তোমারই উত্তরাধিকার
—দীপক বেরা
প্রমিত সূর্যের আগুন হঠাৎ নিভে গিয়েছিল
নদীর ভিতরে
আজ পবিত্র গঙ্গার তীরে বসে আছি
সময়ের নৌকা ভেসে যাচ্ছে শুধু একমুখী স্রোতে
অনন্তের স্রোত থেকে ইতস্তত তুলে আনি
বিন্যস্ত কমল করপুটে
যেন তোমারই প্রয়াস, তোমারই উত্তরাধিকার
স্রোত যায়, নৌকা যায়, বয়ে যায় তোমার সৃষ্টি
এ জীবন বেঁচে আছে পারম্পর্যময়
কিছু মিথের নৌকায়—কর্ণ, বিদুর, অর্জুন
একলব্য, ক্যাসাবিয়ানকা, শকুনির পাশা
গাঙুড়ের জলধারা সে-ও—
ভেসে যাচ্ছে আজও অন্তহীন ইন্দ্রের সভায়...
"পিতা স্বর্গ পিতা ধর্ম পিতাহি পরমং তপঃ..."
আত্মদীপের যে বৌদ্ধশিখাটি জ্বেলে দিয়ে গেছ অন্তরে
রাজকীয় ডঙ্গিমায় সন্মোহিত বিস্ময়ে
এ জন্ম ভূমিকা জলচল গমনে গেঁথে আছে
সেই প্রত্যাশা নোঙর...
-
#ব্ল্যাকহোল
—দীপক বেরা
একটা শূন্যতার ভিতর মনে হয়
আমি কোথায় আছি, কেন আছি?
দৃশ্য হতে দৃশ্যান্তরে
মরুমায়ার অন্ধিসন্ধি ঘুরে ঘুরে
পেয়েছি উত্তর—
সময়ের চিতা অদূরেই জ্বলে
জীবন মিশে যায় কালের অতলে
কার্বনের গন্ধ, কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী ভাসে।
নেশাতুর একটা জীবনচক্রে
আত্মস্থ করেছিলাম একটা উপনিবেশ
অস্তিত্ব ক্ষয় হতে হতে সূক্ষ্মতর
ভঙ্গুর ক্ষণস্থায়ী যাত্রাপথে ক্রমশ একা হতে হতে
হঠাৎ মিশে যাওয়া সেই ব্ল্যাকহোল উপনিবেশে...
-
আবছা মায়ের মুখ
—দীপক বেরা
আমি ফেলে এসেছি অনেকদিন
একটা স্নেহছায়া আঁচল
সুখ-দুঃখের দেবদারুদ্রুমে নদীমাতৃক চরে
একটা মুখ আজও
আমি আবছা দেখতে পাই
ডালে ডালে আদিগন্ত বিস্তার
পল্লবিত হয়েছে জীবনের ভাষা
তবু অনিশ্চিত এ জীবনেও একদিন
অপরূপ সূর্যাস্ত হবে
বিদায়ের গান গাইবে সারি সারি বৃক্ষদেবদেবী
সমস্ত পিছুটান, চাওয়া-পাওয়ার উপর
বিকেলের আলো এসে পড়বে
সেই মুহূর্তে আমি
আর একটা হরিৎগর্ভের ভিতর
চারিত হতে হতে
বীজপত্র খুলে
স্বপ্নাতুর দেখতে পাব
প্রদীপের নরম আলোয় ভেজানো
আমার মায়ের মুখ
রক্তিম স্তনের মতো দীপ্র হয়ে থাকা
একদা ক্ষুধার্ত শিশুর মুখে
নিরন্তর ঝরে পড়া তার
হিরণ্ময় সুধা...
#কপিরাইট : @dipak_bera.
