হ্যাপিলি এভার আফটার/ ঈশান বন্দ্যোপাধ্যায়
আমরা তো প্রেম ছুঁতে চাই
ক্যারাপোকা আছেই ব্রেনে
আমাদের ভেংচি কেটে
প্রেম যায় দূর ফরেনে
চলে যায় প্রেম আমাদের
গ্রীন কার্ড, বিদেশমাটি
আমাদের ওসব কোথায়
বড়জোর সবুজসাথী
সাইকেলে নায়ক সাজি
নাতা হ্যায় মুঝসে তেরা
রাগী মুখ বন্দী করে
শস্তার ফোন ক্যামেরা
এ ছবি রাখব কোথায়?
মনে মনে পরাই মালা
আমি ঠিক জায়গা পাব
তুমি বেবি ধর্মশালা
আমরা তো প্রেম ছুঁতে চাই
ফ্রাস্টু-ও নাহয় ছোঁব
তুমি ছাড়া দিন কাটে না
রাত যেন কেউটে ছোবল
সে বিষেই জ্বলি ও পুড়ি
প্লেন আঁকি গণেশ পাইন
ছুঁড়েছি দূর আকাশে
ইতি তব ভ্যালেন্টাইন!
-
বালিয়াড়ির কথা মনে পড়ে– বাসস্টপ
ঢেকে গেলে ভালো হত
স্বপ্নে দেখিনি– মালা, অতলা যুবতী
তার ডাক– রাণীকুঠি যাবে এই বাস
কিছুই শুনিনি শুধু বেঁচে থাকা জানালায়, জানালায়
স্বপ্নে দেখিনি– তবু দুখানি টিকিট কিনে ফেলা যায়
-
ভালোবাসা সানগ্লাসে ঢাকা/ ঈশান বন্দ্যোপাধ্যায়
এবার ভাসো, এমন নদী বইছে দ্যাখো শহরমাঝে
কর্ণফুলী জলের কামড়, নাভির গুহায় বাদ্যি বাজে
জলের কথা জলেই যাবে, মিথ্যে জীবন বেগার খাটা
এবার ভাসো, দাও মাখিয়ে আমার দু'চোখ লঙ্কাবাটা
দেখব না আর, অন্ধ হব, ডে-ড্রিমিং-ই আমার দেবী
ছিঁড়ব সটান গন্ডোলা-ঘুম, পর্দাটানা হিংসে কেবিন
বইছে নদী শহরসটান–রেস্তোরাঁ, ব্রিজ, টার্মিনাসে
সে জল বলো, আমার মত এমনি ভালো কে আর বাসে?
-
পলকে ঝুঁকাও, স্ক্রীনশট নাও, কলকাতানীল এই অরণ্য
ক্লদ মোনে, মেঘ, সন্ধে-ইজেল– তোমার জন্য, তোমার জন্য!
ঢেউপ্রেমিকটি মেটিয়াবুরুজ মিঞা
সীগাল উড়ে যায় ঠোঁটে বয়ে ঢাকুরিয়া
দোতলা বাসটি চুপিচুপি ডুব, সমুদ্রে তার নেমন্তন্ন..-
ছুঁই/ ঈশান বন্দ্যোপাধ্যায়
দুঃখ, এ নাও আগলে ধরে রাখো
আলোর খাঁচা, বন্দী বিহ্বল সোনা
আমার সে জন হারিয়ে যাওয়া ধুলো
ডাকতে পিছু কক্ষনো পারবোনা–
দুঃখ আমার ক্লান্ত সেজান ছবি
ঘুমের নিকট– একটি পরীর শিস
আমার যে জন নিষেধ রঙের হাওয়া
পরাই তাকে বিস্মৃতি উষ্ণীষ–
তবুও ফেরে আলেখ্য আনমনা
পথের খোঁপায় দুঃখী চাঁপার গাছে
আমার যত মিলিয়ে যাওয়া রেণু
তোমার কাছে, সকল তোমার কাছে!
-
ব্যথার কথা পুড়িয়ে রাখি, গুঁড়িয়ে রাখি মুঠোর কোণে–
আমার বুকে রোগ বেধেছে তোমার চোখের নির্যাতনে
বুকের মাঝে ধরায় জ্বালা, ওড়ায় হাওয়ায় শূন্য মালা
শব্দভেদী ব্যর্থ বটে, শহর আমার বদ্ধ কালা!
তার কী তাতে মান হয়েছে? দু-এক ভ্রমর গান হয়েছে?
অন্ধ আফিম শূন্যে ছড়াই, কলকাতার এই পদ্মবনে–
দু'হাত বাড়াই আক্ষেপে হায়– কাহার কথা কেইবা শোনে?
