একদিন ঝরা পাতার কলতান পেরিয়ে শ্যামকাজল দিঘীর পাড়ে আঁচল বিছিয়ে বসবো। অলক্ষ্যের স্নেহে যত্নে লালন করা বেড়াকলমীর উপনিবেশ পেরিয়ে তোমায় দেখতে হলে ডুব দিতে হবে সেই কাজলকালো আয়নায়। অভিমানী আকাশের কানে কানে সে বলে দেবে আমার গোপন কথাটি। টুপটাপ স্বচ্ছ মুক্তোর দল বহুদিন লুকিয়ে রাখা নয়নসায়রে ভেসে আসবে, যে বাতাসীয়া মাদলের বুক জুড়ে চঞ্চল তুমি বয়ে যাও শান্ত স্রোতের মতো, সেখানেই মিশে যাবে তারা।
ভাবি, যে গভীরে থাকো তুমি, ডুব দিলাম সেখানেই। কই? পেলাম না তো তোমায়?
শ্যামকাজলার বুকে শুধুই নিস্তব্ধতা তখন, ঠিকানা খুঁজে না পেয়ে অনেক দূর গিয়েও ফিরে আসা ডাক হরকরার মতোন সেও ফিরছে তোমার কাছে। ভেজা আঁচল পিঠে ফেলে এলো চুল মেলে দিই, কানে গোঁজা বেড়াকলমীর ইতিউতি ফিসফাস শোনা যায়। ফিরে আসি একা একা, এক বিষণ্ণ আলো তখন ঘিরে ধরছে আমায়, যে আলোতে তুমি বাঁশির সুর বুনে নাও।-
#শহর
আর মনখারাপ হয়না আমার
আর ভাবিনা আমি আকাশ-কুসুম ,
এ শহরের গলিতে গলিতে ঘুরে বেড়াই আমি
দেখি জীবনের কত বিচিত্র রূপ ৷
মোমের আলোয় মৌন হওয়া এ শহর ,
বুঝি গ্রাস করে ফেলেছিল সেদিন ,
দাড়ি আর পৈতের ঠুনকো ঠোকাঠুকি ;
যেদিন দুপুরের উঠোনে একরত্তি শিশু
বুঝতে পেরেছিল নারী হওয়ার আসল মানে ,
ওইদিনই বুঝি সাধুর মৃতদেহ ভেসেছিল উজানে ৷
না, এর পরেও মনখারাপ হয়না আমার ,
যখন দেখি ঘরের মেয়ের আহ্বানে
কোমর বেঁধে কাজ করি আমরা সবাই ;
বিগতযৌবনা অট্টালিকার হাহাকার ,
য্খন বদলে দেয় উৎসবের রোশনাই ৷
ইতিহাসের সাথে সই পাতানো গোপন গল্পেরা
মাঝেমাঝে কিংবদন্তি হয়ে ওঠে ,
মাঝেমাঝে তাই শুধু স্নেহের ছোঁয়ায়
তীব্ৰ গরমেও এ শহরে বসন্ত ফোটে ৷
আগুনের আঁচে নীল হওয়া এ শহর
বুঝিয়ে দেবে ভালবাসার মানে ,
এ শহর তোমার আমার নাকি আমার তোমার
ভাগীরথীর বরপুত্রই খুঁজে নেবে !
-
ঝরা পাতার খুশিরা সব তোমার নামে
বিকেল শেষের আলোরা শুধু তোমায় ডাকে
আলতো নজরের হাসিরা খুব বেখেয়াল যখন
তুমি আসবে বলে তাই এসেছ কখন?
