আজ জ্যোৎস্না মাখা রাতের মেঘ লাল,
আবছায়া চাঁদ উঁকি দেয় আড়ালে,
কেনোই বা তুমি হাসতে হাসতে কাঁদো?
আজকে বুঝি স্বজন হারালে?
তোমার চলতে পথে হয়নি বেশি দেরি,
সতর্ক, সেই ঘূর্ণিঝড়ের আশে,
পুনর্জন্ম হয়েই যাবে দেখো,
সময় কাটবে বিস্তর খোলা ঘাসে।
তুমিও ভাবো কেমন পরাধীন?
দরজা জানলা খুলেই শোওয়া যায়,
পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেও কি বন্ধু,
পাপের জ্বলে পূণ্য ধোয়া যায়?
-
ছায়াঘেরা মেঠো পথ,
চলার হুকুম নিয়ে এগিয়ে এসেছি অনেকটা,
আরো অনেকটা দুর যেতে হবে—
পৃথিবীর শেষ সীমায় যেখানে সূর্য ডোবে,
ততটা পথ পেরোনো এখনও বাকি।
নিস্পন্দ চাঁপা ফুলের গাছ ফুলের ভারে নুয়ে পড়েছে,
রক্তপলাশ ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে,
মনে হয় একটা জ্যান্ত মানুষকে ছিঁড়ে খেয়েছে বুনো
হায়নার দল।
বাবলা গাছের মোটা গুঁড়ির উপর থেকে কুয়াশার চাদর, বড্ড ফিকে।
কুয়াশার ওপারে মায়া রাজ্য,
আছে এক অভাগী বিদ্যুন্মালা, এখনও অর্জুনের প্রতীক্ষায়।
অনেক সূর্য ডোবার সাক্ষী সে; সূর্য আসে, অর্জুন আসেনা—
লক্ষিন্দর বারবার ফিরে ফিরে আসে,
সেও বেহুলাকে এতটা ভালোবাসে না।
নদীর পাড়ে বসে সময় কাটে,
তেষ্টায় বুক ফাটে তবু জল ছোঁয়া যাবেনা সে—
বিষের নেশায় মত্ত সে নদী—
সীমানা পেরোবো সেই বিষের জলে ভেসে।।
-
তুমি চলে গেলে।
আবেগঘন দিন শেষ হওয়ার আগেই
চলে গেলে।
জানালার পাশেই তোমার কাকতাড়ুয়া
এখন পাখি তাড়াতে পারে না আর।
তোমার হাতে লাগানো পলাশ গাছেও
আগুন ধরে না, কতকাল হলো।
তুমুল শৈত্যপ্রবাহ আমায় কুঁকড়ে দিয়ে যায়,
শুধু তুমি কাছে নেই বলে।
রোজ রোজ অফিস ফেরত,
ক্লান্ত মনখারাপের পথ্য ছিলে তুমি।
বাড়ির ছাদে চেনা টিয়াপাখি আর আসে না,
মূর্তিমান দুপুরবেলা চোখের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে দিনভর।
বিকেল আসতে চায় না চট করে—
আসলেই ঝুপ করে সন্ধ্যে নেমে আসে,
আমার বাড়ির উপর দিয়ে পাখি উড়ে যেতে দেখি না।
মাথা উচু করে দেখতে ভয় হয়, মাথা ঘোরে;
কী যেন একটা ঘোরের মধ্যে থাকি,
তুমি হয়তো আসবে ফিরে, হয়তো আসবে না।
তুমি কাছে নেই, আমার ঘোর লাগে।
-
তোমায় ছুঁতে চাওয়া আমার অভ্যেস।
হাতছানি দিয়ে এড়িয়ে যেও না তুমি;
যেভাবে ডেকেছিলে বছর কুড়ি আগে,
সেই ডাকের আশায় আমার এক একটা শতাব্দী পার
হয়ে যায়; রয়ে যায় শুধু একরাশ ভাঙ্গা মন।
তোমার গন্ধ পাওয়া আমার অভ্যেস।
এলো চুলে আবার এসো খোলা মাঠে,
যেখানে দাঁড়িয়ে রাতের আকাশে ছায়াপথ দেখা যাবে—
আর পাওয়া যাবে তোমার চুলের গন্ধ।
তোমাকে শুধু দেখতে থাকা আমার অভ্যেস।
জন্ম-জন্মান্তর এভাবেই দেখে যেতে রাজি;
আমি ওপাড়ের মতো দীর্ঘশ্বাস ফেলে রেখে আসবো
তোমার কাছে; যদি বাঁচে তোমার ছায়ায় আমার প্রেম।
তোমায় পেয়ে দিশাহারা হওয়া আমার অভ্যেস।
তেপান্তরের মাঠ পেরোনো এক ছুটে—
তোমার সাথেই স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছি জনমভর,
তোমার কাছেই পরাধীন হয়ে থেকে, আমি পরাধীন
হতে চাই; বলো তাই যদি হয় বাঁচবো আকাশ জুড়ে,
আর চাইবো তুমি কখনও মুখ ফেরাবে না।।
-
সন্ধ্যে নামার আগে বাড়ি ফিরে লাভ নেই,
চলে যেও ওই শ্যামলা দীঘির পাড়ে,
