সূর্যনাথপুর গ্রামে পোষ্ট অফিসের ধার ঘেঁষে সোজা রাস্তা ধরে জোরপানি নদীর সেতু পার করে স্বপন কাকুর দোকান পেরিয়ে ঠিক বাদিকেই পুতুর বাড়ি। ওই পথ ধরে আসলে পুতুর আদরে বাড়ন্ত গাছগুলোর ফুলের সুবাস ছড়িয়ে থাকে রাস্তা জুড়ে। ওই গন্ধই যেনো তাঁর বাড়ির পরিচয় বহন করে আসছে। বাঁশের কঞ্চি দিয়ে বেড়া ঘেঁষানো বাড়িটি । বাড়ি জুড়ে ফুলের বাগান, হাজারো রকমারি ফুল গাছ, আর তাতে রয়েছে ডালে ডালে গাছেদের দেওয়া পুতুর জন্য ভালোবাসা।

পুতুর বয়স এখন ষোলো, দশম শ্রেণীর ছাত্রী সে। সকালে গাছেদের যত্ন থেকে শুরু করে টিউশন থেকে স্কুল, এসে বুদু, বুকু, মোলু, ঢোলুর সাথে খেলা করেই তার দিন শেষ। তাঁর রাগ, অভিমান, মায়া, ভালোবাসা সবেতেই এই পোষ্যদের নিয়ে।

-

রবিবার যানজটের অভাব, পাতা ঝরা শীতের বিকেল বেলার আমেজ, ক্ষীন কুয়াশায় মৃদু মৃদু ঠান্ডা হাওয়া বইছে, আদরে মাখা হালকা মিষ্টি রোদ, কলেজের পাশ ধরে থাকা ক্যান্টিন গুলো এক পার হতে হতে তাঁর দেখা।

পড়নে ছিল সাদা উলের সোয়েটার, কাঁধে হাত ব্যাগ, পাশের এক ব্যাগে রয়েছে কমলা সুন্দরী, গ্যাজিনিয়ার চারা গাছ, কপালে ছোট্ট এক বিন্দি, খোলা চুলে কানে ঝুমকো, কাজল কালো চোখে মায়াবি আলপনা, মুখে এক মিঠেল হাসি, তাঁর সাথে আজ আমার প্রথম দেখা।

-

আমি এক শিশুকন্যার প্রেমে পরেছি,
সপ্তম শ্রেণী সম্ভবত, নাহ্ ষষ্ঠ বটে!
পাখির নীড়ের মতো তার চোখ দুখানি,
শিশুর মতো শৈশব যার মুখখানি।
তাঁর হাসিতে ফুলে- রা ডানা মেলে পাপড়ি খোলে,
তাইতো, শতবার এই উচান মন দোলে।
তাঁর কথার আলাপে ঘটে অন্তরের পরাগমিলন
পাশে বসিয়া, মনে হয় শুনি সর্বক্ষন

-

রাত আড়াই-টা নাগাদ ট্রেন এসে থামল আলুয়াবাড়ি স্টেশনে | স্টেশন থেকে বের হতেই বেরিয়ে পড়লুম বাড়ির উদ্দেশ্যে, এই বর্ষার রাতে টোটো বা রিক্সা কিছুই পাব না তার যথেষ্ট আন্দাজ আগে থেকেই ছিল, তাই হাঁটতে শুরু করলাম | রাস্তার দুধারে সারিসারি ভাবে জ্বলছে নিওন বাতি | ভেজা রাস্তা - ক্ষণিক আগে হওয়া, বৃষ্টির আভাস দিচ্ছে,
এক- এক করে ল্যাম্পপোস্ট পার হতে লাগলুম | রাস্তা জুড়ে শুধু আমার একজোড়া জুতোর প্রতিধ্বনি, যা এই শান্ত পরিবেশকে হয়তো কিছুটা বিরক্ত করছিল| কিছুটা পথ পেরিয়ে নজর যখন আমার ছায়ামূর্তির ওপর গিয়ে পড়ল, দেখতে পেলুম আরো এক ছায়ামূর্তি ঠিক আমার ছায়ামূর্তি বরাবর ক্রমশ এগিয়ে আসছে, যার পায়ের কোন প্রতিধ্বনি নেই, হঠাৎ একটা ঝোড়ো হাওয়া বয়ে গেল রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা গাছগুলোর মাথা দিয়ে, পরমুহুর্তেই লোডশেডিং | এক ঠান্ডা ঢেঁকুর গলা দিয়ে পৌঁছে গেল বুকে |

ঘন অন্ধকারে, পেছন দিক থেকে অচেনা গলায় নিচু সুরে ভেসে আসলো-
"এই সুন্দর স্বর্ণালী সন্ধ্যায়, একি বন্ধনে জড়ালে গো বন্ধু! "

-

বাড়ির পথ ধরে যখন ফিরছি, আকাশের চাঁদটা তখন মেঘের ফাঁক গলে প্রায় গোলাকার। সেই আলোয় পাশের পরিত্যক্ত জমিতে গজিয়ে ওঠা কাশফুলগুলো সাদা ধবধব করছে। একটা ফুরফুরে হাওয়া আমার গা ছুয়ে ওদের মাথায় দোলা দিয়ে গেল। আর ক' দিন বাদেই ঢাকের তালে মায়ের আগমন।

-

জানলার ধারে বসিয়া দেখলে
যতদূর চোখ যায়
নীল আকাশ ছাড়া
কিছুই চোখে পড়ে না
আর ওই সাদা মেঘের ভেলা গুলো
যেভাবে চিঠি পাঠাতো তেপান্তরে
তারা এখন পাহাড়ের প্রতিবাত ঢালে
আশ্রয় পায় বারংবার!
ওই আশ্রিত গন্তব্যস্থলেই
জলকণা হয়ে ঝড়ে পড়ে
তাই আমার আবেগ ভরা চিঠি
পাহাড়ের ওপারে আর পৌঁছায়নি

-

ক্ষনিকের আশায়
ডুবিয়েছি রাত
জোনাকি ভেবেই
বাড়িয়েছিলাম হাত

-

চোখের পলকে রাখব,
তোমার একলা হাসি
তোমার সাথেই কাটাবো
বছর আমার আশি
বিরহের আর গান শুনব না
বলব ভালোবাসি

-

নীল আকাশে
উড়তে থাকা
সাদা মেঘের ভেলা
ভর-দুপুরে
ঘরের জানলায় এসে
থমকে দাড়ায়
ক্ষণিক আমায় ভাবিয়ে
দূরে সরে সরে যায়

-

মেঘেরা আজ খুলছে চাদর
বাড়ন্ত এই মনের আদর
প্রকাশ পায় বৃষ্টি কনায়
ভেজা স্মৃতিতে শ্যাওলা জন্মায়

-