"উফফ্, তোমাকে কতবার বলেছি মা আমাকে ইলিশ মাছ দিও না, বিশ্রী গন্ধ লাগে," ইমনের বকাবকিতে শর্মিলা মাছের পিসটা পোষা বিড়ালের বাটিতে রেখে দেয়।
কাকলি বাড়ি ফেরার সময় শর্মিলা বাড়তি ভাতটা ধরে দেয়। মায়ের হাতে ভাত খাওয়ার সময় উচ্ছসিত হয়ে প্রশ্ন করে উর্মি, "আজ তুমি ইলিশ মাছ রান্না করেছিলে না? কী সুন্দর গন্ধ তোমার হাতে।"-
"উফফ্, এই সাতসকালে আবার কে ডাকে," বছর পঞ্চাশের রায়গিন্নী গজগজ করতে করতে বেরিয়ে আসেন; সামনে দেখেন শতচ্ছিন্ন জামা গায়ে দাঁড়িয়ে আছে বছর দশেকের একটা কঙ্কালসার ছেলে। ছেলেটাকে দেখেই তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে বলেন,"তোদের কি সময় অসময় জ্ঞান নেই বাপু? এখনো আমার গোপালের ভোগ দেওয়া হয়নি আর তুই এসেছিস এই সাতসকালে ভিক্ষা করতে? দূর হ ঘাটের মড়া কোথাকার!"
শুকিয়ে যাওয়া মুখ আরও শুকনো করে সরে আসে শিবু। বাপটা দিন সাতেক আগে ট্রেনে কাটা পড়েছে আর মায়ের মুখটা তো তার মনেও নেই। তিনদিন উপোসের পর পেটের জ্বালায় চক্ষুলজ্জার মাথা খেয়ে ভিক্ষা করতে বেরিয়েছিল। আচ্ছা, ভিক্ষার সময় কি গোপালকে ভোগ দেওয়ার পর হয়?-
ভেজা ক্ষত,
ছেঁড়া পালকের সুখ,
বুকের পাদদেশে জন্মের শোধ।
আঘাত শত,
বোবা চোখের অসুখ,
তোমার ঠোঁটের মিঠে রোদ।-
শেষমেশ সিদ্ধান্ত নেয় উমা। খুলে রাখে শাঁখা পলা, বেরিয়ে আসে শ্বশুরবাড়ির চৌকাঠ ডিঙিয়ে; আপাতত গন্তব্য একটা মহিলা হোস্টেল। এরপরের বিচ্ছেদটা হবে আইনি পথে। কালশিটে পড়া কপালের নীচের চোখদুটোতে জ্বলজ্বল করে আত্মবিশ্বাসের আগুন।
আজ দশমী তিথি; আজই তো উমার বিসর্জনের দিন। বিসর্জন হোক সেইসমস্ত লাঞ্ছনা, যন্ত্রণা, অপমানের আর গতানুগতিক বস্তাপচা কিছু সংকীর্ণ সংস্কারের।নতুন কিছু শুরু করার জন্য বিসর্জন ভীষণ দরকারী।-
"মানি অর্ডার আছে," পিওনের ডাকে ঘর থেকে বেরিয়ে আসে কমলা; টাকার খাম নিয়ে কপালে ঠেকায়। ভাতের থালার সামনে বসে কমলার বুকটা মোচড় দিয়ে ওঠে, "মেয়েটা কতদিন আমার হাতের রান্না খায়নি; মনিব বাড়িতে কী যে খেতে দেয় মেয়েটাকে কে জানে।"
মফস্বলের গন্ধ নিয়ে যখন কর্তব্যের বন্ধনে আবদ্ধ রিমি তিলোত্তমার অন্ধগলিতে খদ্দেরদের জন্য অপেক্ষা করে, তখন তুলসীমঞ্চের সামনে মেয়ের মঙ্গল কামনায় প্রদীপ জ্বালিয়ে ঠাকুরের উদ্দেশ্যে নমস্কার করে কমলা।-
সন্ধ্যেতে গেস্টের জন্য আনা মিষ্টি খুঁজতে থাকা মা;
দুপুরেই সেই মিষ্টি খেয়ে পুকুরপাড়ে বাক্স ফেলে বসে থাকা আমি:-
"তুই ভালো মেয়ে যেহেতু প্রেম করিস না," বলতে থাকা আত্মীয়স্বজন;
এদিকে প্রতিদিন "বাবু, খাইসো?" জিজ্ঞাসা করা আমি:-
একটা আমি ছন্নছাড়া
তুমি ভীষণ পরিপাটি,
তোমার শরীরে বর্ষাতিদের স্নান
আমি আবার শ্রাবণ ভালোবাসি।
জানিয়ো প্রিয়, ফিরতে দেরি হলে,
কুড়িয়েছি কদম, মালা গাঁথবো বলে।-
শিশির রোদ পোহাক তোমার ডাকনামে
গোধূলির রক্তমাখা তোমার বেনারসির পাড়।
গোলাপের কালশিটে ঢেকেছে শৈবালদামে
অপরাধী বেনামী আষাঢ়।
-
হলদে বিকেলের আশ, আলাপী সবুজ ঘাস, অদেখা সূর্যাস্ত গঙ্গার বুকে,
রেখে দিও দিন, অপেক্ষাদের ঋণ, মহামারী জীবন্ত তোমার শ্রান্ত দুচোখে।
-