পঁচিশে বৈশাখের সকালে
—দীপক বেরা
অনিবার্য দুঃখ নিয়ে ঘাতকের কথা মনে পড়ে যায়
রজনীগন্ধার পাপড়িঝরা এই বারুদগন্ধী সকালে
মৃত্যুর কালো চাঁদোয়ার নিচে অন্তর্গত সংশয় পেরিয়ে
প্রবাহিত অন্তহীন কালো স্রোত, ভেজা বারুদের স্তূপ
অথচ—
তবু কিছু স্বপ্ন, কিছু গদ্যে গড়া এই কঠিন
কঠোর বাস্তবতায় আমাকে চেনাও তুমি
ছিটেফোঁটা রূপকথার ভেতর
সীমান্তের কাঁটাতারে শুয়ে থাকা
একটা স্বদেশপ্রেম
যা জন্ম-জন্মান্তর যৌবনের স্বপ্নে দেয় হানা
এই প্রণম্য মাটি, এই বীজধান, খাসতালুক খামার
তারপর ব্রাত্যসুখে একদিন বসন্ত খুলে যায়
ধানের শিষের মুখ থেকে তুলে আনা অক্ষরসমূহ
আলো পায়, ফিরে চায় তোমার প্রতিকৃতির দিকে
এইসব পঁচিশে বৈশাখে
বিস্তৃত স্বপ্নভঙ্গ দিয়ে
এসো, তাকে উদযাপন করি...
#কপিরাইট : @dipak_bera.-
🔥
#সভ্যতার_স্খলিত_জিঘাংসা
—দীপক বেরা
দৃষ্টিগ্রাহ্য শূন্যতায় যতদূর চোখ যায়
গৃহস্থকোণ থেকে মাটিতে পাহাড়ে অরণ্যে
মানবসভ্যতার স্খলিত জিঘাংসা
ধাবমান বসন্ত রক্তাক্ত খুব, ক্ষতবিক্ষত দেহ
অপরিশোধিত রক্তিম নেশার মহড়া
রাতের বিভীষিকা, স্বপ্নভঙ্গ, রক্তাক্ত আকাশ
প্রথম প্রণয়ের বিসর্জন ভোর—আরক্ত বয়ান
বিবস, বিবসন, কম্পিত বেদনার নষ্টচাঁদ
অস্থির অস্বচ্ছ দিনের আলো, অস্পষ্ট আকাশ
তখনও জেগে আছে কিছু রাতজাগা তারা...
#কপিরাইট :@dipak_bera.-
(প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি)
#শঙ্খ_ঘোষের_প্রতি—
—দীপক বেরা
কোন যাত্রাপথে কোন গতিপথ এঁকে দেবে
আমাদের সবটুকু জাগরণ?
এই অধ্যায়ের শেষ কোথায়—
তুমি কি জানো, হে যুগান্তরের কবি?
এই উপত্যকার শরীরের অলিগলিতে অন্ধিসন্ধি
আর অলিন্দ জুড়ে অন্তর্গত অসুখ।
''বাবরের প্রার্থনা''র পর এই গান্ধর্ব-জীবন
বয়ে নিয়ে গেছে সময়ের চিহ্ন।
'খোক্কসরাজ'-এর তর্জনীনির্দেশে পরাভূত রোদ
বিস্তৃত ডালপালা গুটিয়ে নিয়েছে তার ত্রস্ত বনতল।
রক্তমাখা ছুরি নিজেকে রাজনীতি রুমালে
মসৃণ মুছে এসে দাঁড়িয়ে বলে, "রান্নাঘরে আমাকে
তোমাদের অতি প্রয়োজন"!
ক্লোরোফিল কমে আসা তমসাজীবী মস্তিষ্ক
অন্তর্লীন নিঃস্বতাকে অতি সহজলভ্য মনে করে।
''বাবরের প্রার্থনা''য় মুছে যাবে কি এইসব অসুখ?
কবে পৃথিবী নামক সাম্রাজ্যে দাঁড়াতে শিখবে
আগামীর সৈনিক?
তুমিও কি এখন—''ঘুমিয়ে পড়া অ্যালবাম''?
