অপেক্ষারা সন্ন্যাসীর বেশে ঘুরে বেড়ায় এদিক ওদিক,
আংটির মুক্তায় তখনও লেগে প্রজাপতি-হলুদ-রঙ।
বেনারসীর গায়ের ভাঁজে নতুনের গন্ধ,
খোপার জুঁই-বেলির প্রেমে হাবুডুবু খায় রাত।
ভালোবাসা কতখানি দামি_
তা এখনও বোঝাতে, কলমের কালি বরবাদ।

-

দূরত্বের ছোঁওয়া

মনের নিম-ঘরে সূর্য ঝরে ভোরের নোলকে।
রাতের চশমা খুলে চোখ মোছাও তুমি,
অভিমানের বিছানাটা শক্ত হতে হতে আজ পাথর।
ঘাড়ের আতরে মুখ ঘষে ক্ষমা চায় স্বপ্ন।
মনকেমনের বিশাল বারান্দায় পায়চারী করে কেউ,
একাকিত্বের শেকল ছেঁড়া বড় দায়।
ঘাস ফুলের মখমলী শরীরে লুটিয়ে পড়ে
গঙ্গা ফড়িংয়ের নিশ্চুপ কান্না।
নোনা জলের ইতিহাস বারবার দেয় পিছুটান,
হারিয়ে যাওয়ার গল্পে এলো চুলে ঘোরাঘুরি করে
ফিরে পাওয়ার আদুরে অপেক্ষা।
শান্ত বিচ্ছেদ, দরজায় টোকা দিয়ে জানান দেয়_
ভালো আছি... ভালো থেকো।

-

সাগর-ব্যথা

সাগরের ভেজা শরীরে সে অঙ্ক কষে বারবার,
দাগে দাগে ভরে গেছে শরীর।
উত্তাল ঢেউয়ের গর্ভে চুপিসারে মুখ লুকায়
এক মুঠো বালুকণা।
ঝিনুকের ঠোঁটে হারিয়ে যায় শুক্তির নিখোঁজ কাহিনী।
আমি শীতল জলরাশি গায়ে মাখি কতোবার,
তবুও সাগরের রক্তাক্ত শরীরের ব্যথা কমাতে পারি না...
বন্ধু বলে দূরে চলে যায় 'সময়'...ফিরেও তাকায় না একটি বার।
"ভালো লাগা" বড়ই গভীর অনুভূতি_
বুঝতে বুঝতে মাথার চুলে সাদা রঙ ধরে...।
সাগরের কোল খালি হয় প্রতি মূহুর্তে,
একটা লম্বা দীর্ঘশ্বাস ফেলে তাকিয়ে থাকি ঐ বুকের দিকে।
জখমী সায়র-শরীরের গন্ধ তখনও ছোটাছুটি করে চলেছে
উষ্ণ বালির নীরব প্ল্যাটফর্মের লাওয়ারিশ ওয়েটিং রুমে।

-

বৃষ্টি হয়ে এলে চোখের ছোঁয়াচে ঘরে...
ব্যাধি নও তুমি কোনো, তুমি যে কেবলই যন্ত্রণা।
দূরে থাকার অঙ্গীকারে বেশ আছি আমি,
রোজ লুকোই অনুভূতি_
কিছুটা লিপস্টিকের সাজে, কিছুটা চশমার ঝাপসা কাঁচে।
তবুও গুনি দিন...হয়তো এ বনবাস হবে কখনও শেষ।
সুখেই আছো তুমি ছলনার নীল দেওয়ালে পিঠ ঠেঁকিয়ে,
পার্থেনিয়ামের কিছু রেণু এখনও শ্বাসরোধ করে রোজ রাতে, ঘুমের ঘোরে।
ঠোঁটের অবিশ্বাস্য গল্পে আমি আজও খলনায়িকা_
যার কলমের কালি প্রতিনিয়ত ইতিহাস লেখে,
যার মনের শূন্য উঠোনে হাসাহাসি করে কিছু ছায়া।
অন্ধকার আরও গভীর হওয়ার স্বপ্ন দেখে,
বৃষ্টির নোনা জলে নীরবে ভেসে যায় কিছু না বলা কথামালা।

