মানুষ মানুষের জন্য।
তাই তো আজ সবাই মিলে
অন্তঃসত্ত্বা হাতিটিকে ওভাবে মারলে তাইনা?
নিজে বাঁচবে বলে?
খুব ভালো লাগলো বলো তোমাদের
ঐ অবলা প্রাণীটাকে ওভাবে মেরে?
আরে মারা নিয়ে কথা তো?
বিষ দিলেই তো হতো।
অত কষ্ট কেন দিলে?
আর শিক্ষা নিয়ে বলতে গেলে -
না বাবা, আমার অতো যোগ্যতা নেই।
যাই হোক, যে বাঁচার জন্য এতকিছু
সেইভাবে বাঁচতে পেরেছো তো তাহলে এখন?
করোনা চলে গেছে তো?
নিসর্গ পথ পরিবর্তন করেছে তো?
এত কথা বলছি-
ভাবছ বুঝি আমি পশুপ্রেমী?
না না।
একদমই না।
আসলে ভাবছি,
ঐ স্বার্থান্বেষী পঙ্গপাল, মানে যারা আসল ক্ষতি করছে সমাজের
তাদের জন্য কি ব্যবস্থা নিলে?-
♦ I am much more expensive than I show off.
"বাবা, এবার আমায় রথের মেলা থেকে ভেঁপু কিনে দেবে না?"
ছেলের কথা শুনে চোখের জল আর বাঁধ মানে না নিপুণ এর।
প্রতিবছর জগন্নাথের মূর্তি গড়ার টাকায় বেশ ক'দিন ভালো করে খাওয়া হতো তাদের। তারপর বিকেল হলে মা-বাবা আর ছেলে মিলে রথের মেলায় যেত, পাপড় খেত, জিলিপি খেত আর খুব ঘুরে ভেঁপু কিনে বাজাতে বাজাতে বাড়ি ফিরত। আবার কখনো কখনো মেলাতেও ঘুগনির দোকান দিত আয়ের পরিমাণ একটু বাড়িয়ে নিতে। সেদিন তো আর ছোট নিপুণের আনন্দের শেষ থাকতো না! শুধু মেলায় ঘোরো আর খেলো।
কিন্তু হায়! অতিমারীর আবহে কোথায় রথের মেলা আর কোথায়-ই বা ভেঁপু! খাওয়াই তো জুটবেনা আজ তাদের। নিপুণ ভগবানকে ডেকে যায় একমনে।
এমন সময় পাড়ার ক্লাব থেকে কিছু ছেলে আসে। সঙ্গে কিছু ফল, সব্জি আর অন্ন। নিপুণের ছেলেকে কাছে ডেকে জিলিপি খাওয়ায় আর বলে, "রথের মেলা এবছর হয়নি ঠিক কিন্তু যাদের জন্য প্রতিবছর আমরা উৎসবের আনন্দে মেতে উঠি, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের উদ্দেশ্যে এই ন্যূনতম আয়োজন। আশা করি, গ্রহণ করবেন।"
সকলে বিদায় নিলে নিপুণ আকাশের দিকে তাকিয়ে ভগবানকে ধন্যবাদ দেয়। ভেঁপু না হোক, পেটের জ্বালা তো মিটবে অন্ততঃ!
তাদের মতো মানুষদের বিপন্নতা থেকে উদ্ধারকারী এই সমাজসেবকরাই তাই
ভগবানের দূত তার কাছে।।-
খেয়ালী খাম, রোদেলা আহ্বান
আর একছুটে কাজ পালানোর আলতো অসুখ,
তোর নামে ছুঁয়ে দেখা অভিমানী খরস্রোতা
আর হিমেল পরশে অনুভবে আদুরে মুহূর্তেরা,
মুক্ত বিহঙ্গের ডানায় পাহাড় খুঁজে নেয় একলা থাকার সুখ।
কল্পনাদের খামখেয়ালীপনার সাক্ষী থাকুক রডোডেনড্রন...-
"দেখবি না চাইলেও একদিন তোর জীবনে আমার জায়গাটা তমসাকে দিয়ে দিতে বাধ্য হবি তুই", শ্রেয়ার সেদিনের এই কথাকে গুরুত্ব না দিলেও আজ এটাই ধ্রুবর জীবনের চরমতম সত্য।
হসপিটালে ক্রনিক কিডনি ডিজিজে আক্রান্ত, চিকিৎসাধীন তমসার ইউনিটের করিডরে অবসন্ন ধ্রুবকে বসে থাকতে দেখে কাছে গিয়ে আগলাতে না পারার অসহায়তা সামলে নিয়ে নিঃশব্দে ডক্টরের চেম্বারে প্রবেশ করে শ্রেয়া।
পরের দিন সকালে কর্তব্যরত চিকিৎসক ধ্রুবকে ডেকে বলেন, "শেষমূহুর্তে একজন তার সদ্যমৃতা মায়ের দুটি কিডনিই আপনার স্ত্রীকে দান করে তার জীবনরক্ষা করেছেন
আর পরিচয় হিসেবে বলতে বলেছেন - শেষ রাতের অতিথি।"-
শেয়ালের ডাকে পলাশবনে নামলে আঁধার,
ক্লান্ত হরিণীর কোমলতায় বিলাসী ক্ষত;
নিত্যদিনের কর্মব্যস্ততা সামলে যখন ফেরে আলো,
শহুরে হায়নার হাসি, পুনরাবৃত্তি...-
সারাদিন একাজ, ওকাজ,
ওর এই দরকার আর তার সেই দরকার,
ছুটেই চলেছো দায়িত্বের অটল পাহাড়কে কেন্দ্র করে
কর্তব্য পালনের কক্ষপথে।
বুঝি মহাকাল তার রথের গতি অবিরাম রাখার
গুরুদায়িত্ব তোমায় দিয়েছেন!
