শরীর ভাঙে । অট্টালিকা ভাঙে ।
আওয়াজ হয় না ।
নিথর আলো আসে জানলা গলে ।
আগুন জানে কেমন করে মিলিয়ে যেতে হয় ।
স্রোতের সাথে,গঙ্গাপাড়ের হাওয়ার সাথে ।
তারপর মনে পড়ে
তোমার নাম । বাদলদিন । বাগানবিলাস ।
ঝকঝকে এপ্রিল । গিটার পিঠে রবীন্দ্রশিল্পী ।
তারপর যা কিছু আমার প্রিয়
বিদেশি সুগন্ধি । গোলাপজল । মাখা সন্দেশ ।
কলেজ ক্যান্টিন । বইমেলা ।
সবকিছুর ওপর নিঃশব্দে জল ঢালি, জল ঢালি ।
কাদা হয়ে যায় ।
-
যা কিছু আজকের মতো স্থবির,
কাল তা হয়ে যাবে কিশোরীর পাতলা ঠোঁট।
শীতল চিবুক,পিঠের ঢাল বেয়ে
গড়িয়ে আসা বিগলিত রাত —
সবই তখনকার মতো ভালো লাগবে।
বস্তুত যা নৈরাশ্য বলেই জেনেছি ;
সব ঢাকা পড়ে যায় তাঁর স্নানশব্দের নীচে।
সেই অষ্টাদশীর আগলভাঙা চুল কি রেশমের শাড়ি —
সমস্ত আধুনিকতাই রসাতলে যাক!
শুধু এই ভেবে সুখে থাকা যায় না,
সেটাও বোঝা দরকার তোমার।
তবু সতর্ক থাকো —
আমার সময়ের ওপর ভরসা নেই।
এই ডেস্ট্রাকটিভ জীবন ;
তুমি বাদ সাধলে অযথা আসিনি।
অথচ তুমি না চাইলেও
এই অচল জলতরঙ্গের ভিতর,
আমাদের বিচ্ছেদের জমি শক্তপোক্ত করে যাবো।
- শাশ্বতী
-
তেমন করে এক একটা দিন।
খুব অশালীন, কিংবা বিধ্বস্ত!
সুখের ভাবনা ভয়ঙ্কর। জিরজিরে শীত,
নগ্ন হাতে তুলে নেবে আরও ক'টা লাশ।
পুরোনো, সাবেকি শরীর।
একপ্রস্থ মায়া,
কাটিয়ে উঠলেই এই জীবনের মতো মুক্তি!
স্রোতের নাভিমূল থেকে ছিঁড়ে যাওয়া সময়,
তোমাকে মনে রাখার মতো কোনো কারণ নেই অবিশ্যি ।
আমি শান্ত চোখে দেখি,
কেমন করে এই পৃথিবীতে
সুখী আর দুঃখীরা পাশাপাশি শুয়ে থাকে!-
সম্পর্ক কোনো কুষ্ঠরোগী।
তাঁর সংস্পর্শে এলে দগদগে মায়া জন্মায়,
মুগ্ধ চোখে দেখা যায় নিখুঁত অভিনয়।
তাঁর ছায়ায় বসে শান্ত হয় শরীর ( ও মন? ), পথিক বাড়ি ফিরে যায়।
যা কিছু ভোগ করতেই এসেছি ;
সে জন্মদিনের উপহার কি নারীসুলভ কমনীয় দেহ,
একে একে এই রৌদ্রের বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ে।
সম্পর্ক কোনো কুষ্ঠরোগী।
তাকে কোন ওষুধে সারাবে তুমি?
-
প্রশ্নহীন ভাবে বোসো ।
এক এক করে শোনাবো তোমায় ;
জ্বরের মুখে ভালো লাগে কোনো নোনতা গল্প ।
উবু হয়ে বসে আমার জন্য পরোটা বেলে দিতো ;
সেই অভাগীর মুখের পাশে
কখনো দেখেছো জমাট বাঁধা অনিচ্ছা?
বিনিময়ে তাকে কি দিয়েছি আমি? দোটানা ।
উপরন্তু তার নতুন ছাপার শাড়িতে
অনবরত মুছে এসেছি সায়ান-ম্যাজেন্টা-হলুদ ।
ভাবলেশহীন শুয়ে আছি ।
আমার বিছানায় টেনে নিয়ে এসেছি
বাড়িভাড়া,ইলেকট্রিক বিল ।
প্রেমিকার মন্ত্রণা বুকে রেখে আমি কি নির্ভয়ে ঘুমোতে পারি?-
বৃষ্টিরা নির্লজ্জ । তাদের ছত্রছায়ায়
যাবতীয় পাপ-পুণ্য একাকার করে ফেলি ।
তাড়াতাড়ি ঢুকে যাই স্নানঘরে । ধুয়ে ফেলি ক্ষতচিহ্ন ।
বীভৎস নখের আঁচড় টনটন করে ওঠে ।
পায়ে লেপ্টে থাকে কাদার অবশেষ, মুছে নিই ভেজা গামছায় ।
তুমি গরম বিছানা দাও । এগিয়ে দাও দুধের গেলাস ।
অথচ তোমার জানলায় যে মুখবাষ্প রেখে চলে গেছি, ফিরিয়ে দাওনা !
জ্বর মেপে নাও । ঠান্ডায় অবশ হয়ে যাওয়া
তালু ছুঁয়ে বলো, “এমন উদ্দেশ্যহীনভাবে ভিজো না বৃষ্টিতে ”।
আমি বোঝাতে পারিনি এতোদিনে ।
প্রতিটা বৃষ্টির মরশুম কেমন করে শামুকের খোলস হয়ে যায় !
-