টিমটিমিয়ে আছে বেঁচে পুরনো কিছু রীতিনীতি,
আজকের দিনে,চোদ্দ শাকের খোঁজে বাঙালি,বাজারে ঘোরে ইতিউতি।
সন্ধ্যে হলে চোদ্দ প্রদীপ একটা একটা করে,
তুলসী তলা থেকে দুয়ার, সব জায়গায় দেবে যত্ন করে।
সন্ধ্যা হলেই একটুখানি গা ছমছম করে,
ঠাকুমার বলা ভূত চতুর্দশীর গল্পগুলো সব মনে পড়ে।
দিনকাল সব গেছে বদলে,আর নেই গ্রাম আর আগের মতো গ্রাম,
বাঁশের ঝোপে, শ্যাঁওড়া গাছে ভূত-পেত্নীরা আর দোলায় না ঠ্যাং!
শহুরে জীবনে ভূত চতুর্দশী এখন হ্যালোউনের ট্রিক এন্ড ট্রিটস,
কুমড়ো পটাশ, রঙ, আলো, গানা-বাজা,
ভূত পেত্নি-শাঁকচুন্নী দেখতে তাই, মানুষেরই ঘোষ্ট সাজা!!
-
জীবনযুদ্ধের ক্লান্তিতে শরীর ভেঙে আসে, দু’চোখে ঘুম নেই,
নিস্তেজ শরীর টাকে কতোদিন না ধোওয়া পাটাতনের বিছানায়,
নিয়ে দুদন্ড বিশ্রাম দিই যেই,
ভিতরের কোন এক ডাক চাবুকের মতো বাজে,
কাল কি হবে,যার ঠিক নেই,তার কি ঘুম সাজে?
চুপ করে বসি এক চিলতে বারান্দার,নড়বড়ে আরাম কেদারায়,
যতদূর চোখ যায় অন্ধকার, শুধু কুয়াশার মাঝে স্ট্রিট লাইটের আলোয়,
মিটমিট করে মখমলি শরীরের ফেনায় ঢাকা বিজ্ঞাপনের বিলবোর্ড..
পেটের টানে ইচ্ছেও করেনা,ফাঁটা ঠোঁট,গোড়ালি আর মসৃন শরীর দেখার বিলাসিতা..
রাত গভীর হতে হতে এক সময় ফিকে হয়ে আসে অন্ধকারের ঘনত্ব..
এ সেই ব্রাহ্ম মুহূর্ত যখন সারা বিশ্বের যোগীপুরুষেরা ধ্যন মুদ্রায় নিমগ্ন,
মনে যেন সাহস জাগে, আশীষের অনুভূতি হয়,
চোখ বুজে হাত জোড় করি, যেন কেউ কানের কাছে ফিসফিস করে কয়..
ওঠ আজ নতুন দিন, লড়াই আছে,আবার লড়াই শেষে সব পাবি,
চোখ খুলি,সত্যিই নতুন লাগে সবকিছু,
চুপিচুপি কার্নিশ বেয়ে প্রথম আলো এসে,
সারা শরীরে তার কিরণ বুলিয়ে দিয়ে বলে, হারার আগে আর হারবি?
-
সক্কাল সক্কাল ঘুম ভাঙে দূর থেকে ভেসে আসে ঢাকের বোল,
ঢ্যাং কুরা কুর,ঢ্যাং কুরা কুর খুশিতে নাচে মন,হয়েছে মায়ের বোধন।
ধূপ,ধূনো,ফল,ফুল,অন্জলি,ভোগ, মায়ের পূজোর আয়োজন,
এই ক’টাদিন দেদার খুশি,প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে মায়ের সাথে কিছুক্ষণ।
আকাশ যতই গোমড়া করুক,ঝড়ুক যতই বাদল,
খুশির মেজাজে চড়বে পারদ,মন আনন্দে পাগল।
ধূপের গন্ধ, ধূনোর ধোঁয়া, ঢাকে কাঠি, কাঁসড়-ঘন্টার আওয়াজ,
দল বেঁধে মায়ের আরতি করি, সঙ্গে ধুনুচি নাচ।
সুখ-সমৃদ্ধি,সুস্বাস্থ্য-দীর্ঘায়ু,আরোগ্য দাও মা, দাও বরাভয়,
বছর বছর আসো মা … মা দূর্গার জয়॥
-
শিশির ভেজা ঘাসের পরে,শিউলি বিছানো অঙ্গন,
তার উপরে আমার উমার আলতা রাঙা চরণ।
কাঁসর বাজা,শঙ্খ বাজা,কপালে দে চন্দন,
উলু দে,মিষ্টি মুখে,কর মেয়েকে বরণ।
কতো ঝক্কি সামলে উমা এলো বাপের বাড়ি,
চারটে দিন চোখের পলকে কেটে যাবে তাড়াতাড়ি।
গল্প গুজব,খাওয়া দাওয়া,আরাম করুক মেয়ে আমার,
আসতে না আসতেই কাটে সময়, হয় কৈলাশে যাওয়ার।
সেই তো আবার একই রকম রোজনামচার দিন যাপন,
আমাদেরও বছরভর অপেক্ষা,কবে হবে উমার আগমন॥
-
বুকের বামে দিলাম খোলা চিঠি, আর বলবি না তোরা দুটি,
প্রতারকের নেই হৃদ মাঝে কোনো স্হান, সে আজ প্রাক্তন,সব সম্পর্কে ছুটি॥-
ভয়ঙ্কর এক নেশা, তোমার ঐ দুই চোখে,
আগুন ধরায়, হাহাকার করা বুকে।
বিদ্রোহী করে তোলে,ভাঙন ধরায় শিরায় শিরায়,
যেন সর্বনাশা মরণ ফাঁদ, চিরাচরিত সুখে॥-
মধ্যরাতে আচমকা বেজেছিল ল্যান্ডলাইনটা,
বুক ধড়ফড় করে উঠেছিল।
নতুন জায়গা,নতুন চাকরি,ওদিকে বাড়িতে একা মা..
