এক চিমটে গল্প   (Baishali)
806 Followers · 66 Following

Collided
Joined 22 May 2020


Collided
Joined 22 May 2020

এই বুকেতে জ্বলছে আজও
তারায় পোড়া অন্ধ - বারুদ,
আকাশ ঢেকে যেই চাদরে
তোমার ও মুখ তার প্রতিরূপ।

লাল শিমুলের রক্তে ভাসে
খোঁপার কাটায় আহত ফুল,
রোদ ডেকে যায়, অজ পাড়া গাঁয়
আমার চোখে ক্লান্ত দুপুর।

নদীর শাখায় হারায় কবি
কোজাগরীর মিথ্যে আশায়,
কলঙ্ক নয়, চাঁদের কাজল
কেউ না দিলেও, আমার তো সায়।

উপচেছে প্রায় তোমার ঝাঁপি,
মৌমাছি দল দুঃখে আকুল,
মোমের আগুন, উষ্ণতা নাও
আমার বরং বর্ষা থাকুক।

-



হাওয়ার সাথে থমকে চলে
গল্প বলে কোন প্রদেশের?
রোদপিয়নের সংগোপনে
রাত্রি আসে মেঘলা বেশে।

জৈষ্ঠ্য চিঠির নষ্ট খামে
জমিয়ে রাখি অশ্রু আঁখি,
নাগরদোলা বিলায় আলো
তোমার আভা তার চেয়ে ক্ষীণ।

কান্নামাদুর অন্ধকারে
গড়ছে বুঝি নালিশবাড়ি,
একলা মেয়ের দুপুর ঘরে
রবীন্দ্রনাথ করছে আড়ি।

অবাধ্য তিল, প্রশ্ন বাতিল
চুপটি করে গল্প করে,
মধ্যমা সুর বাজায় বিষাদ
গানপরাগের তীব্র জ্বরে।

-



আমার কাছে সরস্বতী পুজো একটা বালিঘড়ির মত। স্থির, অথচ বহমান সময় নিয়ে চলে যায় সময়ের সমুদ্দুরের কাছে। আকাশ ভরা জ্যোৎস্না থেকে আম্রমুকুল, বেণী বাধা মেয়েবেলা থেকে দায়িত্ববান খাতা কলমের অধিকারী - সব মনে রাখে এই সরস্বতী পুজো। বাসন্তী রং, নেলপালিশ, আলতা থেকে আলপনা আর খিচুড়ির গন্ধে যেনো ফিরে আসে আমাদের দলবদলের সেই অবুঝ স্কুলজীবন। জীবন পেরিয়ে যায়, সরস্বতী ক্রমশ যুবতী হতে থাকে আরও। আমি আরও বেশি করে অনুভব করি তাঁর রং, গন্ধ, সাজসজ্জা। শুভ্রা, শ্বেতাম্বরীর মত আমার পোশাকেও ক্রমাগত বাড়তে থাকে সাদা রঙের আভাস। হাতে খড়ির শ্লেট পেন্সিল সরিয়ে হাতে ধরি লাল, কালো, সবুজ রঙের পেন আর কিছু শুক্লা পঞ্চমীর স্মৃতি। আধুনিকতা মাখানো সেলফোনের ছোঁয়া ক্রমশ গ্রাস করে রিল ক্যামেরার পুরাতন খোলস, অ্যালবামের বাক্স। কিছু নীল, হলুদ শাড়ি - চুড়ির সেটে ধুলো বসে খানিক। স্কুলের কার্ডের বাণী বন্দনার গন্ধ উড়ে আসে আমার একলা ঘরের ধূপে। সূর্য ওঠে, সাদা ফুলের বন্যা আসে মায়ের আলতা পায়ে। প্রতিবারের মতো কুল খেয়ে উপোস ভাঙে আমার। অঞ্জলীর হাতে লেগে থাকে রাবার গ্লাভসের গন্ধ। আমি বাড়ি ফিরি। সন্ধ্যারতির আগুন উষ্ণ বাতাসে বয়ে আনে মুহূর্ত। বয়ে আনে আমার প্রথম খোলা চুল, প্রথম কাজল, আমার ইশকুলের প্যান্ডেল আর জীবন থেকে আরও এক বছর দূরে চলে যাওয়ার নিষ্ঠুর, আর্দ্র দুঃখ।

