আমি বিকৃত নন্দনের কদর্য অঙ্গার,
নিঃশিষ্ট রুচির লোলুপ দাহ,
যেখানে প্রেম এক উচ্ছিষ্ট ভ্রান্তি,
আর দেহ কেবল লালসার যন্ত্রচক্র।
আমার চেতনা-পঙ্কিল ছায়ার মদিরা,
যেখানে কামনা এক অভিশপ্ত উপাসনা,
প্রেমিকার অস্থিমজ্জা পর্যন্ত আমি দেখি ভোগের মন্দির,
ভক্তি নয়-অশ্লীলতার অগ্নিকুণ্ড।
আমি রসসিক্ত নীচতার কর্দম
অতৃপ্ত লালসার কাকলীতে ভেসে যাই,
আমার হৃদয় ছিন্নভিন্ন বীভৎসতায়,
তবুও আমি প্রেমিক,
কারণ প্রেম মানেই পবিত্র অর্ঘ্য নয়,
প্রেম মানে কখনো বিকৃত ভোগলিপ্সার গহ্বর,
অশুভ আকাঙ্ক্ষার ভাঙা বেদি।
আমি যে দহন-
অসভ্য অশ্লীলতার অক্ষয় দীপশিখা
আমি যে প্রেমিক-
কলুষের রক্তমাখা মুখোশে আচ্ছাদিত এক অন্তঃশূন্য স্বীকারোক্তি।-
অসভ্য এর কালি মেখে, সভ্য সাজি,
সাজিবার সাধ,বিঁধে কেবল আজ।
আরো দূর,আরো দূর দূরত্ব রাখে বাজি,
হাতের তালু মুক্তো লুকোয়, মনের গহ্বরে ভাঁজ।
কালির দোয়াত, মনপোড়া কালো
কালো চোখ আজ আলো বিহীন।
কালের ঘরে কাল ফিরলে আলো,
পুড়লে মন শরীর শবে স্মৃতির ঋণ।
বসন্ত ঝরে যাবে অসভ্য এর গৃহদ্বারে,
রয়ে যাবে যাটুকু,রডোডেনড্রনের স্মৃতির আতুড়ঘর।
দেহ নেই, মন নেই এই শরীর কে বা মারে?
মন্দিরে ফন্দি আটে নিঠুর ঈশ্বর।
তবু অযুত নিযুত শতসহস্র তারার মাঝে,
ভুলিব না সেই আলো, রচিব না সেই সুখ।
এই অপবিত্র মাখা হাতে, মৃন্ময়ীর সাজে,
কলঙ্কিত করবো না আপন চেনা মুখ।-
কতো নক্ষত্র দূরে সরে যায়,
তবু রয়ে যায় এক আকাশেরই বুকে।
মনে দাগ কেটে যাই,নেবে কে সে দায়?
ভালোবাসা যদি ফিরে,নিজ চেনা মুখে।
ক্ষীণ হবে অভিমান, ঋণ রবে দোঁহে,
পুলক হৃদয় যুগল তরঙ্গে লুটাবে।
শতভিষাও ব্যর্থ তোমার মদিরাক্ষীর মোহে,
পাষান চিত্ত তব অনন্তে বসন্ত ছোঁয়াবে।-
আমার ভাঙা তরী বইয়া চলে,
তোমার স্রোতের জোয়ার ভাটায়।
মন বিহ্বল এর নোনাজলে,
ভ্রম কাটে জলের ছিটায়।
তোমার ছবি জলেই ভাসে,
জ্বললে পরে বুকের অনল।
ওই অনলের ভয়ত্রাসে
তেষ্টা বাড়ায় মনের গরল।
বাড়লে গরল, শরীর বদল,
শবদেহ তবু অনড় সাঁকো।
প্রেমের শরীর পুড়লে পরে
ছাইখানি মোর সঙ্গে রাখো।
সেই শরীরে বাড়লে ওজন,
দেহখানি শীতল রবে।
চিত্রপটে কোথায় কজন?
হিসাব পাবে চিতার শবে।-
পুড়ছে শরীর পারদ রেখায়,
গলছে বুকে হিমের চর।
মনের মধ্যে লবন মিশাই,
অনড় রাখি প্রেমের দর।
দরের সাথে বিকিয়ে শরীর
বেশ্যা সাজি প্রতি রাতে।
মনের কোনে জাগলে তুমি,
তোমায় দেখি প্রতিমাতে।
আমি তখন বাধ্য ছেলে,
ঠিক যেমন ক্রুশের যীশু।
তোমায় পেলে ভাবনা কিসের,
ফুটপাথের ওই ল্যাংটো শিশুর।
বিহ্বল তখন ঈশান কোনে,
মেঘের সাথে চোখাচোখি।
নিম্নচাপ কাটলে পরে,
সেই আকাশে তোমায় দেখি।-
আমি মায়াজাল বুনে চলি
তোমার মায়ার অবকাশে,
দিন শেষে রাতে ফিরি
শাসক আসন ত্যাগ করে দাসে।
নরখাদক শাসক আমি
নরমুন্ড যার প্রধান ভোজন,
তোমার রাজ্যে প্রবেশ করলে
বৃথা আমার যুদ্ধের আয়োজন।
যুদ্ধ আমার তোমার সাথে
সৈন্যবর্গও তোমার অধীন,
আমি ছাড়া সবাই কেবল
এই যুদ্ধে লাগামবিহীন।
লাগাম আমার তোমার হাতে
পাণ্ডুলিপির তত্ত্বে লেখা,
পরাজয়ে কারাগার নির্বাসিত হলে
দিও শুধু তোমার দেখা।
ধন্য হবে শাসক জীবন
পূর্ণ রবে চিত্ত মম,
পরাজয়েও মানবো আমি
লড়াই ছিলো তোমার সম।-
আমার শব্দ গুলো সব তোমায় নিয়ে,
ছন্দের শবটা শুধু দিও আমায়।
শব না পেলে কোথায় গিয়ে
পিন্ডি দেবে আমার চিতায়।
চিতার সামনে দাঁড়িয়ে তুমি,
ভেবো নাকো আজ একা আমি।
রইবো তোমার বক্ষ মাঝে,
রইবো তোমার গোপন হিয়ায়।
নতুন বেশে নতুন সাজে
সঙ্গ দিও তোমার ছায়ায়।
তোমার ছায়া ঘিরেই থাকবো আমি,
বলবো শুধু তোমার কথা।
অন্ধকারে ছায়া না পেলে
জমবে বুকে শবের ব্যাথা।-
কাজল চোখের মেয়ে,
আমার চোখের পাতা থমকে থাকে তোমার দিকে চেয়ে।
হারিয়ে ফেলি লক্ষ্য আমার, ক্ষীণ হয়ে যায় মনি
তোর চোখেতেই ডুবতে রাজি, না যদি ভাগ্যে এ নাচে শনি।
শনি আমার এখনও নাচে, নাচবে শতকাল
শুধু তোর চোখের কাছেই বিলীন হবে, কালের ঘরে কাল।
ওরম ভাবে তুই তাকাস কেনো, সারাটা পথ আমায় আঁকাস কেনো
পথের বাঁকে আমি হারিয়ে ফেলি, তোর জলছবির চিত্র হেনো।
কাজল চোখের মেয়ে.....
