রাই কমল "৩"...
রাধা তোমারে দেখিতে পাই না আমি
বহুদিন হইলো
তোমার নাকি শরীর জুইতের না
তোমার সখি কইলো।
তখন আমি কদম্বতলে বাঁশি বাজায়
সখি আসিয়া উপস্থিত হইল
এবং কিছু প্রশ্ন করিলেম আমি
তখন জানিলাম তোমার অসুস্থতার কথা।
রাধা তোমারে আমি দেখিতে পাই না
বহুদিন কাটিল
তুমি না কি নাওয়া খাওয়া ভুলে গেছো
তোমার সখি কইল।
কি করিব ভাবিতে পারিনা আমি
এতো দেরি করে পেলাম তোমার খবর
তোমার যদি কিছু হয় গো রাই
একসাথে মিলে যাবো কবর।
রাধা তোমারে আমি দেখিনাই
বহুদিন হইল
এখন নাকি একটু সুস্থবোধ করছো
তোমার পিতা আসিয়া,আমার পিতাকে কহিল।
আর বেশি দেরি নেই,দেখা হবে শিঘ্রই
তোমার পিতার হাতে কিছু ফল পাকড় দিয়াছি
খাওয়া যেন হয় নিশ্চই!-
আমার ভ্যালেন্টাইন.
বৃষ্টিরা ঝড়না হয়ে নামে নাকি শাওয়ারের মতো ভিজিয়ে যায় তোমার মন,
ঐ গোলাপ ফুলটা দেখতে ভালো লাগে না ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে তোমার ভালো লাগে সেটা তুমিই জানো।
কাঞ্জিভরম শাড়ি তোমার বিশেষ প্রিয় নাকি তোমায় সেই শাড়িতে ভালো দেখায় বলে তুমি পড়ো,
পূজোর দিন পায়ে আলতা পড়তে ভালো লাগে, নাকি নামকে'বাস্তে পড়া হয় সেটা তুমি ভেবে বলো!
প্রেমের কবিতা পড়তে ভালো লাগে,নাকি
প্রেমের উপন্যাস পড়তে বেশি ভালোলাগে
বলো কোনো একদিন।
অনির্বাণ,পরম,ঋত্বিক নাকি আবির
কাকে বেশি সেলুলয়েডে ভালো লাগে।
আমাকে পছন্দ করো, নাকি ভালোবাসো।
সেটা বসন্ত পূর্ণিমায় জানিও..!-
"দলবদলু"
শর্তরা আজ বাঁধা মানে না
নিয়ম তৈরি হয় ভাঙবার জন্য।
নিয়তির কি নির্মম পরিহাস,
'শর্ত আর নিয়ম'
এই দু'টোর একটাও ভাঙিনি।
তবুও আমি দোষী।
কারণ আমি কারোর দালালি করি না!-
"অকাল বৃষ্টিপাত"
বৃষ্টিরা নেমে আসে আমার বারান্দায়
জল জমে থাকে উঠোন জুড়ে।
শিরশিরে হাওয়া বয় পাতার ভীড়ে
অর্ধস্নান করে পাখির দল, ইলেকট্রিকের তারে।
টালির চালে বৃষ্টির টিপ টিপ শব্দ
জানলার ফ্রেমে জ্বলো ঝাঁপটা এসে পড়ে।
নিম্নচাপের জেরে নিঝুম অফিস বড্ড একঘেয়ে
মনে পড়ে যায় শৈশবের দিনগুলো।
পথের দিনমজুর একটা ছাউনিতে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করে বৃষ্টি থামার শেষ মুহূর্তের জন্য।
আর আমি অপেক্ষা করছি অফিস ছুটির পর
অফিস ব্যাগ, আজকে অফিসে রেখে
আজ ভিজে ভিজে বাড়ি ফিরবো।।-
স.ম.য়.
অনেক পথ চলা বাকি
সবেমাত্র বছর পঁচিশ পাড় করেছি।
এখনও দীর্ঘ পথ চলা বাকি
মানুষ চেনা, বন্ধু চেনা, আত্মীয়-অনাত্মীয় চেনা বাকি!
অনেক তর্ক বিতর্ক বাকি রয়েছে,
সেই সব প্রশ্নের উত্তর দিতে বাকি,
কিছু প্রশ্নের উত্তর নিতে হবে।
এখনও দীর্ঘ পথ চলা বাকি
জীবনের উত্থান পতন দেখা হয়নি এখনও।
সকলে ঠিক, আমি একমাত্র ভুল
সেই মিথ্যে অভিযোগ শোনা বাকি।
মাত্র বছর পঁচিশ পাড় করেছি
এখনও দীর্ঘ পথ চলা বাকি।
স্থাবর অস্থাবর সম্পদের পরিমাণে মধ্যে
আইনের পদক্ষেপ নেওয়া বাকি!
বিশ্বাস ও ভরসার আসল মানুষ চেনা বাকি।
মৃত্যুর এক সেকেন্ড আগে পর্যন্ত নিজেকে
চেনা বাকি।-
দ.২.ন
দাবানলের মতো আগুন ছড়িয়ে পড়েছে সারা শরীরে
পুড়ছে মানুষ, এই পোড়ানোর গন্ধ আমি টের পাচ্ছি
তবু নিশ্চুপ নিরবতা, কোনো প্রশ্ন নেই, কোনো প্রতিক্রিয়া নেই
তবু্ও মানুষ পুড়ছে, পুড়তে দিচ্ছে, অন্যদেরও পোড়াচ্ছে।।-
সিঁড়ি ঘড়..
একঝাঁক পায়রা জুড়ে বসে অঙ্ক খাতায়,
তখন নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা
পায়রাগুলো পেন পেন্সিল দিয়ে
অঙ্ক সমাধান করতে উদ্যত
তখন আমি ছাদের সিঁড়ি ঘড়ে পড়তে বসছি!