তবু, এ নাগরিক সভ্যতার নিয়ম মেনে
রাতের শেষ প্রহরে
একটুকু বিশ্রাম চেয়ে
অজানা কোনো এক আব্দার মিটিয়ে
খুলে ফেলো লেখালিখির সেই ছন্নছাড়া ফ্যাকাশে খাতাটা।
মিল খুঁজে পাও,
নিজের সাথে, জীবনের সাথে
আর অনুভবে
শব্দের অভিমান—
একটু ভেবে অভিযোগটা করেই ফেলো
"দুঃখবিলাসীনি হতে চাস তুই।"
তোমার সেই অপরাধী তখন একাকিত্বের কারাগারের একচিলতে জানালা দিয়ে
আকাশের তারা গোনে—
কথারাও যে আজ অপেক্ষা করতে করতে ক্লান্ত,
নেতিয়ে পড়েছে তোমার পড়ার টেবিলের এককোণে রাখা ঐ গোলাপটার মতো—
অবহেলার ফলশ্রুতি নাকি সত্যি দুঃখবিলাস?-
প্রথম পরিণয়ে মানসিক অশান্তির থেকে বেরিয়ে আসতে বিবাহবিচ্ছেদ আর এবার অপঘাতে সিঁথির সিঁদুর হারানো আত্মজা, সদ্যমৃত স্বামীর পার্থিব অবশেষ দাহ করে এসে দাঁড়াল জনমানবশূন্য নিজের পৈতৃক বাড়িতে। কোলের শিশুটি কাঁদতে কাঁদতে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে ততক্ষণে।
দীর্ঘ এক নিঃশ্বাসে আত্মজা নিজেকে মনে করিয়ে দেয়, দুর্ঘটনা যে কারো জীবনে যেকোনো মুহূর্তে যেকোনোভাবেই ঘটতে পারে আর তাই শশ্মানের চিতার আগুনে সমাজের নিম্ন মানসিকতার যে নির্দশন সে ফেলে এসেছে, তা নিয়ে ভেবে আর নিজেকে কষ্ট দেবে না।
কোলের একরত্তি আত্মজাকে নিয়ে স্বাবলম্বী নতুন এক জীবনযাত্রা শুরু হয় বছর পঁয়ত্রিশের স্কুলশিক্ষিকা আত্মজার, আশ্বিনের আকাশ ভেদ করে শোনা যায় -
"যা দেবী সর্বভূতেষু মাতৃরূপেণ সংস্থিতা,
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ..."।-
উপেক্ষায় অপেক্ষা লুকায়,
অবহেলায় অভিমান;
কপোল বেয়ে নামা নদী যদি নিভৃতে শুকায়,
মূহূর্তেরা রেখে যায় ভালোবাসার বয়ান।।-
।। শ্রাবণ।।
... আমার শহর জুড়ে তখন ভরা শ্রাবণ
বৃষ্টি নেমেছে নীল সিলিং ছাপিয়ে,
ফোঁটায় ফোঁটায় তার রক্তক্ষরণের শব্দ ভেসে আসে
দায়িত্ব, কর্তব্যের ভিড়ে এক প্রেমিক নিজেকে বলি দিয়ে চলেছে,
প্রতিনিয়ত —
সে যে আজও স্বপ্ন দেখে!
দেখে - এই মরা শহরের বুকে কচি কচি দু'পায়ে ছুটে বেড়াবে তার স্বপ্ন।
না, বর্বরতাহীন নিষ্পাপ পৃথিবী সে দিতে পারবে না তাকে,
যেটুকু পারবে - অর্থের বিনিময়ে কেনা সুখ...
( সম্পূর্ণরূপ ক্যাপশনে )-
মৃত্যু
কবিতার শেষ পঙ্কতিতে
কালি-কলমের আলস্যে,
ঐ লাল পলাশের আদরে
আর রজনীগন্ধার আতরে,
বৃষ্টিভেজা আমার পৃথিবীর বুকে
যত্ন জড়ানো তোর সোহাগে,
আরো একবার মৃত্যু হোক তোর নামে,
স্বভাবে...-