জীবন: বন্ধু তুমি সঙ্গে আছো?
মরণ: তুমি বন্ধু বলছো? সবাই তো আমাকে তোমার শত্রু মনে করে।
জীবন: আমি-তুমি কেবল নিমিত্তমাত্র; ছায়াসঙ্গী হয়ে চলি সমান্তরাল রাস্তায়,
জগতে আমাদের মাধ্যমেই প্রাণ আসে যায়..
মরণ: মানুষ তা বোঝেনা,
তোমার আকাশে খুঁজে প্রায় প্রিয়জনের সুখ, আনন্দ
আর আমার শীতল অন্ধকারে কেবল মৃত্যুভয়, বুকভরা কান্না ।-
অভিমানের পাহাড় বেয়ে সারারাত নেমে আসে নোনা স্রোতের অঝোর ধারা,
দুঃখের প্রহরী হয়ে জেগে রয় শোকে পাথর হওয়া নিষ্পলক দুটি চোখের পাতা...-
পৃথিবীতে আমরাই এক অদ্ভুত জীব বোধহয়
ধর্ম, জাতি, বর্ণ, ভাষা ঠিক করে আমাদের পরিচয়।
অতি তুচ্ছ নগণ্য প্রাণীও শ্রেণীভুক্ত হয়
নিজস্ব বৈশিষ্ট্যে, ধর্ম-বর্ণ-জাতি-ভাষা দ্বারা নয়।
মানুষ নিজের অস্তিত্ব রক্ষায়
ধর্মের নামে দেশভাগ করে,
জাতির নামে ধ্বজা ধরে নামে রাস্তায়;
বিভিন্ন বর্ণের মানুষ সুবিচার চায় আন্দোলনের ভাষায়।
কত অন্যায় অত্যাচার দিনের আলোয় বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ায় হেসে খেলে,
সত্য নিভৃতে কাঁদে, এরা আশ্রয় নেয় ধর্ম-বর্ণ-জাতির মুখোশের আড়ালে।
সবকিছু ফেলে জাতি ছুটছে নিজস্ব ভাষার ঐতিহ্য রক্ষায়,
আদর্শ, নীতিকথা অবহেলায় পড়ে , মনুষ্যত্ব মিশে যাচ্ছে ধূলায়।
বোধ, চেতনার উন্মেষেই লুকানো আছে অমৃত ভান্ডার;
ছড়িয়ে পড়ুক সুধাধারা, মুক্ত হোক অন্তর্দৃষ্টির রুদ্ধদ্বার।
চাইনা কোনো ধর্মের দেশ, জাতির রাজ্য, ভাষার শহর;
সমগ্র পৃথিবী জুড়ে গড়ে উঠুক মানবতার মহানগর...
-
মেঘলা দিনে বৃষ্টির শেষে
আকাশ রামধনুর রঙে রঙিন,
কালো মেঘের চাদর সরিয়ে
উঁকি মারে রোদ্দুরের আলপিন।-
ভিতর ঘরে প্রতি মুহূর্তে সূচ ফোটায় ছড়িয়ে থাকা স্মৃতির আলপিন;
হৃদয়ে রক্তক্ষরণ, তবু ক্লান্ত চরণে হাসিমুখে ভীড়ে মিশে যাই রাতদিন।
ভুলে থাকতে চাইলে বেশী মনে পড়ে, ভুলে যাওয়া যে কি ভীষণ কঠিন!
মন-মস্তিষ্কের অবিরাম দ্বন্দ্বে, নাড়ীর স্পন্দন যেন ক্রমশঃ হচ্ছে ক্ষীণ...
