অনেক হলো কবিতা এবার শাস্ত্র কথা শোনো
এই পৃথিবীর যা কিছু সব মায়া মোহ জানো
ভুলটাকে সত্য ভেবে
মানুষ মরে পদে পদে
এই জীবনে যাই হবে সব ললাটের খেল মানো-
সাতসকালে উকিলবাবু অনলাইনে গিয়ে
মাছের ছবি তুলে আনেন ফ্রি ইন্টারনেট দিয়ে
রুই পুঁটি পারশে বাটা
ইলিশ পেটি কাতলা কাটা
আজ দুপুরে ভোজের মেলা মাছের ছবি দিয়ে-
জুড়ি নদীর ব্রিজের ধারে রামকুমারের ঘর
মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছে ইঞ্জিনিয়ার বর
জামাই নেবেন পণের টাকা
শশুরমশায়ের পকেট ফাঁকা
ঘর বেচবেন স্কোয়ার ফুটে হাজার টাকা দর
-
না বোঝার কষ্টটা কবিতার আসে পাশেই ঘোরে
তবু, সত্যি বলে যেতে হয়।
চিরহরিৎ বৃক্ষের মতো,
নাটমন্দিরের দেবীর মতো
যুপ কাষ্ঠের বলির মতো
শেষ সময়ে তুলে আনি
একশো আটটি নীল পদ্ম।
বুকের মধ্যে ক্ষতগুলো আবার খুলে যায়
যখন নক্ষত্রেরা নেমে আসে, আত্মীয় হয় আমার
ভোরে চোখ খুলে দেখি
শুয়ে আছি একরাশ রক্তের কাদায়।
-
সকাল হলেই দু'চারটা মন্ত্রে তীর্থ শুরু
বাজারে যাওয়া, নকশিকাঁথার মাঠ
স্নান সেরে উঠে অস্থিভাঙা ধূপের প্যাকেট
আর আমাদের প্রেম,
যেন স্বস্তিহীন পুকুরের শেষ দুটি মাছ।
এভাবেই জল গড়ায়,
জলের সাথে আকাশ,
আকাশের সাথে রঙ।
তোমার চুলের গন্ধে শুরু হয় রাত।
আমাদের পথ দেখাতে আকাশে জ্বলে ওঠে
হাজারটা লণ্ঠন।
এপাশ দিয়ে চলে যায় গোরুর গাড়ি
ওপাশে তোমার চুড়ির শব্দে চাঁদ অস্ত যায়
আমি পরীদের সঙ্গে কথা বলি
গত শতাব্দীর চোখে ধুলো চশমা এটে
আমার পথ হারিয়ে যায়, তোমার শাড়ির ভাঁজে।
ঘরের বাইরে জমা হয় কৌতুহলী গ্রামের মানুষ....-
অন্ধকার কবিতা, প্রজাপতির ডানায় ভর করে
কলম ঘুমায়, দূরে শান্তি বাজে
বরফের মতো করে।
আকাশের বুকে দু'চারটা চিল
এদিক ওদিক বেড়ায় ওড়ে
সন্ধ্যের গলিপথে , যাতায়াত, লোডশেডিং,
নিশ্চিন্তে ফিরে ফিরে আসে।
সময়ের প্যারাগ্রাফ খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলে
কাকে কি বারণ করবো, কোন যুক্তি দিয়ে
সব রকমের ভালোবাসা, আজো
মানুষের কোনো না কোনো কাজে লাগে।-
একটা দীর্ঘ সময়ের পর, নীল, সাদা আর ধূসর মেঘের ত্রিমুখী প্রণয়ে লাল হয়ে উঠে আকাশের মুখ।
ট্রেন লাইনে চাপা পড়ে বৃষ্টির জল
পাখিরা বিবাগী হয়ে ঘরে ফিরে যায়