-
আবছা মায়ের মুখ
—দীপক বেরা
আমি ফেলে এসেছি অনেকদিন
একটা স্নেহছায়া আঁচল
সুখ-দুঃখের দেবদারুদ্রুমে নদীমাতৃক চরে
একটা মুখ আজও আমি আবছা দেখতে পাই
ডালে ডালে আদিগন্ত বিস্তার
পল্লবিত হয়েছে জীবনের ভাষা
তবু অনিশ্চিত এ জীবনেও একদিন
অপরূপ সূর্যাস্ত হবে
বিদায়ের গান গাইবে সারি সারি বৃক্ষদেবদেবী
সমস্ত পিছুটান, চাওয়া-পাওয়ার উপর
বিকেলের আলো এসে পড়বে
সেই মুহূর্তে আমি
আর একটা হরিৎগর্ভের ভিতর
চারিত হতে হতে
বীজপত্র খুলে
স্বপ্নাতুর দেখতে পাব
প্রদীপের নরম আলোয় ভেজানো
আমার মায়ের মুখ
ক্ষুধার্ত শিশুর মুখে
রক্তিম স্তনের মতো দীপ্র হয়ে থাকা
একদা নিরন্তর ঝরে পড়া তার
হিরণ্ময় সুধা...
-
পঁচিশে বৈশাখের সকালে
—দীপক বেরা
অনিবার্য দুঃখ নিয়ে ঘাতকের কথা মনে পড়ে যায়
রজনীগন্ধার পাপড়িঝরা এই বারুদগন্ধী সকালে
মৃত্যুর কালো চাঁদোয়ার নিচে অন্তর্গত সংশয় পেরিয়ে
প্রবাহিত অন্তহীন কালো স্রোত, ভেজা বারুদের স্তূপ
অথচ—
তবু কিছু স্বপ্ন, কিছু গদ্যে গড়া এই কঠিন
কঠোর বাস্তবতায় আমাকে চেনাও তুমি
ছিটেফোঁটা রূপকথার ভেতর
সীমান্তের কাঁটাতারে শুয়ে থাকা
একটা স্বদেশপ্রেম
যা জন্ম-জন্মান্তর যৌবনের স্বপ্নে দেয় হানা
এই প্রণম্য মাটি, এই বীজধান, খাসতালুক খামার
তারপর ব্রাত্যসুখে একদিন বসন্ত খুলে যায়
ধানের শিষের মুখ থেকে তুলে আনা অক্ষরসমূহ
আলো পায়, ফিরে চায় তোমার প্রতিকৃতির দিকে
এইসব পঁচিশে বৈশাখে
বিস্তৃত স্বপ্নভঙ্গ দিয়ে
এসো, তাকে উদযাপন করি...
#কপিরাইট : @dipak_bera.-
🔥
#সভ্যতার_স্খলিত_জিঘাংসা
—দীপক বেরা
দৃষ্টিগ্রাহ্য শূন্যতায় যতদূর চোখ যায়
গৃহস্থকোণ থেকে মাটিতে পাহাড়ে অরণ্যে
মানবসভ্যতার স্খলিত জিঘাংসা
ধাবমান বসন্ত রক্তাক্ত খুব, ক্ষতবিক্ষত দেহ
অপরিশোধিত রক্তিম নেশার মহড়া
রাতের বিভীষিকা, স্বপ্নভঙ্গ, রক্তাক্ত আকাশ
প্রথম প্রণয়ের বিসর্জন ভোর—আরক্ত বয়ান
বিবস, বিবসন, কম্পিত বেদনার নষ্টচাঁদ
অস্থির অস্বচ্ছ দিনের আলো, অস্পষ্ট আকাশ
তখনও জেগে আছে কিছু রাতজাগা তারা...
#কপিরাইট :@dipak_bera.-
(প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি)
#শঙ্খ_ঘোষের_প্রতি—
—দীপক বেরা
কোন যাত্রাপথে কোন গতিপথ এঁকে দেবে
আমাদের সবটুকু জাগরণ?
এই অধ্যায়ের শেষ কোথায়—
তুমি কি জানো, হে যুগান্তরের কবি?
এই উপত্যকার শরীরের অলিগলিতে অন্ধিসন্ধি
আর অলিন্দ জুড়ে অন্তর্গত অসুখ।
''বাবরের প্রার্থনা''র পর এই গান্ধর্ব-জীবন
বয়ে নিয়ে গেছে সময়ের চিহ্ন।
'খোক্কসরাজ'-এর তর্জনীনির্দেশে পরাভূত রোদ
বিস্তৃত ডালপালা গুটিয়ে নিয়েছে তার ত্রস্ত বনতল।
রক্তমাখা ছুরি নিজেকে রাজনীতি রুমালে
মসৃণ মুছে এসে দাঁড়িয়ে বলে, "রান্নাঘরে আমাকে
তোমাদের অতি প্রয়োজন"!
