(৩)
প্রভুর অবাঞ্ছিত পূর্বরাগ,
ইষ্ট দেবতার ভয়ে ঝরে পড়ে,
কদম ফুলের মত।
আমার সন্তান ধর্মের সমীপে
ঋষিরাজ ঋগ্বেদ পড়েন।
করুণ চিরন্তন কামে,
অনূঢ়ার ওষ্ঠরাগ গরলে আবিষ্ট আদি পিতা
নির্মেঘ গাঙ্গেয় উপকূলে সতীনের বুকে জ্বলে
ঈশ্বরের অষ্টাদশী চিতা।
-
(২)
তুলসিমঞ্চে এসে দাঁড়ালে,
ক্ষমা ভাব পেয়ে বসে,
নীরবে জিভ কেটে সরে আসি।
নির্জন শ্মশান ঘাটে অস্থি দান
তীরে এসে নোঙর ফেলে রিপুর তরণী,
আমি নির্মোহ দ্বিজোত্তম,
প্রতিকূল অজুহাতে কাঁদতে শিখিনি।
- আর্য
-
(১)
দ্বারে দ্বারে হাত পেতে ঘুরে আসেন ভিক্ষুক।
অনাহূত বসন্তের নিকটে,
জানু পেতে বসেছেন ঈশ্বর;
আমি তার কোল ঘেঁষে বসি।
নাভিপদ্ম ছিঁড়ে উঠে আসে নিষাদের অলিখিত জরা
রতিকলা শেষে মাতৃগর্ভ বিস্মৃত হয় ভ্রূণের চেহারা।
- আর্য
-
শুকতারা ডুবে গেলে,চামড়া খুলে পড়ে ওদের,
বিষন্ন ঝর্নার জলে,
যে তর্পণ ভাসিয়েছ বনবিথীতলে
রোজ জীবাশ্ম অশ্লীল হয় প্রতি অঙ্গ লাগি তার।
ঈষৎ ঝিমিয়ে পড়া গাঙ্গেয় শোক,
যাত্রা ভঙ্গ হলে শেষবার,
আদিবাসী মেয়ের চোখে সন্ধ্যের মায়া মরে যায়,
চিকচিক করে বালি,
বিকেল ভেঙে গেলে শেষ রাতে
ঈশ্বরের সাথে সাপ লুডো খেলি।
তারপর শেষ বার মরদেহ,
চাঁদনীতে ছিঁড়ে খাওয়া অশরীরী ব্যাধ,
সঙ্গম কালে চুমু খাওয়া হরিণী জেনে গেছে
হোমের আগুন সংঘাত,
শুধু দুই দান পাশা,
বিধাতা , শয়তানে চার ইঞ্চি তফাৎ।
- আর্য-
ভোর রাতে জল গড়িয়ে পড়ে তোমার নখে,
পুকুরে পানকৌড়ি,
ছোঁ মেরে তুলতে গিয়ে ডুবে গেলো সাপ,
গেঁয়ো রাখালের আঁচিলের পাশে জলবসন্ত,
ফিক করে হেসে উঠলো যে কিশোরী,
তার বুকে বাঘ নখ দেখেছিলাম সে রাতে।
ইষ্টদেবতার নামের পাশে পুত্রের নাম খোদাই করেনি,
এ অপরাধে ফাঁসুড়ে সুলভ আক্ষেপ নিয়ে ঘুরে বেড়ান সাধু।
শেকল আর প্রতিশ্রুতি ঘুরে ফিরে আসে,
আল্পনা আঁকে মাছরাঙার মত।
দীঘি ভেঙে যে তরুণী উঠে এলো
কাল বা পরশু সময় মত তার নখ চিনে নেবে বলে
ফেলে রেখেছিল যে প্রেমিক,
তাকে খেজুর গাছের শোক চেনানো গেলো না।
- আর্য
-
(৩)
শুনশান শ্মশান ঘাট। ঘি পোড়ার গন্ধে গুলিয়ে উঠছে শরীর। সামনে ঘোলাটে নদী। ঘাটের সিঁড়ির পাশে ছড়ানো ছেটানো ভাঙ্গা কলসি,ফুল, জপমালা। শূন্যতায় ,দোয়াত থেকে কালি ছড়িয়ে পড়ছে, নদী জুড়ে।প্রতিটা মৃত্যুই আসলে পাখির মত, উড়ে যাওয়ার পর শেকলের কথা মনে করায়। শতাব্দীপূর্ব প্রশ্ন গুলো উত্তর হয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে আর আমি পিন্ডদানের অছিলায় গঙ্গায় ভাসিয়ে দিচ্ছি সিঁদুর কৌটো।
-
(২)
কবির মৃত্যু আঁকতে গিয়ে কেঁপে উঠছে শিল্পীর হাত। চা কাপ হাতে নিয়ে উঁকি দিচ্ছেন রান্না ঘরে। উনুনের পাশে ঈষৎ ঝুঁকে পড়া পরস্ত্রীর স্তনের উত্থান পতনের দৃশ্যে ঘেমে উঠছেন, জিভ পুড়ে যাচ্ছে অসভ্য শিল্পীর। তীব্র চাঁদের গায়ে বৃষ্টি নামছে ধীরে, আলুথালু পেইন্টিং রুম, ঝড়ের গন্ধে ভেসে যাচ্ছে কবির মৃতদেহ। পাশে শুয়ে থাকা যুবতী, ঘুম থেকে উঠে আঁচল গুছিয়ে নিচ্ছে; কবির পাশ থেকে উঠে গিয়ে বসে পড়ল শিল্পীর পাশে। জীবনানন্দ সমগ্র এড়িয়ে,হাত রাখছে জলছবির ঠোঁট জুড়ে।আর বাংলা পরীক্ষার আগে আমি কবি পরিচিতি ভুলে যাচ্ছি যথারীতি। স্যার বার বার বলে দিচ্ছেন যাই প্রশ্ন আসুক, গদ্যের সারমর্ম লিখে আসলেই ফুল মার্কস।
( ক্রমশঃ)-
(১)
তোমার উঠোন পেরোলেই আমার সীমানা ভেঙে সমুদ্র উঠে আসে। এক অখ্যাত কবির মৃত্যুদৃশ্য কল্পনা করছি। চৌকাঠ পেরিয়ে ভেতরে পা রাখতেই চোখে পড়ে লাল ছোপ। চাপ চাপ কবিতা ছড়ানো ঘর জুড়ে, ইতি উতি পুরোনো কাগজ। কাঁচের দেওয়াল ডিঙিয়ে মরা জোছনা,কেঁচোর মত কিলবিল করছে কবির শরীরে। দোয়াতে কালো আঁখির বাসন্তী নীল; স্নান করছে ভীরুর মত। যে যুবতী জন্ম নিল, সে জানে পৃথিবীর সব বনলতা সেনই , বয়স বাড়লে নীলকন্ঠ পাখি হয়ে যায়।
( ক্রমশঃ)
-