তুই তাকালে কবিতার ছন্দ হারায়, রাত কাটে অলীক স্বপ্ন নিয়ে
স্বপ্নে আমার তুই আসিস না তো, কোথায় যাস আমায় ফাঁকি দিয়ে।
তবু স্বপ্ন আমি আজও দেখি দেখবো চিরকাল,
তোর জন্য অপেক্ষা করে থাকতে রাজি, শালের বনে সালের পর সাল।
হটাৎ যদি বিলীন হোস, তবুও কাজল চোখে তাকাস আরেকবার
পরেরজন্মে তোর চোখের মনি হবো মিলিয়ে নিস্ বারংবার।-
সন্ধ্যার নিস্তব্ধ গলি, তার বাঁকে বাঁকে প্রেমের আশ্বাস,
মৃদু আলোর সংযোগে প্রকট আবছায়ার দুটো প্রতিচ্ছবি।
গলির সম্মুখে দাঁড়িয়ে প্রকান্ড একটা কৃষ্ণচূড়া,
ঢেউ খেলানো দুটো ডাল, তাতে মুখোমুখি দুটি শালিক।
শান্ত বাতাসে ফিসফিস কটা শব্দ, নিস্তব্ধ গলিটা আবার প্রতিধ্বনিত্ব হলো।
জোৎস্নার তীব্র ছটা এসে বিঁধেছে ওই দুই প্রতিচ্ছবির শরীরে।
অনন্তনীল সকালের মতো চকচক করছে তাঁদের শরীর,
তারা জানে এটাই তাঁদের জীবনের অন্তিমক্ষণ।
এটাই শেষ বসন্তের শেষ স্পর্শ, শেষ মুখোলাপ।
নীরবে দুটি প্রাণ পুষ্টি কুড়িয়ে নিচ্ছে শাশ্বত এর জন্য।
আস্তে আস্তে শরীর বেয়ে নেমে যাচ্ছে,
অচেনা দেশের বর্ষার নামহীন কোনো এক তিতাস।
আলগা হয়ে সরে যাচ্ছে চরের দুই ধার,
হয়তো অক্ষত থাকবেনা শেষ পদচিহ্নটুকুও।
হটাৎ একটা শালিক, দুর্বার বেগে হারিয়ে গেলো একটুকরো আকাশের মাঝে।
আরেকটা মাটিতে, সেই মাটি যেটা দিয়ে একে অপরের প্রতিমা বানাতো।-
আমি তারে দেখেছি ভোরের স্বপ্নে
বহুদিন আগে যে আগ্নেয়গিরি নিদ্রায় হারিয়ে ফেলেছিল আপনে ।
তা আবার যেনো জ্যান্ত হয়ে উঠেছে,হুঙ্কার দিয়ে জানিয়ে দিচ্ছে তার গর্জন
সেই রুক্ষ,শীর্ণ সাদামাটা চেহারাটা যেনো তারই প্রতিরূপ ।
তার তরল লাভা প্রেমের মতো উপছে পড়ছে সারা শহরে
ছিন্নভিন্ন অলিগলি,পূর্ণ শিখায় পুড়ে যাচ্ছে আমার নগর ।
আর সেই শীর্ণ চেহারা পূর্বের ন্যায় জাপটে ধরেছে আমাকে,কী মসৃণ তার শরীর
ভেজা কেশরাশি বেয়ে নেমে আসছে সুগন্ধি আতর,উন্মত্ত হয়ে যাচ্ছে সারা দেহ ।
সেই চেনা ঘ্রাণ,অনেক বছর পর আবার ভেসে উঠেছে যা,হারিয়ে গিয়েছিল আসমুদ্রহিমাচলে
নিঃশব্দে তাঁর লাভা জ্বালিয়ে দিল দেহটাকে,আর আমি মাপতে থেকে গেলাম নিস্তব্ধতা ।
আবার কোনও একদিন বৃষ্টি নামবে শহরজুড়ে,ধুয়ে মুছে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে আমাদের পূর্ণ প্রেমের ছাইগুলো ,
শহর আবার আগের মতো সহমহিমায়,হয়তো আবার কোনো আগ্নেয়গিরি ঘুমিয়ে গেলো চিরনিদ্রায়।
-