-



ডিসেম্বর/বৈশালী :

ইলশেগুঁড়ি, বেজায় বুড়ি
চচ্চড়িতে দেয় না বড়ি,
ফুলকো লুচি, শাড়ির কুচি
শীতের বুঝি হাতে-খড়ি।

দুঃখিত মন, নেই যে কমন
পরীক্ষাতে, প্রশ্ন হাতে।
বিয়ের সানাই, বাজায় কানাই
নলেন গুড়ের গন্ধ তাতে।

আনারকালি, ইঁটের টালি
বাগান সাজায় রক্ত গাঁদা,
ফাঁস গিঁটে স্কার্ফ, একটুকু মাফ
চায়ের কাপে অল্প আদা।

ঝাড়ছে র‍্যাকেট, ধুলোর প্যাকেট
আড়চোখে প্রেম খেলার ফাঁকে,
হওয়ার প্রলেপ, বৃষ্টি ও লেপ
ডিসেম্বরের গন্ধ মাখে।

-



আকাশের দিকে চোখ রেখে যদি
নিয়ে যেতে পারো বাতি হারা ঘর,
তোমার শিশিরে লুটিয়ে পড়েছে
আমার চাঁদোয়া মেখে নিয়ে জ্বর।

সেদিন শালুকে জমে ছিল যত
গল্প, মলাট, আংটিবদল,
নদীও জানে না তুলে নিয়ে গেছে
আংটি সেদিন শামুকের দল।

কত আনাগোনা, বালুচরে ঢেউ
এড়িয়ে চলেছে ঝিনুকশ্রমিক,
ঠুনকো দেহ চাপা পড়ে যায়
ভেঙেচুরে যায় শক্ত প্রেমিক।

রাত্রি শেষে বাগানে ফিরেছে
ফড়িং করেছে টগরের লুট,
সেকথা জানে না অন্ধ মালি, সে
নীরবে পরেছে দোষীর মুকুট।

-



ঝর্ণাতে আজ ধানশীষ ভরে রাখি।
চাঁদের আঁচেও পুড়ছে যে ঘর, চালা;
কেউ বলে কিছু হয় না কবিতা বলে,
সকালই বোঝে উপোসী তারার জ্বালা।

-



শরৎ আসে।
আনাগোনা বাড়ে কাশেদের
বাইপাসে, মাঠে, ঘাসে।

শিউলি তুলে আনে, গোপনে।
দুর্গা, মা আনমনে।

ভুলে যাই, যা কিছু লিখবার,
মাঝপথে ফেলে রাখি বারবার।

পিচগলা রাস্তায় পড়ে থাকে
কাশ। মুঠোভরা শরতের আকাশ।

শরৎ আসে।
আলো ভাসে জমকালো।
শরৎ ফিরে যায়
চুপিসারে, বিরহে কারও।

-



চাঁদ বলে কিছু হয়না। বুকের মধ্যে প্রতিনিয়ত জ্বলে ওঠে যে দাবানল, তারই প্রতীক এই কলঙ্কিনী চাঁদ। এই দাবানলে ছারখার হয়ে যায় অট্টালিকাসম ম্লান বাড়ি। চাপা কষ্ট ঢেকে রাখে সন্ধ্যাবেলার ধূপ, ধোঁয়া। পাহাড়ের ওরসজাত নাবালিকার ন্যায় ঝর্ণা হতে না পেরে যে মেয়ে ঝাঁপ দিয়ে যায় পাহাড়েই কোলে, তার চিঠি আমি পেতে চাই এবারে। এই ক্ষণে আকাশের তারাদের মাঝে ফুটে ওঠে যে মল্লিকাচাঁদ, তার কোলে যে বসে আছে শত পাহাড়, শত কোটি অগ্নিশিশির - সে গর্ভেই অমৃতের বাস। সে পাহাড়ের কোলে ধূসর মাটিতে নিষ্প্রাণ যে ঝর্ণা জন্মায়নি তারও মুহূর্ত রাখা। একপক্ষ কাল পরে তারা ফিরে আসে। শুষ্ক সে মুহূর্তে বাঁচে ফড়িংয়ের মৃতদেহ, ঝি ঝি পোকার ঘ্রাণ। মানুষের খোলস ছেড়ে জেগে ওঠে যে ঝর্ণা, যে পাহাড়, যে চাঁদ - সে ঝর্ণাকলম হতে পারে, হতে পারে পাহাড়িয়া সুর; তবে চাঁদ বলে কিচ্ছু হয় না।