নাকি কবিতার সমস্ত জার্নাল ছিঁড়ে "দিনগুলি রাতগুলি"
একত্র জড়ো করে "পাঁজরে দাঁড়ের শব্দ"
নিয়ে দাঁড়াবে
আমাদের সামনে
এই অস্থির আঙিনায়?-
#লাথি
—দীপক বেরা
গতকাল একজন ক্ষমতাধর
আর একজন নিরপরাধ দুর্বল মানুষকে
সজোরে লাথি মেরেছে
তাতে নাগরিক সমাজ বেজায় চটেছে
একবাক্যে সবাই বলছে—
সামনাসামনি তার দেখা পেলেই কেটে ফেলবে
ভিড়ের মাঝে এক বৃদ্ধ লোক জিজ্ঞেস করলেন
কে কে এই কাজ করতে পারবে হাত তোলো
একটি হাতও উঠল না...
আশ্চর্য, সবাই পারে, কিন্তু
তাদের কেউই একা আমি কিংবা তুমি নয়
তাহলে কি আমরা উভয়পক্ষ গঙ্গানদীর তীরে
দেখা করে পরস্পরের এই পাশবিক উন্মাদনা
আসন্ন গ্রীষ্মের জলপ্লাবনে ভাসিয়ে দেব?
বৃদ্ধ লোকটি তখন, "বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক"...
কথাটির শরীর এফোঁড়-ওফোঁড় করে
খুব ভালো করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে লাগলেন—
বিপ্লবের অবশিষ্ট ক্রোমোজম-টা আজও
জিন্দা আছে কিনা❗
-
বিশ্ব কবিতা দিবসের আন্তরিক শুভেচ্ছা :
🌹❤️🙏
#ভয়
—দীপক বেরা
একঝাঁক অন্ধকার ঘিরে ধরে আছে আমাকে
ভরসা তবু মাথার উপর আকাশ আছে
উন্মোচিত কর আমাকে—
নির্নিমেষ চেয়ে থাকে দু'একজন নক্ষত্র মানুষ
যেন টের পায় আমার আকুতি
এখন পৃথিবীতে ভীষণরকম অন্ধকারের ঢল
বুকের আড়ালে ফুল ফুটিয়ে রেখেছি
মিলিত হবার ইচ্ছা মিলনের চেয়ে বড় জানি
দু'একটি সম্পর্ক, উষ্ণ হাত এইবেলা দাও
এই সন্ধানকল্পে এখানে আমার ভয় করছে খুব...
*কপিরাইট : @dipak_bera
টালিগঞ্জ, কোলকাতা।
রচনাকাল > 21 মার্চ 2025-
#নারী
—দীপক বেরা
বাসি বিছানায় দুঃস্বপ্ন দেখে উঠে বসে নারী!
সকাল হলেই তার গায়ে ফেলি গরম চা
আর, একটু বেলা হলেই ফুটন্ত ভাতের ফ্যান...
কানে কানে বলি—
এমন নষ্ট-নারীর মরে যাওয়াও ভালো!
নারী চুলে সুগন্ধি তেল মাখে, স্নান সেরে নেয়
খোঁপায় রজনীগন্ধার মালা, হাতে বেলফুল নিয়ে
বিকেলবেলায় দরজা খুলে রাস্তার পাশে দাঁড়ায়
বাঁচার অধিকারে নারী নিজের শর্তে বাঁচে
জিরাফের মত লম্বা গলায় মাথা উঁচু করে বাঁচে...
