একটা গোটা দুপুর চলে গেল; কেউ খেয়াল করে নি।
মোহনার খুব কাছে, দু'জন; এক অপরের দিকে চেয়ে
গাঢ় নীলের সাথে এসে মিশে গেছে--- কেউ খেয়াল করে নি---
ট্রেনের শেষ সিটি বেজে যাওয়ার আগে পর্যন্ত,
চোখ সরায় নি কেউই; সন্ধ্যার আকাশে মেঘেদের আলপনা,
তার ভেতর দিয়ে একটা মনোরম দুপুর কেটে গেল৷
-
আমরা যে যে-রকম ভাবে বেঁচে আছি তেমন করে বাঁচার অভিপ্রায়
হয়তো ছিলো না কারোরই; সান্ধ্য-ভ্রমণে গুমোট আকাশ,
বাড়ি ঢোকার মুখে শুধু কিছুটা শীতল বাতাস--- চায়নি হয়তো কেউই।
রাতে ঘুমনোর আগে গানের আবেশ লাগে এখন রোজ,
স্বাভাবিক ঘুম আসে না; বিষণ্ণ চোখে কেবলই অভিপ্রেত-র খোঁজ।
দাঁড়িপাল্লায় মাপা জীবনের ওজন বর্তমানে ব্যাথার অঙ্কে ভারী---
তবুও তো আমরা বেঁচে আছি, যে যে-রকম ভাবে পারি।
-
স্পর্শ নেই বহুকাল; পাতলা মেঘ যেমন বৃষ্টির স্পর্শবিহীন
ঝিলের ধারে কাটানো সময়, আড়চোখে দেখে সন্ধ্যে।
সামনে বাসস্টপ--- স্মৃতিরেখা ছেড়ে চলে গেছি অনেকদূরে।
বাংলাদেশ! কক্সবাজারের বিশাল বেলাভূমিতে দাঁড়িয়ে,
ঢেউয়ে করে ফিরে এসেছে দীর্ঘ ভালবাসার অবশিষ্টাংশ-
সবাই বলেছে, ভুল! ভুল! ভুল! এবং আমার অন্যায়।
তবু আমি বিশ্বাস রেখেছি নিজেতে; তুমি ভালবাসায়--
তাও, উজানের দিকে তাকিয়ে চোখ বুজে দেখেছি, পেয়েছি তোমায়।
কিন্তু চোখ খুলেই ঝিল পাড়, পেয়েছি ধ্রুবতারা আর শুধু আমায়।
-
ব্যর্থ প্রেমের বিষাদ আছে ঠোঁটে লেগে
রাত্রি দেখবে না তাই চোখ বুজে আছে।
শেষ রাতের শিশির যখন ঘাসের মাথা ছুঁয়েছে
তখন স্পর্শ করতে সাধ হয়, আঙুল-শরীরে।
কার্নিশে মাথা রাখা রোদ হেলে পড়ে,
ঢুকে আসে জানালা দিয়ে; রাত্রি চোখ মেলে---
কিছুই করার নেই অথবা নেই সুযোগ আগের মতো।
জোর করে পাশ ফিরে শোয়া, ঘড়িতে সোয়া ন'টা
আবার চোখ বুজলেই রাত্রি বিষাদের ঘনঘটা।
-
আমি তোমার সামনে দাঁড়িয়ে আছি অথবা খানিক দূরে
ছড়ানো আছে ভাঙা কাচের টুকরো; তোমার জন্য
আনা ফুলদানিটা ফসকে পড়ে গেছে হাত থেকে
আমি এই শহরকে আর বিশ্বাস করি না;
যেমন করে না আমার বন্ধু--- এই কলকাতা ভালবাসার!
পাঁচিলের গায়ে নতুন সিনেমার পোস্টার---'যুগ যুগ জিও'
তার নীচের ঘাস থেকে ফড়িং লাফিয়ে আসে আমার কাছে
মনে হয় যেন এক যুগের কষ্ট আরেক যুগে বয়ে যায়।
-
নদী যায়, নদী যায়, নদী যায়, কান্নায়...
