একটা শুকনো বিকেল শরীর থেকে খুলে ফেলে আবরণ...
সন্ধার চোখে তখনও কাজলের উন্মাদ জ্বর,
রাত মানেই শুধু মন ভাঙার আওয়াজ নয়_
ভোরের কোলে স্বপ্ন যেন ঘুমিয়ে থাকা অর্ধনারীশ্বর।

-

কথার কবিতা

তোমার নিঃশ্বাসের ক্লোরোফর্ম ধীরে ধীরে
আমার মনকে করে তুলেছিল বিকলাঙ্গ।
চোখের পাতা বেয়ে সংসারের সোনাঝুরি রঙ
কখন যে তোমার লাল পাঞ্জাবির গালে গিয়ে লাগলো,
বুঝতেই পারিনি।
মনে মনে কথা বলাবলি না হলেও
চোখে চোখে কবিতা লেখা হয়ে গেল নীরবে।
ফিঙে পাখির ডানায় স্বপ্নের দড়ি বেঁধে উড়িয়ে দিলাম
তোমার দীঘল বুকের ঘন ময়দানে।
"ভালো লাগা" শুধুই ঠোঁট ভেজানোর গল্প নয়।
কখনও কখনও কিছু নীরবতা অলকানন্দার জলে ভাসিয়ে
আবার ঘুরে তাকাই তোমার চশমার কালো ফ্রেমের দিকে।
কিছু কি বদলেছে? কেউ কি বদলেছে?
একটা যুগ এখনও চুপ করে দাঁড়িয়ে নতুন এক
তাজমহলের অপেক্ষায়।
'সম্পর্ক', শুধুই হুড্রুর স্রোতে কাগজের নৌকো ভাসানোর খেলা নয়,
'সম্পর্ক' হল নরম ঘাসের কোলে জলফড়িং এর নিশ্চুপ সমর্পণ।

অরুন্ধতী ⭐

-

কবিতা লিখতে চাইলেই চোখের সামনে এখন ভেসে বেড়ায়
আবোল তাবোল শব্দের দল...
যাদের না আছে ছন্দ, না আছে কবিতাকে পরিপূর্ণ করার মতো
যথাযথ অর্থের দখল,
তবুও তাদের ধরেবেঁধে লিখে ফেলি কবিতা।
ভালবাসা যেমন নদীর মতো বয়ে যায়_
কবিতাও মনের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে
দৌড়াদৌড়ি করে বেড়ায় আপন মনে...
ছন্দের ওপর জোর চলে না...ও বরাবরই ভীষণ অবাধ্য।
কবির কলম কাঁচির থেকেও ধারালো,
এর আঘাতে কোনো রক্তক্ষরণ হয় না কিন্তু নিহত হয় অনেকেই।
কবির শান্তি এতেই।
কবিতা কেবলই কথামালার নিশ্চুপ জীবনী নয়,
কবিতা অনুভূতির ঝিনুক ভাসানো গোপন গুঞ্জন।

-

সবাই কি আর আগলে রাখার মর্ম বোঝে ?

