আমার কাছে সরস্বতী পুজো একটা বালিঘড়ির মত। স্থির, অথচ বহমান সময় নিয়ে চলে যায় সময়ের সমুদ্দুরের কাছে। আকাশ ভরা জ্যোৎস্না থেকে আম্রমুকুল, বেণী বাধা মেয়েবেলা থেকে দায়িত্ববান খাতা কলমের অধিকারী - সব মনে রাখে এই সরস্বতী পুজো। বাসন্তী রং, নেলপালিশ, আলতা থেকে আলপনা আর খিচুড়ির গন্ধে যেনো ফিরে আসে আমাদের দলবদলের সেই অবুঝ স্কুলজীবন। জীবন পেরিয়ে যায়, সরস্বতী ক্রমশ যুবতী হতে থাকে আরও। আমি আরও বেশি করে অনুভব করি তাঁর রং, গন্ধ, সাজসজ্জা। শুভ্রা, শ্বেতাম্বরীর মত আমার পোশাকেও ক্রমাগত বাড়তে থাকে সাদা রঙের আভাস। হাতে খড়ির শ্লেট পেন্সিল সরিয়ে হাতে ধরি লাল, কালো, সবুজ রঙের পেন আর কিছু শুক্লা পঞ্চমীর স্মৃতি। আধুনিকতা মাখানো সেলফোনের ছোঁয়া ক্রমশ গ্রাস করে রিল ক্যামেরার পুরাতন খোলস, অ্যালবামের বাক্স। কিছু নীল, হলুদ শাড়ি - চুড়ির সেটে ধুলো বসে খানিক। স্কুলের কার্ডের বাণী বন্দনার গন্ধ উড়ে আসে আমার একলা ঘরের ধূপে। সূর্য ওঠে, সাদা ফুলের বন্যা আসে মায়ের আলতা পায়ে। প্রতিবারের মতো কুল খেয়ে উপোস ভাঙে আমার। অঞ্জলীর হাতে লেগে থাকে রাবার গ্লাভসের গন্ধ। আমি বাড়ি ফিরি। সন্ধ্যারতির আগুন উষ্ণ বাতাসে বয়ে আনে মুহূর্ত। বয়ে আনে আমার প্রথম খোলা চুল, প্রথম কাজল, আমার ইশকুলের প্যান্ডেল আর জীবন থেকে আরও এক বছর দূরে চলে যাওয়ার নিষ্ঠুর, আর্দ্র দুঃখ।
-