এক চিমটে গল্প   (Baishali)
813 Followers · 66 Following

Collided
Joined 22 May 2020


Collided
Joined 22 May 2020

এই আদিম আকাশগঙ্গা মেঘ মেখে থাকে সমুদ্দুরের মত। নৌকায় করে ফিরে গেছে যারা, গাঁয়ে ঘরে, বেঁচে আছে যারা অবসরে, সেই ছোঁয়ায় বাঁচে কত কত রাজহাসের দল। ফিঙে পাখি কুড়িয়ে আনে পলাশের বালিশ। গাছের কোটরে ভরে রাখে শিমুল তুলোর গয়না, দুপুরের রোদ। হাওয়া বয়ে চলে পৃথিবীর অন্তিম শহরে। ভিড় করে আসে আবছা পুঁথির স্তূপ। অন্ধকার ভেঙে যেভাবে বেরিয়ে আসে প্রাচীন সূর্য, যেভাবে মুঠো খুলে দেয় মৃত বন্দর, বহ্নিপতঙ্গ - সেভাবেই ছড়িয়ে পড়ে প্রেমেদের যাদুকাঠি। উপমার মত সত্যি হয়ে ওঠে চৈত্রের আসবাব। ঘাসফড়িং যার ঘরে গিয়ে বসে একান্তে, বলে ফেলে সমস্ত তুলতুলে অভিমান, ভালো থাকুক তাদের ঘরদোর, উঠোনে পড়া বাদামি পাতা। ভালো থাকুক বিকেলের গীতবিতান, সন্ধ্যার ধূপ আর ভালো থাকুক রাতের আকাশে প্রাচীন তারায় মোড়া আকাশগঙ্গা।

-



সারেন্ডার/ বৈশালী:

ভুল করেছি আরেকটা বার আমি/তোমার সুতোর গিঁট খুলেছি আজ,
ক্যানভাসে রং পিছলে পড়ে বলে/আকাশ থেকে পড়ছে খালি বাজ।

আরামদায়ক এই বিকেলের কানে/কুটুস ফুলের দুলের হলো বাস,
আরেকটুদূর এগিয়ে গেলে পরেই/ঘর বেঁধেছে হারিয়ে যাওয়া তাস।

তোমার সাথে যে ভাড়াটে থাকে/তার সাথে আজ হিংসে হলো খুব,
তোমার ছাতা ধার করেছে বলে/জলদি করে সূর্য দিল ডুব।

সকাল বেলায় কুর্তি ধোওয়া জলে/ভাসিয়ে দিলাম উষ্ণ বিলাসিতা,
পড়ন্ত রোদ যেই না ছুঁলো আমায়/বার করে দি বৃদ্ধ গীতবিতান।

রেলগাড়ীদের বড্ড তাড়ার মাঝে/একফাঁকে চোখ ঠিক দেখেছে তোমায়,
ঘুমন্ত মেয়ে যেই না মাখে বিকেল/পাখির নোলক আঁকতে বসে জামায়।

তোমার চোখের অসুখ আমার প্রিয়/সুখ যে আমার সহ্য করা কঠিন,
তোমার করা সমস্ত ভুল বাতিল/আমার কাছে তুমিই শুধু সঠিক।

-



নিশ্চুপ এই তারাদের যত বাড়াবাড়ি তবু হারিনি,
চাঁদে যত কালো, পাহাড়েতে গান করে কেউ ঘুমপাড়ানি।

বাতাসের এই তাবিজের খুব অনুরাগ, ফুল আনেনি,
কবিদের যত দুখ,সুখ,গান কবিদের থেকে জেনে নিক।

মাছেদের ভিড়ে জলেদের ঢেউ, জোয়ারের খোঁজে বসে থাক,
আমি আর তুমি এই বালুচরে ঝিনুকের সাথে খেলি তাস।

এলোমেলো করে চলে গেছে যারা ভোরে ওঠা মাছরাঙাদের,
গোধূলির রঙে মিশে গিয়ে তারা ফিরে পাক প্রেম, মহাদেশ।

মৌচাকে যারা ভুলে এসে বসে রানীদের নয় প্রিয়, খাস;
তারা বুঝি কোনো মরুভূমি চায় মরীচিকা যার ক্রীতদাস।

নিশ্চুপ এই তারাদের তবু বাড়াবাড়ি আর কমেনি
চাঁদে আজও ঠিক রাত হলে বাজে, পাহাড়িয়া গান থামেনি।

পাহাড়িয়া গান থামেনি।

-



মেঘের ঠিকানা/ বৈশালী
(গল্প ক্যাপশনে)

-



রোজ অভিমান, ডাকনাম, গান, লেখা
এই মিছিলে হারিয়ে গেছে যাদের,
তারাই জানে ভরা তারার মাঝেও
জ্যোৎস্না আকাশ পূর্ণগ্রাসে কাঁদে ।

-



বাইশে শ্রাবণ/ বৈশালী -

আজকে আমার মেঘ জমে যাক
আজকে আমার জমুক মুখোশ,
তোমার চোখে বইলে ফাগুন
কান্নার আমার বর্ষামুখর।

এই শ্রাবণে কজন জানে
গীতাঞ্জলির পাতায় আঁচড়,
নৌকাডুবির স্রোতরা জানে
খড়কুটোদের মরণ বাঁচন।

হাওয়ায় হারায় ছাতিম ফুল আর
কৃষ্ণকলির লাজুক বেণী,
তোমার প্রিয় পলাশ হলেও
আমার প্রিয় তুলতুলে নীল।

