নিখোঁজ
কানের পাশে যেই কাঠগোপালটি গুজে রাখো
তার যত্ন নাও সাবধানতার সাথে।
প্রতিদিন ভীড়ের মাঝে হারিয়ে ফেলছ—
আরেকটি কাঠগোলাপ, যা তুমি রাখো হাতে।
ভীড়ে যারা হারিয়ে গিয়েছে,
তারা সকলেই কি বাড়ি ফিরতে পেরেছে?
রোদ-জলে নষ্ট হাজার নিখোঁজের বিজ্ঞপ্তি।
কতজন অপেক্ষাতেই আত্মঘাতী হয়ে উঠেছে।
সহজলভ্য যা কিছু যত সুন্দর, গুরুত্ব তত নেই
লোকচক্ষুর নজরে সকলেই বেশ পরিপাটি
অন্ধকারে কবে কে কার খোঁজ রেখেছে?
লাল পলাশ যতই দেখি, মন চায় শ্বেত পলাশকেই।-
দুই, চার লাইনের অণুকবিতা দিয়ে লেখা প্রকাশের হাতেঘড়ি। ধীরে ধীরে বড় কবিতা লেখার দিকে হাত বাড়িয়েছি ক্রমশ। মনের মতো বড় কবিতা লেখা বড় কঠিন কাজ আমার কাছে। তবু, বড় কবিতা লেখার মধ্যে পরম তৃপ্তি লুকিয়ে থাকে। তা আবিষ্কার করেছি দ্বিতীয় কবিতার বই লিখতে বসে। বাংবার অনুভব করেছি— বড় কবিতায় অনেক কথা বলা জায়গা থাকে। যা পরম শান্তির। মজার বিষয় হল— অণুকবিতা কখনও আমার পিছু ছাড়ে না। হাজার হোক প্রথম সন্তান বলে কথা। ফলত, দ্বিতীয় কবিতা বইয়ে একগুচ্ছ বড় কবিতার শেষে— হাতেগোনা অণুকবিতা রাখতে হয়েছে।
দ্বিতীয় বইটির নাম ‘বুক বেয়ে নামে বৃষ্টিরেখা’। প্রকাশিত হয়েছে ২৪ʼশের বর্ষাকালে। বৃষ্টি চিরকালই আমায় আকৃষ্ট করেছে। বৃষ্টির প্রতি মানসিক দূর্বলতা আমায় দিয়ে লিখিয়ে নিয়েছে দ্বিতীয় বই ‘বুক বেয়ে নামে বৃষ্টিরেখা’।
বৃষ্টি ভালোবেসে ছোট-বড় কবিতা লিখেছি ‘বুক বেয়ে নামে বৃষ্টিরেখা’ বইয়ে। এই বৃষ্টির প্রতি কোনো এক তরফা ভালোবাসা নয়। বৃষ্টি আমায়ো ভালোবাসে। তারই সাক্ষী এই ‘বুক বেয়ে নামে বৃষ্টিরেখা’।
বইটি সংগ্রহ করতে পারবেন আগামী কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায়। আশায় রইলাম আপনাদের শুভেচ্ছার।-
স্বপ্নের জয়রথ
প্রতিবাদ বড্ড ছোঁয়াচে, ছড়িয়ে পড়েছে শহরের অলিগলিতে, রাজপথে।
বুকে প্রতিবাদী পোস্টার, মুখে বিচারের দাবি
প্রতিবাদের লাগাম ধরল টানা-রিকশা চালকেরা সহযোদ্ধার সাজে।
বুঝিয়ে দিল টানা-রিকশা চালকেরা—
সমাজ ব্যবস্থা পড়ছে ভেঙে, প্রতিবাদের পথে চলতে হবে আরো,
‘প্রতিবাদের জয় নিশ্চিত’— তারা এই আত্মবিশ্বাস করল দৃঢ়।
আজ বাস্তবের টানা-রিকশাগুলো যেন বদলে গিয়েছে স্বপ্নের জয়রথে।-
মানববন্ধন
সামাজিক কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত,
প্রতিবাদ মিছিলই একমাত্র অস্ত্র।
আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদ—
জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন সারারাত।
সকালে আন্দোলনকারীদের চা-বিস্কুট
বিলি করলেন এক সরল বৃদ্ধ।
অসময়ের ইতিহাসে এক মানবিক চিত্র।
খুদে স্কুল পড়ুয়ারা—