আমি গভীর ক্ষতকে সামনে দেখছি-
আমায় ঘুম দাও, নদীকে দিয়ে আসি,
দিয়ে আসি ওকে কিছু সুখ-যৌবন,
কিছু বিকেল; যেখানে ট্রেন ছুটে চলে
ওর মাথার ওপর লোহা-লোহা সেতু দিয়ে
ভারে, কষ্টে কাঁদে নদী; তবু বয়ে যায়, কান্নায়...
বয়ে যায়, আমি দেখি--- আমার চোখে বিষণ্ণতা
নিয়ে নেয়, বয়ে যায়, আরও দেখে কত লোক
আমার সহযাত্রী; নারী আমার পাশে, সে দেখে
আমায়, ঘুম দাও নারী, নদীকে দিয়ে আসি।-
কত দীর্ঘ জীবনযাপন?--- ভালবাসা শুকিয়েছে বারবার
আমি সোনার মাছি খুন করেছি, মধ্যরাত্রিতে আবার!
অনেকদিনের চেনা-শোনা, তবুও নেই কিছু বলবার
শুনেছি তোমার এখন বেজায় অসুখ; অবকাশ আমার রাত জাগবার।
খুন করেও কাঁদতে থাকা; শক্তি নেই নীল-ভালবাসা ছেড়ে থাকার
তবুও সোনার মাছি খুন করেছি, আজকে রাতেও আরেকবার।
-
সভ্যতার কি ভীষণ বড় বড় জ্বালামুখ দেখি,
পিছনে ফিরে দেখি তুমি বকুলের মালা হাতে,
দুঃখে মোড়া সন্ধ্যার কাছাকাছি শূন্য হয়ে আছে
পৃথিবী, গাছপালা আর ঈশ্বর! শূন্য হয়েও থাকা---
যায়? নাকি বকুল-ব্যর্থ উপখ্যান লিখে
স্রষ্টা নিজের ব্যাথা ভুলতে চায়!
-
আমি বারবার কাহিনির অভ্যন্তরে উঁকি মেরেছি একটা সত্যি কথা জানবো বলে-
একটা বহুকালের সত্যি কথা, যুগ-যুগান্ত ধরে অনড় হয়ে বসে আছে;
ছাই-বিকেলের কালো মেঘের ভেতর উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে থাকতে
হঠাৎ করে ঝোড়ো হাওয়া দিল! ডায়মন্ড হারবার রোডের ওপর-
দুরন্ত গতিতে ছুটে চলা গাড়ি, গাড়ি ভেতরে মানুষ আর আমার জন্য চিন্তা।
একটা সত্যি কথা, উঁকি মেরেছি বারবার- তোমার বুকের আদিম নেশার মাঝে
ঘন দুটো চোখে পাঁজর ভাঙা দুঃখের জল, আমি লক্ষ্য করেছি বত্রিশ মিনিট ধরে
ছোট কালো টিপ নিশুতিরাতে জেগে আছে দুটো ভ্রুয়ের মাঝখানে-
চোখ চেয়ে শুয়ে আছি, নাকি চোখে চোখ মিলিয়ে তোমার সামনে দাঁড়িয়ে
জানি না--- সত্যিটা কি! বকখালি যাবো একদিন তোমায় নিয়ে
কাহিনির শরীরের সত্যি মিললে, হাতে হাত রেখে বাঁচবার জন্যে।
-
এ মহাকাশে কত দুঃখ বুক পেতে পড়ে আছে গভীর রাতের মাঝে,
না-হয় তাতে একবিন্দু আমারও থাকুক, একবিন্দু বাড়ুক সাগরে।
জট-পাকানো সুতোর জটিলতায় জর-জড়িত রাত্রিকালীন বৈঠকখানার সুর
তুমি বারবার ফিরে আসো তারমাঝে; তবু্ও আসো কি হৃদ-মোহনার ধারে?
-