-

রঙে ভেজা কিছু কথা

চোখের ক্ষুধায় ফাগুনিয়া খুনসুটির রক্ত-পলাশ
ছুটে বেড়ায় আঙিনাময়...
মান টিকলির সোনালী পথ ধরে হেঁটে যায় বসন্ত ফকির।
ফাগুয়ার গালে আলতো আদর মাখিয়ে রঙে ভেজে সকাল,
আবিরের উষ্ণতায় চান সেরে নববধূর সাজে দুয়ারে এসে দাঁড়ায় রাধা।
চাঁদ আজ সারা রাত সাক্ষী থাকবে আকাশের বুক জুড়ে,
পূর্ণিমার নিখুঁত বৃত্তে কখন যেন অজান্তেই ধরা দেয় শ্যামের আঙুল,
রঙ নিয়ে খেলা চলে কৃষ্ণচূড়ার লাল ঘরে।
রঙিন মনে প্রাপ্তির ফাল্গুন গুনগুন করে ভ্রমরের মতো।
সূর্যকে আজ সত্যিই মনে হয় সূর্যমুখী,
অঙ্গীকারের হলুদ আবিরে চিবুক ডুবিয়ে
অধিকারের সফেদ পাঞ্জাবিতে দাগ রেখে যায় কিছু কথা।
কাছে থাকার ব্যাকুলতায় বারবার ফিরে আসা নাটোরের বনলতা সেন
আজ থমকে তাকায় ঐ দূরে দাঁড়িয়ে থাকা মেহুল সময়ের দিকে।
চাঁদের স্বচ্ছতায় দাউদাউ করে জ্বলছে মিথ্যার চিতা,
কলি যুগের প্রহ্লাদ আরেকবার প্রমাণ করে দেয়
ভরসার রঙ সবথেকে গাঢ়।
সোনাঝুরির গভীরতা ভেদ করে ভেসে আসে উন্মত্ত মাদোলের সুর,
রঙের পেলব গালিচায় শিঞ্জিনীর তালে মত্ত রাধা রানীর মনে লেগেছে
দোলের আগুন।
পলাশিয়া ফাগুনের অন্তর জুড়ে এখন উৎসবের মরশুম।

অরুন্ধতী ⭐

-

অলিখিত দ্বীপান্তর

ডায়েরির শেষ পাতায় থেমে, ভুলে যাওয়া শব্দের জন্য
অপেক্ষা বৃথাই,
কিছু শব্দ মিছেই ধরা দেয় কোনো এক বেনামী পূর্ণিমার রাতে_
চাঁদের কালশিটে পড়া শরীরের গভীর ক্ষতে।
সেই কবে সপ্তর্ষিমন্ডলের থেকে কোণঠাসা হয়ে
একা একা বেসুরো গান বাঁধে অরুন্ধতী।
অপেক্ষার ঘরে তবুও পড়ে না খিল।
দূর থেকে আরও দূরে চলে যাওয়া সূর্যের হয় পুনর্জন্ম,
নতুন করে হয় না আর পরিচয়।
চোখের কাজলে বহু কবিতা মেখে জেগে থাকে রাত একাকী,
স্লিপিং পিলের ভর্তি শিশি ধীরে ধীরে হয় খালি,
কাঁচের চুড়ির কথাবার্তা কমে আসে চুপিসারে।
শাড়ির খুঁটে গিঁট বাঁধা অভিমানের পাক ধরে চুলে,
জানালার গ্রিল ধরে দূরের ঐ আকাশটার সাথে চলে ইশারায় সমঝোতা।
কবিমনের কিশোরী বেলা লাল ফিতের বিনুনিতে এখনও অষ্টাদশী।
তুলসী তলায় পিলসুজের নরম বুকে একটু একটু করে পোড়ে
প্রদীপের একাকিত্ব।
খবর কাগজের পরিচিত, জামিনে ছাড়া পাওয়া মন_
আবার হয় নিরুদ্দেশ।
এবার সরাসরি কালাপানিতে নির্বাসন।
কিছু দীপান্তর নতুন করে শেখায় কলম ধরতে,
ডায়েরির হলুদ পাতায় নিজেকে খুঁজে পাওয়ার গল্পটা লিখতে লিখতে
কখন যেন ভোর হয়ে আসে।

