তুমি ভীষণ মেঘলা দিনে
একমুঠো রোদের পরিচিতি
হাতের রেখায় নেইকো কিছুই
আঁচলে কত ঝড়ের টানা ইতি!
তোমার রুক্ষ ভূমির বুকে
ক্ষয়ে যাওয়া শব্দ দিয়ে লেখা
ছোটো-ছোটো নুড়ির গায়ে
দীর্ঘ কোনো নদীর রুপরেখা।
তোমার গোপন ষড়যন্ত্রে
অন্ধকার যুগের হয় খুন
তুমি আঁধার রাতের প্রথম অপরাধি
অঙ্কুরিত আলোর কোনো ভ্রুণ।-
কত পূর্ণিমা ফিরে ফিরে এলো
সেই বাঁশি আর বাজলো না
গাঢ় নীল শাড়ী পরে ঘুঙুর পায়ে
বিরহের স্রোতে বয়ে চলে যমুনা।
হাটে, পাড়ায় কত গুঞ্জন ওঠে
কানে কানে বদনাম হয় আমদানি
দেহে, মনে জড়িয়ে তোমায়
যুগে যুগে একা সে কলঙ্কিনী।
কদমের নীচে আজও দীপ জলে
নিঝুম প্রহর ছুঁয়ে বিরহের সীমানা
সাগরের মাঝে আজ রাজ্য তোমার
তার বুকে শুধু নীল-নীল যমুনা।-
তোমর মুখে এ-ই সূর্যমুখীর ভাষা
রোদে-রোদে হয়ে ছিল কাব্যিক
সেই যে সেদিন সমুদ্রে তুমি গেলে
ফিরবে না বলে বলোনি ত নাবিক?
তারারা ঠিক জানে তোমার খবর
চুপ রয়েছে বললো না আর কেউ
আলো জ্বেলে বসে-বসে শুনি
শেষ সীমনায় আঘাত আনে ঢেউ।
কোনো জন্মে আবার হলে এক
দলিলে নয় জন্মান্তর চুক্তি হবে মুখে
তুমি কাছে টানার নতুন ভাষা লিখো
আমি বিলীন হবো মহাসাগরীয় সুখে।-
বহুদিন দেখা হয়নি আমাদের
মাঝখানে বয়ে চলে সাঁকো-হীন নদী
ওপারের দেওয়ালে আঁকা অভিমান
শ্রাবণের মেঘ নেমে মুছে দিত যদি!
তবে করে নিতাম আরও বহুযুগ
এক-পথে চলার কোনো বীমা
লিখে রাখা না-পাওয়ার দলিলে
ছাড়াতাম স্বপ্নের গভীরতম সীমা।
বহুদিন দেখা হয়নি আমাদের
কতযুগ আলো নেই এ ঘর-দোর
সমুদ্র হয়ে জেগে রয় আঁধারে
কভু যদি মৃদু আলোতে আসে ভোর!
তবে আদুরে প্রান্তরে ঝিনুকের মতো
ভেঙে দিয়ে সব কঠোরতা
খোলসের ভেতরে আজীবন জ্বালাব
নরম আলোর সুগভীর আত্মীয়তা।-
দরজা, জানলা, দেওয়াল জুড়ে
ক'দিন ছিলে আপন হয়ে তুমি?
তিল-তিল করে গড়া ঘরে
ভীত নড়েছে এ-ই তো কাঁপে ভূমি।
কাঁধ দিয়েছি শিরায় রক্ত চেপে
তীব্র জ্বালা সয়ে বুকের ভেতর।
মেঝেতে দেয় ভাগ্য হামাগুড়ি
দু-হাত দিয়ে আটকাবে কি ঘর?
বিকট শব্দে উল্টালো সবকিছু
ধূলায় ঢাকলো দিগন্তের ঐ রাঙা।
এখন মিটমিটিয়ে চেয়ে থাকি দূরে
এ-ই বুকে আজ সবই পাঁজর ভাঙা।-
ভেতর ভেতর কেঁদে চলে যায়
কার আপন এ-ই পথ ধরি
নদীর বুকে তখন শেষ খেয়া দেয়
টিমটিমে আলো জ্বালা তরী।-
জানিনা কোন যুগে জেগেছিলে তুমি
তোমার অমর-কথা লিখে ছিল কারা?
কিভাবে ডাকলে তুমি জাগবে বলো?
আমি বলছি, তোমার ভূমিতে এক পরিজন-হারা।-
সন্ধ্যার মুখে মেঘ নেমে আসে
মুছে দেয় সব গন্ডির রেখা
কিছু যেন বলতে চেয়ে নীরবে
এদিক-ওদিক নড়ে মোমবাতি শিখা।
আলোহীন হয় এ-ই প্রান্তর
বুকে খেলে যায় বিদ্যুতের ঝলকানি
তছনছ করে দেয় সাজানো যা-কিছু
চারদেয়ালের মাঝে ওঠে নীলঘূর্ণী।-
টেনে টেনে মেঘ এনেছো শুধু
সামলেছি নৌকা দু-চোখ বুঁজে
জানি ডুবে যাব তবু দু-চোখ
এক ঝিলিকের মতো রোদ খোঁজে।
দুমড়ে-মুচড়ে গেলুৃম কতবার
বিনা-অপরাধে শুধু চড়ালে শূলে
তবুও চেয়েছি হতে কাছের মানুষ
তুমি আঁচলে শুধু ঝড় পুষলে।
এর দায় নিতে হবে তোমাকেই
দিগন্তের আকাশে প্রলয়ের আভা
তুমি পুরেছো রোজ পাথর কেটে-কেটে
শান্ত পাহাড় বুকে ধ্বংসের লাভা।-
ধর্মের বিষে বিষিয়ে গেছে সমাজ
ঘর লুটে ওরা ভীষণ কলরবে।
ডুগডুগি আর ভস্মমাখা গায়ে
কেউ কি আছো নীলকন্ঠ হবে?-