সেই কতদিন বাদে ডুবেছে চোখ,
ভেসেছে মন
চোখের কোটরে জমেছে জল।
মাছ উঠে আসে-
"কতো করে মাছ? কতো করে স্বপ্ন?
কতো করে পৃথিবী?"
ঘুম নেই চোখে, ঘুম নেই।
কাল সকালে আবার চলবে ক্রয়-বিক্রয়।
কি যেনো চেয়েছিলাম?
মেঘ? তাই-ই হবে।
এক হাঁটু জলে নয়তো ভেসে
যাবে কেনো ঘর-সংসার।-
জানি না কেনো
আমি অতল অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছি।
তুমি এসেছিলে-
পদ্মের পাতার মত আলতো করে
তুলে নিয়েছিলে।
ওই পাতার উপর টল টলে জলের বিন্দু
আলো কুড়িয়ে এনেছিল ওই কটা দিন
আমার ধারণা সেই জল সুখিয়ে গেছে
পদ্ম পাতা মরমর করে ভেঙে যাচ্ছে
হাতের মুঠোয়
ফু দিয়ে উড়িয়ে দিচ্ছ তুমি।
এই তো সেদিন দেখেছি
আলো হাতে দাঁড়িয়ে ছিলে কিছুক্ষণ।
-
তোমায় যারা শান্তিতে ঘুমোতে দেখেছে
আমি তাদের ঈর্ষা করি।
আমি ঈর্ষা করি তাদের
যারা তোমার কপালের ভাঁজে পা রেখে
উঠে গেছে তোমার সিঁথি বেয়ে
তোমার একান্ত গোপন স্বপ্নের ভেতর।
অসংখ্য ভিড়ের মাঝে যারা চিৎকার করে
তোমায় পিছু ডাকতে পারে,
আমি তাদের ঈর্ষা করি।
অলকানন্দা, তুমি চাইলে উচুঁ পাহাড়ের চূড়া
পেরিয়ে আসতে পারো।
তুমি চাইলে মরুভূমিতে জল সিঞ্চন করতে পারো।
কেবল আমাকে চাইতে পারো না।-
বছর শেষ হতে চলেছে নিলয়।
ওই চিতায় ক্রমশ বাড়ছে
শব-দেহের ভিড়
হাঁপিয়ে উঠছে ডোম
এই সব কিছুর ভার কে নেবে? তুমি!
নাকি প্রতিবারের মত গা ঝেড়ে
হিসেবের শেষে, সব ভাড় আমায় দিয়ে
ছুটতে ছুটতে তুমি চলে যাবে?
আর আমি একা বসে মুঠো মুঠো অস্থি
ঢেলে দেব কলসী তে,
রক্তের মত লাল কাপড় দিয়ে বেঁধে দেব মুখ।
এমনটাই কি কথা ছিল নিলয়?-
আমি কিছুদিন ধরে ভাবছি
তোমায় বলবো
আমার এই জোনাকির আলো, লেবুর গন্ধ,
আর ভালো লাগে না
এই রাতের অসংখ্য তারা আর চাঁদের জোৎস্না
এসব কিছুই আমার ভালো লাগছে না......
আমি চাই কেউ এসে নির্জন রাতে ঢেলে দিক
জীবন সংক্রান্ত আলোচনা।
আমি চাই তুমি এসে আমার ব্যর্থতার পাশে
রেখে দেও ধূপের সুগন্ধী
তুমি আর আমি অন্ধকার নিয়ে তর্ক বিতর্ক এড়াতে গিয়ে
আরো বেশি জটিল করে তুলবো আলোচনা।
আমাদের মধ্যে গোল বাঁধবে,
আমরা একে অপরের প্রতি অসম্মতি প্রকাশ করব,
আমরা চার তলা ছাদের ওপর থেকে নিচে তাকিয়ে
নিজেদের দৃষ্টি কে ঠিক প্রমাণ করার চেষ্টা করে যাবো।
কিন্তু আমার চোখে বিদ্রুপ দেখে, হঠাৎ,
তুমি একটু ঝুঁকে যাবে
আমার দু-চোখে আরো গভীর ভাবে দেখতে চাইবে
তোমার হারিয়ে যাওয়া তরী আর আলোর মিছিল।-
তুমি কবে আসবে ঠিক করে বোলো
আমি তখন সময় বুঝে
আকাশের কপাল থেকে তুলে নেব চাঁদ
তুমি আসার পথে নিয়ে এসো আলো
পরিয়ে দিয়ো আমার কপালে।-
তেমন কিছুই ঘটেনি এই কদিন।
রাতে এসে বেগণ স্প্রে দিয়ে চলে গেছে নার্স
শব্দ করে করে মরে গেছে মশার দল।
সাদা ধপধপে রাজ হাঁসের মত বিছানায়
শুয়ে ছিলেন মা, চুপচাপ
আর সেলাইনের ফোঁটায় ভেসে যাচ্ছিল
আমাদের সময়, নিশ্চুপে।-
তুমি আমাকে একটা ও ঘড়ি কিনে দিলে না
এই আক্ষেপ আমার চিরটাকাল থেকে যাবে।
বোনের হাতে ঘড়ি পরিয়ে তুমি বললে
" এইবার সময়ের জ্ঞানটা হবে...."
যেন আমি আমার হাতের মুঠোয় সময় কে
আটকে রেখেছি
অথচ এই গোটা চারটে বছর
জানালার পর্দা সরানোর মত, ফুস করে চলে গেলো
এখন যতই আলো আসুক ঘরের ভেতরে
তোমাকে আর দেখতে পাইনা।
তুমি থাকলে তোমায় জড়িয়ে ধরে
লজ্জার মাথা খেয়ে মুখ ফুটে বলতাম
"দিদন, একটা ঘড়ি কিনে দাও..... শুধু একটা!"-
এর আগে
আমি বহুবার এমন মিথ্যে বলেছি
বহুবার এমন ভান করেছি
যেনো আমার সব গা সওয়া হয়ে গেছে
আর কিছুতেই কোনোকিছু
আমাকে আঘাত করতে পারবে না
হাজার বার টুকরো করে ফেললেও
আর কোনো রক্তপাত হবে না।
কিন্তু এবার মিথ্যে বলতে গিয়ে
বার বার ঠোঁট কেঁপে যাচ্ছে
অযথা চোখ মুছে নিতে হচ্ছে বার বার
শুধু আকাশ ভাঙছে না
আর মাটি কেঁপে উঠছে না।-
এক অদ্ভুত আঁধার এসে
খসে পড়েছে তোমার পায়ের কাছে
ওই আঁধার হাতে তুলে নিয়ে
বেঁধে দাও আমার চোখ।
আমার চোখের দিকে তাকালেই
তোমার চিরকাল মনে হয় উনুনের তাপ
ভাতের সাথে যেন এক্ষুনি উপুড় দিয়ে দেবো
তোমার সমস্ত পৃথিবী...…
-