অরুন্ধতী ⭐

-

মায়ামৃগ

তিস্তা নদীর এলোমেলো শরীর জুড়ে তখনও রাংপোর গন্ধ।
ভেজা গল্পের চালে বসে একাই হাসে আজকের সূর্য,
কিছুটা অন্ধকার বদনাম হয়ে মুখমণ্ডলে বেঁধেছে কালো কাপড়_
অন্ধকারও নতুন করে বদনাম হয় তাহলে!
বেদুইন কাক আকাশে উড়তে চেয়েও বারবার আছড়ে পড়ে
ঐ ন্যাড়া বটগাছের তলায়।
চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সোনা রঙের জোনাক
পাঞ্জাবির পকেটে পুরে হন্তদন্ত হয়ে হাঁটা দেয় যেন কে!
সামান্য আলো তখনও হামাগুড়ি দিয়ে খুঁজে চলেছে একটা আশ্রয়,
আইভরি ভালবাসার শেষ পৃষ্ঠায় কিছু হিজিবিজি কালো দাগ টেনে
মুখ তুলল রাত।
সরু কোমরের নিখুঁত বাঁকে মন হারিয়েছে বহু যৌবন,
শারীরিক উষ্ণতায় মোমের মতো গলেছে কিছু, আর কিছু_
চশমার ফ্রেমের মতো আগলে রেখেছে দু'হাত বাড়িয়ে।
কথা দেওয়া নেওয়ার তাবিজ গলায় ঝুলিয়ে
অভ্যেসের কাছে রোজ হার মানে সময়।
তিস্তা তখন গাইবান্ধার প্রেমে পাগলপারা...
হঠাৎ যেন কার স্পর্শে ঘুম ভাঙল দিনের!
ডাকনামে যতই আদর লোটাক না কেন, আজ তিস্তা শুধু যে তারই,
ব্রহ্মপুত্রের কস্তুরী-গৃহে, নূপুর পায়ে, ছোটাছুটি করে মায়ামৃগের সংসারবেলা।

অরুন্ধতী ⭐

-

......

-

একটা অন্ধ রাত বারবার কানের কাছে এসে ফিসফিস করে কিছু যেন বলে। কারুর নাম ধরে ডাকে....কার নাম? নামটা সময়ের সাথে সাথে হারিয়েছে তার রঙ। ফ্যাকাসে মুখে আজ সে দাঁড়িয়ে থাকে ঝুল পড়া বারান্দার এক কোণে। কোনো এক সময়ের চেনা ঐ মুখ এখন ধীরে ধীরে পাথরের জীবাশ্মের মতো শুধুই ছবি। ভালবাসা একটুও ছুঁয়ে যেত না যাকে, তাকে নিয়ে কি ভালবাসার কবিতা লেখা যায়? তাই তো শব্দরাও মনের সাথে সাথে কবেই বয়ে গেছে বিতস্তার বুকে। ভালো থাকার জন্য আজ নিজেকেই বড় ভালবাসতে মন চায়। ভালো রাখার জন্য আজ আবার করে কবিতা লিখতে মন চায়।

-

ছন্নছাড়া মরশুম

শীত তুমি বারবার ছুঁয়ে যাও কোন্ মায়ায়?
ঠাণ্ডা শরীরে এক পশলা বৃষ্টি নামে_
বরফ গলানোর অছেলায়।

ভোরের কুয়াশায় চুমু দিয়ে বাড়ি ফেরে স্বপ্নেরা,
গোপনে কাঁদে রোদ, কঠিন জ্বরে
সূর্য আজ দিশাহারা!

ধোঁয়াশার উলে বোনা সোয়েটার আরাম খোঁজে,
চোখের রেলিংয়ে মুখ লুকিয়ে_
মন-কেমনের ভাঁজে।

খেজুরের রসে দিয়ে ডুব, হাসি আঁকে ঠোঁট,
রঙ্গীতের বুকে তখনও বারো মাস
মরুভূমির ধূসর কোট।

একাকিত্বের মাদুর বিছিয়ে বৈরাগী দুপুর হাঁকে,
চেনা সেই ডাক নামে_
কিছু অবয়ব তখনও ফকির, হৃদয়-বাঁকে।

হলুদ বসন্ত তুমি কেন দেখা দিলে বৃদ্ধের বেশে?
সময়ের নিষিদ্ধ লাজে_
চন্দ্রমল্লিকা নির্ঘুম, কুয়াশার বেনামী অভ্যাসে।

অরুন্ধতী ⭐

-