কোন মায়াতে হরিণ আসে
কালের দাসী নিঃস্ব এ মন,
তোমরা ঋতুর কাঙাল আমার
বর্ষা মানে বাইশ শ্রাবণ।

-



ঝড় ওঠে প্রায় আগন্তুকের ছায়ার মত
মাটির পেখম প্রেম ভেবে যায় ঝর্না তলে,
হাওয়ার মত ফিরছে ঘুরে পাগল নাবিক
পেখম মাটির, গলছে সে তাই অল্প জলে।

সব দুপুরে, শব উড়ে যায় খয়রি পাতার
নাকছাবি, দুল হারায় শিমুল তুলোর বনে,
তেমনি হারায় প্রেম ভরা এক বাংলা খাতা
সঙ্গে হারায় বাউন্ডুলে গল্প অনেক।

দূর থেকে যার সুর শোনা যায় মন ভরানো
একগোছা ফুল, তার নামে থাক এক অভিধান
এক পা দূরেই বৃষ্টি পড়ে সব হারানো
চাঁদ ও তুমি বড্ড দূরে, অনেকটা ধাপ।

-



এই বুকেতে জ্বলছে আজও
তারায় পোড়া অন্ধ - বারুদ,
আকাশ ঢেকে যেই চাদরে
তোমার ও মুখ তার প্রতিরূপ।

লাল শিমুলের রক্তে ভাসে
খোঁপার কাটায় আহত ফুল,
রোদ ডেকে যায়, অজ পাড়া গাঁয়
আমার চোখে ক্লান্ত দুপুর।

নদীর শাখায় হারায় কবি
কোজাগরীর মিথ্যে আশায়,
কলঙ্ক নয়, চাঁদের কাজল
কেউ না দিলেও, আমার তো সায়।

উপচেছে প্রায় তোমার ঝাঁপি,
মৌমাছি দল দুঃখে আকুল,
মোমের আগুন, উষ্ণতা নাও
আমার বরং বর্ষা থাকুক।

-



হাওয়ার সাথে থমকে চলে
গল্প বলে কোন প্রদেশের?
রোদপিয়নের সংগোপনে
রাত্রি আসে মেঘলা বেশে।

জৈষ্ঠ্য চিঠির নষ্ট খামে
জমিয়ে রাখি অশ্রু আঁখি,
নাগরদোলা বিলায় আলো
তোমার আভা তার চেয়ে ক্ষীণ।

কান্নামাদুর অন্ধকারে
গড়ছে বুঝি নালিশবাড়ি,
একলা মেয়ের দুপুর ঘরে
রবীন্দ্রনাথ করছে আড়ি।

অবাধ্য তিল, প্রশ্ন বাতিল
চুপটি করে গল্প করে,
মধ্যমা সুর বাজায় বিষাদ
গানপরাগের তীব্র জ্বরে।

-



আমার কাছে সরস্বতী পুজো একটা বালিঘড়ির মত। স্থির, অথচ বহমান সময় নিয়ে চলে যায় সময়ের সমুদ্দুরের কাছে। আকাশ ভরা জ্যোৎস্না থেকে আম্রমুকুল, বেণী বাধা মেয়েবেলা থেকে দায়িত্ববান খাতা কলমের অধিকারী - সব মনে রাখে এই সরস্বতী পুজো। বাসন্তী রং, নেলপালিশ, আলতা থেকে আলপনা আর খিচুড়ির গন্ধে যেনো ফিরে আসে আমাদের দলবদলের সেই অবুঝ স্কুলজীবন। জীবন পেরিয়ে যায়, সরস্বতী ক্রমশ যুবতী হতে থাকে আরও। আমি আরও বেশি করে অনুভব করি তাঁর রং, গন্ধ, সাজসজ্জা। শুভ্রা, শ্বেতাম্বরীর মত আমার পোশাকেও ক্রমাগত বাড়তে থাকে সাদা রঙের আভাস। হাতে খড়ির শ্লেট পেন্সিল সরিয়ে হাতে ধরি লাল, কালো, সবুজ রঙের পেন আর কিছু শুক্লা পঞ্চমীর স্মৃতি। আধুনিকতা মাখানো সেলফোনের ছোঁয়া ক্রমশ গ্রাস করে রিল ক্যামেরার পুরাতন খোলস, অ্যালবামের বাক্স। কিছু নীল, হলুদ শাড়ি - চুড়ির সেটে ধুলো বসে খানিক। স্কুলের কার্ডের বাণী বন্দনার গন্ধ উড়ে আসে আমার একলা ঘরের ধূপে। সূর্য ওঠে, সাদা ফুলের বন্যা আসে মায়ের আলতা পায়ে। প্রতিবারের মতো কুল খেয়ে উপোস ভাঙে আমার। অঞ্জলীর হাতে লেগে থাকে রাবার গ্লাভসের গন্ধ। আমি বাড়ি ফিরি। সন্ধ্যারতির আগুন উষ্ণ বাতাসে বয়ে আনে মুহূর্ত। বয়ে আনে আমার প্রথম খোলা চুল, প্রথম কাজল, আমার ইশকুলের প্যান্ডেল আর জীবন থেকে আরও এক বছর দূরে চলে যাওয়ার নিষ্ঠুর, আর্দ্র দুঃখ।

-


Fetching এক চিমটে গল্প Quotes