পুরোনো বই পড়লে পুরোনো প্রেমিকের কথা মনে পড়ে, আর
তখনকার প্রেম মানেই শহরের পাঁজর ভেঙে সেনাসম্রাজ্ঞীর মত
তার স্থিতি, যৌবন, অস্তিত্ব, ইত্যাদিকে কেন্দ্র করে দাপানো, কেবলই
নখের নীচে আগুন লুকিয়ে রাখা, ঠোঁটের নীচে ভাগ করে নেওয়া এলাচ,
আমার মনে হত কোনো খরস্রোতার মতন আমিও সশব্দে পাহাড় থেকে পড়ছি
এক নয়, একশো নয়, অসংখ্যবার, পৃথিবীতে যত কুঁড়ি ফুটে আছে,
যত গান লেখা হয়েছে এযাবৎ, ভিন্ন ভাষায়, ভিন্ন সেতুর উদযাপন
তুমি আমি মিলে যত চুমুতে মিশি, একত্রিত, উপুড় হয়ে শুই, ততবার হয়তো
-
জলোচ্ছ্বাস ছিল বলে আমাদের মত অশান্ত মন
যুগের পর যুগ আড়াল হয়ে ছিল একপ্রকার।
এখন তোমার সমুখে বিবস্ত্র, শব্দহীন,
অগত্যা চোখ নামাই।
ছবি থেকে কুহক
আর লীন, সাদা পার্বত্য আলো এই স্নানঘরে,
সুরে সুরে আসে ইলিয়াডে অনুল্লেখিত চুম্বন
কল খুলো না।
যুদ্ধে প্রস্তাবিত সামান্যটুকু উপহার যদি স্বীকৃতি দাও
সসঙ্কোচ,
এখন তোমার সমুখে বিবস্ত্র, স্তুতিহীন,-
সেসব দিন যে এতটাই সূর্যের মত কমলা ও প্রখর
তোমার আমার কোলে ফুটফুটে শিশু হয়ে ছিল,
আজ বিশ্বাস হয়? কেন যে আমার পোশাক
ঘেটে এই আকাশকে একদিন এত সুনীল লজ্জা
দিয়েছিলে তুমি, জানতে না এতদিন মানুষের সাথে
সহবাস তার; সেও ঠগ, সেও জোচ্চুরি শিখে গেছে।
সেও তোমার আমার একান্ত স্রোত হওয়া ঘুমে
আপত্তিকর ছায়া ফেলে হাসবে। যদি জানতে, এমন
কঠিন এমন পর্বতময় রোগের খোঁপা, আমায়
শত শত ফুলের সবুজদিনে মরে যেতে দিতে?
তুমি, এই বাসস্টপ, এই অদ্ভুতহাসি আলো, কোথায়
লিখে যাব? আজ একত্রিশে চৈত্র, বেলা একটা বেজে
পঁচিশ - পুনর্জন্মের এতটুকুও আশা আমি রাখিনা।-
বাড়ি চাপা পড়ে যায় রোদ,
গাছে লেগে ফেটে যায় আকাশের মাথা
আমি খালি পথঘাট
পায়ে পায়ে জুড়ে দিই,
আমাকে হিংসে করে বুড়ো কলকাতা
এখানে বিকেল হলে ক্ষতি?
সাঁঝ নিয়ে আসে তার কালো ঢেউসারি
তোমাকে জানাতে হবে
এই আলো কবিতা,
তাইতো গড়িয়ে দিই শ্রোতা রেলগাড়ি।
তুমি কেন আড়ালে দাড়াও?
তুমি কেন মেঘেদের দিয়ে দিলে ছাতা
এখুনি ওদের সিঁথি
হেসে দেবে লাল ঠোঁটে,
কথা দাও ভুলবে না। দুটো পান পাতা
মনে মনে দেখেছিলে লাজ,
ঝড় শেখা নথ তার; আঙুলেতে খাঁড়ি
কান যদি পেতে দাও
সুমধুর যে হাওয়া
তোমায় ধরেছে ঘিরে, সেই মেয়েটারই।-
যা চাইনি, যা চাইবো না, সেসবও পেতে হবে
এই যে এত মানুষের ধুলো সাবান জলে কচলে কচলে নিচ্ছি আর
নিত্য তিরিশটা দিন ব্যাগের মধ্যে শাখাপ্রশাখা;
মিছিমিছি জলের বোতল ও ঠোঁট ভেঙে
লাল কাচের ডালিম
আমায় দিচ্ছো
তোমায় দিচ্ছি,
ঈশ্বর তাঁরই তো সব কৃপা
তাই তো আমার হৃদয়ের মাপে তুমি হয়েছিলে
জল, তুমি হয়েছিলে চন্দনজমি
তুমি হয়েছিলে সূর্যের চোখ থেকে
কেড়ে আনা মোহময় পুরুষের ছায়া
তারপর আমি যেই বলেছি নাও আমার সমস্ত অবসাদ
নিয়ে নাও নিস্পৃহা, অন্ধকার
ঈশ্বর এত আলো দিয়েছেন তোমায়
কিছুতেই তোমার দিকে এখন তাকাতে পারি না।-
এই তো, এই বৃষ্টিরই মত সূক্ষ্ম তার বয়স
তার টুকটুকে চিবুক ঘন ঘন নত হতে চায়
যেন তোমার রুক্ষ আলোয় সব
সিন্দুক গলে বারুদ হয়ে যাবে এখুনি ও সে
ভুল করে ঢুকে পড়া ঝঞ্ঝার মত
তছনছ করে দেবে গ্রামের সূর্য ও সবুজ
তাকেই দেখছো?