-

আমি

ইচ্ছে-সায়রে পা ডুবিয়ে বসে থাকি সারা রাত,
ভালো লাগার ছোট ছোট বালুকণা পায়ের আঙুল ছুঁয়ে
আবার হারিয়ে যায় জলের গভীরে।
কখনও ইচ্ছে করে সূর্যকে ছুটি দিতে,
কখনও ইচ্ছে করে সময়ের কাঁটার লাগাম কষতে।
লম্বা বেণী দুলিয়ে দুলিয়ে যখন তমসা এসে দাঁড়ায় জানালার কোল ঘেঁষে_
আমি শুধু তাকিয়ে থাকি দূরের ঐ আকাশের দিকে,
কিছু তীক্ষ্ম আওয়াজ হঠাৎ কানের কাছে এসে ভয় পাওয়ায়...
নিন্দুকের কথায় বালিশ ভেজাই বোকার মতো।
ভালো লাগা, ভালো থাকা... সবকিছু
এই "আমি"টাকে কেন্দ্র করে ঘুরতে ঘুরতে
ভালবাসার এক বৃত্ত আঁকে আপন মনে।
যে বৃত্তের পরিধি বরাবর এক এক করে দাঁড়িয়ে আছে আমার আপনজন।
সূর্যের ছুটি হয় না...
ঐ তাপ আছে বলেই তো পৃথিবী আজও জীবিত।
চোখ বুজে হাত বাড়াই_
কিছু ছায়া এখনও শক্ত করে আঁকড়ে আমার সত্তা।
আমার পরিচিতির আরব সাগরে তুমি জাহাজ ডোবাও প্রতিদিন,
আমার আমিত্বের মেঠো পথে তুমি বাউল হয়ে মন হারাও।
আমাকে খুঁজে পাই, আমারই অভ্যাসের চিলেকোঠার ঘরে।
কলমের কালির ভেজা ভেজা গন্ধে ঘুমিয়ে আগামীর ইতিহাস,
আরও আরও অনেকটা পথ পেরিয়ে পৌঁছতে হবে ঐ
নাম না জানা শহরে_
যেখানে সূর্যের কখনও ছুটি হয় না।

অরুন্ধতী ⭐

-

রোদের ভেজা

বৃষ্টি তোমার সাথে ভিজতে রাজি আরেকটি বার
কোল বালিশে মাখিয়ে রাত স্বপ্ন খোঁজে মেঘ মল্লার,
দুপুরের ঠোঁট লোটায় আদর, টাপুর-টুপুর সংসার
বৃষ্টি তোমায় নিয়ে লিখতে রাজি মেঘ-কবিতা বারবার।

শ্রাবণ তোমার শরীর ছুঁয়ে অভিমান যত যায় যে ধুয়ে
কিছু আশ্বাস ফেলে নিঃশ্বাস বাতাসের করিডোরে,
মন-বারান্দায় হাঁটি হাঁটি পায়ে বারিশ যেন ডাক দিয়ে যায়
পর্তুলিকার বেণী সজ্জায়, রামধনু জীবনের গল্প করে।

