ফেলে আসা বছর, হেরে যাওয়া স্মৃতি
ভেঙে ফেলার পর ফিরে দেখা প্রবৃত্তি।
দুঃখ ছাপিয়ে যায় জুড়ে যাওয়ার ভয়
টুকরো ছেঁড়া দলিলে দ্বিপাক্ষিক সংশয়।
অবাধ্য মনকে নীরব সপ্তকে বাঁধি
নীতি না আবেগ, কে আসল অপরাধী?
ভুলের বিরুদ্ধে জারি থাকুক প্রতিবাদ
এবার না হয় অলক্ষ্যে চাইলাম আশীর্বাদ।
ব্যথা ঠিক জাগে মনখারাপী পার্বণে
এমন একলা বৈশাখ না আসুক জীবনে।-
একমাত্র আমিই জানি আমার কতটুকু গেছে খোয়া,
পৃথিবী জেনেছে আমায় শান্ত সরোবর, সর্বংসহা।-
কুয়াশার ধোঁয়া মোড়া চিন্তার ধূসর সারণি
চিরে এগিয়ে চলে গন্তব্যস্থলে প্রশ্নচিহ্ন রাখা হলুদ বাস,
আর জানলার শার্সিতে লুকিয়ে রাখে বাস্পে আঁকা গোপন নাম।
পাহাড়ের তুষারাবৃত কাঠিন্য যদিও প্রবাদপ্রতিম,
পাইনের সারি জানে নিষ্ঠুরতার আবরণ ধসপ্রবণ।
আকাশের দুঃখে মেঘ জমে পাহাড়ের ফাটলে
চোখের জলে ধসে পড়ে এতযুগ ধরে সঞ্চিত প্রতিরোধের প্রস্তরশিলা,
ধ্বংসের হাতছানিতে হলুদ বাস গড়িয়ে যায় অতলে।
রোদের দাক্ষিণ্যে একসময় ঘোষিত হয় প্রলয়ের সমাপন...
পাহাড়ের ক্ষত ঢাকতে খাদের গহ্বর থেকে
তুলে আনতে হয় প্রাণের শেষ চিহ্ন,
পাইনের সারিও আজ একমত—
আঘাতের সাথে ক্রমবর্ধমান পাহাড়ের সহ্যক্ষমতা।
-
বাস্তব প্রত্যক্ষ করে বুঝেছি,
যা কিছু অত্যন্ত ভালো
আদতে সেসব অবাস্তব।
নিখুঁতের তল্লাশে তলিয়ে গেছে নিযুত সম্ভাবনা,
পরিপূর্ণতাবাদ এক অস্তিত্বহীন জনশ্রুতি,
পূর্ণাঙ্গতার উপসংহারে রয়ে গেছে অসমাপ্তি...
সত্য-মিথ্যার ফারাক যেখানে মিলিয়ে যায়
সেই সম্পূর্ণতার অসম্পূর্ণ শেষ ধাপে
আবারও অনুভব করেছি-
যা কিছু যথোচিত
আদতে তা অবাস্তব।-
প্রস্তরলিপির শরীর জুড়ে জন্ম নেয় মায়াফুলের বন্ধন রোগ-
আয়ুসীমার শেষ নিশ্বাসে প্রোথিত বিচ্ছেদগ্ৰস্তের অক্ষরশোক,
স্মৃতিরা অশীতিপর ব্যাধি,
স্পর্শসুখের অন্তিম সমাধি...
ক্ষয়ে যাওয়া এপিটাফে খোদিত হয় সময়ের বিষাদশ্লোক।-
আমরা যাকে ছন্দ ভাবি, গুমরে
মরা গান না—
ব্যথার সমুদ্রে মিশে যায় সেই
কবিতা আর কান্না।-
দূরত্বের অধিকারে প্রচার
খোঁজে ইস্তেহার,
সময়ের শিলালিপিতে
বদলে যায় এক্তিয়ার।-
বাস্তবের চিত্রনাট্যে ঘটে-
সত্যের অপলাপ,
মনুষ্যত্বের দীনতা
ঢাকে মিথ্যে সংলাপ।-
হেরে যাওয়া দিন ঢলে পড়ে
অবসাদলীন রাত্রির কোলে,
আলো হাতড়াতে গিয়ে হাত ঠেকে যায়
অরণ্যের বাঁকে ঘুমিয়ে পড়া নিস্তব্ধতার কঙ্কালে,
ঝিঁঝিঁপোকার একটানা স্পন্দনে
মস্তিষ্ককোষে চলতে থাকে ভুলের পুনঃসম্প্রচার।
নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে জেগে ওঠা হিংস্র হুংকার
অন্বেষণ করে খুঁতে ভরা রোডম্যাপের তালিকা;
গন্তব্যহীনতার সমস্ত দোষ তার ওপর চাপিয়ে,
অন্ধকূপের চাদরে আপাদমস্তক ঢেকে নেয়
নিঃশ্বাসের জন্য খাবি খেতে থাকা
দিকভ্রষ্ট পথিক।
বিনিদ্র রাত জুড়ে পুড়ে যাওয়া দাবানলের আঁচে
পাতাদের শোকাশ্রু যখন মিশে যায় শিশিরের বুদ্বুদে
তখন পথহারার বোধোদয় হয়-
যার খোঁজে উজাড় হয়েছে অরণ্য,
সেই জোনাকির ঝাঁক অনায়াসে ধরা দিত-
আত্মসন্ধানে।
-
দশটা-পাঁচটার গন্ডিতে আটকে থাকে
স্বপ্নের শবদেহ,
লাল কালির দাগ দপদপ করে জ্বলে ওঠে
কপালের শিরায়,
শতচ্ছিন্ন ব্যাগের গাফিলতি চেপে বসে
নুইয়ে পড়া ঘাড়ে,
টিফিন বক্সের চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে
বাসি কান্নার দাগ,
লোকাল ট্রেনের হুইসিল পেরিয়ে যায়
দীর্ঘশ্বাসের ডেডলাইন...
এই মিথ্যে সাক্ষীরা যখন
ধুলোপড়া ফাইলের হিজিবিজি অক্ষরে
খুঁজে বেড়ায় অস্তিত্বহীন এক নাম-স্বাক্ষর,
আর নিবভাঙা কলম এগিয়ে যায়
স্বেচ্ছাবসরের বিদায় সম্ভাষণে;
ঠিক তখনই মনের দপ্তরে ঘোষিত হয়-
বাধ্যবাধকতার চিরকালীন ছুটি।-