সেদিন অনেক রাত করে বর্ষা নামলো,
আষাঢ়ের প্রথম মেঘ বর্ষণ।
সারারাত ধরে বৃষ্টি হলো খুব... অঝোর বৃষ্টি...
বহুদিন পরে এমন একটা বৃষ্টিভেজা ভোর।
রোদে ঘামে ভিজে থাকা শহর যেন প্রাণ পেলো,
বৈশাখের যেটুকু অস্বস্তি বেঁচে ছিল
এ বর্ষণে সবটা ধুয়ে মুছে গেল,
আষাঢ়ের প্রথম মেঘ বর্ষণ।
সেদিন আরও এক শহরে বর্ষা নেমেছিল,
আষাঢ়ের ঘন কালো ঘিরে ধরেছিল,
সমস্ত প্রাণের অজান্তেই সেদিন বর্ষা নেমেছিল এক মনে,
সেই হৃদয়ের চোখ বন্যায় ডুবেছিল আষাঢ়ের বর্ষণে।
বর্ষা নেমেছিল মনের গভীরে,
বৃষ্টি ভিজেছিল চোখের শরীরে...
সেদিন তার হৃদয়ে শুধু শতাব্দী প্রাচীণ ঢেউ,
বৃষ্টি ছাড়া সে খবর আর জানেনি কেউ!
বৃষ্টি ছাড়া সে খবর আর জানেনি কেউ!
-
* প্রথম প্রকাশিত বই "ক্যামোফ্লা... read more
...
মাঝেমধ্যে তোমাকে অনুভব করতে গেলে
বিস্মৃতির রসে গেঁজিয়ে ওঠা গন্ধ পাই,
আবেগ-অনুভূতি পিছুটান ছাড়ে না।
স্মৃতি-বিস্মৃতির ফেনায় বুদ্বুদের মত আসক্ত হয়ে আছি শুধু!
তবু তোমায় ছেড়ে ঠিক বেঁচে আছি;
বুদ্বুদ যেমন করে বেঁচে আছে বিস্মৃতির সুরায়
গেঁজিয়ে ওঠা প্রত্যেক সন্ধান প্রক্রিয়ায়!
-
একটা গোটা দশক কেটে গেছে যেন,
এর মধ্যে গ্রামের মাটি শহুরে ধাঁচ পেয়েছে,
খড়ের চাল, টিনের ছাউনি দেওয়া বাড়িগুলো বিলুপ্তির পথে...
রাঙামাটির মোরাম এখন মফস্বলের ঢালাই রাস্তা,
যেন রঙ হারিয়ে বিবর্ণ হয়ে গেছে!
আগে যখন কৃষ্ণচূড়া ফুটে উঠত বসন্তের শেষ মুহূর্তে
শহরতলীর বাঁকগুলোকে মনে হতো রঙিন কার্পেট বিছানো,
চারিদিক রাঙা হয়ে উঠত কৃষ্ণচূড়ার লালে, আর অবহেলিত জারুলে।
একটা গোটা দশক কেটে গেছে...
রেল লাইনের ধারে এখনও কৃষ্ণচূড়া ফুটে থাকে,
কবরস্থানের ভেতর করে একটা মস্ত জারুল গাছ আছে।
মায়া লেগে থাকে যেন গাছটায়,
সূর্য ডুব দিতে গেলে যত রঙ এই জারুলে এঁকে দিয়ে যায়;
তবে এখন এই রং দেখলে আগের মত মনে ছবি আঁকা হয় না।
গোটা একটা দশকের যত ক্ষত
সব জীবন্ত হয়ে ওঠে এই অস্তরাগ মিশে থাকা জারুলে,
প্ল্যাটফর্মের বিস্মৃতিগুলো দগদগে হয়ে ওঠে কৃষ্ণচূড়ার লালে!
তবু প্রত্যেক বছর কৃষ্ণচূড়া ফোটে, জারুল বেড়ে ওঠে
মৃতপ্রায় শহুরে গলির সাদাকালো ছায়াকে একটু রঙ মাখানোর চেষ্টায়...
প্রত্যেক বছর কষ্টগুলো জীবিত হয়ে ওঠে নতুন করে,
যেন আমাদের অনুভূতি মরে যায়নি, তারা এখনও প্রাণ খুঁজে বেড়ায়!
-
দূর থেকে শুনছি,
আর দেখছি তারও অনেক ক্রোশ দূরে বসে...
চারিদিকে শুধু হিন্দু-মুসলিম ছড়িয়ে ছিটিয়ে ,
মানুষ কোথাও নেই!
আমার অবশ্য এতটুকুও অবাক লাগছে না।
এই যে যুদ্ধ হচ্ছে সেটা হোক,
অনেককাল তো ঠান্ডা যুদ্ধে চাপ পড়ে পড়ে
বরফ গলে গেছে, বিষিয়ে গেছে জলের প্রত্যেক অণু!
এই যে যুদ্ধ হচ্ছে এটা হওয়া দরকার।
বিষপান করে যেমন নীলকন্ঠ হওয়া যায়,
তেমন করেই যদি পরমাণু ভেঙে গিয়ে নতুন অবস্থায়
মানুষ ফিরে আসে!
যুদ্ধ না হলে এত কিছু কেমন করে হবে?
