মাটির গন্ধে চাপা থাকে চিৎকার না-হওয়া স্বপ্ন,
পৃথিবী জানে—সব আলো সুখ নয়, কিছু আলো হঠাৎ ধ্বংস।
জীবনও এক মৃত্তিকা—ভাঙলে তবেই জন্ম দেয় ফসল।
মাটির গন্ধে থাকে তারা, যারা ফেরেনি কোনো যুদ্ধ থেকে,
পৃথিবী সেই ঘ্রাণে রাখে অশ্রু, আর নীরব এক পতাকা বুকে।
আমরা হাঁটি বটে, কিন্তু কতজনের ছায়া মাড়িয়ে?
-
দেবতা হলে কেবল মন্দিরে থেকো না,
পাঁজরে পাঁজরে মানুষের কষ্টে ঢুকে পড়ো।
ঘণ্টাধ্বনি নয়—শোনো ভাঙা কণ্ঠের ডাক,
যেখানে বিশ্বাস নড়ে যায়, সেখানেই হও শক্ত মাকড়জালের ছাদ।
দেবতা হলে বসে থেকো না সোনার আসনে,
পথঘাটে হেঁটে আসো মলিন ছেঁড়া বসনে।
চোখে চোখ রাখো সেই ছেলেটার,
যার ভবিষ্যৎ আজ অন্ধকারের আলপথে হারিয়ে গেছে বারবার।
ধূপ আর মালার গন্ধে নয়,
তোমার গায়ে লাগুক ঘাম আর মাটি,
যেখানে কৃষক দাঁড়িয়ে থাকেন মেঘের অপেক্ষায়,
সেখানে সেঁধিয়ে থাকো তুমি, আকাশ ছাড়িয়ে, নিঃশব্দে আর শান্তি।
দেবতা হলে রক্ষা করো শুধু প্রার্থনাকে নয়,
রক্ষা করো একটা মেয়ের স্বপ্ন,
যে প্রতিদিন লড়ে চলে শুধুই বাঁচার তৃষ্ণায়,
বুকভরা সাহসে গড়ে তোলে আপন পৃথিবীর বর্ণ।
তোমাকে চাই না উঁচু সিংহাসনে,
চাই তোমাকে হাতের কাছে, জলেভেজা সন্ধ্যায়,
যখন মোমবাতি নিভে যায় হাওয়ায়,
তুমি এসো একটুখানি আলো হয়ে, ঠিক চুপিচুপি পায়ে।
দেবতা হলে, ভয় পেও না মানুষের চোখে চোখ রাখতে,
কারণ ওখানেই সত্য, ওখানেই প্রার্থনার ভাষা—
ওখানেই আকাশ ছুঁয়ে ফেলা এক জেদি ভালবাসা।
-
জানলা খোলা রেখেছি আজ,
দরজা নয়—সেটা বন্ধই থাক।
জীবন ঢোকে না গেট ঠেলে,
সে আসে হাওয়ার মতো নীরবে, নিঃশব্দে।
ঘরের ভেতর আলো ঢুকেছে ধীরে,
দেওয়ালে রোদ আর ছায়ার খেলা।
একটা পাখি ডেকে উঠলো দূরে,
সেই ডাক মনে করিয়ে দিল—
কত কিছু এখনো বাকি আছে দেখার।
জানলা খোলা মানে প্রতিদিন একটু সাহস,
একটু অপেক্ষা, একটু বিশ্বাস—
যে বাইরে এখনো ভালো কিছু আছে,
যা ভেতরের ক্লান্তিকে ছুঁয়ে দিতে পারে।
শীতের সকালের কুয়াশা হোক,
বর্ষার বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়া সন্ধ্যা,
অথবা গ্রীষ্মের হাওয়াহীন দুপুর—
জানলা খোলা থাকলে বোঝা যায়,
সব অনুভবেরও একটা দরজা আছে বেরোনোর।
জানলা খোলা মানে মনে রাখা—
ঘরটা ছোট হতে পারে,
কিন্তু দিগন্তটা তো আমারই!
