স্বার্থপর দীপাবলির রাত,
তোমার মতোই আলো হয়ে আসে।
মন যে বাঁধা আবেগ নামের সুঁতোয়
কে জানতো অন্ধকার শেষে।

তার চেয়ে বরং বৃষ্টি দিন ভালো,
অন্তত এক পূর্বাভাস দেয়।
মেঘলা হলেই সতর্ক হই দ্রুত;
ঝড়ের আগেও গুছিয়ে নেওয়া যায়।

- প্রিয়াঙ্কী সেন

-

আলপনা দেওয়া থেকে শুরু করে পুজোর সমস্ত জোগাড়যান্তি নিমেষে সেরে ফেললো হিমিকা। সকাল হতেই শ্বশুর-শাশুড়ির জন্য চা প্রস্তুত থেকে শুরু করে অফিস-বাড়ি সবটা সামলাতে গিয়ে হিমিকা আজকাল বড্ড ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।

কয়েক বছর আগে পর্যন্তও কন্যা হওয়ার অপরাধে যে হিমিকা বাড়ির সকলের কাছে অলক্ষ্মীর পাত্রী ছিল, আজ সেই মেয়েটাই শ্বশুরবাড়িতে এসে সকলের নয়নের মণি। শ্বশুরমশাইয়ের কথায়, 'যেখানে ঘরের মধ্যে তার বৌমার মতো জীবন্ত লক্ষ্মীর পদার্পণ, সেখানে মূর্তিপুজো নেহাতই বোকামি।'

~ প্রিয়াঙ্কী সেন

-

চোখের মধ্যে আগুন জ্বলছে রাগে
আবছা হচ্ছে প্রেমিকার দেহ, মুখ।
তাসের মতো ভেঙ্গে যাওয়া সুখঘরে;
সর্বনাশের গল্প লেখে উজবুক।

~ প্রিয়াঙ্কী সেন

-

লক্ষ প্রশ্নে পাগল করে লোক,
তুমি রাধিকা না বনমালী?
ঘুমিয়ে পড়া অপগত শিল্পীর;
কতো অযথা গল্প বলাবলি।

তোমার জীবনস্মৃতির খাতায়,
ঠিকানা লেখা, বহু দূরের দেশ।
মেঘের মতো তুমিও অভিমানী;
কে বললো 'ঋতু'র দিন শেষ?

জন্মদিনের কবিতা লেখা চিঠি,
পাঠাই যদি আকাশের ঠিকানায়।
পড়বে খুলে শুভেচ্ছা বার্তা? নাকি
তোমার মতোই উড়িয়ে দেবে হাওয়ায়।

-

সন্ধ্যাতারা থেকে নেমে আসা 'পরিযায়ী',
অরণ্যের বুক চিরে এঁকেছিল 'বাতি ঘর'।
মৃত্যুর কাছে নত হওয়া তো মানুষের ধর্ম;
এক তিরিশে আগষ্ট ভেঙে দিল 'খেলাঘর'।

ফের খসলো তারা সাহিত্যাকাশ থেকে,
ফিকে হয়ে গেল যেনো 'হলুদ বসন্ত'।
'যাওয়া-আসা'র মাঝে শুধু সময়ের ব্যবধান
তবু, ইন্দ্রপতনের খবর কে জানতো।

-

ধনী বংশের ঐশ্বর্য ক্রোড়ে যে ছেলেটার জন্ম,
সেই ধনী সমাজের কদাচারকেই শাণিত ভাষায় ব্যঙ্গ?
এমন অদ্ভুততর সাহিত্য প্রতিভার অধিকারী আর কে হতে পারে
উত্তর কলকাতার কালীপ্রসন্ন সিংহ ওরফে 'হুতোম প্যাঁচা' ছাড়া?

তরুণ বয়সেই জনপ্রিয় হয়েছিলেন 'বিদ্যোৎসাহিনী সভা',
'বিদ্যোৎসাহিনী পত্রিকা' ও 'বিদ্যোৎসাহিনী রঙ্গমঞ্চ' প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে।
ঊনত্রিশ বছরের সংক্ষিপ্ত জীবনেই থিয়েটার জগতে পদার্পণ-
আঠারো পর্বের 'মহাভারত' গদ্যাকারে বাংলায় অনুবাদ তাঁরই শ্রেষ্ঠ কীর্তি।

একদিকে ব্রাহ্মসমাজের সঙ্গে তাঁর সখ্যতা স্থাপন-
অপরদিকে, 'বাবু', 'বঙ্গেশ বিজয়', 'বিক্রমোর্বশী' অসাধারণ সব সৃষ্টি।
তাঁর 'হুতোম প্যাঁচার নকশা' বাংলা সাহিত্যে এক অননুকরণীয় বিচিত্র গ্রন্থ।