আন্দোলনকারীদের বিলি করল পানীয় জল,
এই সময় বুঝিয়ে দিল—
অরাজনৈতিক প্রতিবাদ আসলেই দাবানল।
ভদ্রলোক ও ভদ্রমহিলা বিলি করলেন—
বাটার টোস্ট রাতজাগা আন্দোলনকারীদের।
এক ফেরিওয়ালা বিলি করলেন—
হাতা-পাখা আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারদের।
অন্ধকার অসময়ে সাধারণ মানুষ ঐক্যবদ্ধ।
এই বিশ্বাসে বাঁচি—
ঘুন-ধরা সমাজ ব্যবস্থায় সুদিন আসতে বাধ্য।-
খোলা চিঠি
প্রতিবাদী কবিতা লেখার পরেও অনেক কথা বাকি রয়ে গিয়েছিল বলা। সেই সব কথাই আজ লিখে রাখলাম ৬ প্রতিবাদী কবিতার ক্যাপশনে।
কবিতার ক্যাপশনে যতটুকু পারলাম গুছিয়ে লিখে রাখলাম। এই অন্ধকার অসময়ে আগোছালো কথা গুছিয়ে লেখা কঠিন। তবুও লিখে রাখলাম। কারণ এই অসময়েই আর চুপ না থেকে কথা বলা জরুরী।
মনের অবস্থা কেমন? তা আমার বর্তমান সময়ের কবিতা পড়লেই বুঝতে পারবেন। প্রতিবাদী কবিতা আমি আগে কখনও লিখিনি। তবে এই অসময়ে কবিতা লেখা প্রয়োজন। চিৎকার করা প্রয়োজন। তাই করছি।-
রাত দখল
সেই রাতে—
পারোনি ধামাচাপা দিতে তিলোত্তমার আর্তনাদ,
আজকের রাত দখলে—
ব্যারিকেড বসিয়ে পারবেনা থামাতে প্রতিবাদ।
আমরা রোজ নতুন স্লোগান লিখব,
রাস্তায় নেমে চিৎকার করছি, করব।
রাস্তার মাঝে ব্যারিকেড মজবুত করবে যত
প্রতিবাদী মিছিল ঘুরপথে ছড়িয়ে পড়বে তত।-
গণ-প্রতিবাদ
অফিস ফেরত জনতা শামিল প্রতিবাদী মিছিলে।
এমন অচেনা কলকাতায় কখনও তুমি হেঁটেছিলে?
‘পুলিশি দমনপীড়নʼ হারল শেষে জনরোষের কাছে,
সততা জন্ম নেয় গণ-প্রতিবাদের আগুনের আঁচে।
সমাজ সংস্কারের কাজে চিরকালই—
শাসক-প্রশাসনের আগে জনগণই এগিয়ে আসে।-
উত্তর চাই, বিচার চাই...
বিচার চাই, বিচার চাই— যন্ত্রণায় দিনযাপন
প্রশ্ন উঠছে— শাসকের কাছে কি দোষীরা আপন?
রাজ্যবাসীর প্রতিবাদী মিছিল ন্যায় বিচারের দাবিতে,
অসময়ের ভাঙা তরীতে দুলছি, আওয়াজ তুলছি—
নারী সুরক্ষিত সমাজ চাই, দোষীরা ঝুলুক ফাঁসিতে।
নিত্যদিনের প্রতিবাদী মিছিল দিচ্ছে ছুঁড়ে অগ্নিবাণ।
হতবাক হই এই দেখে—
উচ্চস্তরের নির্দেশের প্রতি পুলিশ কতখানি নিষ্ঠাবান।-
জনগনই গনদেবতা
স্বঘোষিত মসনাদ বাঁচাতে—
বসালে অস্থায়ী মজবুত ব্যারিকেড।
আন্দোলন জোয়ার থামাতে পারলে কই?
স্বঘোষিত ‘উন্নয়নের জোয়ার’ হেরে গিয়েছে।
দিনশেষে ন্যায়ের পথে হাঁটা মানুষেরা জয়ী।-
অন্ধকার
চলেছে লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাস, জলকামান।
রাজ্যবাসীর প্রতি শাসক-পুলিশ দুই-ই সমান।
আন্দোলনকারীদের প্রতি এত বিদ্বেষ কেমন করে আসে?
যাদের নির্দেশে চলল জলকামান, গড়ল ব্যারিকেড
তারাই বলেছিলেন- ‘আমরা সর্বদা আছি আপনাদের পাশে।’
শাসক তোমার কোন কথাতে রাখব আস্থা?
আর কতদিনে মসৃণ হবে ন্যায় বিচারের রাস্তা?-