যেখানে আবছায়া ওই ছাতিম গাছের তলা;
মিশে মিশে যায় আকাশের অন্তরে।
কালচে সবুজ দীঘির জলে ওই,
পানকৌড়ি শেষ ডুব দিয়ে ঘরে ফেরে,
শোনো ওই উদাস করা কীর্তনীয়ার সুর,
আধুনিক হয় আদিম পোশাক ছেড়ে।
ডুবে যেতে থাকে পৃথিবীর সব মায়া,
অন্ধকারের বাস্তব জ্বলে ওঠে,
ছায়াময় সব লুকিয়ে লুকিয়ে দেখে,
মায়াময় নীলে সুনীল পদ্ম ফোটে।
পা ডোবানো ঠান্ডা আলসেমিতে,
দীঘির ওপাড় ডেকে বলে কাছে আয়,
সে ডাকের এক অমোঘ নেশা,
নেশায় নেশায় আকাশ ছেয়ে যায়।
দ্বিধায় বলে দূরে থাকাই শ্রেয়;
অবাক চেয়ে দেখি দীঘির বুক,
কালের রেখার আবর্তনের সাক্ষ্য—
অবিকল তার আমার মতই মুখ।।
-
চাদরে মোড়া ধুধু প্রান্তর,
আবছায়া আলো লুণ্ঠন,
হরিৎ যা কিছু সব পুড়ে গেছে,
পরে থাকে অবগুণ্ঠন।
কদর্য গালাগালির ভিড়েও
অভিশাপ যেত থেমে,
কল্প- চরিত্রদের ভিড়ে
বৃষ্টি আসতো নেমে।
পুকুর জুড়ে জ্যোৎস্নার হাসি,
শিমুল পলাশ গন্ধ,
দুদিন আগেই তুমুল ঝগড়া,
মুখ দেখাদেখি বন্ধ।
রাতের ছাদে, চাঁদের আলোয়,
দুই প্রাণ দুই প্রান্তে;
কিসে ওদের জুড়ায় জ্বালা,
কে গিয়েছে জানতে?
রাত ভোর করে,
চিলেকোঠা ঘরে, অথৈ সে হাতছানি,
কিসের আশায় রাত জাগে তারা?
আমরা কি কেউ জানি?
তৃষ্ণা হঠাৎ তুমুল বেগে,
জল খোঁজে হাহাকার,
মণিহারা সুখ; শান্তি খোঁজে,
খুঁজে ফেরে মণিকার।।
-
উল্লাস আকাশে ভেসে বেড়ায়,
নির্জন তারার একাকী স্থানান্তর
ছাপিয়ে যায় হাজার ছায়াপথের পাড়ি।
যদি থাকতে সাথে আরো কয়েকদিন,
খুঁজেই নিতাম কোথায় আকাশ- বাড়ি।
আমিও একাকী ফেসবুকে ডুব দিয়ে,
দেয়াল থেকে দেয়াল শুধু ঘুরি,
তোমার ঘরে ঘুরে অবান্তর,
খুঁজতে থাকি তোমার হাতের
আসমানী রং চুড়ি।
সময় শুধুই নষ্ট সবই জানি,
সাগরের মাঝে শান্ত ঢেউয়ের তোড়
হঠাৎ যখন বৃষ্টি নেমে এলো,
ছাতা হয়েই ভিজতাম বড়োজোর।
তোমার জাহাজ নাই বা হলাম আমি,
কম্পাস হতে পারি,
শূন্যে হারাবো সুযোগ দিলে কই?
হয়তো পেতাম মোদের আকাশ- বাড়ি।।
-
আঙ্গুলের ফাঁকে আঙ্গুল রেখেছো আজ,
ভালোবাসা ডুব দেয় অথৈ নোনা জল,
মেঘের মতো চাঁদ ও চলেছে সাথে;
আকাশ ফাঁকা, কাগজের কোলাহল।
তরঙ্গ শুধু বাস্তবে আঁকাবাঁকা,
রূপকথার দেশ, সবই সোজা পথ,
শান্ত প্রবাসে শান্ত মহাসাগর—
অহমিকা ভাঙ্গে কালের বিজয়রথ।
তুমি ছড়িয়েছ বাধ্য ফুলের ডানা,
ঝোড়ো হাওয়া, উলটপালট মন,
মহাসাগরের চাঁদ ঠিক জ্বলে আছে—
পাল্টে গিয়েছে আমার দৃষ্টিকোণ।।-
তুমি দুঃখ পেয়েই ঘুমাও
নাকি দুঃখ পেয়ে জাগো?
বদলে ফেলা নিজেকে
নাকি বদলে গেলে রাগো?
সভ্যতা সব জলাঞ্জলি,
আসলেমিতে ধরে,
নেশার ঘোরে শিবভক্ত
শূন্যে ভ্রমণ করে।
জানি তোমার কষ্ট আমি,
বুক ফেটে জল আসে না,
বালির বাঁধে আটকে থাকে,
জোয়ার, সে তো আসে না।
বদলে যাবে, বদলে যাবে,
সময়ের কারখানা,
আজকে তোমার, কালকে আমার,
বদলের নজরানা।।
-
নিরবে নিভৃতে বাঁচতে চাওয়ার ছলনা,
ছিঁড়ে, খুঁড়ে খায় সময়ের যমদূত—
চিরকাল আড়ালে থাকার শিক্ষা
মন্ত্রণালয়, বিবেচনা বড়ই অদ্ভুত।
পাষাণবন্দী চেতনা চুঁইয়ে পড়ে রক্তসম,
রক্তের আভা লাল থেকে নীল,
বিরহ সহ্য করেও সবাই বন্দী;
সময়ের চাকা তুলনায় অশ্লীল।
সময় থাকতে সময় চেয়ে নিক,
পৃথিবী অবাক লজ্জাহরণ তার,
জলছবি স্পষ্ট হবেই ক্রমশ—
সময়ই করবে সময়ের কারবার।।
-