ভবঘুরে
কিছু মেঘ থেকে হয় বৃষ্টি, আর কিছু মেঘ যায় কেবলই ভেসে
শুয়াপোকা কি বুঝতে পারে সে প্রজাপতি হবে শেষে?
রাস্তার দুপাশে কত রঙ বেরঙের ফুল,নেই তাদের কোনো চালচুলো,
অনাদরে বেড়ে ওঠে,গায়ে লেপ্টে থাকে কিছুটা ধূলো।
তবু যদি কেউ নেয় সে ধূলো ঝেড়ে
তারা বলে,গোলাপ ফুটুক তোমার ঘরে।
কিংবা ভালোবেসে ঠাঁই দেয় মনে
তারা বলে,ঝরে পড়ুক জুঁই তোমার উঠোনে।
এই অভিসার রেখো গোপনে।
তবু করো ক্ষমা,আমি এক ভবঘুরে
ফুটুক পদ্ম তোমার নীল সরবরে।
দিনের শেষে বাসার পাখি ফিরে যায় তার ডিমভর্তি বাসায়,
সুতো কাটা ঘুড়ি কি থাকে কোনো কিছুর আশায়?-
আসমানী রং মাখতো জাদুর ছড়ি দিয়ে
বোবা সব মূহুর্তদের শু... read more
বইয়ের পাতায় দেখেছি তোমায়
দেখেছি শ্রাবণ ধারায়,
স্বপ্নে তোমায় রাখিনি আমি
রেখেছি চোখের তারায়।
তোমার গান রাখিনি কন্ঠে
শুধু ডুবেছি তোমার সুরে।
তোমার রং মাখিনি গায়ে
ছড়িয়েছি আকাশ জুড়ে।
তোমার দৃষ্টিতে দেখিনি আমি
তাতেই গেছি হারিয়ে...
যে যায় বলুক তুমি নেই
আমি জানি তুমি আছো ঠিক গানের ওপারেই দাঁড়িয়ে।
হয়তো তোমার আদর্শে চলেনি জীবন
তবে তোমার জন্যই কখনও যায়নি থেমে,
তুমিই তো আমার প্রানের ঠাকুর
বারবার পড়েছি শুধু তোমারই প্রেমে।।
-
সরস্বতীর প্রতি,
রাত ফুরলেই শুরু হবে তোমায় নিয়ে স্তুতি,
শুনেছি মা তুমি নাকি ভীষন বিদ্যেবতী!
কেউ কখনও বলেনি তোমায়-' কি হবে এত বিদ্যে নিয়ে?
তার চেয়ে ভালো যা বাবুর বাড়িতে কাজে..
দুটো পয়সা নিয়ে আয় রান্না করে,বাসন মেজে।'
ওই দূরে প্যান্ডেলেতে রকমারি সব আলো..
জানো মা,আমার ঘর আর ঘরের জীবগুলো অন্ধকারাচ্ছন্ন - ঘুটঘুটে,মিসকালো।
তুমি তো মা থাকো হাজার আলোর খেলায়;
আমি পড়ি কুপির আলোয়,রাত্রিবেলায়।
তুমি বুঝি মা তোমার হাঁসটিতে চড়ে,স্কুলে পৌঁছে যাও তাড়াতাড়ি?
আমি তো রোজ হেঁটেই যাই পাঁচ কিমি দূরে,তাই পৌঁছাতে হয় দেরি।
শ্বেত পদ্মাসনা তুমি,শ্বেত শুভ্র বসনা,
আমার জামা ছিঁড়ে গেলেও নতুন আর হয়না।
শুনেছি তোমার নাকি গানের গলাও খাসা !
এতো গুন বলেই বুঝি তুমি পাও সবার ভালোবাসা?
তোমার সমাজের কিছু লোক এখনও বলে?
-'মেয়েমানুষ এতো বিদ্যে নিয়ে করবে কি দেশ উদ্ধার?'