মা নিচ থেকে ডাক দেয় "খোকা তোর থানকুনি পাতার রস আর চা বিস্কুট নিয়ে যা"।
তখন আমার কোনো দিকে মন নেই,শুধু দেখছি পায়রাগুলোর পেন পেন্সিল নিয়ে টালবাহানা!
বইয়ের পাতা হাওয়ায় একটা একটা করে পাতা
শূণ্যে উল্টে চলছে, রাস্তায় হরেক মালের গাড়ি
প্রচার করছে তখন।
এখুনি যদি বাবা কিম্বা অন্য কেউ দেখে আমি অঙ্ক না করে,পায়রা না তাড়িয়ে,তাদের পেন পেন্সিল নিয়ে এই টালবাহানায় আমিও সামিল হয়ছি, তাহলে একটা মারও মাটিতে পড়বে না!-
দ্বিতীয় প্রহর..
রাতের জোনাকি নেভে আর জ্বলে,
পড়ে রয় হিমবাহ!
শুকপাখি আর আসে না দোড়ে,
সে বড়ই বিরহী!
শব্দরা শুধু আমার পাশে বসে,
নিঃশব্দ শুধু ফাঁকি দেয়!
লবনাক্ত চোখের পানি,ঠোঁটের কোণ ভেজা
হাতের রুমাল শুকনো, ভেজা পায়ের মোজা।।-
"পন্যভূমি"
রোদ তখনও ওঠেনি
কাকেদের চিৎকার আর কলের লাইনে
জলের অপেক্ষায়, ল্যাম্প পোস্টের গা ঘেঁষে
ব্রাশ করতে থাকা আমি।
পাশ দিয়ে শঙ্করের বাবা কারখানায়
চললো,সাথে সাইকেলের হ্যান্ডলে দুপুরের খাবার
তখনও কি জানতাম আমার সঙ্গে এই ঘটনা ঘটবে।
শঙ্করের বাবা চলে যাওয়ার পর হঠাৎ বৃষ্টির
নামলো জোরে।দাঁড়ালাম পাশের কালুদার দোকানে কোনো রকমে।
হঠাৎ করে দেখলাম রাস্তায় একটা মাঝ বয়সী বউ,আর কোলে একটা দু'আড়াই বছরের বাচ্চা।
এদিকে ওদিক কিছু একটা খুঁজছে।
আমি মাজনের ফেনা ফেলে তাকে দোকানের দিকে ডাকলাম।
ধূসর আদ্ ছেঁড়া ভেজা শাড়ি পরে এগিয়ে এলো
কোলের বাচ্চাটা হাত দিয়ে বৃষ্টির জল ধরার চেষ্টা করছে, এরপরে আমি সেই মহিলাকে জিঞ্জাসা করি, "আপনি কী কিছু খুঁজছেন?"
"হ্যা দাদা এখানে শ্টেশন বা বাস গাড়ি কোথায় পাবো বলতে পারেন!"
"আপনি যাবেন কোথায়?,আর আপনি এখানে কোথায় এসেছিলেন!"
এদিক ওদিক দেখে বলল "বলুন না কোন দিকে যাবে, আমার খুব তাড়া আছে!"
"সে তো বুঝলাম কিন্তু আপনি এখানে কোথায় এসেছিলেন?"
"সোনাগাজীতে, আমার স্বামী আমাকে ও এই দুধের শিশুকে বিক্রি করে দিয়ে গেছে,প্রায় দু'মাস হলো, আর সহ্য করতে না পেরে পালিয়ে এসেছি!
হাতে কিছু টাকা আছে এই নিয়ে আমার বাড়ি পুরুলিয়ায় চলে যাবো।"
আমি তখনও একদৃষ্টে তাকিয়ে আছি।
"ওদাদা বলুন না,ধ্যাৎ,যতসব!চল সোনা বৃষ্টি একটু কমেছে এই বার বেড়িয়ে পড়ি।"-
"সেই সব দিনেরা উঁকি দেয় আকাশে
গভীর ক্ষত হয় আমার মন
ফিরে যেতে চাই সেই বন্ধুত্বের দিনগুলোতে
যেখানে শুধুই আনন্দ,শৈশব।"
"ভালো থাকিস শৈশব,ভালো থাকিস বন্ধুরা,ভালো থাকিস স্কুল আমার,ভালো থাকবেন স্যারেরা, ভালো থেকো স্কুল,ভালো থাকবে ঘাসফড়িং,ভালো থাকবে স্কুল বোর্ড,ভালো থাকবে বেঞ্চগুলো,ভালো থাকবে চক ডাস্টার,ভালো থাকবে ঝাল মুড়ি,ভালো থাকবে কারেন্ট নুন,ভালো থাকবে বরফ গোলা,ভালো থাকবে ভেলপুরি,ভালো থাকবে পাপরি চাট,ভালো থাকবে সিঁড়ির ধাপ,ভালো থাকবে রং উঠে যাওয়া দেওয়াল,ভালো থাকবে নতুন কিছু অশ্লীল শব্দ,ভালো থেকো বইয়ের গল্পরা,ভালো থেকো অংকটা, ভালো থেকো চিৎকার,ভালো থেকো ইতিহাস-ভূগোল,ভালো থেকো বিজ্ঞানও,ভালো থেকো পেন্সিল বক্স-টিফিন বক্স-স্কুল বক্স থেকো ম্যাপ পয়েন্টিং,ভালোই ছিল দিন গুলো ।"
'আর কোনো শব্দ খুঁজে পাচ্ছি না।
এই প্রতিটা মুহূর্ত খুঁজে পাই স্কুলে,
"স্কুল" তোমায় খুব মিস করি।'-