চিরকালের গল্প অনর্থক, বাদবাকি
এসো মেখে নিই বিস্তীর্ণ হাঁটাচলা,
সূর্যের তামাটে প্রহর, লালমাটির টিলায়
মহুল ফুলের নেশা, চলো সেঁকে নিই
আস্তিনের ভাঁজে লেগে থাকা ওম।
পাহাড়ি নদীর চোখ, খরস্রোতা সুখ!
শতাব্দীর বিবর্ণ অসুখে যেন
ক্লান্ত না হয় এই ভালোবাসা,
এটুকু আশ্বাস দিও- হৃদয়ের কাছে
নিবিড় বসেছি আমি তোমার
কোমল অশ্রু চেয়ে, যেমন বিষাদী
দুপুর বসে মেঘমোহনার তীরে।-
প্রতিটি নিঃসঙ্গ মানুষ আসলে
গানের শেষে সুরের অনুরণন,
ক্রমশ মিলিয়ে যায় নীরবতার বুকে
অথচ রেশটুকু রেখে যায় স্মৃতির মত!
প্রতিটি কবিতাই আসলে
এক একটি নিটোল অশ্রুবিন্দু
তোমার উষ্ণ গালে মিশে যায় রোজ
অথচ রেখে যায় অদৃশ্য দুঃখের দাগ।-
এত উৎসব, কোলাহল, শোরগোল
সব কিছু মিটে গেলে, রোদ পড়ে আসা বেলায়
ধীরে ধীরে হেঁটে চলে যাচ্ছ তুমি পিচরাস্তার বাঁকে।
অন্ধকারে মিলিয়ে যাওয়ার আগেই
দীর্ঘতর ছায়ার দিকে ফিরে দু-একবার হাত নাড়ছ,
যেমন বিসর্জনের বিষাদটুকু মেখে নিয়ে
অতীতের মত মাথা দোলায় অবশিষ্ট কাশের ঝাড়!
এত উৎসব,এত জীবন, এত ব্যস্ততার পর
তোমার চলে যাওয়ার সময় হলেই,
আমার কল্কাপেড়ে শাড়ির আঁচলে ধরা পড়ে
একাকীত্বের মতো বৈধব্যের জ্যোৎস্না,
নিগূঢ় অন্ধকার ভেঙে কর্কশ ডাকে
শেষরাতের পাহারা দিয়ে ফিরে যায় হুতোম প্যাঁচা,
নদীর কোমল মসৃণবুকে ঝুপ্ করে বিসর্জনের শব্দ ,
তরঙ্গ ওঠে কিছুটা শোকের মত তারপর তারপর------
ক্রমশ মিলিয়ে যায় অপ্রাপ্তির নীরবতায় ।
-
বিদায় নেওয়ার আগেই যেমন ঘোলাটে মেঘ চোখ,
হাতের মুঠোয় আকুতি-ভিড়, ঠোঁটেও অনুযোগ,
আমার দিকে দৃষ্টি তোমার; নিঃস্ব পথের পাশে
এমন সময় ভালোবাসার প্রবল বৃষ্টি হোক।
হারিয়ে যাওয়ার মুহূর্তে ঠিক ওড়নাটিতে টান,
বলিষ্ঠ দুই হাতের ওমে আটকে রাখার দাবি
পালাতে চাই, পিছন ফিরি, তোমার পিছুডাক,
মায়ার মতো জড়িয়ে তখন ভালোবাসার ছবি।
ভীষণ জ্বরে দুচোখে ঘোর, ঘুম না আসা রাত
তোমার চোখে জলজ প্রেম, স্মৃতির মত শোক,
স্নিগ্ধ অধর, উষ্ণ দুগাল; চিবুক ছুঁয়ে দেয়,
ঠিক এভাবেই ভালোবাসার লক্ষ বছর হোক।
-
তোমাকে বিদায় জানিয়ে
আমি এক পেয়ালা কবিতায় ডুবে যেতে চাই!
যে ভাষার শরীরে একসময়
তুমি বুনেছ অনুভুতির সঙ্গমলিপ্সা,
সেই তরল আদরে
ভিজে যাক শুষ্ক ঠোঁট।
তোমাকে বিদায় জানিয়ে
আমি স্মৃতিটুকু ধূমপানের মতো
উড়িয়ে দিতে চাই
মৃত্যু ও কবিতার মোহনায়।
-
অথচ আমাদের আর ফেরা হল না,
যারা চলে যেতে চায়, তাদের পথ আটকে ধরে
অনুরোধ, আকুতি, পিছুডাক।
যাদের বলার থাকে অনেক কিছুই
তাদের মুখ বন্ধ করে রাখে
বুকের কাছে দলা পাকানো একটা ঢেউ।
এভাবেই, এমন করেই
অনেকটা বোঝা বুকের বাঁদিকে আঁকড়ে
আমরা উপসংহারে পা বাড়াই।
ফেরা হয়ে ওঠে না কিছুতেই।
বৃষ্টির ভীষণ দাপটে অজানা থেকে যায়
মেঘের মধ্যে জমে থাকা আস্ত সমুদ্র!
-
রোদ ঝিলমিল, উড়ো পেটকাটি, বন্ধুর দল, বিকেলের ছুটি,
লুকোচুরি আর আব্বুলিশের পালা।
বেঞ্চের গায়ে স্মৃতিমাখা নাম, পুজোসংখ্যার চেনাশোনা ঘ্রাণ,
পুতুলের বিয়ে; রূপকথা ছুঁয়ে ফেলা,
বয়সের ভিড়ে একফালি ছেলেবেলা!
-
স্নিগ্ধ বুকের ভাঁজে নদীটির পাশে
জেগেছে অন্তিম মেঘ,
আকাশের সারেঙ্গীসুর
ভিজে যাবে বলেই
তুলে ধরি কাগজের ঠোঁট
তোমার ক্লান্তচিবুকের নীচে।
বর্ষামঙ্গল, সুবিস্তৃত ঘাসজমি,
নিদেনপক্ষে আর একটি ছাতিমবিকেল,
এসে গেলেই আমি ছুঁয়ে ফেলব
স্বাতী নক্ষত্রের পূর্বাভাস,
আর একটু সময়, বেদনাকীলক
নিয়ে এসো। শেষ রক্তবিন্দুতে
আমি খুঁজে পাব ঠিকই কবিতার
অমৃতযোগ!
-
তোমার মৃতদেহ নিয়ে
ওরা চলে যাচ্ছে ভবিতব্যের পথে,
ছুঁড়ে দিচ্ছে উড়ো খইয়ের
মত পুরোনো প্রতিশ্রুতি!
যেমন আমার ছেঁড়া শাড়ির পাড়ে
ফিকে হয়ে আসা আলতার দাগ।
চিতা জ্বলে উঠলে নির্জন সন্ধ্যের
গলিপথে আমি কুমিরডাঙা
খেলা শুরু করি। জীবনকে একহাতে
অনিবার্য ধরে রেখে ছুঁয়ে আসি
মৃত্যুর লেলিহান শিখা।
তর্পণের জলে নদীর বুকে বৈধব্যের
মতো জোৎস্না ফুটে ওঠে,
তুমি বলেছিলে, আমাদের
খেলাঘর আরো বিস্তৃত হয়ে যাবে
নদীর এপার থেকে ওপারে।
-
রাত ভেঙে যায় টুকরো কাঁচে,
নিঃস্ব আকাশ, নিভতে থাকে ব্যর্থ তারা,
বন্দী মিছিল মনখারাপের,
ক্লান্ত মুঠোয় জীবন আঁকে ব্যর্থতারা।
-