কাদা মাখা মাঠে তোর দুরন্ত দাপাদাপি
পড়ন্ত দুপুরে সেদিন তুই আমি পাশাপাশি
'তুমি' থেকে 'তুই' হয়েছিস কোন স্বপ্নের মাঝে
অঙ্ক খাতার ভুলেরা তখন রামধনু আঁকে
আমি তো রোজ রোজ তোর মায়ায় জড়াই
তোর যত আবদার আর হাসি- খুনসুটি
এই ভাবেই তো তুই আছিস আর আছি আমি-
আয় না, চল ফিরে যাই একবার
অচেনা হাওয়াদের রাত পারাবারে
যদি ছুঁয়ে দেখিস একবার
ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত তবু উষ্ণ এ কপালে
মনে করে দেখ একবার
পাশাপাশি হাঁটার মরীচিকা পথে
বুকের ভিতরে খুঁজে দেখ একবার
সেখানে কাউকে রেখেছিস কি যত্নে?-
নদীর পাড় ভাঙে,
আঁকড়ে থাকতে চাওয়া মাটির শেষ কণাটুকু ভেসে যায়।
প্রবল কাকুতি মিনতি ব্যার্থ হয়ে যায় নির্মম জলোচ্ছাসে।
একদিন ফের ভোর হয়।
ঝড়ের পর পাখি যেমন বাসা বাঁধে,
অমনি করেই নদী বুকে করে বয়ে আনে
কবে কোন স্রোতে ডুবে যাওয়া গাঁয়ের মাটি।
ঘাসে ঘাসে একদিন রোদ্দুর খেলে,
তুলসীতলায় দীপ জ্বেলে যায় নতুন বিশ্বাসে;
শুধু মৃত সন্তানের ডানায় চোখ ঢেকে পাখি উড়ে যায়।
একলা পড়ে থাকে তার নতুন বাসাখানি।
-
শ্রাবণের পরাগ ছুঁয়ে বিষণ্ণ মেঘ,
গুমরোতে থাকা আকাশের কাজল ঘেঁটে
জল নামে, সভ্যতার স্পর্ধার সামনে দাঁড়ায়।
জীবন মৃত্যুর ব্যবধান স্রেফ সাদা একটা পলিথিন
যাবতীয় কাতরতা ঝেড়ে ফেলে মিশে যায় অনন্তে,
কঠিনতম পাথরেও তখন বর্ষা ঘনিয়ে আসে।
শ্রাবণ মুখ ফিরিয়ে নেয়, জীবনের গন্ধ দ্রুত মিলিয়ে যায়।
শ্রাবণ ভালো নেই।
আজ কেউ ভালো নেই।
-
আবহমানের গাঢ় চোখের নীল
স্মৃতিভ্রষ্টের মত ছড়িয়ে ছিটিয়ে ;
মহাকাশের অগুন্তি কক্ষপথে ফিরে ফিরে
আবছা ঠিকানার শেষ রেখা মুছে সে গিয়েছে চলে।-
বরফগলা সেই চঞ্চল স্রোতস্বিনী শুধু ক্ষয়ে যাচ্ছে অকারণেই... নির্বাক, হিমশীতল পাথরের গায়ে যতো খেলার আঁচড়, তার গভীর ত্বকে শৈবাল বুনে চলেছে ক্ষতের ছাপ... আগুনরঙা বসন্তের চিরবিদায় উপলক্ষে আনন্দোচ্ছাসে হয়তো অন্তিম বারের মত প্লাবিত হবে স্রোতস্বিনী... কখনো কখনো মৃত্যু বিচ্ছেদের নয়, শোকের নয়, মুক্তির উদার আকাশ হয়ে নেমে আসে যেখানে স্রোতের ঢেউ গুণে গুণে কেউ প্রতি মুহূর্তে তার গতিপথ রুদ্ধ করে দেয় না। সেটিই তো আসলে বহমানতা, জীবনের মত জীবন।
-
Eventually everything goes away. What remains is only you and yourself. Love and embrace yourself in every situation and train hardar to stay calm and composed, no matter what loss you face.
-
সাবর্ণদীঘির নিটোল জল রাতের মতো শান্ত,
এককালে পদ্ম ফুটে ভরে থাকতো
ভরা সংসার তার, যৌবনের বাঁধন ছিঁড়ে
ভাসিয়ে দিয়ে যেতো দুই কূল ;
অভিমান বাষ্পের মুকুল হতে কয়েকখানি শালুক
লাজুক মুখে জানিয়ে দিতো, মেঘ কেটে গেছে।
বিস্মৃতির পাতায় পাতায় ভাঙনের ছাপ,
কড়িকাঠে বুনে গেছে সময় তার বার্ধক্যের কাল,
সপ্তমীর ফোঁটা ঝুলন্ত দরজার মাথায় ক্রমে ক্রমে অস্পষ্ট হয়ে গেছে, কিন্তু মুছে যায়নি করুণা করে।
শূন্য দালানের বুকে কত আল্পনার খেলা,
সিঁদুর ছোপে, ঢাকের বাদ্যিতে, ধোঁয়ার মধ্যে মায়ের সেই মুখ, তলিয়ে গেলো সাবর্ণের বিশাল বুকে ।
বিষণ্ণ মুখে সেদিন শরৎ ফিরলো মায়ের কাছে।
এখনও কাশবনে হয়তো দেখা যায় দুরন্ত এক বালিকা,
হাত দুটিতে সদ্য ফোটা পদ্ম, মুখে তার নিষ্পাপ হাসি ;
মায়ের আপন দেশে ফিরে শত পদ্মের উপাচারে মুড়ে,
দু চোখে কান্না নেমে আসে, অকালে কলি ঝরে পড়ে।
আর পদ্ম ফোটেনি কোনোদিন, সাবর্ণের বুক জুড়ে শুধু হাহাকার,
নিস্তরঙ্গ জলে কোনো তরী এসে লাগেনি, শঙ্খ বাজেনি।
দেবীপক্ষ ছিল, দেবীর অকাল বিসর্জন দেবী মেনে নেননি।
-