আর ঠিক সেইখানেই আশার বাড়ি,
যেখানে পৌঁছাতে দরকার শুধু
একটু আলো, একটু হাওয়া—
আর জানলা খোলা রাখার মানসিকতা।
-
বালির বুক চিরে ঘুমিয়ে আছে এক ক্লান্ত যোদ্ধা,
যার পাল ভরে উঠত এক সময় দিগন্তের স্বপ্নে।সে এক জাহাজ,
যে হারিয়ে গেছে নিজের পথেই—
সমুদ্র ডাকেনি, তবু ফিরল না আর।
পৃথিবীর সব হারানো জাহাজই একদিন ছিলো কারও সাহসী যাত্রা—
আজ তারা নিঃশব্দ কাব্যে রূপ নেয় বালুচরে।
ঢেউ থেমেছে, পাল ঝুলে আছে,
সময় নীরবে লিখে চলে তার শেষ অধ্যায়।
একাকী দাঁড়িয়ে থাকা জাহাজটি যেন কালের গহ্বরে ডুবে যাওয়া কবিতা—
যার পাঠক ছিল শুধু সমুদ্র আর আকাশ।
স্মৃতির মতন আটকে থাকা এই জাহাজ,
জানালার ধারে বসে থাকা কোনও পুরোনো চিঠির মতো নিঃশব্দ।
-
কল্পনার ডানায় ভেসে,
আমি উড়ি নীলিমা ছুঁয়ে,
যেখানে রঙেরা কথা বলে,
ছায়া গায় সুর তুলে।
সেইখানে গাছেরা হাঁটে,
আর ফুলেরা স্বপ্ন বোনে,
চাঁদের হাটে শব্দ বিকোয়,
তারারা গান শোনে।
সমুদ্র চায় আকাশ ছোঁতে,
পাহাড় হাসে ঢেউ দেখে,
পৃথিবী যেন এক রূপকথা,
ঘুম পাড়ায় আলোকে।
তুমি যদি চোখ বন্ধ করো,
তুমি দেখবে সেই দেশ—
যেখানে কল্পনা বাস্তব হয়,
আর বাস্তবও হারায় বেশ।
এই কবিতা শুধু স্বপ্ন নয়,
এ এক দরজা—অদেখা জগতে,
চলো, হাত ধরো কল্পনার,
চলো হারিয়ে যাই একসাথে।-
ছুটির পরে ডেস্কের কোণে রয়ে গেছে বালুকাবেলার গন্ধ,
চায়ের কাপে ঢেউ খেলে যাওয়া সমুদ্রের ছন্দ।
আকাশছোঁয়া মেইল আর ফাইলের ফাঁকে,
এক টুকরো রোদ এখনও হাসে ছুটির সেই হেঁটে যাওয়া বাঁকে।
ছুটির পরে ফেলে আসা দিনের স্মৃতি,
মনের কোণে রয়ে যায় নীরব সুরের গীতি।
ফিরে আসা কাজের টানে, ব্যস্ত জীবনের পানে,
তবু হৃদয়ে বাজে অবকাশের মধুর রাগিণী।
-
আমি:মন, তুই কি শব্দ, না নীরবতা?
মন:আমি দুটোই—
যখন তুই চাস না শুনতে কিছু,
তখনো আমি কথা বলি ভিতরে ভিতরে।
আমি:তুই কি আমি? নাকি তুই আলাদা?
মন:আমি তুই নই,
কিন্তু তোর প্রতিচ্ছবি—
তুই যা লুকাস, আমি তা জানি।
তুই যা জানিস না, তাও আমি রেখে দিই।
আমি:তুই আলো কিনা বল?
মন:আমি আলো নই,
আমি সেই আয়না— যেখানে তুই নিজের আলোটা খুঁজিস,
আর অন্ধকারটাও দেখতে পাস।
আমি:তুই কি ক্লান্ত হোস?
মন:না, ক্লান্তি আমার নয়—
ক্লান্তি তোদের চাওয়াগুলোর। তুই যদি থামতে শিখিস,
আমি বিশ্রাম পাই।
আমি:তাহলে তুই শান্তি?
মন:আমি শান্তি হতে পারি—যদি তুই আর আমাকে লড়াই করতে না দিস।
কারণ আমি যুদ্ধ করি না,
আমি শুধু বহন করি।
আমি:তুই কবে হাসিস?
মন:যখন তুই কারও কষ্ট বুঝে ফেলিস,
কিংবা নিজের ভুলটা মেনে নিস—
আমি তখন নিঃশব্দে হাসি।
আমি:তুই কি অমর?
মন:না,কিন্তু আমি থাকি যতক্ষণ তুই অনুভব করিস।তুই চলে গেলে,
আমারও সূর্য অস্ত যায়।
-
মানুষ যেমন আলো,
নরম সূর্যের ছায়া হয়ে নামে—
কারও ভাঙা মন জোড়ে,
কারও নিভে যাওয়া স্বপ্ন জ্বালায়।
কখনও প্রদীপ, কখনও জোনাক,
অন্ধকারে পথ দেখায়,
নিজে পুড়ে, নিঃশব্দে জ্বলে—
কারও জীবনে সকাল আনে।
তার ভিতরেও থাকে অন্ধকার,
তবু সে আলো হতে চায়—
ভালোবাসায়, মমতায়, দায়িত্বে।
সে নিজেই জানে না কখন জ্বলে ওঠে,
কখন কারও অজান্তে
তাকে আবার বাঁচিয়ে তোলে।
আলো হয়ে থাকা সহজ নয়—
পুড়তে হয়, গলতে হয়,
তবু যারা হয়,
তাদের ছায়াতেই বিশ্রাম পায় পৃথিবী।
মানুষ আলো হলে,
তাকে খুঁজতে হয় না চোখে—
তার স্পর্শ থাকে আচমকা হাওয়ায়,
তার প্রভাব থাকে হৃদয়ে বহুদিন।
আলো কি শুধুই দীপ্তি?
না, আলো এক নীরব প্রতিজ্ঞা—
কেউ না দেখুক,
তবুও জ্বলে থাকার।-
জীবনের পথে সংঘাতের ধূলি,
চুপিচুপি নামে মনকুয়োর কূলি।
জল নয় শুধু, খোঁজ করি জ্ঞান,
প্রতিদিনের শুদ্ধিতে এক নতুন স্নান।
-
প্রিয়,
তুমি এখন যেখানে আছো,
সেখানে হয়তো ছায়া ঘন —
কিন্তু মনে রেখো,
আলো কখনও হারায় না,
সে শুধু অপেক্ষা করে
তোমার চোখ ফেরানোটা।
তুমি আলো খুঁজছো না,
তুমি নিজেই সেই আলো,
যে প্রতিদিন অদৃশ্য যুদ্ধ জিতে নেয়।
ভেবো না থেমে যাওয়ার কথা —
তুমি এখনো অনেক দূর যাবার পথ বাকি রেখেছো।
ভালোবাসায়,
আলোর এক বিন্দু-