দিন রাতের দূরত্ব ঘুঁচে তোমার শাড়ির কুঁচির ভাঁজে রাজধানী শহর।
এ পাশে গঙ্গা, ওই পাশে ভিক্টরিয়া
নীল লাল আলোর ভীড়ে
বাদামি শহর ট্রাম লাইনে চাপা পড়ে
কবিতার খাতায় কবিতা নেই
তোমার ফেলে যাওয়া নুপুরের শব্দে
রাত নামে। একটা দীর্ঘ রাত
যার একপ্রান্তে তুমি আর আমি।-
এই প্রথম আমাদের একসাথে ঘুরতে যাওয়া
লাল লাল বাতিগুলো আবছা হতে হতে
একসময় তোমার চোখের ভেতরে আশ্রয় নেয়।
আর আমি, জনশূন্য এই দ্বীপে
আর কোনোদিনও ফেরা হবেনা
এই ভেবে ভেবে অনুসরণ করি তোমার পায়ের ছাপ।
আরো দূরে নীল বর্ন আলোর সংকেত
প্রবাল দ্বীপের পাশে আদিবাসী গ্রাম
লাইটহাউসের কৃত্রিম চপলতা
এই সবকিছু অস্বীকার করে, শেষমেষ
তুমি আমার দিকে তাকাও।
মুহূর্তে সারাটা ট্রেন জুড়ে রবিশঙ্করের সেতার
বিসমিল্লার সেহনাই, জাকির হোসেনের তবলা।
হাজার জন্মের দূরত্ব চুকিয়ে, সন্ধ্যেবেলার মতো
গায়ের রং নিয়ে, এ কামরা থেকে ও কামরায় যাও
বর্ষা এবার একটু অন্যরকম,
মেঘের ডাকে বন্দুক নয় সরোদ বাজে
এ ট্রেন ছুটে চলে অনন্তের পথে....
আমি বসে থাকি আমাদের প্রতীক্ষায়...-
রুমালের শেষপ্রান্তই আমার দেশ।
তোমাকে মনে মনে যতই চিঠি পাঠাই না কেন
এই পৃথিবীর অর্ধেক মানুষ আজো
অতীতের গান গায়।
শস্যের সকাল ধোয়া সূর্য
সারামাঠ জুড়ে আলিঙ্গন করে।
অথচ অংকের খাতায় উপপাদ্য ভুল।
তোমাকে বর্গমূল করে পাই
ছোট্ট একটা মেয়ে।
যার চোখের ভিতরে নরম রাস্তা,
কৃষ্ণচূড়া গাছ, আর আমাদের দেশ!
যার অস্তিত্ব লুকিয়ে আছে
তোমার কাঁধ অবধি নামানো চুলে,
শস্যের মাঠে, গলিত সূর্যে
এই নতুন আকাশে কোনো তারা নেই
ছোট্ট একটি নাকছাবি ছাড়া...-
একদিন দুরন্ততে আমরাও একসাথে ছুটবো
সেদিন আবেগি বৃষ্টি এসে ভিজিয়ে দেবে পুরো ট্রেন
স্টেশন রং বেরঙের ফুল দিয়ে সাজবে
আমাদের দেখার জন্য খদ্দেরের মাথায় বসবে কাক।
দড়ি কলসি পাহারা দেবে স্টেশন শুদ্ধ লোক
একদিন, আমরাও ছুটবো,
গতি! গতি! আর গতি! এত জুড়ে ছুটবে ট্রেন, যে
একটি পাণ্ডুলিপি লিখে ফেলব সেখানেই।
বাইরে বৃষ্টির জল শুষে নেবে তোমার কাঁধ অবধি চুল
গল্পেরা কানের পাশে, গুঁড়ো হয়ে ঝরবে
সকালের আবছা আলোয়
তোমার জন্য নিয়ে আসবো
কুয়াশা ভেজা এক কাপ চা, আর
এক পকেটভর্তি
চিরহরিৎ ভালোবাসা!-