দুষ্টু মিষ্টি
নাজিমা পারভীন
বদ্ধ দরজায়, খোলা জানলায়,
বাড়ায় কয়েক নিযুত কাজ।
ভারী দুষ্টু , নইকো নিষ্ঠু,
আমার ছোট্ট রিফা নাজ।
মুখে চুপছাপ,মানে খুব চাপ,
যেন মেঘলা অসময়,
আমি দৌড়ে,দেখি সদরে,
পড়ে আছে তার অন্যায়।
মারি কাঁদে,হুম্মি কাঁদে,
কি কান্ড গিয়ে দেখি ,
রিফা দাঁড়িয়ে,চোখ রাঙিয়ে,
হাতে ডান্ডা। এ কি !
তার কর্মে , সারমর্মে
আমি স্তব্ধ কিছুক্ষণ,
কড়া শাসনে, হাজার বারণে
ভীষণ ক্লান্ত লাগে মন।
আছে ভুলচুক, তবুও সুখ,
আছে প্রশান্তি তার গায়।
আমি পূর্ণ,তার জন্য,
সারা বাড়ি আনন্দময়
আল্লাহর সৃষ্টি , কি মিষ্টি !
হোক না শ্যামলা মেয়ে।
মায়ের কাছে , হৃদয় মাঝে,
সুন্দরী সে সবার চেয়ে।-
বোঝাপড়া
নাজিমা পারভীন
ভেজা কোলের খুচরো শীতে
মায়ের ঋণ কুড়িয়ে পাই।
রিফা আমায় গোটা দুপুর
বোঝাপড়ার নামতা শেখায়।
নামতা পড়ি জেগে থাকার
ঘুম চোখের খেলনাবাটি ,
রিফা আমায় শাসন করে
ভুল করলেই সকাল রাতি।
কাঠকয়লা আর আঁচের ধোঁয়ায়
আমি যখন রান্নাঘরে
রিফা আমার সঙ্গে থাকে
পাখার হাওয়ার আরাম ছেড়ে।
কোল গাড়িতে না চড়ালেই
মুখ হয়ে যায় ফুলকো হাঁড়ি।
চঞ্চলা এক নদীর কাছে
মাথা নোয়াই স্বেচ্ছাচারী।-
আমাদের দুই বছর
স্মৃতিগুলো আগলে রেখেছি নির্দিষ্ট একটা অনুভূতির পাতায়,
তারিখের গায়ে পরিণয় চিহ্ন, দিন আসে দিন যায়।
চেনা ঠিকানা বদলে গিয়ে অচেনা জন হয়েছে আপন,
বাইরে আলোককুচির রোশনাই, ভিতরে একশো চল্লিশ হৃদস্পন্দন।
হারিয়ে গেছে অন্যায় আবদার, অভিমানের পারদ গুটিকয়েক।
দুই থেকে তিন হয়েছি,পেরিয়ে এসেছি বছর দুয়েক।
-
রিফার জন্য
নাজিমা পারভীন
মন খারাপেও হাসতে থাকা আমি
রিফার বিবরণে শব্দ খুঁজে বেড়াই ,
রিফার চোখের এলোমেলো ভাষা,
আমার তখন মা হয়ে ওঠার সময়।
রিফার জন্য ঘুমপাড়ানি গান,
রিফার জন্য এক এক লাইন লেখা,
রিফার জন্য সাজিয়ে রাখা আদর,
রিফার চোখেতে আমার স্বপ্ন দেখা।
টেলিফোনে জমতে থাকে ধূলো,
আমি তখন মায়ের ভূমিকায়
শান্ত দুপুর, ফাঁকা করিডোর,
রিফার আবদার আমার স্পর্শ চায়।
মোহ ছেড়ে গেছে চাওয়া পাওয়ার,
সময়সূচীর গন্তব্যের তাড়া,
এইতো শুরু নতুন গতির চাকা,
যোগবিয়োগে বইবে জীবনধারা।-
ঘরের ভিতর ক্ষিদের মিছিল,
বাইরে মৃত্যু যন্ত্রনা,
জলের স্রোতে লাশের বোঝা,
নিখোঁজ ভালো আছির ঠিকানা ।
-
১০ ই রবিউল আউয়ালের সকাল,
বাইরে প্রকৃতির প্রাক শৈত্যপ্রবাহ,
তবুও মনের মধ্যে ভয় উল্লাসের দ্বৈত অনুভূতি।
ঘড়িতে যখন নটা বেজে চুয়াল্লিশ
কানে ভেসে এলো একটা কান্নার শব্দ।
সাথে সাথে বেড়ে গেল সম্পর্কের পরিধি।
নতুন ডাক,নতুন টান,নতুন সমারহ
বদলে দিল আমাকে।
একটা একরত্তি মেয়ে
নাড়ি ছেঁড়া আর নাড়ি কাটার
যে সূক্ষ্ম পার্থক্য
- তা ভুলিয়ে দিয়ে
জড়িয়ে গেলো দায়িত্বের শিরা উপশিরায়।-
জোর করে আমাকে মৃত্যুর খুব কাছে টেনে আনে
প্রতিটি তেইশে অগাস্টের দিনগুলো...
-