ওদের তুমি সুমতি দাও,বলো বিদ্যে বিনে চলেনা এ সংসার।
-
'নীল রঙ ছিলো ভীষন প্রিয়'- নীল রঙ ছিলো তোমার প্রিয়,সাথে আমারও ছিলো ভীষণ প্রিয়।
তবুও দুজনের প্রিয় নীল রঙের মধ্যেও ছিলো বিস্তর ফারাক। তোমার প্রিয় ছিলো নীল আকাশ - যে আকাশ অসীম,অনন্ত,রহস্যময়। গ্রহ,নক্ষত্র, গ্রহানুপুঞ্জ,নক্ষত্রপুঞ্জ, ধুমকেতু - আলোর খোঁজে ছায়াপথ ধরে ছুটে গেলে। নীল আকাশ ছিলো তোমার প্রিয়- তাই খুব তাড়াতাড়ি উঁচুতে উঠে গেলে। আর আমার প্রিয় ছিলো নীল সমুদ্র - যে সমুদ্র সীমাহীন,গভীর। তিমি,হাঙর,অক্টোপাস, জেলিফিস,কোরাল - এদের সাথেই বন্ধুত্ব পাতালাম। নীল সমুদ্র আমার প্রিয় তাই অতলে তলিয়ে গেলাম।
তোমায় সুপুরুষ বলেছিলাম আর তুমি আকাশের দিকে তাকিয়ে কালপুরুষকে দেখালে।
তাই তলিয়ে গেলাম আমার প্রিয় নীল সমুদ্রে।
আর কি পেলাম? রত্নাকর দিলো আমায় রত্নের হদিস- চুনি, পান্না, মুক্তি আর এক টুকরো খাঁটি হীরা।
আর তুমি? সময় পেলে কটা তারা খসে গিয়ে সমুদ্রের বুকে ঝরে পড়লো তার হিসাব করা বন্ধ রেখে, সপ্তর্ষিমন্ডলের দিকে তাকিয়ে একবার নিজকে প্রশ্ন করো - কোথায় ছিলো সার্থকতা? কালপুরুষ নাকি সুপুরুষে?
-
INDEPENDENCY
- Happy Independence day তিতলি।
- কীসের Independence day? আমি কি আদেও Independent? এই তো কেমন বরের হাত তোলা হয়ে আছি,আর সেই জন্যই হয়তো আমাকে যা খুশি বলাও যায়,তবে তোর ব্যাপারটাই আলাদা, তুই নিজে উপার্জন করিস তার ওপর separation এ আছিস-যাকে বলে একেবারে Independent.
- ধুর পাগলি মেয়ে!আচ্ছা,নিজে টাকা উপার্জন করলে আর একা একা বাচঁতে জানলেই কি স্বাধীন হওয়া যায়?
-তাছাড়া Independency এর আর কি সংজ্ঞা থাকতে পারে? সম্মানের সাথে বাঁচাটাই কি স্বাধীনতা নয়?
- নাহ্ রে তিতলি ! আসলে স্বাধীনতা বলতে আমি বুঝি সব বাঁধন ছিন্ন করার ক্ষমতাকে। নিজে উপার্জন করলেই বা একা থাকলেই কি সব বাঁধন ছিন্ন করা যায়? নাকি মন বাঁধা পড়েই থাকে কোথাও না কোথাও? রোজগার করাটা তো খুব সামান্য ব্যাপার..আর স্বাধীনতা খুব বড়ো ব্যাপার।কে,কত উপার্জন করলো তার অঙ্কে স্বাধীনতা মাপা যায়না,বুঝলি?
- তাহলে আমরা স্বাধীনতা কিভাবে পাবো?
- আমরা স্বাধীনতা সেদিনই পাবো যেদিন কাউকে ভালোবাসবো শুধু ভালোবাসার জন্যই,তাকে আশ্রয় বা অবলম্বন ভাবলেই স্বাধীনতা হারাবো। স্বাধীন হতে হলে আগে নিজেকেই নিজের আশ্রয় আর অবলম্বন হতে হবে। বুঝলি..?
-
মন খারাপ থাকলে যেমন একটা রোদ ঝলমলে দিনকে নিম পাতার মতো মনে হয়,তেমনি মন ভালো থাকলে মেঘে কালো করে আসা সকালেও একটা স্বর্গীয় অনুভূতি হয়।কখনো হাজার মানুষের ভিড়েও একা মনে হয় নিজেদের,আবার কখনো শুধুমাত্র একজনের সান্নিধ্যে সবকিছুকে জয় করার আত্মবিশ্বাস গড়ে ওঠে।আমাদের চারপাশে কত মানুষ..সুখ কারোর নিজের দরজায় গিয়ে কড়া নাড়ছে,সে জানতেও পারছেনা অথচ সুখেরই জন্য দরজায় দরজায় গিয়ে ভিক্ষা করছে।কেউ একটা চকলেট পেয়েই নিজেকে পৃথিবীর সবথেকে খুশি মনে করে,আবার কারোর পায়ের কাছে পৃথিবীর সব ঐশ্বর্য এনে দিলেও খুশি হতে পারেনা।কেউ অন্যের ভালোবাসাতে বাঁচে আর অন্যের ভালোবাসাতেই মরে,আবার কেউ বাঁচার জন্য অন্যদের ভালোবাসে। আসলে আমরা নিজেদেরকে সারা জীবন খাঁচায় বন্দি করে রেখে দেবো নাকি সবকিছুর ঊর্ধ্বে গিয়ে মুক্ত বিহঙ্গের মতো দুটি ডানা আকাশে মেলে দেবো-তা সবটা আমাদেরই হাতে।
-
- আজ হঠাৎ এখানে এলি যে!