কারুর মৃত্যু কামনার আগে, নিজে মরে দেখাও!-
ফুল ও আগুন
অক্ষরগুলো পেয়েছিলাম আমার মায়ের থেকে
রক্তে, শিরায় ও মননে
নীরবতাকে উপহাস করে যেমন বয়ে যায় নদী
তার সহজাত কলকল্লোলিনী গর্জনে
তেমনই স্মৃতির বর্ণমালায় আমি কুড়িয়ে আনি
চঞ্চল সত্তায় নিঃশব্দ কবিতা নীরব চিৎকারে
যখন অন্ধকারের কালো চাদরে ঢেকে যায় আমার দেশ
আমাদের মর্মস্থলে থাবা বসায় কোনও আগ্রাসন
তখন তাকে এফোঁড় ওফোঁড় করে দেয় আমার কবিতা
তার প্রতিটি আগ্নেয় শব্দের তীক্ষ্ণ ফলায়
কবিতা ও আমি এক নিরীহ স্বপ্ন
আগুনকে ফুল আবার কখনও ফুলকে আগুন
বানাতে পারি অনায়াসেই
আগুন আর ফুলের মনমোহিনী রোশনিতে
আমার কবিতার বৈরাগী ভ্রমর ফুল ছুঁয়ে ছুঁয়ে
বিষাক্ত হুল-ও ফোটাতে জানে বিরুদ্ধতার আঁচে
আগ্রাসনের কালো হাতে...
—@dipak_bera_✍️💞
-
আমার জীবনানন্দ
—দীপক বেরা
হতাশা, বিপন্নতাবোধের
একটা 'ধূসর পান্ডুলিপি' জীবন
ভালোবাসাহীনতার ক্ষত-বিক্ষত আত্মার
নির্জন কবিতার নাম জীবনানন্দ-রেখচিত্র!
আমার ছন্নছাড়া, মার খাওয়া, পোড় খাওয়া
ক্লিন্ন জীবনের আশ্রয়স্থল।
তুমি জীবনের, নাকি মৃত্যুর?
প্রশ্নচিহ্ন উঠে যায় বারবার...
আসলে—
তুমি জীবনের মধ্যে মৃত্যু আর মৃত্যুর মধ্যে জীবন
কোলাহলের মধ্যে নীল নির্জনতায়
মিলেমিশে একাকার...-
ভালোবাসা দিন
—দীপক বেরা
ফাল্গুনের এমনই হালকা শীতের কোনও এক নরম রোদের দুপুরে ফাঁকা মাঠে ঘূর্ণি হাওয়ার খড়কুটো নিয়ে, ধুলোবালি নিয়ে এলোমেলো ঘুরপাক দিয়ে উদ্দাম গোল্লা-ছুট খেলা। কতশত ভাব-আড়ির মাঝে পড়ে থাকা ভাঙা মাটির রান্নাবাটি পাত্র, নদীর ভাঙা পাড়, নদীর ছেড়ে যাওয়া কবেকার করুণ ও একাকী খাত, নদীর তীরের পলি মাটির থাক-থাক ঢেউ... এইসব — কী অপরূপ বিমূর্ত ছবি, এক-একটা নকশা তৈরি করে রেখে দেয় আমাদের মনের গহীনে। তাল-লয়-ছন্দ মিলে এক আত্মার ধ্বনি। যার প্রাণ আছে, স্পন্দন আছে। তার নীরব নিশ্চুপ শব্দের ধ্বনি কানে বাজে না, বাজে চেতনায়, প্রাণে। মানুষের সেই গান তো ফেলে আসা পথের প্রান্তে একাকী দাঁড়িয়ে থাকা কোনও এক গাছের পাতার নিস্বন। জীবনের কোনও এক বিশেষ ঘটনা ঘটে যাওয়ার বহুকাল পরেও একটা নিষ্কাসিত ও প্রতিশ্রুত বাস্তব ফিরে এসে কবিকে উসকানি দিতে পারে — একটা কবিতা লেখার — আর সেই কবিতার শিরোনাম— "ভালোবাসা দিন"...-
#কোলকাতার_বড়দিন
—দীপক বেরা
কলকাতায় সব রয়েছে। আছে গির্জা–
দেড়শো, দুশো, তিনশো বছরের প্রাচীন।
সেই গির্জার নিচে
কোনও মন্দির ছিল কি না
আমরা খুঁজি না।
বরং যিশুকে ঈশ্বরজ্ঞানে প্রণাম করি।
পার্ক স্ট্রিটে বড়দিনের রাতে
ঠাসাঠাসি করে হাঁটি।
উৎসবের পদাতিক মিছিলে
আত্মহারা চোখ যেন বলে ওঠে—
যিশুও বাঙালি!
-