ফুলদানি
স্বপ্না মজুমদার
আজ আমার জন্মদিন । আমি চল্লিশ বছরে পড়েছি। এর আগে কোনদিন সেইভাবে আমার জন্মদিন পালন করা হয়নি । আজ আমি স্বচ্ছল।
বিশেষ অতিথিরা এসেছেন। আলাপচারিতা.......
এবার কেক্ কাটার জন্য তৈরি হলাম। তখন ১৮ বছরের একটি মেয়ে ফুলদানি থেকে একটি গোলাপ নিয়ে , আমার দিকে বাড়িয়ে আমাকে মা বলে ডাকে । আমার চোখে মুখে আনন্দের অশ্রুধারা। আমি একসময় আমার সদ্য সন্তান কে অন্য মায়ের কোলে তুলে দিয়েছিলাম । আমার শুন্য কোল ভরিয়ে দিতে আমার জীবনের
সেরা উপহার আমাকে ফিরিয়ে দেয় , আমার সব চাইতে কাছের মানুষ, আমার স্বামী।

-

আশা
স্বপ্না মজুমদার
আমি ট্রেনে চেপে যাবার সময় একমনে আকাশের দিকে চেয়ে তারাদের দেখছি । হঠাৎ চারিদিক মেঘলা, দমকা হাওয়ায় পৃথিবীটা যেনো তাসের ঘরের মতন ওলট পালট হয়ে গেলো । কখন যেনো ট্রেনটি গিয়ে পৌঁছায় এক অজানা দেশে । রাত্রিবেলা দেখি পাহাড়ের গায়ে হাজারো তারারা আমার চোখের জলের প্রতিচ্ছবি হয়ে আয়নার মতন চমকাচ্ছে । অন্ধকারের মধ্যে আলো যদি এত সুন্দর বিকরণ দিতে পারে , তবে আমার জীবনে নয় কেনো ?
হঠাৎ যেনো দেখছি পুষ্পের মতন তুষার বৃষ্টি হচ্ছে । কেউ যেনো হাতছানি দিচ্ছে আমায় ।
আমার ও সাধ হোলো বাঁচার , চিরকুমারের মুখটি মনে করে ।

-

অনেক অসমাপ্ত কথা- যা মনের গহীনে ঝিনুকে মোড়ানো। যা কেবলই শিশিরে ভেজা।
স্বপ্না মজুমদার

-

আশা
স্বপ্না মজুমদার
আক্ষেপ আজ আমার ঝরে পড়ছে ভাবনার তুষারপাত।
অনেক অলীক স্বপ্ন ছিল চোখে , সব ছেড়ে এসেছিলাম নতুন কদম্বমালার খোঁজে।
জীবন আমার হাস্যময় , গ্রীষ্মের তীর্যক দাবদাহে আমার অন্তর আত্মা আজ ধূসর বালি।
আজ চোখ খুলে দেখি জীবনের অধ্যায় ভাঁটা , জীবন আমার অশ্রুধারাময় চোরাবালি।
চলার পথে জীবন বড়ই অদ্ভুত , জীর্ণ কাটা বিস্তারিত ।
আজ সব আমার ইতিহাস , চোখে অলীক স্বপ্ন।
জীবনকে রাঙিয়ে তোলো রামধনু রঙে , নতুন জাগরণে।

-

স্নেহ
স্বপ্না মজুমদার
আমি আমার মা বাবার খুব আদরের একটি মাত্র
সন্তান । সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আমার বায়নার
শেষ ছিল না । রোজকার মতন সকাল বেলা ,মা
বাবাকে ডাকছি , কিন্তু কেউ কোন সাড়া দিচ্ছে না । রোজকার মতন আমি কলেজে যাব । খেতে
বসেছি , সব যেন বেস্বাদ । তারাতারিতে এত ঘেমে যাচ্ছি যে , পাখার হাওয়া পর্যন্ত গায়ে লাগছে না । আমি রোজকার মতন ফিরে এসে দেখি , আমার জন্য গেটে কুকুরটি অপেক্ষা করছে । ঘরে গিয়ে দেখি , মা , বাবা দুটি আলাদা
ঘরে কান্না করছে । দুজন দুজনের থেকে অনেক দূরে । কারণ সন্তান হারাবার শোকের চেয়ে বড় শোক পৃথিবীতে আর কিছু হয় না । কারণ আজ
আমি মা , বাবার থেকে অনেক দূরে । আজ আমি দেওয়ালের ছবি ।

