দরজা, জানলা, দেওয়াল জুড়ে
ক'দিন ছিলে আপন হয়ে তুমি?
তিল-তিল করে গড়া ঘরে
ভীত নড়েছে এ-ই তো কাঁপে ভূমি।
কাঁধ দিয়েছি শিরায় রক্ত চেপে
তীব্র জ্বালা সয়ে বুকের ভেতর।
মেঝেতে দেয় ভাগ্য হামাগুড়ি
দু-হাত দিয়ে আটকাবে কি ঘর?
বিকট শব্দে উল্টালো সবকিছু
ধূলায় ঢাকলো দিগন্তের ঐ রাঙা।
এখন মিটমিটিয়ে চেয়ে থাকি দূরে
এ-ই বুকে আজ সবই পাঁজর ভাঙা।-
ভেতর ভেতর কেঁদে চলে যায়
কার আপন এ-ই পথ ধরি
নদীর বুকে তখন শেষ খেয়া দেয়
টিমটিমে আলো জ্বালা তরী।-
জানিনা কোন যুগে জেগেছিলে তুমি
তোমার অমর-কথা লিখে ছিল কারা?
কিভাবে ডাকলে তুমি জাগবে বলো?
আমি বলছি, তোমার ভূমিতে এক পরিজন-হারা।-
সন্ধ্যার মুখে মেঘ নেমে আসে
মুছে দেয় সব গন্ডির রেখা
কিছু যেন বলতে চেয়ে নীরবে
এদিক-ওদিক নড়ে মোমবাতি শিখা।
আলোহীন হয় এ-ই প্রান্তর
বুকে খেলে যায় বিদ্যুতের ঝলকানি
তছনছ করে দেয় সাজানো যা-কিছু
চারদেয়ালের মাঝে ওঠে নীলঘূর্ণী।-
টেনে টেনে মেঘ এনেছো শুধু
সামলেছি নৌকা দু-চোখ বুঁজে
জানি ডুবে যাব তবু দু-চোখ
এক ঝিলিকের মতো রোদ খোঁজে।
দুমড়ে-মুচড়ে গেলুৃম কতবার
বিনা-অপরাধে শুধু চড়ালে শূলে
তবুও চেয়েছি হতে কাছের মানুষ
তুমি আঁচলে শুধু ঝড় পুষলে।
এর দায় নিতে হবে তোমাকেই
দিগন্তের আকাশে প্রলয়ের আভা
তুমি পুরেছো রোজ পাথর কেটে-কেটে
শান্ত পাহাড় বুকে ধ্বংসের লাভা।-
ধর্মের বিষে বিষিয়ে গেছে সমাজ
ঘর লুটে ওরা ভীষণ কলরবে।
ডুগডুগি আর ভস্মমাখা গায়ে
কেউ কি আছো নীলকন্ঠ হবে?-
আমিও চাই, মেঘও চাই
তুমি আর; কার প্রিয়?
বললো পাহাড় কানে কানে
সে শুধু দূর-দিগন্তের আত্মীয়।-
মেঘের কাছে পাড়লাম কত কথা
ভিজবো বলে নিজের ইচ্ছেমতো
সময় নিয়ে সায় দিলো সে ভেবে
ভেসে-ভেসে বেড়িয়ে অবিরত।
কত বিকেল এমনই করে কাটে
হাত দিয়ে ছুঁই পাখির মতো দুল
কালবৈশাখী-খোঁপায় বেঁধে-দি
লক্ষ-কোটি পাহাড়ি বনফুল।
গ্রহ-নক্ষত্রের স্থান দেখে সেদিন
সারা হতে ঘরের আয়োজন
আড়ালে দেখি বলছে কথা মেঘ
কাকে যেন ভীষণ প্রয়োজন!
কত আবদার কত প্রতিশ্রুতি
সব বৃথা হয়; না হও সেই তুমি
মেঘবিহীন এ-ই আকাশ তবু
বানভাসি হয় অবুঝ মনভূমি।-
রঙিন ডানা হাওয়ায় দিও মিলে
মনের ঘরে বাড়িও যাওয়া-আসা
যত্নে দেবো বেঁধে পায়ের তোড়ায়
অনন্তকাল সাথে চলার ভাষা।
চুড়ির নকশায় মন-ময়ূরী এঁকে
ভিজতে চাওয়ার বর্ষা নামি-ও
দু-এক কথা মুখ ফিরিয়ে বলে
মেঘের শব্দে হটাৎ ছুঁয়ে দিও।
অভিমানের পাথর ভেঙে দিয়ে
ফিরে এসে ডেকো অবেলায়
গুঁড়ো-গুঁড়ো কথার ঝুড়ি খুলে
বসি চলো আবার ঝর্ণাতলায়।-
কাঁচা কাঠের ধোঁয়ায় জ্বলে চোখ
আবছা ছবির মতো উঠোন বাড়ি
হাতছানি দেয় যাযাবরের দেশ
ঘরের সাথে চাইছি এবার আড়ি।
মায়ার সুতো কাটতে লাগে সময়
পেছনে ফিরে তাকায় শুধু ঘুড়ি
ইচ্ছে নামে দু-গাল বেয়ে কত
মনে হয় এ-আকাশে আরেকটু উড়ি।
দূরের ঐ তারার দিকে চেয়ে
রাত বেড়েছে কাঁটায় অনেকক্ষণ
ছাইয়ের পাহাড় একটু করে বাড়ে
নিঃশব্দে পুড়ছে একা মন।-