-
গোধূলিবেলার রক্তরাগে লেখা
তোমার শোনানো প্রেমের কবিতা;
কৃষ্ণচূড়ার আবিরে এখনও মিশে
তুমি অন্যকারো, বসন্ত যায় আসে।
তোমার না বলা চোখের ভাষা;
পড়ে নেওয়া ছিল খুবই সোজা।
এখনও পড়তে পাড়ি,তবে ভয় হয়
দুর্বলতায় কোনো ভুল হবে নিশ্চয়।
পাওয়া না পাওয়ার ভীড় পেড়িয়ে,
আমিও সংসার জীবনের অধ্যায়ে
লিখে চলি ঘরকন্নার দিনলিপি;
একাকী নিভৃতে ফিরে আসে স্মৃতি।
মনে হয় আজও মুখোমুখি সাক্ষাতে;
আমি, তুমি দুজনেই চাই নিজেদের লুকোতে।
ভালোবাসা চাপা পড়ে যায় দায়িত্বের ভারে,
বিচ্ছেদের কাহিনী লিখে যায় উপসংহারে।
জানি তুমি এখন আছো শুধু দিনের শেষে,
আমার দুঃখরাতের অসমাপ্ত বিষন্ন উপন্যাসে...
-
মানুষ নিজের অজান্তেই সারাজীবন সঙ্গে নিয়ে চলে সঞ্জীবনী চারা;
সুন্দর সম্পর্কই যে মৃত্যুমুখ থেকে ফিরে আসার প্রকৃত অমৃতধারা;
অবহেলায় কাছের মানুষ দূরে চলে যায়, শূন্য ঘরে একলা ঘোরাফেরা;
শুধু উদভ্রান্তের মতো অন্ধকারের মধ্যে আলো খোঁজে, সুখ অধরা
আসল সঞ্জীবনী পড়ে রয়, মানুষ অনন্তের পথে হেঁটে চলে হয়ে দিশেহারা...
-
শহরের সীমানা পেরিয়ে অনেক দূরে;
নির্জন কোনো সবুজ দ্বীপের প্রান্তরে,
খোলা নীল আকাশের চাদরের নীচে;
প্রকৃতির কোলে চলে এসেছি দুজনে।
এসো শপথ করি কোনোদিন ধর যদি;
ভুল বোঝে সবাই, হয়ে যাই একাকী..
পরস্পরের ভরসার কাঁধে কাঁধ রেখে,
বাধাবিঘ্ন পেরিয়ে সম্মুখে যাব এগিয়ে।
ভালোবাসা দিয়ে জয় করা যায় পৃথিবী,
সেদিন তাকিয়ে দেখবে সমগ্র বিশ্ববাসী।-
হারানো দিনের স্মৃতি ফিরে আসে বারবার;
সময়েরও আর সময় নেই ভাব আড়ি করার।
যোগাযোগের বুদবুদ মনে যদিও দেখা যায়,
রোজকার ব্যস্ততায় যেন বাতাসে মিলায়।
দোষটা হয়তো বা আমাদের কারোর নয়,
নীরবতাই সবার অতি প্রিয় ভাষা বোধহয়।
ভুলে থাকার প্রতিযোগিতার অদৃশ্য খেলায়;
উপহারের ডালা পাঠালাম বন্ধু তোমায়।
দিলাম কঠিন দুঃসময়ে পাশে থাকার ভরসা,
আর অফুরান প্রীতি, শুভেচ্ছা আর ভালোবাসা...
-
পুরোনো ডাইরির ছেঁড়া পাতায়
কত চিঠি ঝাপসা, ম্লান হয়ে যায়।
হারানো দিনগুলো রয় স্মৃতির ছায়ায়;
বসন্তের মাতাল করা পূর্ণিমা সন্ধ্যায়,
আবেগে ভেসে যাওয়া মন কামনায় আচ্ছন্ন
ডুবেছিল যেন বনমহুয়ার গভীর নেশায়।
সময় বয়ে চলে কত স্রোত আসে যায়;
নিজেকে হারিয়ে ফেলে আজও মন ঘুরে মরে
মুহূর্তের ছোট্ট একটা ভুলের গোলকধাঁধায়;
সেদিনের গোলাপ আজ শুধু শুকনো পাপড়ি;
জীবননদীর একূল ভাঙে অকূল গড়ে
এতো চিরাচরিত নীতি,
সুখী গৃহকোণের স্বপ্নে আলমারির এককোণে
ধুলোয় ঢাকা পড়ে যায় অতীতের ধূসর পান্ডুলিপি....
-