এ হেরেমের রাতে আকাশের সব তারারা উলঙ্গ হয়ে বসে আছে এক ফালি চাঁদের পৌরষত্ব দেখবে বলে।

-

দেড়শো বছর আগেও আমি অনেক রাতে জেগে ছিলাম,
তোমার চোখের অন্ধকারে মৃত্যু ছবি এঁকেছিলাম।
আর তখন তুমি ডুবেছিলে অন্য পুরুষ, অন্য প্রেমে।

দেড়শো বছর আগেও আমি তোমার বাড়ির কলোনী
জুড়ে দাঁড়িয়ে থাকতাম চিঠি হাতে, হটাৎ কোনো ঈশারাতে
কিন্তু তখন তুমি ডুবেছিলে অন্য প্রেমিক, অন্য মনে।

দেড়শো বছর আগেও আমি অনেক রাতে
হাত কেটেছি তোমার ব্যথায়, তোমার প্রেমে,

তখন যদি বলতে আমায় অন্য গ্রহে চলে যেতে।
আজকে তবে আমিও শুতাম হাজার
খানেক লাশের সাথে, কাফনে খাটে, তোমার কাঁধে।

-

এই শহরে তোমার আমার খবর হোক
বুকের ভেতর শব্দ পোড়া বিকেল হোক
বাড়ির ছাদে মেঘের দেশের বর্গি আসুক
খাজনা নিতে।

এই শহরে মনভাঙ্গাদের বিচার হোক
শালিস নালিশ কাঠগড়াতে হিসাব হোক
রাজার উজির কর মেপে নিক বৃষ্টিপাতে।

এই নগরে সভ্যতা আর প্রেম বাড়ুক
সব লাশেরা প্রিয়জনের হাত ধরুক
সৃষ্টিকর্তাও মোরগ ফুলের সমাধি দিক
গোর মাটিতে।

-

আকাশের দাবির কাছে মধ্যরাতে লাল
ফুল নিয়ে দাড়িয়ে আছি আমি, ভোর হলে
পাপিষ্ঠ দেবদূতটিকে প্রেমের প্রস্তাব দেবো
বলে।

এ মধ্যরাতে এ আকাশ লুব্ধকের মতোই
একা, যেখানে আমার প্রিয়তম দেবদূতটি
একলা বসে তওবার তাসবীহ পাঠ করছে
কোথাও, ফুলহীন কোনো গাছের নীচে
দাঁড়িয়ে।

-

আমার জানাজার গল্পে তুমি রুথেলিয়া
ফুল হয়ে এসো, প্যারাকিট পাখি হয়ে
এসো, চাতকের গান হয়ে এসো, আর
এসো পপকর্ন হাতে জামা ভেজা বিদেশী
তরুণীটির মতোই,

দেখে যেও সময় করে সময়ের জানাজার
ভিড়, আজানহীন এ নামাজে তুমিও এক
মুঠ মাটি দিও আমায়, চোখ বোজা
ভালবাসাহীন কবরে।

আর বিড়বিড় ঠোঁটে বলে যেও যাওয়ার
আগে, " যে ক্ষমা করে দিয়ে গেছো
আমায়। "

-

আমার ভিতর তোমার একখানি বনবাস
হোক, তোমার যত পাপের ঘড়া সব জমা
হোক এই জঙ্গলে,

তোমার মৃত্যু না হোক
বরংচ তোমার অমরত্ব হোক খুব কষ্টের,
তুমি কোটিসম জন্ম তরপে তরপে মরো
একটুখানি ভালবাসা না পাওয়ার আক্ষেপে।

আমার ভিতর পঞ্চবটী বন হোক,
ঘন কালো আধার হোক
আর তাতে আমরণ বনবাস হোক তোমার।

-

এই সালের সেপ্টেম্বরের সন্ধ্যায় আমায়
একটু ভালোবেসো, পরাজিত পর্তুগিজ
পাখিটির মতো।

ঠিক দেড়শো বছর আগের,
কলেজস্ট্রিটের কোনো এক সেপ্টেম্বরের
সন্ধ্যায় যে ভারতীয় ফুলবিক্রেতা মেয়েটি প্রেমে
পড়েছিল ব্রিটিশ এক যুবকের, তুমি ঠিক
তার মতো করেই ভালোবেসো আমায়।

-

পূর্ণিমার রাতে আকাশ থেকে গোল চাঁদটাকে পেরে
ডিম পোজ করে প্লেটে সাজিয়ে দিয়েছিলাম আমি,
সাথে দিয়েছিলাম জোছনার চাটনিও।

নীল কাপ্তান পড়া মেয়েটির নেমতন্ন ছিলো
সেই রাতে, সে চেটেপুটে খেয়েওছিল চাঁদের পোজটি,

কিন্তু ও জানতো না, যে অভাবের সংসারের
ডিনার টেবিলে রাতের আকাশের আস্ত চাঁদটাকেই
ও খেয়ে ফেলেছে ।

-

অতএব
রাত বাড়লে আমরা নেরুদার কবিতা পড়ি,
জয় গোস্বামী তখন বসে থাকেন বাড়ির ছাদে,
চাঁদ তাপায়, জোছনা কেনে আর
ঘুম চোখে সিরামিকের লাল পেয়ালায় চা খায়।

আর ততক্ষণে আমরা জোর করে ধরে নিয়ে আসি
একটা অন্য গ্রহের চাঁদকে,
ধরে এনে জোর করে বন্দি করে দিই জয় গোস্বামীর
বইয়ের ভিতর, এবং জোর কদমে অত্যাচারও করি
সেই ভিনগ্রহী চাঁদটিকে।

চাঁদটা জোছনা দিতে পারে না, আলোও ছড়াতে পারে না,
ক্যামন যেন সাদামাটা,
খালি ঝিম মেরে গুম ধরে বসে থাকে
জয় গোস্বামীর কবিতার পাতায়।

আর আস্তে আস্তে মিলিয়েও যায় চাঁদটা
"পাগলী তোমার সঙ্গে"-র সেই পাগলীটির সাথে।

-

রুহ আফজার মতো স্নায়বিক এক রাতে
তুমি শুয়ে পড়ো আমার হেমের কাছাকাছি,
পাশের বিছানায় চাঁদ আর প্লুটো কথা বলে,

লাল সড়কের দিকে তাকিয়ে দেখি অন্য
গ্রহের কবিরা খুন করে ততক্ষনে এক
অপরকে,
কবিতাদের মধ্যে ঝামেলা হয়, রক্তপাত
হয়, আর তুমি সাইকেল নিয়ে ছুটে চলা
তরুণীটিকে ডেকে বলো নেরুদার বাড়ির
ঠিকানাটা।

যে ঠিকানায় আজই এক মাওবাদী যাচ্ছে
"ওড টু মাই সক্স" কবিতাটাকে খুন
করতে।

-