[প্রথম পর্বের পর ]
২০১৬, বর্ষাকাল। সারাদিন টিপটিপ বৃষ্টির পরে রাত প্রায় ১০টা থেকে আকাশে কালো মেঘের ঘনঘটা, মুষলধারে বৃষ্টির সাথে সাথে বিদ্যুতের অবিরাম গর্জন আর সঙ্গ দিচ্ছে এলোমেলো ঝোড়ো
হাওয়া, জানলার খড়খড়ি মাঝে মাঝেই জানান দিচ্ছে বাইরের বেসামাল প্রকৃতির তান্ডবলীলা। দীপ্তর ফোনে ফোন আসে অজানা নম্বর থেকে, ওপার থেকে ভেসে আসে হিয়ার কান্না জড়ানো কণ্ঠস্বর "তোর কাছে ফিরতে দিবি আমায়?"হঠাৎ যেন বাইরের বৃষ্টির আওয়াজ, হাওয়ার দাপট, ঘরের wind chimes এর টুংটাং আওয়াজ থেমে নেমে আসে এক অপার্থিব নিস্তব্ধতা। এই এতো বছর মনে মনে এই মুহূর্তটার জন্যই তো অপেক্ষা করছিলো দীপ্ত-হিয়ার ফিরে আসবার। সে প্রশ্ন করে কিন্তু তোর এতো বছরের সম্পর্কটার কি হবে?"এক কথায় উত্তর আসে "আমায় কেউ আটকাতে পারবেনারে আর,"। কিন্তু ঠিক তখনই তার চোখে ভেসে ওঠে একটা সহজ সরল ছেলের মুখ, যে তার সবকিছু দিয়ে ভালোবেসেছে হিয়াকে, আগলে রেখেছে এই এতগুলো বছর তার বুক দিয়ে, কি করে দীপ্ত তার কাছ থেকে তার বেঁচে থাকবার সম্বলটাকেই কেড়ে নিতে পারে? সে পারবেনা ছেলে হয়ে আর একটা ছেলের এতো বড়ো ক্ষতি করতে।
বাইরের বৃষ্টির ফোঁটা তখন ছোঁয়াচে হয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছে দীপ্তর দুটো চোখ, জীবনের সবথেকে ভালোবাসার মানুষটাকে ফিরে পেয়েও সে ফিরে আস্তে দেয়না। কেঁপে ওঠা গলাটাকে সামলে সে বলে "নারে আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি"।— % & সেই দুপুরটার মতন ধুলোর ঝড় হয়তো বয়নি সেদিন, কিন্তু একরাশ ঠান্ডা হাওয়া তার মাথা ছুঁয়ে যেন তাকে আর্শীবাদ করে গেছিলো। রাত প্রায় তিনটে তখন, বৃষ্টির আওয়াজকে ছাপিয়ে কানে ভেসে আসে সামনের চক্ররেল স্টেশনের মালগাড়ির তীক্ষ্ণ হুইসেল,ঘরের আলোটা যেন দপ করে ওঠে ভোল্টেজ কমার অজুহাতে।একটা সিগারেট ধরায় সে।
কোনো কোনো সময় ভালোবাসাকে দূরে সরিয়ে দিতে হয়, তার ভালোর জন্যেই, তার ভালো থাকবার জন্য। বাইরের পুরো সমাজের কাছে 'playboy', 'loose character' আখ্যাও পেতে হয়, তাও ছেড়ে যেতে হয় সব মায়া কাটিয়ে। পৃথিবীর কাছে তৈরী করতে হয় এক ঋণাত্বক প্রতিচ্ছবি।সত্যিকারের ভালোবাসা কখনো চিরতরে হারায়না, হারাতে পারেনা, পাশে না পেয়েও অনুভব করা যায় প্রিয় মানুষটার উপস্থিতি সব জায়গায়। কফি হাউসের কোনো বৃষ্টিস্নাত বিকেলে, নিউ মার্কেটের ব্যস্ত কেনাকাটায়, গঙ্গার ধারের কোনো মায়াবী সূর্যাস্তে, সদ্য শীত নামা ময়দানের আলো-আঁধারি রাস্তাটায়, নন্দনের ঝর্ণার পাশের বেঞ্চটায়,আর কখনো বা উত্তর কলকাতার কোনো পাড়ার কোনো সরু গলির সদ্য জ্বলে ওঠা হলদেটে bulber আলোয়।
ভোর হচ্ছে, সমস্ত অন্ধকারকে মুছে দিয়ে আস্তে আস্তে আলো ফুটে উঠছে, হিয়ার সেই ভাইকে দিয়ে পাঠানো চিঠিটার শেষ লাইনটা মনে পড়ে যায় দীপ্তর "যতটা অবহেলা আর কষ্ট দিলে, একদিন না একদিন ঠিক সেটা অন্য কারোর কাছ থেকে ফেরত পাবেই "। [ক্রমশঃ ]— % &
-