এই যে পরীদের পায়ে পায়ে কাদা ও মেঘপথ
হইহই করে পেরিয়ে গেছে ভোরবেলা, হাসি
তাদেরও মুক্তোর মত গড়িয়ে পড়েছে পাতায়, ডালে,
ঘাড় নেড়ে উড়ে গেল বকের যৌথ পরিবার
সেই মেঘের ভিতর; দলেবলে
ভিজে গন্ধ এলিয়ে ঢুকে পড়ে জেলেনীরা
আরও দূরে
চোখ বুজে নেয় ফুল, সস্ত্রীক বাতাস,
কতক্ষন তাকে আর
কুমকুম চোখে দেখবে;
সত্যি বলো,
তুমি একটিবারও ডাকাত হতে চাওনি?-
শুনলাম যেন; সমস্ত গান বাতিল করে সেদিন
ভিখিরীর মত মেঘ চেয়েছিলে রাস্তাঘাটে?
ছাউনি, তোয়ালে, আঙ্গুল, সমস্ততেই মেঘ চেয়ে নাকি
সেই কান্ড করে রাখলে যেন মেঘটেঘ নয়
স্কুল পড়ুয়ার উছ্বস্তিত স্কার্ট
একটু যদি মনের মত পেতে, তার
ফর্সা সুনীল উরু শুনতে শুনতে কেবল
ভেজা আলোর দিকে এক পা ও পা
যেন শুনলাম; সেদিন বাতাসে শুধুই প্রস্তাব ও লজ্জা,-
এখন যা কিছুই হবে
অত্যন্ত নিঃশব্দে এবং নিতান্ত ভালো মানুষের মত।
আমার গন্ডিতে ঢিল ছুড়ে দাও;
আমিও মিথ্যে ঘুমে ও কান্নায় ঘষে ঘষে
মুচকি হাসির মত একের পর এক
বৈদ্যুতিক ফুল তোমার হাতের দিকে দিচ্ছি,
কোথায় রাখবে এত কিছু, ভেবেছো?
আপাতত পলিথিনের ব্যাগ দেখো যদি
জোগাড় করতে পারো, যেন অযথা কোনো ঋতু বা আবেগের
উপক্রম না হয়। তুমিতো জানোই শালিখের মণি থেকে বেলকাটা
সমস্ত আমি ভালোবেসেছিলাম আর তাই এত আগুন
পোশাকে, বাসনে, বাজার ও চৌকাঠে এত আগুন দেখেছি যে
এখন জন্তু জানোয়ারের মত বাতাস মোটেই পছন্দ হয় না,
কোনো নতুনত্ব কোনো আয়োজনে
সিঁদুরের ফোঁটা দেওয়ার মত লাল আমি নদীর নীচে বইতে দেখেছি,
হয়ত স্বপ্নে, হয়ত সুসম্পর্কের মত সেসবও হ্যালুসিনেশন
তবু শব্দের চিন্তায় প্রচন্ড জ্বরে ভুগি আজকাল
শরীরে বিভিন্ন রকম উপদ্রব দেখেছি কিন্তু এমন কষ্ট কখনো পাইনি।
এটুকুই আমি পারি
ভদ্র সমাজে বাঁচতে গেলে এটুকুই লাগে হয়ত,
এর বেশি যদি কিছু চাও, মাস ছয়েকের মত এদিকে না আসাই ভালো
সেল্ফ হাৰ্ম-এ আমি এতটুকু বিশ্বাস করি না।-
এই হাওয়াতেও বিন্দু বিন্দু অনল
খুঁজে পাবে, তাই তো স্বাভাবিক,
আমাদের মত লাল টকটকে মানুষ
কতদিন আর মরা চিমনির কানে
দুঃখ বলে বাঁচবে? আমার কোনো
আক্ষেপ নেই। সত্যি বলতে যদি
ডাকাতের নগ্নছুরির নীচে ফেলে
এখন গয়না চেয়ে ঝাঁপাও, সমস্ত
দিয়ে দিতে পারি; আজ; পঁচিশে চৈত্র
দুপুর তিনটে বেজে তিরিশ, যে যতই
দূরবর্তী মেঘ ও জটিল ঝঞ্ঝা হয়ে
থাকি, শুনতে যদি চাও সগর্বে বলব,
অমন শান্তিতে আর কেউ কখনও
আমায় পোড়াতে পারেনি, কেউ না-
তেসোরা চৈত্র বিকেল পাঁচটা বেজে সাতাশ।
তোমার সামনে কবেই বা রং মেখে এসেছি,
কবে তোমার প্রখরছটা ফেলে অন্য তারার
শীতল চকমকিতে হাত দিয়েছি বলো? যদি
সেসব পারতাম; সমস্ত ফুল সমস্ত স্নেহকূজন
অবিশ্বাসের মত সারাটা জীবন, তোমার আগে
পিছে শুধু পাতলা জলের ছিমছাম রুপোলী
শরীর, কোথায় পালাতে তখন? থাক, বেলা
যখন ঢলেই পড়েছে; অদৃশ্যতরুণের পিঠ
আমিও সেই সুরে বলি, আমার একান্ত রোদ,
ভ্রুকুটি সহজ করে চাইলে চিরকৃতজ্ঞ হই-