নদীর বুকে ভাসিয়ে গল্পের তরী
গোধূলির কাছে বন্ধক স্মৃতিমালা,
আলপনার আকাশ নিশ্চুপ এখনও বড়
স্রোতের গায়ে বন্দী প্রাক্তনী জ্বালা।

-

বোধন

দুয়ারের পাশে একটা খোলা জানালায় এখনও কিলবিল করে
কিছু তরুণ স্বপ্নের জমাট মেঘ।
কিছু ধূসর রঙে হয়েছে বৃদ্ধ... কিছু এখনও নীল।
আর কিছু কালো মেঘ করছে শুধু অপেক্ষা... কারুর বুকে
ঝরবার অপেক্ষা,
কারুর আলপনা আঁকা লাল পাঞ্জাবীকে ভেজানোর অপেক্ষা।
শূন্যতা এক কোমর গভীরতায় ডুব দিয়ে মুখ তুলে কিছু প্রশ্ন রাখে_
আকাশের ঐ আধভেজা চাঁদের কাছে।
মাথা নীচু করে এক সমুদ্র মৌনতা গ্রাস করে মুচকি হাসে চাঁদ।
কখনও কখনও অপ্রাপ্তির শীতলপাটি বিছিয়ে
তাতে চুপটি করে ঘুমিয়ে পড়ে রাত,
আলতো ভাবে ছুঁয়ে যাওয়া বাতাসের গন্ধে শিহরিত হয় মন।
কিছু জমানো অঙ্গীকার কোল বালিশের ওপর হামা দিয়ে
ঘুরে বেড়ায় বিছানাময়।
নিঃসঙ্গতা বড় দামি...
একটা পূর্ণ জীবনের বিনিময়ে এক বস্তা নিঃসঙ্গতা কিনে
ঘর ফেরে সময়।
ঐ জানালার কাঁচে জমাট বেঁধেছে বিন্দু বিন্দু ঘাম,
এ কি 'পশ্চাতাপের বোধন'... না কি কালো মেঘের নিশ্চুপ ঝরে পড়া?

অরুন্ধতী ⭐

-

সেঁজুতির গর্ভে আগুনের রোশ
অন্ধকারকে ছুঁয়ে দেখে ছায়া,
চোখের প্লাবনে কাজলের আত্মাহুতি
রাতের কোলে পরাজয়ের মায়া।

-

নীল আকাশে উড়িয়ে স্বপ্ন-ধনু
বলাকার ছুটি আজ,
ভুলিয়ে প্রত্যাশার অশ্রু-রেণু
আঁখিগর্ভে প্রীতিরাজ।

-

গোধূলির সাথে রোজ হয় দেখা, শুধু হয় না কোনো কথা,
এক বুক আলোয় নিজেকে ভুলিয়ে, ভুলেছে কি বিরহ ব্যথা?

-

অপেক্ষার মহফিল

বৃষ্টি ভিজিয়ে গেল সমস্ত বারান্দা,
ভেজালো গ্রিলের বুকে জড়িয়ে থাকা ধুলোর পরত।
বৈরাগীর মতো নিঃস্বার্থ দুপুরের চোখে নেই ঘুম,
আছে যেন কার অপেক্ষা... শকুন্তলার মতো অপেক্ষা।
শালিকের দুই চোখের কালোর ন্যায় ঘন কালো চুলে
স্ট্রবেরি রঙের ফুল আটকে জানালার ধারে চুপ করে দাঁড়িয়ে বিকেল...
কেউ কি আসবে? কথা দিয়ে গেছে?
মেঠো পথের বুকে বহুরূপীর বেশে নিস্তব্ধতা ঘোরাঘুরি করে।
যুবতী বিকেল, তরুণী সন্ধ্যার দরজায় টোকা দিয়ে জানায় বিদায়,
দরজার বাইরে মাটিতে পড়ে থাকা এক গোছা মুনফ্লাওয়ার
খিলখিলিয়ে হাসে আনমনে...
তুলসী তলায় তখনও প্রদীপের সলতে
নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টায় ব্যর্থ প্রায়।
এক পেয়ালা চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে রাত নামে_
ঐ এলোমেলো বিছানার কুঁকড়ে যাওয়া চাদরের হিম ঘরে।
বালিশে মাথা রেখে একভাবে জেগে থাকে রাত।
চুপটি করে দরজার ছিটকিনি খুলে বেরিয়ে যায় যেন কেউ,
রাতের চোখ বেয়ে বালিশ ভেজায় গরম স্মৃতি।
দূর থেকে ভেসে আসে চেনা ভায়োলিনের চেনা সুর_
"আজ জানে কি জিদ্ না করো"...

অরুন্ধতী ⭐

-

ঝরে পড়েছি বৃষ্টির সাথে, নীরব রাতে, 'বনলতা' নামে,
পড়ে শিখেছি মাটির কোলে, হিসেব ভুলে, আপন ধামে।

-

হারিয়ে যাওয়া নদীর পড়ে থাকা পলিস্তরে বাসা বেঁধেছে
কিছু বিষাক্ত স্মৃতি-মাকড়।
কিছু উবড়ো খেবড়ো নুড়ি পাথর এখনও খুঁজে চলেছে নদীর শীতল বুক।
তলদেশে ছড়িয়ে থাকা বালুকণায় চিকচিক করছে
আজও বেহায়া প্রত্যাশা।
তটিনীর কুলকুল শব্দ মননে-চিন্তনে ছুঁয়ে যায় পলির চোখ,
খালি নৌকোর নেতিয়ে যাওয়া পালের ঠোঁটে গুনগুন করা ভাটিয়ালি
আর্তনাদের সুরে কিছু যেন বলতে চায়।
বাতাসের নরম আদর বারবার আছড়ে পড়ে নদীর শুকনো পথে...
হারিয়ে যাওয়াটা বড্ড সহজ,
বুকে আগলে রাখাটাই সবথেকে কঠিন।

-

ভালোবাসায়, জটিল শর্তের বিনিময়ে হয়েছে দ্বীপান্তর।
চোখের জলে ধুয়ে গেছে জীবন-মন্ত্রের ধূলিপথ,
এক টুকরো অঙ্গীকারে আজ বিধ্বস্ত সীতার পাতাল প্রবেশ।

-

সায়রতলে, শূন্যতা একাই রাজা।
গভীর থেকে গভীরতর নিস্তব্ধতা
খেলে বেড়ায় সেথায় সারাবেলা।
দিন-রাতের হিসেব খোঁজে না কেউ,
শামুকের গায়ে লিখে রাখা প্রেমের গল্পগুলো
মুক্তোর মতো খোলস ত্যাগ করে বেরিয়ে পড়ে একেলা।
রঙ-বেরঙের কোরালের মনে সিনেমার মতো
জীবনের কাল্পনিক ছবি সাজিয়ে বসে আছে 'সময়'।
কঠিন পাথরে ধাক্কা খেয়ে বুঝতে পারে স্টারফিশ_
ভুলটা হয়েছে আগেই... অনেক আগে।
জোয়ারের গতির সাথে পাল্লা দিয়ে খেলা চলে ঢেউয়ের_
সারা রাত।
অন্ধকার যেখানে চারিদিক থেকে ছুটে আসে গ্রাস করতে_
একটু দম নিতে মাথা তোলে সাবমেরিন।
ঐ দূরে সূর্য তখনও জীবিত সবার চোখে,
সায়রের বুক জুড়ে শুধুই নীল হিমাচল।

-