কি জানি বাড়ির খবর আসলো নাকি!
হ্যালো.. কেটে গেল! আবারও..বারবার বেশ কয়েকবার,
নাহ্ বাড়ি থেকে নয়। বিরক্তির সাথে বললাম অসভ্যতা হচ্ছে?
কথা না বললে, রিং করার কি দরকার!
মাফ করবেন, আমি বললেও আপনি শুনতে পাচ্ছিলেন না!
বুঝলাম দূর দেশ থেকে…দূরভাষের সমস্যা! গলায় ছিল কিছু একটা..
দু’এক কথায় কথা বাড়লো,
বললাম দিন ঠিকানা,করুন কাজ,সকালে দেব পৌঁছে আপনার বার্তা..
বৃদ্ধা মা,কি মিষ্টি ব্যবহার খানি,মুখ দেখে মনে হলো কেটেছে বিনিদ্র রজনী।
চিবুক ছুঁয়ে আদর করে বললেন কি নিশ্চিন্তিটাই না করলে..
আমার সাথে খেয়ে যাবে,শুনবো না বাহানা।
আজ থেকে যখন খুশি এসো,আমি তোমার নতুন জ্যেঠিমা!..
ঠিক সন্ধ্যায় বাজলো ফোন,ওপারে সেই কন্ঠস্বর,
মনে মনে যেন অপেক্ষাতেই ছিলাম,ভাগ্যিস জ্যেঠিমাকে দিয়েছিলাম নম্বর!
অচেনা মানুষটির সাথে কাটে কতো বিনিদ্র রজনী,
রাতের চাদরে,তীব্র আশ্লেষে, মাদকতা জড়ানো কন্ঠস্বরখানি॥-
কে বলেছে তুমি নেই,এখনও আমার সকাল হয় তোমায় জড়িয়ে,
ঘুম চোখে এখনও প্রথম দিনের তোমার স্মৃতি,তোমাকে হারিয়ে!
প্রথম রবি কিরণ দেয় সুখ আলপনা,তোমার আমার চৌকাঠে,
মুগ্ধতা ভোরের উপহার,কপালে দেয় ভেজা পরশ, স্বপনে এখনও তুমিই যে..!-
দুই হাত জোড় করে চেয়ে যাই,
মা গো সুখ শান্তি সমৃদ্ধি দাও,
আরোগ্য যশ খ্যতি দীর্ঘায়ু দাও…
কর্মের কথা মনে থাকে না!
এ যেন যাদুর তুলি বোলানো..
যা লিখে দিলাম… “তোর কপালে এক রাশি সুখ”..
বিচরণ কর সুখের জগতে, সুখের প্রাসাদে..
ব্যস আর কিছু করার থাকেনা!!-
ঘাসের উপর শিশিরের ফোঁটা, শিউলি ঝরা উঠোন,
তার উপরে পড়বে মেয়ের আলতা রাঙা চরণ।
আসছে মেয়ে বাপের বাড়ি, নিয়ে পুত্র কন্যা,
ক’টা দিন জুড়াবে প্রাণ,মেয়েকে যে রোজ কাছে পাইনা।
আসলে উমা, জড়িয়ে ধরি ঠান্ডা হয় বক্ষ!
বছর ভর অপেক্ষা, শুরু হবে কবে, দেবীপক্ষ॥
-