তাই তো ভীষণ করে যুদ্ধ চাই,
বিশেষ করে হিন্দু, মুসলিম... আরও যা যা ধর্ম আছে,
সেই সব ধর্মের মনে যুদ্ধ দরকার।
তাতে করে যদি প্লাজমার মতো একটা নতুন স্টেটের উৎপত্তি হয়,
ক্ষতি কি?
বরং সেখানে গিয়ে সব ধর্ম গুঁড়িয়ে যাবে,
পড়ে থাকবে শুধু মানুষের অবশেষ!
যুদ্ধ যখন হচ্ছে, হোক তবে...
কিন্তু শেষমেশ যুদ্ধজয় করে মানুষ হয়ে ফিরে আসা চাই।
বিজয়ী মালা যেন শুধু মানুষের গলায় থাকে,
কোনো হিন্দু, মুসলিম... নামক হেমলকের গলায় নয়;
রণ জয়ের পরবর্তী ধর্ম যেন শুধু মানব ধর্ম হয়।
রণের ধ্বংসাবশেষ থেকে যেন শুধু মানুষের শুরু হয়!
-
ফিরবে না জানি আর পুরাতনের স্রোতে,
ইতি ইত্যাদির পর্ব লিখি বনেদি অজুহাতে;
ফিরবে না জানি এই গদ্যময় আকাশে,
গল্পের শহর গল্প খোঁজে বিষাক্ত বাতাসে!
ফিরবে না জানি এই মুহূর্তে বোনা স্মৃতি চরে,
অনুভূতির কত আহুতি ছন্দ মিলিয়ে কাব্যি করে।
জানি, তুমি ফিরবে না,
তুমি ফিরবে না এই ফাঁপা ক্যানভাসে,
তবুও এই মন আবেগ আঁকে শুধু তোমায় ভালোবেসে।
-
বসন্তের আগুন রং ছড়িয়ে ছিটিয়ে চারদিকে,
মাঝে মধ্যে দক্ষিণের দমকা বাতাস গায়ে এসে হাঁফ ছাড়ে!
সবজেটে নিমপাতা আর সজনে ফুলের ঝারগুলো ভরে উঠেছে যেনো...
রাত নামলেই এখন খোলা জানলার ওপার থেকে বয়ে আসে কুহুতান।
সকাল সকাল কাচের জানলায় নিজেদের দেখে জটলা পাকায় দু একটা বুলবুলি,
আবার বেলা বাড়তেই শুরু জীবকুলের ব্যস্ত দিনের জোগান!
দুপুর বেলার ফাগুন ভালোই রোদ তাপিয়ে নিচ্ছে গ্রীষ্ম আসার আগেই,
সূর্যের তামাটে রং অবিশ্যি বিকেল পড়তেই ঘোলা হয়ে আসে এখন,
তারপরও শিমুল, পলাশ, অশোকের বন্ধুত্বে বসন্ত বেশ জাঁকিয়ে বসেছে এবারে।
পৃথিবী সেজে উঠেছে ঋতুরাজের রঙিন উৎসবে!
কেউ কেউ বসন্তকে আপন করে নেয় নতুন আবেগে, নতুন আস্বাদে,
কেউ আবার মুঠো ভরে পলাশ কুড়োয় স্মৃতিলেখা শহরের বিরহ বিচ্ছেদে!
কারোর প্রেমিক মন দুঃখ মুছে সেজে ওঠে পর্ণমোচীর সাজে,
কেউ আবার ধুলো মুছে সুর আনে কোকিলের এসরাজে!
কত অপসারী, ইচ্ছেরা বাহারি, গেঁথে ওঠে নকশিকাঁথার মাঠের কাছে,
অভিসার আসে, বেবাগী বাতাসে, টকঝাল কাঁচামিঠে বসন্ত এসে গেছে!
-
শরীর ছেড়ে বেরিয়ে এসেছি, অদূরে পড়ে আছে নীল রঙা নিথর দেহ...
বেশ বড়সড় আয়োজন, ভিড়ে ঠাসাঠাসি, নীলকন্ঠের প্রতি কি নিদারুণ স্নেহ!
-
...কত অবসাদে ভরা বিকেল,
কত রঙ ফিকে হওয়া সাদাকালো সন্ধ্যামালতি,
মন্দবাসার ছন্দ ছাড়া রুফটপ -
তুমি এসেছিলে বলে আরও কত ঘুমন্ত শীত,
মেঘলা দুপুরে ছানি কেটে ঝলমলে বসন্ত আঁকতে পেরেছি।
তুমি জানোও না,
তুমি এসেছিলে বলেই আমি আজও আছি !
তুমি এসেছিলে বলে তোমার অজান্তেই তোমাকে ভালোবেসে গেছি!
-
তোমার জন্য প্রেমের আবেগ, অনুভূতি অফুরান; তোমার জন্য কষ্ট যত, যত মনের উচাটন...
ব্যস্ত হৃদয় তবু বোবা সংলাপ, কথা বলে যায় শুধু ভালোবাসার রিংটোন!
-
অণুগল্প গুলো ধীরে ধীরে উপন্যাস হয়ে ওঠে, পরিণতি খুঁজে বেড়ায় খুব করে...
দিন বদলের দোলাচলে বিষিয়ে ওঠে কাব্যকথা, মুক্ত করে নিজের লেখা ছুটি চায় বিষম ভোরে!
-