-

স্নেহ
স্বপ্না মজুমদার
আমি আমার মা বাবার খুব আদরের একটি মাত্র
সন্তান । সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আমার বায়নার
শেষ ছিল না । রোজকার মতন সকাল বেলা ,মা
বাবাকে ডাকছি , কিন্তু কেউ কোন সাড়া দিচ্ছে না । রোজকার মতন আমি কলেজে যাব । খেতে
বসেছি , সব যেন বেস্বাদ । তারাতারিতে এত ঘেমে যাচ্ছি যে , পাখার হাওয়া পর্যন্ত গায়ে লাগছে না । আমি রোজকার মতন ফিরে এসে দেখি , আমার জন্য গেটে কুকুরটি অপেক্ষা করছে । ঘরে গিয়ে দেখি , মা , বাবা দুটি আলাদা
ঘরে কান্না করছে । দুজন দুজনের থেকে অনেক দূরে । কারণ সন্তান হারাবার শোকের চেয়ে বড় শোক পৃথিবীতে আর কিছু হয় না । কারণ আজ
আমি মা , বাবার থেকে অনেক দূরে । আজ আমি দেওয়ালের ছবি ।

-

মমতা
স্বপ্না মজুমদার
" মা ".... আমার প্রথম অনুভূতি আমার নারীর পদ্মপাকে তোমার সৃষ্টি।
শরীরের শত কষ্ট যন্ত্রণা ভুলে মনে আমার আনন্দের পেখম মেলে ছিল তোমার ভূমিষ্ট হবার কামনায়।
হাজার তারার মাঝে একটি ধ্রুবতারা হয়ে যেদিন এসেছিলে আমার কোল আলো করে , পৃথিবীর সর্বসুখ এসেছিল আমার দোরে।
সব ভুলে হয়েছিলাম মগ্ন , তোমার যত্নের তুলিকায়।
ছোট্ট তোমার হাত প্রথম যেদিন ধরেছিল আমার আঙ্গুলি, সেদিন বুঝেছিলাম আমার চির সুখ দুঃখের সখি হবে তুমি ।
আদো আদো মুখে প্রথম যেদিন শুনেছিলাম তোমার মুখের মা ডাক , সেটা ছিল আমার জীবনের সেরা উপহার।
মা , শব্দের মিষ্টতা শরৎ - এর কাশফুল , সবার ওপর মাতৃত্বের বন্ধনময়তার আঁচল ।

-

অবলম্বন
স্বপ্না মজুমদার
আমি এক ভ্যালেন্টাইনস দিনে বাসস্ট্যান্ডে দাড়িয়ে আছি। একের পর এক বাস আমার চোখের সামনে দিয়ে চলে যাচ্ছে। আমি শুধু তাকিয়েই আছি - কারণ সে আজ বিলাস বহুল জীবন যাপন নিয়ে ব্যাস্ত। আজ আর আমার কথা তার মনে পরে না। বিদেশে পড়াশুনা করতে গিয়ে সেখানেই সেটেল হয়েছে। শুধু শুধু তার কথা মনে করে আমি চোখের জল ফেলে যাই। আমার শুধু দিন যায়, দিন আসে। শুধু স্মৃতিটাই আমি বয়ে বেড়াই। কারণ এক সময় আমি আমার একমাত্র ছেলেকে স্কুলে যাবার জন্য এই বাসস্ট্যান্ডে ছাড়তে আসতাম ।

-

স্ত্রী - হ্যালো , ওগো শুনছো
স্বামী- হ্যাঁ , বলো
স্ত্রী - আজ আমার শরীর টা ভালো লাগছে না , আজ আমি রান্না বান্না কিচ্ছু করতে পারছি না , তুমি তাড়াতাড়ি বাড়িতে চলে এসো ।
স্বামী - হ্যাঁ , তা অফিস কে করবে
স্ত্রী- অনেক তো অফিস কাছারি করলে , এবার আমার দিকে একটু নজর দাও ।
স্বামী - তো খাবো কি ?
স্ত্রী - তুমি আমি সেই পুরোনো দিনে ফিরে গিয়ে পার্কে বসে দু টাকার বাদাম ভাজা খাবো ।

-

বিদায় বেলা
স্বপ্না মজুমদার
একদিন বৃষ্টি মুখর দিনে বিকেলবেলা আমি আমার বাড়ীর বারান্দায় একমগ্ন হয়ে বসে আছি। সামনে চায়ের পেয়ালা। দৃষ্টি আমার বাহির বিভোর। অপেক্ষা আমার কখন আসবে, দুশ্চিন্তা আমায় ঘিরে ধরেছে । যানজটে বৃষ্টির আবহাওয়ায় আটকে গেলো কিনা। মনে নানা প্রশ্নের ঢেউ। বৃষ্টিটা ও একটু থেমে এসেছে। হঠাৎ ঘড়ির ঘণ্টাটি বেজে উঠলো । আমার চোখ ওদিকে যেতে ক্যালেন্ডারের ওপর নজর পড়ল ।দু চোখ বেয়ে আমার অশ্রুর বন্যাধারা । মনে পড়ল ,আমায় ছেড়ে তো অনেক অনেক দূরে চলে গেছ । আর কোনোদিন ও তুমি ফিরে আসবে না। আজ ,...... আজ আমার বাবার মৃত্যু বার্ষিকী।
রয়ে গেলাম শুধু আমি.....লিপির বারান্দায়।

-