-

ভাবনায় ভেজা গুলমোহর

ব্যস্ততার রডোডেনড্রন ধীরে ধীরে অনেক পরিণত,
মনের ভেতর ঘুমিয়ে পড়া গুলমোহরের শাখায় আড্ডা জমায়
রঙিন প্রজাপতির দল।
শরীরের মরচে ধরা কোষে জীবন খোঁজো তুমি,
মেঘের দেশে হারিয়ে যাওয়া শব্দের ভিড় ঠেলে এখনও উঁকি দেয়
তোমার ঘামের গন্ধ।
ফিরে পাওয়া সময়ের অন্ধকার উঠোনে
স্মৃতির আতশবাজি জ্বালিয়ে চুপ করে বসে থাকি রোজ।
কিছু না বলা কথার বদভ্যাসে নিখোঁজ আজ চারুলতার মেঘলা হাসি।
কালো স্বপ্নের গভীর খাদে পা বাড়াতেই
হঠাৎ হাতটা সজোরে চেপে ধরো তুমি।
ঘুমের ঘোরে ঠোঁটের গোলাপি শহরে বৃষ্টি নামে জোরে।
তারা ছোঁয়ার অপেক্ষায় আমি একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকি
বাইনোকুলারের মোটা লেন্সের দিকে,
কিছুটা পরিপাটি হয়ে সকাল এসে দাঁড়ায় হলুদ পাঞ্জাবির বেশে।
শ্যাওলা পড়া স্বপ্নের কপালে হাত বুলিয়ে, বুকের ওপর আঁচল টেনে
গুছিয়ে নিই নিজেকে আরেকবার নিজের মতো করে।
সূর্যের তাপে ক্রমশঃ বয়স বাড়ে দিনের।
কিছু গল্প এখনও যেন নাবালক চোখে তাকায় রাস্তার দিকে,
গুনগুন করে গান ধরে সাইকেলে চেপে চলে যায় প্রহর।
আরও, আরও একটু কাছে আসার আকাঙ্খায় মাথার খোঁপায়
আদরের কাঁটা গুঁজে রাত নামে মনের একলা ঘরে।

অরুন্ধতী ⭐

-

ফিরে পাওয়া

এক মুঠো আদরের মিঠে গন্ধ এখনও পিলো কভারের বুকে
হামাগুড়ি দিচ্ছে সারা রাত ধরে...
চাঁদের কাছে তোমার উপস্থিতির হিসেব চাইলে সে মুখ ঘুরোয়_
বুঝতে পারি, মিথ্যে সাক্ষী দিয়ে আমাকে খুশি করতে চায় না সে...
এক পশলা বৃষ্টি গায়ের জোরে ভিজিয়ে যায় রাতের ঘুম,
কিছুটা স্বপ্ন নিঙড়ে সকালের অলস রোদে শুকোতে দিই রোজ।
ডাকনাম ধরে ডাকা মানুষগুলো চোখের সীমানা ছাড়িয়ে
মনের ধাউদিয়া পার করে দূরে যেতে চাইলেও
একটা সূক্ষ্ম মায়ার সাঁকো কোথায় যেন আটকে রাখে সবাইকে।
স্মৃতির কাঞ্চনজঙ্ঘা একটু একটু করে উচ্চতায় সাবালক হয়ে ওঠে।
শৈশবের লুকোচুরি, ছোঁয়াছুঁয়ি আজ_
কবিতার লাইনেই গড়ে তুলেছে নিজেদের ফ্ল্যাটবাড়ি।
সম্পর্কের মাঝখানের বিশাল আকাশে
প্রতি রাতে উড়ে বেড়ায় সময়ের কাঁটা লাগানো মস্ত উড়োজাহাজ,
হাজার অজুহাতের বায়ুস্তর কাটিয়ে একবারও সে এসে নামে না
হৃদয়পুরের নিশ্চুপ হ্যালি প্যাডে...।
তবুও কোথাও যেন আবেগ নদীর বুক চিরে
অপেক্ষার ছোট্ট একটা সাঁকো এখনও ছুঁয়ে আছে দূরত্বের দুই পাড়।
প্রত্যাশার মিছিলে ধীরে ধীরে চেনা কিছু গন্ধের হাতছানি_
"তুমি আসবে বলেই ধাউদিয়া এখনও শুকিয়ে যায় নি"...।

অরুন্ধতী ⭐

-

শুকতারার বুকের রঙিন সূতোয় স্বপ্ন বোনে রামধনু
রাতের গর্ভে একলা ঘুমিয়ে পড়ে চুপকথার শহর,
জোনাকের মনে তখনও প্রশ্নের ভিসুভিয়াস
সূর্যের আঙটিতে হাই তোলে তমিস্রার অর্ধনগ্ন প্রহর।

-

একটা শুকনো বিকেল শরীর থেকে খুলে ফেলে আবরণ...
সন্ধার চোখে তখনও কাজলের উন্মাদ জ্বর,
রাত মানেই শুধু মন ভাঙার আওয়াজ নয়_
ভোরের কোলে স্বপ্ন যেন ঘুমিয়ে থাকা অর্ধনারীশ্বর।

-