মনেপ্রাণে স্বদেশ প্রেমিক কালীপ্রসন্ন শুধু সাহিত্য রচনাতেই নন,
নানা জনহিতকর, প্রগতিশীল আন্দোলনের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত।
এমন স্বনামধন্য সাহিত্যরসিকের জন্মবার্ষিকীতে রইলো শ্রদ্ধার্ঘ্য।

~ প্রিয়াঙ্কী সেন

-

শুভ জন্মদিন নবারুণ ভট্টাচার্য

একটা দুঃসাহসী আকাশের নাম যদি 'বিপ্লব' হয়,
তবে সেই বিপ্লবের সবচেয়ে তেজী ও শুভ্র ধুমকেতুটা হল 'নবারুণ'।
এমন তোয়াক্কাহীন, প্রতিবাদী, ক্ষুরধার অস্ত্র ঘরে ঘরে নয়;
বাংলার বুকে একটাই জন্মায়!

হাজার যুগ পেরিয়ে যাবে, সমাজের রঙ বদলাবে,
তবু, গোটা ব্রহ্মান্ড এই ধারালো অস্ত্রের কাছে বারবার শিকার হবে।
'যোদ্ধা' শব্দটা ক্ষুদ্র, তবু এর মাপকাঠি সুগভীর, তীক্ষ্ণ-
এক বুক ভয় নিয়ে আর যাই হোক, যোদ্ধা হওয়া যায়না।

যাদের অস্ত্রের ধার কম, তাদের নবারুণ আছে!
রাতের সার্কাস জানে, হালাল ঝান্ডা হাতে লোকটার কি সুতীব্র তেজ
বিষাদ-পরাজয় গ্রাস করলে বুক চিতিয়ে বিছানা সাজায় অরণ্যদেব।
তাতে শুয়ে থাকে হাজারটা কাপুরুষ।

তীব্র রাজনীতির দাবদাহে সারা দেশ পুড়ে ছাড়খার হলেও
তাঁর চেতনার গাছে আগুন ধরাতে পারেনি কেউ।
চির সঞ্জীবনী গাছটা বেঁচে আছে, থেকে যাবে আজীবন...
যদি একটা নদী হয় 'বারুদ', তবে সেই বারুদের উৎসস্থল আজও 'নবারুণ'।

~ প্রিয়াঙ্কী সেন

-

গান

যে হৃদয়ের ভাঙন দেখি,
অথচ হাসি জাজ্বল্যমান।
পারলে হও হাসির কারণ;
রোজ দু'বেলা শুনিও গান।

যে মানুষটা ঘরে বন্দি,
বাইরের দেশ প্রায় উধাও।
বিষাদের সুর মুছিয়ে তার;
ভালোবাসার গান শোনাও।

যে আকাশের মন খারাপে,
মেঘেদেরও খুব মান অভিমান
দু-এক পশলা বারিষ বুকে;
ছন্দে, তালে শোনাও গান।

ফুলের সুবাস, শিশুর হাসি
আর খুচরো খানেক গান।
ভালো না বাসলে, বৃথাই
তোমার 'মানুষ' নামক নাম।

-

....

-

রাজপুত্রের জন্য

ভাসছে এখনও চোখের সামনে মুখটা,
কেমন নীরব, স্নিগ্ধ দুটো চোখের দৃষ্টি।
আর কীভাবে ব্যক্ত করি বলো তো;
কতটা শীর্ষে পৌঁছেছে তোমার সৃষ্টি।

ছেড়ে গেছো তুমি বছর খানেক হলো,
একের পর এক প্রশ্ন তুললো লোকে।
ঢেউয়ের মতো ভেসে গেলো খড়কুটো
মানুষ প্রথম ক'দিন গা ভাসালো শোকে।

জানি বিষাদের রঙ এত ফিকে নয়,
যতটা ছিল তোমার চলে যাওয়ার প্রস্তুতি।
এ পৃথিবী আজও শূন্যতা বোঝেনা;
আর মৃত্যু? সে তো ঘুমেরই প্রতিকৃতি!

আয়ুরেখা যদি আর কিছুটা দীর্ঘ হত,
শিখে নিতো লোকে ধৈর্য্যের পরিসীমা।
টিকে থাকার এ লড়াইটা জারি রাখলে
সহজেই তুমি ছুঁতে পারতে দ্রাঘিমা।

~ প্রিয়াঙ্কী সেন

-