-



এই যে ইলশেগুঁড়ি শ্রাবণ, মেঘে ঢাকা তারা, চাঁদ; সবই কি ভীষণ সুন্দর। এখানে কি লুকিয়ে থাকে কোনো মায়াবী, বাদুড়ের ছানা? তবে কালো কেনো এত এ সকাল? ভোরে ফুল নেই কোনো গাছে কেনো? মালা হবে বুঝি সুতো পেলে? কোন সাজি ভোরে ফুল নিয়ে গেছে বলো কালো মেঘ? আমার দুয়ারে কতকাল গান গেয়ে ফেরে যে ভিখারী - ভিখারিনী, তারাও আসেনি আজ। শ্রাবণের বড় তেজ বলে? নাকি কেউ ডেকে গেছে চিঠি দিয়ে। সকাল হয়েছে তবু কোন ঘুমে জড়িয়ে এখনও? বলে যাক কানে কানে, কেউ যদি জানে। গন্ধ ভাসে পোড়া কালির, পোড়া খাতার, পোড়া পাতার। বিষণ্ণ সকাল কাজলের মত কালো। ঘুম ঝেড়ে ফেলে উঠে বসি। দেহফুলে রেণুহীন কত শোক এসে বসে। জানালার কাছে বসে দেখি বাতাসের রং দেখা দিল আজ, ধূসর! পাখিদের মানা করেছে কেউ গান গাইতে। দেবতার মত ভেসে আসে গান। দূরে, নাগালের বাইরে। তবু কুঁড়ে কান, চেষ্টায় আপ্রাণ, যেন উঠে বসে তড়িঘড়ি। একটুকু করে এ ম্লান বাতাসে এলিয়ে বধির মনের চাঁই। ভেসে যাই। ভেসে আসে সুরও। হাত ধরাধরি করি, বসে পড়ি কঠিন শ্রাবণে, আঁখি মুছি আঁচলে। কানে গান বলে চলে - "বিদায় করেছ যারে নয়ন-জলে/ এখন ফিরাবে তারে কিসের ছলে।"

-



ছদ্মবেশী, বাঁচবে বেশি?/ বৈশালী:

কোন প্রদেশে সূর্য ওঠে নিখুঁত
তোমার আমার নাম কি জানে তারা?
খেলনা পুতুল বানায় যে সব মানুষ
শয়তানে তার হাত করেছে ভাড়া।

বাজির খেলা শহর জুড়ে রাখো
মন কেউ, কেউ রাখে হাজার টাকা,
খোঁজ করি কে ধরলো যীশুর টুঁটি
ঘর আসেনি, আমার ছেলে - ডাকাত।

ঘুমাচ্ছে কই সশস্ত্র সংবিধান?
জ্বলন্ত গ্রাম, জ্বলন্ত রূপকথা!
পাশায় কেবল বস্ত্র ছিল বাজি,
শরীর নিয়ে খেলছো নতুন প্রথায়।

মান, হুঁশ তো হেরেই গেছে কবে,
বন্ধী এখন নারী, শাড়ি, গোপাল,
সময় যে কার আসবে কখন বলির
লুকিয়ে রাখি আলতা পরা দু পা।

-


Fetching এক চিমটে গল্প Quotes