ক্লোরোফিল কমে আসা তমসাজীবী মস্তিষ্ক
অন্তর্লীন নিঃস্বতাকে অতি সহজলভ্য মনে করে।
''বাবরের প্রার্থনা''য় মুছে যাবে কি এইসব অসুখ?
কবে পৃথিবী নামক সাম্রাজ্যে দাঁড়াতে শিখবে
আগামীর সৈনিক?
তুমিও কি এখন—''ঘুমিয়ে পড়া অ্যালবাম''?
নাকি কবিতার সমস্ত জার্নাল ছিঁড়ে "দিনগুলি রাতগুলি"
একত্র জড়ো করে "পাঁজরে দাঁড়ের শব্দ"
নিয়ে দাঁড়াবে
আমাদের সামনে
এই অস্থির আঙিনায়?-
#লাথি
—দীপক বেরা
গতকাল একজন ক্ষমতাধর
আর একজন নিরপরাধ দুর্বল মানুষকে
সজোরে লাথি মেরেছে
তাতে নাগরিক সমাজ বেজায় চটেছে
একবাক্যে সবাই বলছে—
সামনাসামনি তার দেখা পেলেই কেটে ফেলবে
ভিড়ের মাঝে এক বৃদ্ধ লোক জিজ্ঞেস করলেন
কে কে এই কাজ করতে পারবে হাত তোলো
একটি হাতও উঠল না...
আশ্চর্য, সবাই পারে, কিন্তু
তাদের কেউই একা আমি কিংবা তুমি নয়
তাহলে কি আমরা উভয়পক্ষ গঙ্গানদীর তীরে
দেখা করে পরস্পরের এই পাশবিক উন্মাদনা
আসন্ন গ্রীষ্মের জলপ্লাবনে ভাসিয়ে দেব?
বৃদ্ধ লোকটি তখন, "বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক"...
কথাটির শরীর এফোঁড়-ওফোঁড় করে
খুব ভালো করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে লাগলেন—
বিপ্লবের অবশিষ্ট ক্রোমোজম-টা আজও
জিন্দা আছে কিনা❗
-
বিশ্ব কবিতা দিবসের আন্তরিক শুভেচ্ছা :
🌹❤️🙏
#ভয়
—দীপক বেরা
একঝাঁক অন্ধকার ঘিরে ধরে আছে আমাকে
ভরসা তবু মাথার উপর আকাশ আছে
উন্মোচিত কর আমাকে—
নির্নিমেষ চেয়ে থাকে দু'একজন নক্ষত্র মানুষ
যেন টের পায় আমার আকুতি
এখন পৃথিবীতে ভীষণরকম অন্ধকারের ঢল
বুকের আড়ালে ফুল ফুটিয়ে রেখেছি
মিলিত হবার ইচ্ছা মিলনের চেয়ে বড় জানি
দু'একটি সম্পর্ক, উষ্ণ হাত এইবেলা দাও
এই সন্ধানকল্পে এখানে আমার ভয় করছে খুব...
*কপিরাইট : @dipak_bera
টালিগঞ্জ, কোলকাতা।
রচনাকাল > 21 মার্চ 2025-
#নারী
—দীপক বেরা
বাসি বিছানায় দুঃস্বপ্ন দেখে উঠে বসে নারী!
সকাল হলেই তার গায়ে ফেলি গরম চা
আর, একটু বেলা হলেই ফুটন্ত ভাতের ফ্যান...
কানে কানে বলি—
এমন নষ্ট-নারীর মরে যাওয়াও ভালো!
নারী চুলে সুগন্ধি তেল মাখে, স্নান সেরে নেয়
খোঁপায় রজনীগন্ধার মালা, হাতে বেলফুল নিয়ে
বিকেলবেলায় দরজা খুলে রাস্তার পাশে দাঁড়ায়
বাঁচার অধিকারে নারী নিজের শর্তে বাঁচে
জিরাফের মত লম্বা গলায় মাথা উঁচু করে বাঁচে...
কারুর মৃত্যু কামনার আগে, নিজে মরে দেখাও!-