- কেনো..আসা কি বারণ নাকি?
- নাহ্ তা নয়,তবে তোদের প্রজন্মের কেউ আমার কাছে আসে না, তাই একটু অবাক হলাম।তবে আগে আসতো তোর মতো অনেক সবাই..কখনো ঝগড়া,কখনো বন্ধুত্ব,সবশেষে তাদের একতা,এসব দেখে আমারও মনটা আনন্দে ভরে যেতো। আর এখন তোরা তো শুধু ঘরবন্দি থাকতেই ভালোবাসিস। জগৎটাকে চিনলি আর কখন?
- নাহ্ঃ,এটা তুমি বলতে পারোনা।
আমাদের প্রজন্ম সোশ্যাল মিডিয়াতে কতটা আ্যক্টিভ থাকে জানো? কখন-কোথায়-কি ঘটছে সব আমরা জানি।
- আমি সামান্য পরিত্যক্ত একটা খেলার মাঠ, অতশত বুঝিনা, তবে এটা বুঝতে পারছি যে-
Your generation has become social
but moving far away from the soul.
-
- কি রে, মনখারাপ?
- নাহ্!
- তাহলে ?
- একটু অন্যরকমভাবে বাঁচতে ইচ্ছা করছে।
- আচ্ছা! চল্ দুজনে বৃষ্টি হয়ে যাই..
- কি লাভ? সবার ক্লান্তি ধুয়ে দিয়ে সেই তো ঝড়ে পড়বো মাটিতে, স্রোত হয়ে যাবো বয়ে।
- তবে হই পূর্ণিমার ওই চাঁদ !
- বিলিয়ে দেবো জোৎস্না,আর প্রতি রাতে যাবো একটু করে ক্ষয়ে।
- তাহলে হবি এক চিলতে মুক্ত বাতাস?
- তাই কি হয়? সবাইকে দেবো স্বস্তি আর নিজে সবটুকু বিষ নেবো শুষে।
- হবি একটা মস্ত গাছ?
- দেবো আশ্রয়, দেবো ছায়া,আর শীতের শেষে..
পরিনত হবো জীবন্ত লাশে।
তার থেকে যেমন আছি তেমনই বেশ।।
-
দশমাস, গর্ভেবাস করাইলি যারে..
আজীবন রাখিলি স্নেহকারাগারে।
প্রখর রোদে তুই রাখিলি তোর ছায়ায়,
বন্ধনে বাঁধিলি তোর বুক ভরা মায়ায়।
প্রবল বর্ষণে রাখিলি আঁচল দিয়ে ঢেকে
কয়েক ছত্রে কিভাবে বল ব্যাক্ত করি তোকে?
তোরই কোলে মাথা রেখে কাটিলো গোটা শীত
তোর জন্যই শক্ত হলো বেঁচে থাকার ভীত।
সকল দুঃখ নিলি শুষে -
তার কল্যাণে কখনো কাটাস উপবাসে।
তোর ঋণ বল কখনো কি মিটিতে পারে?
তবে সেই তুই আজ কেন বৃদ্ধাশ্রমের দ্বারে?-
কবিতা সে একটা হোক কিংবা হোক হাজার,
নীলাঞ্জনার সাধ্য থাকেনি সেই কবিতা বোঝার।
তাই হয়তো,সেদিন বেলা বোস..
ভাগ্যের সাথে করেছিলো আপোষ।
অলস দুপুরে নিয়ম করে রঞ্জনার প্রতীক্ষা-
হয়েছিলো মিথ্যে,সে পায়নি তার দেখা।
অনুভূতিরা গিয়েছে ক্ষয়ে,অভিমানগুলো স্মৃতির তলায় চাপা..
শুধু হয়নি কখনও রুবি রায়ের ভাগের-কষ্টটুকু মাপা।।
-