এমনি বুকে রোগ বেধেছে নীরবতার নির্যাতনে!
-
বলেছ আগেও, নভেম্বর দৃষ্টিহীন শিশুদের মাস। স্বপ্নের বোহেমিয়ান রেলগাড়ি যে পথে আনাড়ি ছুটে যায় একবগ্গা, সে ক্রিয়াপদ শুধুই পাস্ট পার্টিসিপল্। আমার জামাভরা দুঃখ পুনর্বার, মালিন্যচোখ– ইজেলে বিষাদের ছবি। শ্রাবণে রবীন্দ্রনাথ গেছেন, আশ্বিনে ঠাকুর। বরফে ঢাকা পড়ে আছে আস্ত সুইনহো স্ট্রিট। এখানে তোমার বাড়ি, সাপ-সিঁড়ি খেলেছি কত– জানে বোগেনভিলিয়া মেঘ! তারারা জোনাকি যদি, আমিই মোজার্ট!
তবে দৃষ্টি হোক। এক আঁজলা বৃষ্টি হোক। হাত পাতো, তোমাকে দি আমৃত্যু ব্রেইল-বন্ধন..
-
সিগারেট খেতে খেতে আত্মহত্যার কথা ভেবেছে যেসব দার্শনিক, তাদের হেমন্তকাল নিবিড় ও পর্যাপ্ত। বেদানার সামান্য কটা লাল বীজের মত জামবাটির এককোণে সঙ্গোপনে পড়ে থাকা কোনো গলির আয়নায় মুখ দেখে যে কিশোরী বাইসাইক্ল, তার সামনের ঝুড়িতে কেউ চিঠি রেখেছে যেন। কে পড়বে? এ শহর নিরক্ষর, ঘুম ও যৌনতা বিষয়ক কবিতা শুধু ক্রমান্বয়ে ক্লান্তিহীন ছাপা হয় পাবে পাবে। অথচ, যে রয়ে গেছে অপাংক্তেয় গোধূলিতে মৃত সরোদের মৃদু বাজনার মত, তাকে কেউ পাবে না।
শোনো, ভালোবাসার কথা বোলো না হেমন্তে। হিমের এই টুপ শুধু তোমার। গান্ধর্ব সেজে মেখে নাও দু'কানের মরমিয়া লতিতে, ঠিক ভেসে আসবে মাঠের ওপর দিয়ে অজানা ফিনফিনে বাতাস, যার কোনো ডাকনাম নেই, ছিলনা কক্ষনো..-
কোরাসে একাকী স্বরে/ ঈশান বন্দ্যোপাধ্যায়
দুপুর– যেন নীলাভ রকব্যান্ড, কী গান শুনতে চাও? পারকাশন বাজে পীচরাস্তায় আর স্ফটিকের স্নানঘরে, সেখানে নিজেকে দেখেছ নগ্ন অ্যাফ্রোদিতি– মধুর পরবাস, ক্যান্টিনে তরুণীরা হাততালি দিলো আর বাদামী রোদচশমা ঝুঁকে পড়লো ঈষৎ– চকিত চাহনি চুঁয়ে ক্রমে জল, জল, আরো জল– সাঁতার শিখুন লেখা সাইনবোর্ড ছেয়ে আছে প্রজাপতির সাভানা– গায়ে উঠছে বুকে উঠছে আর মৃদুমন্দ ঝলমলানো ডানার ফিসফিসে, গান ও স্লোগান বেয়ে তুমি ফিরে আসছো বিপ্লবের পায়েচলা পথে, ডাকছো উচ্চগ্রামে ভুলে যাওয়া শ্রাবণের সংকেতে– আমি যাই, আমি যাই..
-
কোয়ান্টাম/ ঈশান বন্দ্যোপাধ্যায়
জন্ম এই শব্দমালা দিল্লির রাজঘাটে
যমুনা কমলা হোক, প্রসারিত ধুধু–
উচ্ছিষ্ট ক্যামেরায় ফাঁদ পেতে
এনট্রপি বেড়ে চলে শুধু
পারি তবু পারিনা কিছুই। জলে শরবন্ধন কার?
কী কোমল প্রিয়তমা স্বর
এলো কি ডিসেম্বর?
তাঁর চোখ বেঁধে তবে নিকষ আরতি
করি, হে গ্রহগর্ভ, হে ছারখার
এইক্ষণে ডাকাতি হলো ডার্ক ম্যাটার।
আছে, নেই, নেই, আছে, ভালোবাসা লঘু এক গ্লাস
তিলোত্তমা ডান্সিং বার–
বেড়াল আছে কি বেঁচে, হে শ্রডিংগার?
-